Saturday, 26 December 2020
উষ্ণশীতকথাঃ ০১
Friday, 25 December 2020
যুযুৎসু-র প্যাঁচ
Sunday, 13 December 2020
Chhayanat: A Virtual Natyamela: December 2020
পুরো পুজোটাই কেটে গেল, স্টেজ ব্যাপারটা বাদ রেখে। পারফর্মিং আর্ট বন্ধ। মাঝেমধ্যে কিছু অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছিল, ঠিক পাতে দেওয়ার যোগ্য নয়, কারণ সেগুলো নাটক কম, সিনেমা বেশি। কড়াকড়ি শিথিল হতে হতে, অনেক মানুষ-কে হারাল পৃথিবী, যে ক্ষতি অপূরনীয়। আমি যখন লিখতে বসেছি, লীয়ারের নাম ভূমিকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় গত হয়েছেন, গত হয়েছেন মনু মুখার্জী-ও। সৌমিত্রবাবু-র ভাবশিষ্য, দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় আমার পরম বন্ধু, এক্কেবারে ছেলেবেলার। তার দেওয়া পোস্টে জানতে পারলাম যে স্টেজ আবার খুলছে। ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২০ তে দুপুর বেলায় আছে ‘’অন্ধযুগ’ নাটকের শো, আকাদেমি তে। তার আগে জানলাম, আমার ছেলের কাছ থেকে যে ‘কে’ এর শো আছে জ্ঞানমঞ্চে, ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২০ তারিখে। মন আনন্দে ভরে উঠেছিল, আবার নাটক হবে শুনে। শেষ নাটক দেখেছি, মার্চ মাসে । তারপর থেকে নাভিশ্বাস উঠে এসেছে, বারে বারে, দর্শকাসনে বসার জন্য। নাটক দেখার সেই স্পেল ছিল নাট্যোৎসবের। পরপর দেখেছিলাম বেশ কয়েকটি ভাল নাটক। তারপর মনে ধন্দ জেগেছিল, নাট্যোৎসব আবার হবে তো।
স্টেজে কিছু
হুট করে শুরু হওয়ার আগে, অনলাইনে নাট্যোৎসব ঘোষিত হল ঃ
ছায়ানট – দ্য ভারচ্যুয়াল নাট্যমেলা। পয়লা ডিসেম্বর থেকে ৫-ই ডিসেম্বর পর্যন্ত। আয়োজনে, ‘দশ-ইয়ারী’ থিয়েটার দল। গত কয়েক বছর আগে শুরু করেছেন দলটি, কলকাতায় এবং দ্রুততার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছেন নাট্যপ্রেমী মানুষদের মধ্যে। এর মূল কারণ হল, শুধু নিজেদের দল নয়, অন্যান্য দলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে, কোনো প্রতিযোগীতায় না গিয়ে, একসঙ্গে কাজ করার মানসিকতা, যেখানে মূলমন্ত্র হল, ‘কাজ করলে তবে না ভুল হবে, ভুল থেকে শিখি, যত ভুল করব তত বেশি শিখব’।
আমি অধীর
আগ্রহে বসে ছিলাম, অনেকদিন পর নাটক দেখব বলে। এক তারিখে সন্ধ্যেবেলায় নাট্য মেলার শুরুতে
কিছু কথাবার্তা তো থাকবেই। ডঃ ময়ূরী মিত্র প্রাণ ঢেলে বলে গেলেন অনেক কিছু। খুব জড়তা
ছাড়াই। কিন্তু বড্ড দীর্ঘ হয়ে উঠেছিল একটা সময়ে, কারণ আমরা এসেছি নাটক দেখতে। ‘দশ-ইয়ারী’
থিয়েটার দলের মূল কর্ণধার, সুচিতা রায়চৌধুরী, তাঁর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের মধ্যেই জানালেন
সেদিনের নাটকের মূল ভাব সম্পর্কে। তাঁর নিজের লেখা নাটক। আমরা দেবদেবীদের নিয়ে পলিটিক্যাল
স্যাটায়ার প্রথম দেখছি এরকম তো নয়, কিন্তু এই নাটক-টি সামান্য হলেও একটু অন্য ধরণের,
যেটা না দেখলে বোঝা যাবে না। যাতে ভয়েস রেকর্ডিং ভালো হয়, তাই হয়ত একটু যাত্রার মত
উচ্চ তানে বাঁধা। তবে মাঝে মাঝে যেন মেলোড্রামা আর ডায়ালগ, দুটোই এই যাত্রা-আঙ্গিকের
চাহিদা প্রকাশ করে। দেখে ফেলুন সময় করে ষোলো
মিনিটের এই নাটক টি। নাকি ‘নাটিকা’ বলব!
লিঙ্কঃ https://www.youtube.com/watch?v=8FS_0-9_Nfs&feature=youtu.be
দ্বিতীয় দিন, ২ তারিখে ছিল নাটক “আমি সুরঞ্জন”। পঁচিশ মিনিটের ত্রিকোণ প্রেমের গল্প। দেখানো হয়েছে, থুড়ি, শোনানো হয়েছে স্পষ্টতই ত্রিকোন প্রেমের অন্তর্দ্বন্দ্ব, বিশেষ রূপে শ্লেষিত হয়েছে অদ্ভুত মানসিক জটিলতা। শোনানো হয়েছে বললাম এই কারনে যে এটি আদ্যোপান্ত শ্রুতিনাটক এবং একটি নাট্যোৎসবে এটা একটা অভাবনীয় পাওনা। সানডে সাসপেন্স যেখান থেকে উৎসারিত আমরা সেই মেইন স্ট্রীম শ্রুতিনাটক কে ভুলতে বসেছি। শাঁওলী মিত্রের একক অভিনয় দেখেছিলাম ‘কথা অমৃত সমান’-এ । এখন আর পারেন না। ওটা শ্রুতি হিসেবেই অভিনীত হয়। তবে এই শ্রুতিতে একটা নতুন মনোগ্রাহী অংশ আনা হয়েছে। শ্রুতি যতক্ষণ চলেছে, নানা রকমের ক্লিপিং বা স্টিল শট দিয়ে না ভরিয়ে, রাখা হয়েছে স্টুডিওর র’ ভার্শান, যা অনলাইনে দর্শকদের অনেকটাই চরিত্রের সঙ্গে একাত্ব করে তুলবে। শিক্ষনীয়, শুধু শব্দ উচ্চারণ করে কি করে মনের ও শরীরের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অভিব্যক্তির প্রকাশ ঘটাতে হয়।
লিঙ্কঃ https://www.youtube.com/watch?v=0gvz3me-jO8&feature=youtu.be
তৃতীয় দিনে
আবার বেহালা ‘ঘুমচোখ’- দলের তৈরী করা দুটি শ্রতি নাটকঃ প্রথম নাটক “একটি দিনের জন্য”।
আধঘণ্টায় স্বপ্ন ছোঁয়া ও ভাঙার গল্প ‘কাপুরুষ” সিনেমার ধাঁচে। তবে হ্যাঁ, এই গল্পটা 'কাপুরুষ'-এর মত সীমিত মানুষের গল্প নয়, বেশির ভাগ মানুষের-ই মনে হবে, “আরে এ তো আমার
গল্প! ওরা জানল কি করে!” সেদিনের থালায়, গুরুপাক এই ভোজনের পরে, শেষ চোদ্দ মিনিটের
মধ্যে চাটনি, মিষ্টি ও পাঁপড়ের সম্ভার গোছানো হল দ্বিতীয় শ্রুতি নাটক, ‘হ্যামলেট’ নামক
সেই ক্লাসিকের হাত ধরে। এটা ঠিক দেব সাহিত্য কুটিরের “শেক্সপীয়রের ট্র্যাজেডী” বই-এ
যে রকম করে পুরো নাটকটিকে ছোট্ট করে লেখা আছে সে রকম। শুধু প্রাধান্য পেয়েছে
হ্যামলেটের মৃত্যুর সময়ে যন্ত্রণা, যেমন আমারা দেখেছি শাহিদ কাপুরের ‘হায়দর’ সিনেমাটিতে।
শুধু সব কিছুর মধ্যে এক একটি চরিত্র আলাদা আলাদা জায়গায় বসে রেকর্ডিং করে গিয়েছেন সেটা
বড্ড প্রকট, আর এই নাটকে পর পর ছেলে-ভোলানো স্টিল ছবির স্লাইড শো না থাকলেই হাল হত। নাটক
যতটা উঠছিল, তার উচ্চতাকে কমিয়ে আনে এই অবাঞ্ছিত ছবির সমাহার। অবাক হলাম ‘ঘুমচোখ’ শ্রুতি
নাটক নিয়েই কাজ করে বিশেষ করে, বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গেও তাঁরা অনেক বছর ধরে
যুক্ত, তবু কেন ওনারা এই ব্যাপআরে ঘুমিয়ে রইলেন, কেন তাঁদের চোখ খুলল না?
লিঙ্কঃ https://www.youtube.com/watch?v=Dm4Q0revH-I&feature=youtu.be
চতুর্থ দিনের
জন্য সবাই অপেক্ষায় ছিলাম, কারণ দলের নাম একটু ভারী – ‘অনুযুগ’, আর নাটকের নাম 'যাত্রী'।
দল রমরমিয়ে চলছে চব্বিশ বছর ধরে, আর কর্ণধার সজল চক্রবর্তীর লেখা ‘যাত্রী’-র বয়স ও
প্রায় সমান। সমান চাহিদা আজও বাজারে এই নাটকটির। শহর-গ্রাম-মফঃস্বলের সীমানা ভেঙে সমস্ত
শ্রেণির মানুষের কাছে এই দলের আর কোনো প্রযোজনা এত দীর্ঘস্থায়ী হয় নি বলে নিজেই দাবী
করেছেন সজল বাবু, সেদিনের মুখবন্ধে। কেন, কি ব্যাপার, কি এমন আছে এই নাটকে – উত্তর
খুঁজতে হলে দেখে ফেলুন। আমি বরং শেষ দিনের জন্য কি লিখব সেই নিয়ে ভাবতে বসি।
লিঙ্কঃ https://www.youtube.com/watch?v=RjaSzXYaxsE&feature=youtu.be
শেষ বলে ছক্কা – মনোজ মিত্র লিখতেনও সে রকম। ‘উমা’- তে তিনি নিজে বলে গিয়েছেন অঞ্জন দত্ত কে,
“গল্পটা কিন্তু বলে যেতে হবে, একজন হলেও, বলে যেতে হবে।“ ঠিক সেরকম-ই এক দম্পতির গল্প
বলা আছে তাঁর ‘আঁখিপল্লব’ নাটকে যেখানে আপাত স্বার্থপর দু জন মানুষ এক সঙ্গে থাকতে
থাকতে, ঝগড়া করতে বুঝতেও পারেন না বাঁধনটা কত আঁট হয়ে গিয়েছে। ভাল পরিবেশন। সময় করে
দেখে ফেলুন। আঁখিপল্লব ফেলার সুযোগ পাবেন না।
লিঙ্কঃ https://www.youtube.com/watch?v=_6yNDQ2B3q0&feature=youtu.be
সব থেকে ভাল
ব্যাপার এই যে, ‘দশ ইয়ারী’ নাট্যদল এই কঠিন সময়ে তাঁদের সীমিত ক্ষমতা ও নাটক-কে টিঁকিয়ে
রাখার জেদ নিয়ে এতগুলো দলকে একত্রিত করে গোটা একটা ভার্চ্যুয়াল নাট্যোৎসব করে সবাই
কে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেল...গল্পটা যে বলে যেতে হবে...!!!
নাটক কে কেউ
থামাতে পারবে না। নাটক থামবে না। নাটক তো জীবনের…তাই…এটা বুঝতে ‘পিরানদেল্লো’ –কে,
তাঁর যে ছয়টি চরিত্র, পরিচালক পাচ্ছিল না, তাঁদের একবার দেখতে, পড়তে বুঝতে হবে। তবেই
না ‘ভাবা’ প্র্যাকটিস হবে।
…ভাবলেই মানুষ
আর সুখী থাকে না…বিপ্লব হয়...।।
Tuesday, 10 November 2020
গড় শালবনীতে একদিন
আমরা যখন ক্লাস ইলেভেনে পড়ি, আমার বহুদিনের বন্ধু প্রত্যুষ (বোস) আমাদের বাংলা পাঠ্য বই এ 'আরণ্যক' উপন্যাস থেকে গৃহীত অংশ বিশেষ গুলে খেয়েছিল। শিক্ষকরা তা থেকে প্রশ্ন করলে, উদ্ধৃত অংশ পাতার নম্বর সমেত কোন অনুচ্ছেদে আছে অনায়াসে বলে দিতে পারত। আমরা সবাই জানতাম যে 'দব্রু পান্না বীরবর্দি' বা 'টাঁরবাড়ো' সম্পর্কে না ওর থেকে বেশি কেউ জানে, না ওর থেকে ভাল লেখার কারো ক্ষমতা আছে। বিভূতিভুষণের লেখা পড়ে মনে যে দৃশ্যকল্প তৈরী হয়েছিল, তা এত বছর পরে হলেও মেলানোর সুযোগ পেলাম।
এই প্রথম গেলাম সেখানে...বন্ধু সঞ্জীব (মণ্ডল) ঝাড়গ্রামের ভূমিপুত্র...আর বিধান (তুঙ্গ) বেড়াতে নিজে যায় আর অন্যদের হুড়ো দেয়...এই দুজনের পরামর্শে ও আয়োজনে আমাদের পা পড়ল লাল মাটির সরাণে....অনবদ্য অভিজ্ঞতা...সব জায়গার নামের শেষে '-শুলি' উপসর্গ যুক্ত...আর তারপর আমরা একটা জায়গার ওপর দিয়ে এলাম যার নাম 'শুষণি'...আমরা অপভ্রংশে 'শুস নি' করে নিলাম আর খুব হাসলামঃ সব জায়গায় 'শুলি' 'শুলি' বলে অতিষ্ঠ করে দিয়ে লোভ বাড়িয়ে তুলে শেষমেশ বলে কিনা,'শুস নি!' 😡 এ কেমন অত্যাচার!!!...
যেখানে ছিলাম সেখানকার নাম 'আরণ্যক হোটেল এন্ড রিসর্ট'...কলকাতা থেকে প্রায় ১৭০ কিমি...দারুণ রাস্তা...সাড়ে তিনঘন্টার পথ...যোগাযোগ ±919734346666... @ Aranyak Hotel & Resort. দৈনিক খরচ থাকা-খাওয়া নিয়ে INR 5000-6500. Breakfast Complimentary.
সেই ইতিহাসে এখন আর গেলাম না। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে এখন এই রাজবাড়ির অত্যন্ত ভালভাবে পরিচর্যা হয়। এমনকি সাধারণ মানুষ এখানে থাকতেও পারেন। তবে রাজবাড়ির অন্দরমহলে সকলের যাওয়ার অনুমতি নেই। ফটকেই আটক । শুধু যাঁরা থাকার জন্য বুকিং করে এসেছেন, তাঁরা-ই একমাত্র প্রবেশাধিকার প্রাপ্ত। তাই বাইরে থেকে রাজবাড়ি দেখে চোখ সার্থক করে আমরা চললাম কনক দুর্গার মন্দিরের পথে।
মাঝে মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গ্রাম। একটি গ্রামে তো দেখলাম সব মাটির বাড়ি। দু'তলা মাটির বাড়িও আছে। নিটোল, নিকোনো দেওয়াল। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণে শীতাতপ(এই বানান-টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক শিক্ষিত মানুষও ভুল জানেন। কথাটা প্রচলিত 'শীততাপ' হিসেবে, যেন 'শীত' ও 'তাপ' এর সমন্বয়ে গঠিত। এটা ভুল। আসল কথাটি হল - শীত+আতপ= শীতাতপ, 'আতপ' মানে উষ্ণ যা থেকে 'আতপ চাল'। তাই পরের বার থেকে 'এয়ার কণ্ডিশানিং মেশিন' এর বাংলা 'শীতাতপ যন্ত্র' সেটা জানতে ও জানাতে ভুলবেন না।)অনুকূল এই সব মাটির বাড়ি। তবে প্রত্যন্ত জায়গা হলেও কিন্তু বিদ্যুৎ ও আন্তর্জাল দু'ই ই বেশ রমরমিয়ে আছে।
তারের জাল দিয়ে ঘেরা পিচ-ঢালা রাস্তা চলে গিয়েছে কনক দুর্গার মন্দিরে। জালের আসেপাশে যে সমস্ত গাছ-গাছালি আছে, তাদের গায়ে নাম সমেত বোর্ড সাঁটানো। সব গুল্মের মধ্যে এক জাতীয় গুল্মের নাম দেখলাম ‘রক্তপিতা’। এর অর্থ কি আমি জানি না।ব্যাসবাক্যে ভাঙলে দাঁড়ায় অনেক রকমঃ ১।রক্ত ও পিতা, ২।রক্ত রূপ পিতা বা ৩। রক্ত পিতা যাহার। কিন্ত কোনোটাতেই আমি কিছু আগা-পাশ-তলা খুঁজে পেলাম না। যাই হোক না কেন, এই ‘রক্তপিতা’-র অজগর-সম রূপ কিন্তু আমার মনের কাছে এক যুক্তিহীন ব্যাসবাক্য নিয়ে হাজির হল – ‘রক্ত পান করে যে’ (‘পে’ ধাতু ধরলে, যেমন হিন্দি-তে আছে – “আপকে পিতা ক্যেয়া পিতা?” – সে রকম আর কি)। দুর্গা মন্দিরে গিয়ে দেখলাম বিরাট ঝাঁ চকচকে মন্দির একটা। পুজো চলছে।
অনেক হনুমান সেখানে। পাশে একটা পোড়ো মন্দির। সেটা দেখলে শিহরিত হতে হয়। পুরোনো মন্দিরটির সামনে একটি বড় বৃক্ষ। তার গায়ে অনেক মানসিকের সুতো বাঁধা। পুরোনো মন্দির আর প্রবেশযোগ্য নেই। প্রধান দ্বারের কড়া মানসিকের সুতো দিয়ে বেঁধে বন্ধ করা আছে। পিসার হেলানো গির্জার মত একটু একদিকে হেলে গিয়েছে মন্দিরটি আর একদম মাঝ বরাবর আপাদমস্তক কেক কাটার মত একটা বিশাল ফাটল পুরো মন্দিরকে দু ভাগে চিরে ভাগ করে দিয়েছে। আমি এরকম আগে কখনো দেখি নি।
আমার যদ্দূর মনে হয়, পুরোনো মন্দির-টিই আসল দুর্গামন্দির। তার এরকম দুর্দশা হওয়ার ফলে নতুম মন্দিরটি তৈরী করা হয়েছে। এমনকি প্রবেশ দ্বারের অভিমুখ-ও পরিবর্তিত হয়েছে।
ক্যামেরা নিয়ে ছবি তুলতে সংকোচ হচ্ছিল, কারণ মহিলাদের দিকে লাজ-লজ্জার বালাই কম। তাঁদের ছবি না তুললেও যদি আমরা কি সব কুকীর্তি করছি বলে আক্রান্ত হই…! ভয় পাচ্ছিলাম। আমাদের বাঁচাল, আমাদের দলে থাকা মহিলা বর্গ। তারাও এসে জুটলো আমাদের সঙ্গে। আমরা এবারে মনের আনন্দে ছবি তুলতে লাগলাম। আমাদের সন্তানদের সঙ্গে এমনিতেই প্রকৃতির যোগ কম।ওরা বিশ্বাস-ই করতে পারছিল না যে, যেখানে ওরা দাঁড়িয়ে আছে, তা আসলে ‘রিভার বেড’। ভূমিরূপ দেখিয়ে ওদের বোঝালাম। বর্ষায় এই নদীর জল কতটা ওপরে ওঠে। ওরা প্রথমে অবাক তারপর বেশ কিছু যুক্তিযুক্ত প্রশ্ন ও তারও পরে ছবি তুলতে আর সেলফি নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ঘড়িতে তখন দুপুর আড়াইটে ছুঁইছুঁই। হোটেলে তখনো আমরা ঢুকিই নি। শুধু কোনো রকমে লাগেজ রিসেপশনে রেখে, লাঞ্চের অর্ডার দিয়ে চরতে বেরিয়ে পড়েছি। খাওয়ার কোনো তাগিদ নেই, কারোর। শুধুমাত্র যেন খাবারটা বলা আছে বলে আর ঠিক অন্য কোনো ভাল খাবার জায়গা নেই বলে, আমাদের ফিরতেই হবে, না চাইলেও। তাই আপাততঃ ব্যাক টু হোটেল।
Tuesday, 3 November 2020
Unbecoming as Post Modern
I was literally drawn towards a winding ambiguity of thoughts when my intellect found a sudden thrust to the queer proclivity towards the trending conflict between ‘modernism’ and post-modernism’. In my recent whatsapp discourse with a highly talented fellow of Honours in English Language and Literature from Presidency University, I found and realized that I should study more to quote things form the books to support my views instead of making my own view stand on its own because the quoted ones are established visionaries and I am not. Wearing taper-cut low rise jeans, with ear-studs and the tripping décor of a man-bun right above my grey-matter are not good enough to look visionary.
Here rises the question of my belonging and everyone’s belonging under the perspectives of the modern or post modern thoughts. May we call the Romantics the post modern, or at least modern, because during their contemporary period they had first identified, that the strangeness added to beauty is throttled by the previous genres because there had always been a royal thematic emphasis on the compositions instead of the individual subjective perspectives? No, we cannot because then no one had theorized and defined the most debatable deconstruction of the past genres as ‘post modernism’ at their own times, like no one wrote thinking that they are becoming 'romantics'. So, it is a social paranoia that is binding the vision of the exponents of ‘post modernism’ theories, who never thought they are the prime exponents of it.
Postmodernism is a broad movement that developed in the mid- to late 20th century across philosophy, the arts, architecture, and criticism, marking a departure from modernism. The term has been more generally applied to describe a historical era said to follow after modernity and the tendencies of this era.
Postmodernism is generally defined by an attitude of skepticism, irony, or rejection toward what it describes as the grand narratives and ideologies associated with modernism, often criticizing Enlightenment rationality and focusing on the role of ideology in maintaining political or economic power. Postmodern thinkers frequently describe knowledge claims and value systems as contingent or socially-conditioned, framing them as products of political, historical, or cultural discourses and hierarchies. Common targets of postmodern criticism include universalist ideas of objective reality, morality, truth, human nature, reason, science, language, and social progress. Accordingly, postmodern thought is broadly characterized by tendencies to self-consciousness, self-referentiality, epistemological and moral relativism, pluralism, and irreverence. Postmodernism is often associated with schools of thought such as deconstruction, post-structuralism, and institutional critique, as well as philosophers such as Jean-François Lyotard, Jacques Derrida, and Fredric Jameson.
Criticisms of postmodernism are intellectually diverse and include arguments that postmodernism promotes obscurantism, is meaningless, and that it adds nothing to analytical or empirical knowledge.
The best part is the relativity of the perspectives. Post modernists are of the opinion that reality in nothing but a social construction. So what is true for one may not be true for another, conclusive to nothing to be regarded as the absolute or ideal. The modernists took en route to an objective sublimity to consider reality as the apex while the post modernists consider this reality as a social condition within the set boundaries of the legal and value system set by the humans themselves. This is greatest hindrance to the exuberant visionary zeal of the humans and these set rules are actually barring every possible development. Post modernists are somewhat classically inclined to the traditional and ethnic aspects while moderns are rebels to what already existed. One of the major exponents of post moderns Derrida said that there is no work which cannot be defined generically. However, to the moderns nothing is generic; things come spontaneously as demands the reality. With its foundation on realism the modernists move on while for the post moderns reality is a philosophy, as it is never real because we, humans, make things to be called real. Reality, to them is a‘Utopia’, we may say.
However, I am not here to discuss on the various definitions and scopes of modernism and post modernism. I am here to delve deep in the matter of naming and dividing different outlooks towards life.
To begin with my discourse, I would like to refer to a very brief incident which is self-explanatory. Once the movie maker Satyajit Ray was asked, why he was constantly making some art films and when he will start his venture to make some mainstream commercial films. To this query, the Oscar achiever for his lifetime contribution to film-making, came up with his rejoinder, “I simply make films. I do not know of any discriminated genres as art films and commercial films. Films are films. And I am drawn towards this form of filmmaking.
There is nothing as modern or post modern. May be there is debate on the existentialism, structuralism and reality in different ways, but we cannot really make something absolute. The non-believers in absolute were ever there. So my point is that, everyone who thought differently during his contemporary period was either a modern or a post modern. In that way, looking back to history, Romantic or Victorian is modern, and a puritan is a post modern or something like that. Queer is the fact from Archimedes, via Galileo-Newton-Einstein to Stephen Hawking, every vital discovery (not invention) was a blow to the common human faith and belief. Why not call them post modern in their contemporary era? Michael Madhusudan Dutta incorporated blank verse in Bengali poetry, made Ravana and Indrajit the tragic heros with their tragic flaws, close to which God-sent Rama never came. We cannot call him a post-modern because the chief exponents of the post-modern philosophers were not born and defined a genre as ‘post modern’ when Michael was working.
Not being able to understand this simple deduction I am satirically asked to expand my knowledge on modernism and post modernism through reading Jean-François Lyotard, Jacques Derrida, Fredric Jameson et al, once on whom I lived upon to understand and realize their perspectives of deconstruction. To me, every high-thinking sets a moral social goal to change the social perspective of the mass, the human thinking. Swami Vivekananda did it. Karl Marx did it. William Shakespeare did it. John Keats did it. Charles Spencer Chaplin did it. Bob Dylan did it. Pink Floyd did it. And these are just random stalwarts form different fields whom we need to consider close to human hearts and people really believe in them, next to the God. I hardly want to talk to people who do not love music, flowers, children and respect women. I hardly make any debates with them who read only Derrida, drawn towards nudism (Explaining things that way is the intellectual subway of siphoning pornography to a high art-form) way and never heard of Merilyn Manson or Metallica. I do not argue with people who do not know the history of commercialization of Shakespearen stages and connecting them to modern theatre. It is one united mission to make the world a better place to live in as a commoner. It is never a complicated thing that makes a common man fails to communicate. Philosophies actually talk about lives, unprecedented, a vision to make life better. Just like for the first time before the wheels were made, there was a picture of it in the mind of some human being. It told him, that ‘if we make it, life will become easier’. Before that, wheels were there in the forms of logs and different ball or spherical-shaped objects that no one looked upon differently. Philosophies are just like that too.
The West is the best. As an Indian my way of seeing things is very common. In the West there are certain hubs where there is an atmosphere to create and the values of such creations are understood in their true perspectives. Mohandas Karamchand Gandhi was a failure, because he had returned to the country. Had he been there in the West, his actual would have been properly realized. When some people including this y-gen aspire to leave this junk yard place called India with their high intellect and education, this rotten third world developing country has a post modern approach of investing indirectly INR 50 lakhs as subsidy to raise a child till her/his 10th level. Not to speak of the throwaway cost of quality government owned, aided and affiliated institutions imparting higher education. I wonder how many parents in India are fortunate enough to even earn or see in their lifetime as much as 50 lakhs of rupees. So before lecturing on someone to become very modern or post modern in thoughts one must learn that she/he is able to have such an opportunity because the state is raising her/him to be so as her/his fundamental right as a human being and citizen of this country. What is important is to understand existentialism in the society with mutual respect to others, not on papers or in the book of laws, but in the very minds. It demands a structure of whatever kind. Even Robin Hood as an outlaw had his own structure. So does Dawood Ibrahim or the Talibans or the Maoists. They run parallel to the governance. The rebels and myrters were terrorists when they had been fighting for the freedom of the country. Even having no structure is structure, we may say, because it is a deviated structure from all the already existing structures and theories.
Let’s finish with a mythical story.
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসগার মাইকেল মধুসূদন দত্ত-কে অর্থ সাহায্য করেছেন শুনে তৎকালীন সমসাময়িক আর এক কবি-ও বিদ্যাসাগরের দরজায় উপস্থিত হলেন একই দাবী নিয়ে, যে আধুনিক কবি হিসেবে অর্থসাহায্য তাঁর ও প্রাপ্য।
ঈশ্বরচন্দ্র বলেছিলেন, “নিশ্চয়ই… একটা ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ লিখে ফেলুন… পাবেন”।
Sunday, 4 October 2020
ম্যাস্টরমশাই: পর্ব ৩
সবেমাত্র ইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেছি।জীবনে এই প্রথম বাস্তবে একজন ইস্কুল শিক্ষক হওয়া। এর আগে হেন কাজ নেই যা করি নি। সে বেড়াতে যাওয়ার জন্য দরজায় দরজায় মোজা বিক্রি করা থেকে সাংবাদিকতা – সব রকমের অভিজ্ঞতা দিয়ে ঝুলি ভরে উঠছিল। কিন্তু একটা ব্যাপার কোনোদিন-ই ছাড়ি নি, সেটা হল শিক্ষাদান করা। প্রাইভেট টিঊশন অনেক পরে শুরু করেছিলাম, যখন নিতান্তই প্রয়োজন হল অর্থ উপার্জনের। তার আগে মোটামুটি আমি যখন থেকে ক্লাস নাইন, তখন থেকে নানা জন-কে আমি শেখাতাম, পড়াতাম। আমি যতটুকু জানি, ততটুকুই। উপলব্ধি করেছিলাম দু’টি বিষয় – প্রথমতঃ আমি খুব একটা ভাল ছাত্র কোনোদিনই ছিলাম না, কারণ আমাদের পরীক্ষা-ব্যবস্থা সেরকম প্রতিফলিত করে না। আর আমি যে ভাবতাম আমি খুব কম জানি, তা কিন্তু নয়। পড়াতে গিয়ে দেখলাম, আমাদের দেশে আমার থেকে কম জানার সংখ্যা আরো অনেক গুণ বেশি। আর দ্বিতীয় উপলব্ধি ছিল যে, অনেক তাবড় তাবড় জ্ঞানী-গুনীজন, খুব ইচ্ছে থাকলেও একটি বিষয়ে বিশেষ কায়দা করে উঠতে পারেন নি – তা হল ইংরেজী ভাষা। আমি বেশ কনফিডেন্স পেয়েছিলাম, যে আমার থেকে কম জানা মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। নিজেকে এগোনোর জন্য অন্যের দুর্বলতার ওপর নির্ভরশীল হতে শুরু করলাম, নিজের অজান্তেই, ধীরে ধীরে। কিছুদিনের মধ্যেই এক অদ্ভুত আনন্দ অনুভূত হতে শুরু করল। যা ভেবে আমি বেলুড়ের বাড়িতে প্রথম কিছু নেহাত ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের অবসর সময়ে পড়াতে শুরু করেছিলাম, যে আমার হাতে একটি শাসন-দণ্ড থাকবে, আমি হলাম গিয়ে কমাণ্ডার, পড়া না পারলেই শাস্তি – একটা হিটলারী আনন্দ এবং ‘শাস ভি কভি বহু থি’-এর মত এক জায়গার ফ্রাস্ট্রেশন অন্য কোথাও বের করে দেওয়ার পদ্ধতির নিপাট ব্যবস্থা – সেই আনন্দের সঙ্গে এর কোনো মিল ছিল না। এ আনন্দ যে কিছু পারে না বলে তার ধারণা, তাকে নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার অবিমিশ্র আনন্দ। আমার থেকে কম জানলেও তার চোখে-মুখে আমার প্রতি যে শ্রদ্ধা ফুটে উঠত তা আমার মত কিশোরের কাছে এক অমূল্য ধন। এই ব্যবস্থায় কোনো অর্থনৈতিক লেন-দেন ও ছিল না। তাই এই সম্পদ-কে আমি কোনোভাবেই কোনোদিন হারাতে তো চাই-ই নি। বরং আগলে রেখেছিলাম ব্যাঙের আধুলী-র মত। জানতাম না এই আধুলী-ই একদিন বাস্তবে সোনা হয়ে ফলবে।
আমার বাড়ির লোকজনও যে আমার রেজাল্ট দেখে আমার প্রতি খুব একটা ভরসা করতেন, তা নয়। বাড়ির ঠেলায় অনেক কায়দা করে ক্লাস এইট পাশ করার সঙ্গে সঙ্গে ইস্কুল থেকে এইট-পাশ সার্টিফিকেট নিয়ে এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে একট মহামূল্যবান কার্ড করালাম, যার ভিত্তিতে নাকি আমার যোগ্যতা অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারী চাকরীর ডাক আসবে। অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল -- মানে আমি স্নাতক হলাম। কিন্তু সেই ততদিনে একটাও ডাক না আসার দরুণ সেই কার্ড স্মৃতির অতলে তলিয়ে গেল। একদিন হঠাৎ পুরোনো কাগজপত্র ঘাঁটতে গিয়ে দেখি সেই কার্ড। আবার সব নথি-পত্র নিয়ে একটি একেবারে নিষ্কর্মা দিন কাটানোর ছুতোয় সেই কার্ড আপডেট করার জন্য পৌঁছালাম হাওড়া জেলার সংক্রান্ত দপ্তরে। বাড়িটির চেহারা জীর্ণ থেকে জীর্ণতর হয়েছে। কিন্তু যুব সমাজের আশা যে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছে তার প্রতিফলন দেখলাম দীর্ঘ লাইনে।
প্রায় আড়াই ঘন্টা ঠায় লাইনে দাঁড়িয়ে অবশেষে পৌঁছালাম দপ্তরীর কাছে।
কাগজপত্র দেখে বললেন—
- কোথায় ছিলে হে? হঠাৎ আমাদের মনে পড়েছে না কি!
- না মানে আমার কাছে আপডেট করার মত সেরকম যোগ্যতা এতদিন ছিল না। গ্র্যাজুয়েট হয়েছি, তাই এলাম।
- অ অ অ অঃ…তা এর মাঝখানে যে মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিক পাশ দিলে, সেগুলো তোমার যোগ্যতার মধ্যে পড়ে না। শুধু ক্লাস এইট পাশটাই এক মনে হয়েছিল যে খুব বড় যোগ্যতা, না কি!
- না ঠিক তা নয়…ভেবেছিলাম বার বার আর আপনাদের বিরক্ত না করে একদম গ্র্যাজুয়েট হয়ে তারপর না হয় একসঙ্গে সবটাই আপডেট করিয়ে নেব। তার আগে তো ডাক এলেও চাকরী করার কোনো প্ল্যান ছিল না…তাই।
- তবে অতদিন আগে কার্ড করানোর দরকার কি ছিল বাবা! একেবারে গ্রাজুয়েট হওয়ার পরই করতে পারতে।
- তাতে তো লাইনে অনেক পিছিয়ে যেতাম।
- বাহ বাহ বেশ বলেছ। তবে কি না বলে রাখি লাইনে আর এগিয়ে গিয়ে কাজ নেই! এই নাও নতুন ফর্ম, নতুন করে আবার জমা দাও। তোমার কার্ড-টি এক্সপায়ার করে গেছে।
- বলেন কি? কেন?
- পাঁচ বছর অন্তর রি-নিউ করতে হয়, এক বছর গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হয়। তুমি বাবা, সব পার করে ফেলেছ। আর কোনো রাস্তা নেই।
- কোনো রাস্তা নেই!!!
- না হে!...নেক্সট…!
আমি বিফল মনোরথে বাইরে এলাম। একটা সিগারেট খেয়ে বুদ্ধির গোড়ায় ধোঁয়া দিতেই আবার একগুঁয়েমী-টা চেপে বসল। নতুন ফর্ম জমা দিলাম না। সব লাইন পেরিয়ে ওই দপ্তরী ভদ্রলোক-কে দেখিয়ে দেখিয়ে ঠায় একপাশে দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রায় আধঘন্টা পর আমাকে বললেন,
- কি ব্যাপার তুমি আবার ওরকম থামের মত দাঁড়িয়ে আছ কেন? নতুন ফর্ম ভরে এনেছ? সব নথি প্রত্যয়িত করা আছে?
- ‘প্রত্যয়িত’…!!! সেটা কি স্যার??
- প্রত্যয়িত নকল, মানে অ্যাটেস্টেড ফটোকপি যাকে আবার জেরক্স বলে…দিন আ সছে… বাঙালীর ছেলে, বাংলাটা শিখে নাও। সব কাজ বাঙলায় হবে। ইংরেজী চলবে না।
- ও তাই বুঝি…না স্যার আমি আনি নি, নতুন ফর্ম ভরে…অ্যাটেস্টেড ফটোকপিও নেই আমার কাছে।
- তবে সব রেডী করে নিয়ে এস…যাও…
- স্যার আমি প্রস্তুত…
আমার ‘রেডি’-কে বাংলায় ‘প্রস্তুত’ অনুবাদের সংশাস্বরূপ এই প্রথম একটু উনি একটু অন্যরকম হাসলেন। বুঝলাম ভদ্রলোকের অনবদ্য সেন্স অফ হিউমর। আমি ও সেই সুযোগ নিতে ছাড়লাম না।
- স্যার আমার বিশ্বাস আপনি নিশ্চয়ই কোনো একটা উপায় আপনার ঝুলিতে আছে যেটার সাহায্যে আমার পুরোনো কার্ড-টা রাখা যাবে।
- তাই? বলছ…আছে?
- হ্যাঁ স্যার, আমার স্থির বিশ্বাস। আছে, থাকতেই হবে।
- তবে অপেক্ষা করতে হবে।
- নিশ্চয়ই।
সব কাজ সেরে, উনি আমাকে ডাকলেন।
- আমার ঝুলিতে থাকলেই হবে না। ঝুলি থেকে বের করার ক্ষমতা, অফিসারের…বুঝলে?
- ও ও ও আধিকারিকের…
ততক্ষণে বুঝেছি যে এই ধরণের বাং-রেজী মজা উনি বেশ পছন্দ করেন। তাই দেবতা এই পুষ্পাঞ্জলীতে পরম তুষ্ট হয়ে বললেন,
- চল, দেখি তোমার ‘আধিকারিক’ কি কন!
অফিসার চশমার ফাঁক দিয়ে আমাকে বেশ কয়েকবার জরিপ করে আমার যাবতীয় নথি দেখতে দেখতে শুনতে লাগলেন আমার সমস্যার কথা দপ্তরীর কাছ থেকে। তারপর অবশেষে এল সমাধান।
- আপনার কার্ড-টা বেশি নয়, মাস চারেক হল পার্মানেন্টলি এক্সপায়ার করেছে। একটা কাজ করুন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, একটা মেডিকেল সার্টিফিকেট জোগাড় করুন। এমন কিছু ঘটান যেখানে আপনার অন্ততঃ তিনমাস বেডরেস্ট রেকমেন্ডেড থাকবে সাথে দু’মাস স্ট্রিক্ট রেস্ট্রিকশন। বুঝলেন?
- স্যার রিপোর্ট তো দিতে পারব না।
- জানি পারবেন না। আমি বলেছি কি রিপোর্টের কথা? যা বললাম তাই নিয়ে এসে সরাসরি আমার হাতে দিয়ে যাবেন। সাধুবাবু আপনাকে বাকিটা বুঝিয়ে দেবেন।
আমি কৃতজ্ঞতায় আল্পুত হয়ে বললাম,
- স্যার অনেক ধন্যবাদ।
- ও সব পরে হবে, আগে নিজের কার্ডটা ভেন্টিলেশন থেকে শিগগির বের করুন, ডাক আসতে চলেছে।
সাধুবাবু বেরিয়ে বললেন,
- কি হল বলত আমাদের আজ ? আমি তো নিজেকে চিনতে পারছি না, না স্যার কে। ওরকম তিরিক্ষি মেজাজের একটা লোক, এককথায় রাজি হয়ে তোমাকে ওনাকে সরাসরি কাগজ জমা দিতে বললেন।
- বোধ হয় আপনি নিজে আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন বলেই সম্ভব হল।
- …হুঁমমমম…কথাটা খুব মিথ্যে বল নি…আমি ও এরকম করি না সাধারণতঃ…আজ আমাদের কি যে হল!!!
- আপনারা আসলে এরকমই…
- কি করে বুঝলে?
- জানি স্যার, কারো ভালো করলে আমাদের সকলেরই ভাল লাগে। কিন্তু এমন কঠিন বাস্তব, যে ভাল করার ইচ্ছেটাই সকলের মধ্যে মরে গেছে…
- অনেক তেল দিয়েছ, এবার একখান পান খাওয়াও দেখি আমাকে…একশো বিশ জর্দা দিয়ে…
অ্যাক্সিডেন্টে ডান পা বিশ্রীভাবে ভেঙে বিছানা নিয়েছিলাম গত তিন মাস ধরে, এই মর্মে একটা মেডিকেল সর্টিফিকেট জোগাড় করা গেল।সব নিয়ে আবার গেলাম এক সপ্তাহ পরে।
সাধুবাবু বললেন,
-আরে এস ভায়া…তুমি তো ম্যাজিক জান দেখছি!
-কেন স্যার।
অফিসারের ঘরের দিকে ভুরু নাচিয়ে বললেন,
-উনি তো তোমাকে চোখে হারাচ্ছেন মনে হচ্ছে। এ ক’ দিনে অন্ততঃ দু বার আলাদা করে জিজ্ঞেস করেছেন, তুমি এসেছিলে কি না। তা আমি বললাম, স্যার আপনি তো ছোঁড়াকে সব আপনার হাতে সরাসরি দিতে বলেছেন। এলে তো আমি আপনার কাছেই নিয়ে আসব , না কি!
আমি খুব বোকা বোকা হাসলাম।
- তা সব গুছিয়ে এনেছ তো?
ঘাড় নেড়ে জানালাম যে, হ্যাঁ এনেছি।
- চল তবে…আর দেরী কেন!
অফিসারের ঘরের সামনে এসে সাধুবাবু পর্দা সরিয়ে উঁকি দিয়ে বললেন,
-আসব স্যার? সে ছোকরা এসেছে…অবশেষে…
-আসুন।
আমার দিকে তাকিয়ে অফিসার বললেন,
-কোথায় ছিলেন মশাই…সেই যে গেলেন…একটা মেডিক্যাল সার্টিফিকেট জোগাড় করতে এত সময় লাগে?
-সরি স্যার, এরকম সার্টিফিকেট দিতে খুব একটা কেউ রাজী হচ্ছিলেন না তো, তাই একটু দেরী করে ফেলেছি।
রেগে গিয়ে প্রায় ভেঙচী কাটার সুরে বললেন,
-দেরী করে ফেলেছি!…আজ বুধবার…জানেন!!!! সামনের সোমবার আমি চলে যাচ্ছি, ট্রান্সফার হয়ে? আমি চলে গেলে এই কাজ আর আপনার হবে না। অন্য কেউ করে দেবে না এই কাজ…আমি বলে তাই...
সাধুবাবু অবাক হয়ে বললেন,
-সে কি স্যার, আপনি ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছেন, কই আমাদের বলেন নি তো?
- আপনাদের বললে আমার ট্রান্সফার কি আটকে যাবে নাকি!
আমি মুখ নামিয়ে বসে রইলাম। কি বলব, কি করব ভেবে পেলাম না, কিছুতেই।
-কই দেখি কাগজ-পত্র যা এনেছেন…
সব দিলাম। পাকা চোখে সব দেখে সাধুবাবুকে বললেন,
- যা যা চাইছে সব করে দিন।
এরপর আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ইংরেজী অনার্সে এই জেলা থেকে মাত্র চব্বিশ জন আছে, যাঁদের মধ্যে আপনার রেকর্ড সব থেকে ভাল। একটাই খিঁচ, বি-এড নেই। জনা চারেকের আছে। আপনি যদি বাকি তিরিশ নম্বরে কিছু একটা আলাদা করে উঠতে পারেন, তাহলে একটা চান্স আছে বৈ-কি।
-স্যার ডাক আসবে নাকি?
-অনেকগুলো…স্কুল সার্ভিস কমিশন বসার আগে এক্সচেঞ্জ থেকে এই শেষ ডাক শিক্ষাদপ্তরের। ওরা চাইছে কমিশন বসার আগেই যত শিক্ষক পদ শূন্য পড়ে আছে, সেগুলো পূর্ণ করার।
-বলেন কি স্যার!
-হ্যাঁ…যদি ভাগ্যক্রমে লেগে যায়, আমাকে মিষ্টি খাইয়ে যাবেন। মনে রাখবেন, আজ থেকে তিরিশ বছর পর, আপনার রিটায়ার করার মুখে, লোকে আপনাকে দেখতে আসবে…
- নিশ্চয়ই খাওয়াব স্যার, মিষ্টি!...কিন্তু আমাকে লোকে দেখতে আসবে কেন, সেটা তো বুঝলাম না স্যার?
-তখন পার্মানেন্ট পোস্টে পড়ে থাকা সরকারী শিক্ষকের সংখ্যা হবে হাতে গোনা…আবার এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এই চাকরী…সে তো খড়ের গাদায় ছূঁচ খোঁজার মত হবে।আপনি তাঁদের মধ্যে একজন । বুঝলেন।
কার্ড-টা রিনিঊ করে যখন বেরোলাম, মনে হল যেন চাকরীটা কোথাও আমার জন্য গোকূলে বেড়ে অপেক্ষায় রয়েছে…
(চলবে)
Tuesday, 29 September 2020
ম্যাস্টরমশাই: পর্ব ২
(ইংরেজীতে)
-আপনি কি পড়াবেন?
-তৃতীয় লেসন-এর গল্পটা…
-ওটা বেশ কঠিন…
-আমার আবার ওটাই পছন্দ।
- বেশ, শুরু করুন, তবে…
-কতক্ষণ সময় পাব? পড়ানোর জন্য?
-পনেরো মিনিট।
আমার এই নিয়ে রাজ্য সরকার পোষিত ইস্কুলে
চাকরী করার জন্য তৃতীয় ডাক। আগের দুই ডাকের প্রথমটিতে সারাদিন নানা সরকারী পদ্ধতি অনুসারে
নথি পেশ এবং অন্যান্য সব সমাধা হওয়ার শেষে জানতে পারলাম যে আগে থাকতেই নাকি সেখানে
অন্য আর এক জনের ‘খুঁটি’ বাঁধা ছিল। তখন আমি
নানা সংবাদ পত্রে লেখালিখি করে বেশ খানিকটা এগিয়ে পড়েছি। কিন্তু ওই জীবন ও তার মূল্যবোধের
সঙ্গে কিছুতেই খাপ খাচ্ছে না – সাংবাদিকের স্বাধীনতা টেঈলরমেড হলে যা হয় আর কি! সঙ্গে
আমার অতিকষ্টে যোগাড় করা খবর মাননীয় সাব-এডিটরের
দয়ায় একটু অদল বদল করে অন্যের নামে ছাপা হয়ে যাচ্ছে। কারণ, আমি ঠিক করে তৈলমর্দন করতে
পারছি না। উল্টোদিকে সিনগল-মল্ট পৌঁছোচ্ছে তৈলের বদলে। দেখতে পেলাম, অন্যদের কেরীয়ার
গ্রাফ কেমন হু হু করে আমাকে ছাপিয়ে চলে যাচ্ছে। ফ্রি-লান্সার হিসেবে একা সুদীপ-দার
আমাকে আগলে চলল। এছাড়া দেবিকার কাছ থেকে পেলাম
যথারীতি বাইরের জগতের সঙ্গে লড়ে যাওয়ার পাঠ। ১৯৯৭ সালের নভেম্বর মাস – হাতে দুটো চাকরী,
একদিকে কর্পোরেট মিডিয়া আর এক দিকে ছা-পোষা ইস্কুল মাস্টারী। খবরের কাগজে আমার নাম
সমেত খবর ছাপা হবে, এই বাই-লাইনে নিজের নাম দেখে দেখে এত হেজে গিয়েছি যে সেটা তখন আর
আলাদা করে কোনো অর্থ বা গুরুত্ব কোনোটাই রাখে
না। যা অর্থবহ তা হল কোনটা আমাকে ভাল রাখবে।
ছোটবেলায় একটা স্বপ্ন দেখতাম, যেমন সব ছোটরাই দেখে যে আসেপাশে বড়দের মত স্বাধীন কবে হব। বড় হতে হতে বুঝেছিলাম, ছোটরাই বরং সবথেকে বেশি স্বাধীন। যত বড় হব জীবন তত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে পরাধীন তো বটেই, অজগরের মত ধীরে ধীরে আমাকে একটা মাংসপিণ্ডে পরিণত করলেও আশ্চর্য হব না। তাই তুল্যমূল্য বিচার করে দেখলাম, যে হয়ত অনেক কম বেতনের চাকরী, তবে একটা অন্য ভাললাগা আছে। বাবা-মা-দাদু সবাই শিক্ষক। তাই বংশানুক্রমে এই পেশার প্রতি আনুগত্যস্বরূপ সচেষ্ট হলাম। আমাকে এই ব্যাপারে কেউ জোর করে নি। বাবা বলেছিলেন
-
তুমি
যা ভাল বোঝ…।
ভেবে দেখলাম, বিকেল সাড়ে চারটের পরে
আমি সম্পূর্ণ স্বাধীন। ষাট বছর বয়েস পর্যন্ত চাকরী করতে পারব, অত্যধিক মানসিক চাপ ও
সংঘাত-কে ব্যতিরেকেই। সবথেকে বড় কথা দিনের এতটা সময় নিজের। সেই সময়ে আমি ফ্রি-লান্সিং
চালিয়ে যেতেই পারি। আর এই চাকরীতে কাউকে আমার কাজের আউটপুটের জন্য কৈফিয়ৎ দিতে হবে
না। না থাকবে টার্গেট না ডেডলাইন। সিলেবাস এমনিই শেষ হয়ে যাবে কারণ মানুষ কিছুর জন্য
সবটুকু উজাড় করে দিতে পারে, যখন তার মধ্যে সেই বিষয়ে দুটো জিনিস থাকে –প্রথমতঃ, সেই
কাজ-কে ভালবাসা আর দ্বিতীয়ত, সেই কাজে তার অপার স্বাধীনতা। দেখলাম, জীবন ও কাজ -- দুটোতেই
স্বাধীনতা দেয় এই পেশা। সিদ্ধান্ত নিলাম, সাংবাদিক নয়, শিক্ষকই হব, প্রধানত।
তারপর সেপ্টেম্বরে এই ডাক। একটাই ভরসা, টাইমস অফ ইন্ডিয়া-র চাকরীটা মোটামুটি পেকে এসেছে, আর মাস দু-একের অপেক্ষা। তবুও স্বাধীনতার স্বাদ পেতে একবার শেষ চেষ্টা করে দেখা যাক। সেদিন মোট ক্যাণ্ডিডেট আমাকে নিয়ে বাঈশ জন। বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, নাম কালিবাবু, এসে সটান আমাকে বললেন,
-আপনার যা রেকর্ড দেখছি, তাতে আশেপাশে
কেউ নেই। শুধু ক্লাস-প্রেসেন্টেশন / ডেমোন্সট্রেশন আর পারসোনাল ইণ্টারভিউ- দুটো
যেন ভাল করে উতরে যায়, দেখবেন। মনে রাখবেন এখানে পুরোটাই কিন্তু ফেয়ার গেম। কোনো কারচুপি
নেই।
-আপনি মেথড ফলো করুন। হচ্ছে না…
আমি কোনো কথায় কর্ণপাত না করে আমার
মেথডেই পড়িয়ে চললাম।
মিনিট দশেক পরে বলা হল,
-ঠিক আছে…আর দরকার নেই।
আমি খুব বিনয়ের সঙ্গে বললাম,
-
দশ
মিনিট হয়েছে। আমি কি আমার জন্য বরাদ্দ পনেরো মিনিটের আর পাঁচ মিনিট পেতে পারি?
সবাই
এ-ওর দিকে তাকিয়ে শেষে রাজি হলেন।
আমি
ছেলেদের আমার পড়ানো অংশ থেকে প্রশ্ন করতে থাকলাম। সব্বাই ঠিক উত্তর দিল। দুটো এম-সি-কিউ
লিখতে দিলাম। দু-তিন জন ছাড়া সকলেই ঠিক উত্তর ও লিখল।
আমার আগে
যাঁরা অত্যন্ত সহজ পাঠ পড়িয়ে গিয়েছেন, সেখান থেকে প্রশ্ন করতে ক্লাসের ছাত্ররা একটি
প্রশ্নের উত্তর-ও দিতে পারল না।
তখন আমি সিলেকশন কমিটিঢ় উদ্দেশ্যে বললাম,
-
আমি
শিক্ষক। আমার লক্ষ্য সার্থক শিক্ষাদান। যে ছাত্ররা শিক্ষালাভের আশায় উন্মুখ হয়ে ক্লাস
আলো করে আছে, তাদের আমি এমন ‘মেথড’-এ পড়াতে নারাজ, যে গোটা ক্লাসটাই অন্ধকারে ডুবে
যায়। আমার আগে যাঁরা মেথড ফলো করে পড়িয়েছেন, আমার বিশ্বাস তাঁরা সাফল্যের সঙ্গে শিক্ষাদানে
ব্যর্থ হয়েছেন, এবং তা আমি আপনাদের সামনে প্রমান করে দিলাম। শিক্ষক হিসেবে আমার প্রাথমিক
কর্তব্য সফল শিক্ষাদান, তা সে যে মেথডেই হোক না কেন। ধন্যবাদ সকলকে আমাকে এই এক্সট্রা
সময়টুকু দেওয়ার জন্য।
কালিবাবু আমাকে এসে বললেন,
-
তুমি
আমার থেকে অনেক ছোট। তাই ‘তুমি’ করেই বলছি। এটা তুমি কি করলে। তুমি পুরো সিলেকশন কমিটি
কে চটিয়ে কেন দিলে, এভাবে? তুমি কি সত্যি-ই চাকরীটা করতে চাও না!
- না
স্যার, অবশ্যই চাই। কিন্তু আমার যেটা ঠিক মনে হয়েছে আমি করেছি। এবার সবটাই ওনাদের হাতে।
কি ঠিক কি ভুল ওনারা বিচার করুন।
পারসোনাল ইণ্টারভিউ-তেও তাই-ই হল। অনেক কিছু নিয়ে বিতর্ক। কিন্তু মাথা গিয়েছে চড়ে, দমবার পাত্র আমি নই।
সাংবাদিকতা আমাকে একটি বিষয়ে ভীষন
অনুশীলিত করেছিল। অনেক তাবড়-তাবড় মানুষের সামনে নির্ভিয়ে কথা বলতে, তাদের বিরোধীতা
করতে। তাদের কথার প্যাঁচেই তাদের ঘায়েল করতে। তাই বুক এর দুরুদুরু করে না, পা-ও কাঁপে
না, তিনি যে তালেবর-ই হন না কেন।
তাই লাগাতার চলল সেই রেশ…একনাগাড়ে।
এক্সপার্ট বললেন,
-এত অ্যারোগ্যান্স নিয়ে শিক্ষকতা করবেন কি করে?
-আমি ছাত্রদের পড়াব, শিক্ষকদের নয়। কারণ এখানে উপস্থিত সকল শিক্ষক আমার থেকেও অ্যারোগ্যান্ট, কারণ তাঁদের বিশ্বাস যে তাঁদের থেকে বেশি কেউ জানতে পারে না। তাই তাঁদের বিরোধীতা করলেই মনে হয় সেটা অ্যারোগ্যান্স। তাঁরা ওপেন মাঈন্ডেড নন কোনো স্বাস্থ্যকর আলোচনা বা বিতর্কের ক্ষেত্রে। ‘ইন্টারভিউ' শব্দের অর্থ ভাবের বিনিময়। আমি তাই-ই করার চেষ্টা করছি। ভুল বলে থাকলে মাফ করবেন। বলুন তো, এই কথাটা কেউ কোনো ক্যান্ডিডেট-কে জিজ্ঞেস করেন, “আচ্ছা আপনি চাকরীটা করবেন তো?” …আমরা এই বাইশজন আজ সব কাজ ছেড়ে এখানে সারাটা দিন খরচ করে কি জন্য এসেছি?
-আমাদের জানতে হয়, সরকারী ভাবে যে ক্যান্ডিডেট 'উইলিং' না 'আনউইলিং'।
-সেটাই বলছি, কেউ আনউইলিং হলে আসতেন না। এটা জিজ্ঞেস করা মানে তাঁদের সবাইকে বেশ ঘুরিয়ে অপমান করা...বলতে বাধ্য হচ্ছি সেই বোধের খুব অভাব আছে তাহলে...উচ্চশিক্ষিত হয়েও..।।
যখন ঘর থেকে বেরোলাম, কালিবাবু আমাকে এই মারেন তো সেই মারেন। জানি না, একজন অপরিচিত ব্যক্তি হটাৎ সকাল থেকে কেন আমাকে এত স্নেহ করে চলেছেন। আমি সবথেকে জরুরী দু’টো জায়গায় বাকি একুশ জন কে ছাপিয়ে কিছু করলাম বটে, কিন্তু যা করলাম, তাতে কোনো আশা রইল না আর। একুশজনের আট-দশ জনের মুখে এক অব্যক্ত আনন্দ ফুটে বেরোচ্ছে। ওদের মধ্যে যে কোনো একজন পাবে বটে, চাকরীটা। কিন্তু ভাবে নি, আমি এইভাবে ওয়াক ওভার দেব।
তবে বেশ মনে মনে আনন্দ পেলাম, ওই একুশ জনের সঙ্গে আরো পাঁচজনকেও ধুয়ে এসেছি। চাকরীটা না পেলেও সারাজীবন এই ইন্টারভিউ তাঁদের মনে থাকবে…যেমন আমার আছে, আজও।
নভেম্বরের শুরুর দিকে হঠাৎ একদিন আমাদের সালকিয়ার বাড়িতে ওই ইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মহাশয় হাজির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে। বললেন,
-ভারতীয় ডাক ব্যবস্থার যা অবস্থা তাতে সবটুকু ভরসা করতে পারলাম না। ডাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদি দেরী হয়ে যায়, তাই তোমাকে হাতেও একটা পৌঁছে দিলাম।
ঠিক পরের দিনই অপ্রত্যাশিত ভাবে ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-র প্রোবেশানারী অফার লেটার এল, স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে। উত্তেজনা ও মোহ পাশে রেখে নীল রক্তের ডাকে সাড়া দিলাম। পেরিয়ে গেল তেইশ বছর, এই ইস্কুলেই।
বাবা ঠিকই শেখান…সিস্টেমের সব খারাপ, এটা কখনই হতে পারে না। লাল ফিতের বজ্র-আঁটুনিতে ফস্কা গেরো-ও রয়েছে বই কি!
Sunday, 27 September 2020
ম্যাস্টরমশাই: পর্ব ১
শিক্ষক হতে গেলে কি কি থাকা দরকার, এই নিয়ে একটি বহু প্রচলিত বাংলা দৈনিকের সাপ্তাহিক শিক্ষার পাতায় যখন লিখতে বসেছিলাম, বুঝেছিলাম যে সময় বদলে গিয়েছে। আমি নিজে পেশায় শিক্ষক, রাজ্য সরকার পোষিত অনামী এক বিদ্যালয়ের। আমার বাবা-ও তাই-ই ছিলেন। তবে সে সময় ছিল সত্যি-ই অন্য।শিক্ষকদের সমাজে এক অন্য সম্মান ছিল। এখন তা কোনো এক কারনে ক্ষয়ে গিয়েছে। পুরোনো মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়ত তার একটা বড় কারণ। এখন যেমন শিক্ষকসমাজের ওপর কেমন যেন সবার একটা চাপা গাত্রদাহ – এত ছুটি কেন, কয়েক ঘন্টা পড়িয়ে এত বেতন, কেন? শিক্ষকদের কেন সমাজ সেবামূলক নানান কাজে যোগ করা হচ্ছে না, ওঁদের তো তেমন কোনো কাজ নেই, ইত্যাদি নানা রকমের ব্যাপার। সবটাই কিন্তু ওপর ওপর জানা। বলার কথা তাই বলা। শিক্ষকদের ছোট করে বেশ আনন্দ আছে। দুর্বল জাত, এসবের উত্তর দিতে তাঁদের রুচিতে বাধে। তাই মার- কাটারী, চুন চুন কে…।
যে কোনো সরকারী কর্মচারী বছরে বাহান্নটি শনিবার সমেত সারা বছরে যত অন্যান্য ছুটি আছে সব ভোগ করেন। আর্ণড লিভ আছে সঙ্গে ট্রাভেল লিভ আলাঊএন্স ও পান অনেকেই। সমগ্র শিক্ষক–কুল প্রতি শনিবার নিজের কর্তব্যে অবিচলিত থাকেন। গ্রীষ্মাবকাশ, পুজোর ছুটি এবং অন্যান্য সব ছুটি মিলিয়ে সারা বছরে মোট পঁয়ষট্টি টি ছুটির বেশি কিছু নেই। পাঁচদিনের বেশি টানা বেড়াতে গেলে মিথ্যে কথা লিখে মেডিকেল লিভ নিতে হয়, কারণ অন্য কোনো রকম ছুটি, আমরা শিক্ষকরা, পাওয়ার যোগ্য বলে আইনে বা নিয়মে নেই।
একটি ক্লাস সামলে পড়ানো, একেবারে কিচ্ছু না জানা ছাত্রছাত্রীদের, যারা নিজের নাম পর্যন্ত ঠিক করে লিখতে পারে না, পড়তে পারা তো দূর, যথার্থ শিক্ষাদান খুব সহজ কাজ নয়। এরকম পর পর তিনটি ক্লাস করলে যে পরিমান শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা লাগে তা ঠিক বলে বোঝানো সম্ভব নয়। খুব যে আরাম-দায়ক মজার ব্যাপার, তা কিন্তু আদপেই নয়। গত তেইশ বছরে যাঁরা আমার সামনে এই কথা বলেছেন, তাঁদেরকে একদিন একঘন্টার জন্য কাজটা করে দেখাতে অনুরোধ করেছি। কেউ এগিয়ে আসেন নি, শুধু বলার কথা বলে গিয়েছেন যে শিক্ষকরা পড়ান না, বা ভুল পদ্ধতিতে পড়ান। তবুও প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ একসময়ে নিরক্ষর ছাত্রছাত্রীদের গড়ে নিয়ে এই শিক্ষকরা কি করে নানা বৈতরণী পার করে দিচ্ছেন, গাভীর লেজ না ধরিয়েই, তা আশ্চর্যের ও অত্যন্ত গর্বের। হয়ত আমার সেই ‘ঠিক পদ্ধতি’ শিখতে চাওয়ার অনুরোধের ধরণে কোনো গোলমাল ছিল, তাই জ্ঞান দেওয়ার বাইরে গিয়ে কেউ-ই এগিয়ে আসেনি নি। খুব সন্দেহ আছে, এঁদের কতজন ‘ডিসলেক্সিয়া’ কথাটির সঙ্গে, ‘ফার্স্ট জেনারেশন লার্নার’ সম্পর্কে পরিচিত। যদিও বা পরিচিতি থেকে থাকে তা ‘তারে জমিন পর’- এর আমির খানের দয়ায়। কিন্তু ওই ডিসলেক্সিয়া ফার্স্ট জেনারেশন লার্নার-দের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে হিমশৈলের শিখরের ভগ্নাংশ মাত্র।
শিক্ষকদের বেতনের ব্যাপারে আমাদের স্বয়ং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই ভীষণ হিংসাকাতর। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমার চেনা পরিচিত কোনো শিক্ষক অন্য কাউকে এই চাকরী গ্রহণে বাধা দেন নি। তখন গ্ল্যামারাস চাকরী করতে চেয়ে সেই দিকে চলে গিয়েছেন। আমাদের বেতন কাঠামো-কে করুণার চোখে দেখেছেন। ‘লাইফ ইজ সো বোরিং’ বলে নাক সিঁটকিয়েছেন। কেন -- এর উত্তর তাঁরাই দিতে পারবেন, যাঁরা আজ শিক্ষককুলের ওপর নেহাত-ই অকারণে শ্রদ্ধা হারিয়ে খড়্গহস্ত হয়ে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। বিচ্ছিন্ন কিছু অবাঞ্ছনীয় ঘটনাকে সম্বল করে শিক্ষা-ব্যবস্থার মেরুদণ্ড-কে প্রতিনিয়ত আঘাত করলে সমগ্র জাতি কিন্তু একদিন পঙ্গু হয়ে পড়বেই পড়বে।
আমি যে সরকার পোষিত বিদ্যালয়ে গত তেইশ বছর ধরে শিক্ষা দিয়ে চলেছি, সেটি আজ ছাত্রশূন্য। উলটো দিকের গলির মধ্যে প্রাইভেট ইংরেজী মাধ্যম বিদ্যালয়টিতে ছাত্রছাত্রী উপচে পড়ছে। প্রায় তিন হাজারের কাছাকাছি। আমার মত দৈন্যদশাগ্রস্ত সরকার পোষিত বিদ্যালয় হাওড়া জেলার বুকে প্রায় বত্রিশ-টি। সরকারীভাবে কিছু চাইতে গেলে, কোনো রকম আলাদা উদ্যোগের বেশ অভাব লক্ষ্য করা যায়। আমি আমার চাকরী জীবনে কোনোদিন দেখলাম না যে কোনো স্তর থেকে এই বিদ্যালয় গুলিকে উন্নত করার জন্য কোনো আলোচনা হয়েছে, বা কেউ এসে বলেছেন, "কি দরকার বলুন। আমরা পাশে আছি"।
আম্ফানে ছাদ উড়ে চলে গিয়েছে, জানলা-দরজার পাল্লাও। সঙ্গে করোনা আবহে সব ছবি তুলে এস্টিমেট দিতে দিন দশেক দেরী হওয়ায় আমাদের বিদ্যালয়ের নাম আম্ফানে অর্থসাহায্য পাওয়ার তালিকা থেকেই বাদ। যে সমস্ত বড় ও নামী ইস্কুল সময়ে জমাই দেন নি, তাঁদেরটা ব্যাকডেটে দিব্যি জমা করার জন্য অফিস থেকে ফোন করে জমা দেওয়ার জন্য তাগাদা দেওয়া হচ্ছে রীতিমত। আগে রাগ হত, এখন হাসি পায়। ‘তেলা মাথায় তেল দেওয়া মনুষ্য জাতির রোগ’ মনে হয়।
শিক্ষক হিসেবে কিছু সরকারী ন্যায্য প্রাপ্য চেয়ে বসলেও কেরানী থেকে আধিকারীক সবার সাহায্যের বদলে মেলে তির্যক মন্তব্য, যার জন্য কোনো শিক্ষক বা তাঁর বহু কষ্টে অর্জিত বিদ্যা, কোনোটিই দায়ী নয়। ডিস্ট্রিক্ট ইন্সপেক্টর সাহেবের অফিসে গেলে মনে হবে, এত লেখাপড়া করাটাই মস্ত ভুল হয়ে গিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ গল্প:
চাকরী করে সান্ধ্যকালীন এম-এ কোর্স (রেগুলার) শেষ করেছিলাম। তার ন্যায্য প্রাপ্য আদায় করতে যে সব কাগজ পত্র লাগত, নানা জায়গা থেকে, সে সব জোগাড় করতেই বছর খানেক কেটে গেল। অবশেষে জোগাড় যন্ত্র করে বিদ্যালয়ে জমা দিলাম সব। তিন বছর পরে ফাইল খুলে দেখলাম, আমার নথি পড়েই আছে, জেলা পরিদর্শকের দপ্তরে জমা-ই হয় নি। কারণ জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক মহাশয় জানালেন, কোনো এক সিনিয়র শিক্ষক বলেছেন, আমাদের বিদ্যালয়ে অনেক এম-এ এবং এম-এস-সি আছেন। আর এর থেকে বেশি দরকার নেই। সবে দু-দিনের ছোঁড়া, ও পাবে নাকি, স্কেল? অত্ত সোজা?
কোনো কথা না বাড়িয়ে সব আবার তৈরী করে প্রধান শিক্ষকের সহায়তায় নিজে নিজের ফাইল নিয়ে জমা করলাম জেলা পরিদর্শকের দপ্তরে। আবার মাস ছ’য়েক কেটে যাবার পর খোঁজ নিতে গিয়ে জানলাম, ফাইলে বেশ কিছু নথী নেই। আমার মনে আছে আমি জমা দিয়েছিলাম। আবার দিলাম, কিছু না বলে। আবার অন্য নথী, যা আগের বার ছিল, তা এবারে নেই। চলল এভাবে আরো ছ’মাস। রফা হল শেষে, আমি যা পাব তার পাঁচ শতাংশ দান দেব। একদিন জেলা পরিদর্শক সাহেব ডেকে পাঠালেন।
ওনার ঘরে ঢুকে দেখলাম উনি চার পাঁচজন ব্যাক্তির সঙ্গে চা-বিস্কুট সহযোগে রসালাপে ব্যস্ত। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অধৈর্য হয়ে বললাম।
--বসতে পারি?
না তাকিয়েই হাত দেখিয়ে বসতে বললেন। সবাই থেমে আমার দিকে তাকালেন।
--বলুন কি ব্যাপার।
--এই এম-এ-র স্কেলটার জন্য এসেছিলাম। একটু যদি দয়া করে দেখে ছেড়ে দেন, বড় উপকার হয়। অনেক দিন থেকে ঘুরছি।
--কোন ইস্কুল?
নাম বলতেই, অন্য যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন আমার দিকে আপাদ মস্তক তাকিয়ে বললেন,
--নতুন?
--না, বছর পাঁচেক হল।
--তোমাদের ইস্কুলে ক্লাস হয়? যত সব বাপে-তাড়ানো মায়ে-খেদানো ছেলে তো জোটে…আর কটাই বা ছাত্র যে এম –এ স্কেল চাইছ?
ডি-আই সাহেব ও মৃদু হেসে বললেন,
--বলুন এবার, কি বলবেন, চাইতে লজ্জা করে না?
আমি তখন আর পারলাম না, ধৈর্য রাখতে, যা হয় হোক। আত্মসম্মান রখহার তাগিদে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হলাম। উনি হতে পারেন আধিকারিক, সরকারী চাকরী করেন। আর যিনি কপচাচ্ছিলেন উল্টোদিকের চেয়ারে বসে, তিনি আমার মতই একজন শিক্ষক মাত্র। আমি তো কোনো অন্যায় করি নি, যে অকারণে এত লেকচার শুনব!
--স্যার, বলতে বাধ্য হচ্ছি যে আমাদের বিদ্যালয়ে যে ধরণের ছেলেরা পড়তে আসে, তাতে তাদের কোনো মেধাবী ক্লাস এইটের ছাত্রই শিক্ষক হিসেবে যথেষ্ট। আমি লজ্জিত নই এই কারনে যে লজ্জা তাঁর হওয়া উচিত যিনি এই পদটিকে এম-এ পর্যন্ত অনুমোদন দান করে সরকারী টাকার অপব্যবহার করেছেন। অনেক এন-জি-ও আছে যাঁরা দশ জন পিছিয়ে পড়া ছাত্র দেখিয়ে লাখ-লাখ টাকা উপার্জন করছে। আমরা তো তবু শুধু মাইনে পাই। আমি গর্বিত যে এই সব খেদানো ছেলেদের ফি বছর কোনো প্রাইভেট টিউশন ছাড়াই আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা মাধ্যমিক পাশ করিয়ে দেন এক্কেরে বিনি পয়সায়। আর রইল পড়ে ক্লাসের কথা,ভবিষ্যতে কোনোদিন শিক্ষক নেতা হলে আমি নিশ্চই একদিন হলেও আপনার অফিসে বসে স্কুল আওয়ারে নিজের ক্লাস কামাই করে, আপনার পয়সায় চা বিস্কুট খেতে খেতে, অন্য কোনো জুনিয়র শিক্ষক কে ক্লাস নেওয়ার শিক্ষা দান করে যাব। এ-ও তো শিক্ষা, তাই না? ঢেঁকি সগগে গিয়েও ধান ভাঙে!
সেই শিক্ষক নেতা চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠলেন,
-- হাঊ ডেয়ার ইউ! তোমার সাহস তো কম নয় হে ছোঁড়া! আমাকে অপমান করলে তুমি? জান আমি কে?
-- ইয়েস স্যার আই ডেয়ার…আপনি-ই শেখালেন নির্ভীক হতে, লাইন ক্রস করতে। অপমান আমি করি নি, চাই ও নি। আপনি যেচে নিলেন। নিজের সম্মান নিজে ধরে রাখতে পারলেন না। আমি বরং আমারটা ধরে রাখি! আর আপনি কে? শিক্ষক-মাত্র। সরকার আমাকে আর আপনাকে একই ভাবে পোষে, কারণ আমার ও আপনার। দু জনের স্কুলই ‘সরকার পোষিত’।
ডি-আই সাহেব আমাকে ধমকে বললেন,
-- আপনি ওভাবে কথা বলতে পারেন না।
-- স্যার, মার্জনা করবেন, কিন্তু উনি যখন প্রথম আমাকে বললেন, তখন কেন আমার সম্মান রক্ষার্থে এই কথাটা ওনাকে বলেন নি? ভেবে দেখবেন স্যার, একটু। ...আপনার অনুমোদন, এই নথি-তে সাক্ষর…
কাগজটা বাড়িয়ে দিয়ে বললাম।
দ্বিরুক্তি না করে খসখসিয়ে সবুজ কালি দিয়ে ঝপাঝপ সাক্ষর।
-- আমার সীল-টা বাইরে ডেস্কে দিইয়ে নিন, আমি বলে দিচ্ছি। এই গনেশ……!!!!!
হাঁক পাড়লেন স্বয়ং ডি-আই সাহেব।
(চলবে)
Bengali Director Bags ‘Dadasaheb Phalke’ for ‘Tabeeb’
Link:
https://www.darpanpatrika.com/2020/09/dadasaheb-phalke-honour-for-tabeeb-arya.html?fbclid=IwAR0rf1hLFfDUoWDwdYNijRgwGnpNNTlJJdigndmmw2GBfHTUmtUmcdnQd7E
Arya Chatterjee
September 20, 2020
This ‘Six Sigma’ production had ‘Boombazz
Creation’ in collaboration from its scratch till the end. The producer- director of the short film, Mr.
Tanmay Nag is a poet-turned-director and leaving his IT Education business
behind, had set sail for Mumbai to try out his aesthetics to be expressed in a
different genre. Perhaps his hunger for expression was not satiated through
writing poems. He wanted to create poetry on screen, because according to him,
“In films even silence speaks.” He also had his reasons to fall back onto the
short films, Firstly because “I find it befitting to the genre of poetry, not
epics.” And secondly, “because I have an acute fund crunch because there is no
one to understand and fund my kind of films at this point of time. What I am
making are not commercially acceptable to the Indian viewers. Thus this is the
form now I may run self-sufficient for. I am ensuring that I do not lift a
project that I cannot carry.”
With various nominations and honours for “Tabeeb” Tanmay regrets that he had to bend the actual structure of the entire movie which he had made in a ‘documentary’ genre to talk about fiction based on reality. The edge of ‘documentary’ ran parallel to real life bites to add to the story which we generally term as ‘a fiction’. Tanmay was hard on the success of making his dream come true when he aspired to break the tradition with a concept that the reality bites would juxtapose the fictional tale to tell the audience that “Truth is greater than fiction”.
However, this poetic composition was
not accepted by the larger audience, though Tanmay reckons that “thousands of
short films are made in India which have better merits than ‘Tabeeb’ …but this
special composition was the only edge of the movie that would cut through and I
think that the short was selected for the Dada Saheb Film Fest 2020 only for
that unique perspective.”
The director regrets that youtube had a different view on this and he had to succumb to the average outlook and re-edit the entire film before getting it posted in the google video platform to attract more views. “Someday people would understand the relevance of the original format “Tabeeb” was based upon. May be someone else would make both ends, the reality and the fiction juxtaposed, meet, in a much more smooth manner which would meet the standards and expectations of the larger audience, in future. I would rather be happy if I myself am able to do that. But for now, my form is a jerk to the mind of the audience…I still cannot take that seventeen good minutes of the original forty-five-minute-short had to be pruned to be left to a nothingness. All the poetry in the entire composition is gone now. ”
“Tabeeb – The Physician”, is a short
film on the eroding values of the doctors around. The god’s descendents, as
believed to be, are split apart between two choices- values of human life and
taking laws in to hands to save lives contrasted to the minting money out of
that socially respected figure. The story is told in black n’white without much
of symbolisms and full of cuts. Due to the reinforcement of the re-editing
sometimes the cuts are abrupt and the background track remains unmatched without
having any aesthetic progression. The prime actors are excellent, especially
the protagonist, while the supporting actors are at bay. Rajvir has delineated
the character of a dignified doctor with real sense of values and
responsibilities quite beautifully with
less of dialogues and more of expressions. “All these anomalies, excepting the
acting skills, are because of the new rendition to the entire short”, as claims
the producer-director Tanmay Nag.
“I really am optimistic about making further movies in the genre I aspire for, and the faults in the previous ones will lead me to turn out to be a better story-teller in the shorts I create in poetic ways. My previous experiment ‘Kashak’ was a serious story-telling in all a silent manner and it also has its own progression, mounting and success in its own way. Unless and until we, the directors, show the audience something new, they will never have the urge to get adapted to the tastes of the new genres”, says Tanmay, a brave-heart in the midst of commercialization of everything.
It sounds like a new flavour of wine
to get adapted to, to like it after quite some time. Adaptation in aesthetic
taste happens over a period of time.
Exposures & Credentials:
·
10th
Dada Saheb Phalke Film Festival, 2020
·
Best
Medical Health Short: Model and Movie International Short Film Festival, 2019
·
Benaras
Hindu University, Bengali Department, 2020
Link
to “Tabeeb”: https://www.youtube.com/watch?v=CFRCAyfA1Xo
Link to “Kashak”: https://www.youtube.com/watch?v=-kiIEqxcjPg












