Tuesday, 29 September 2020

ম্যাস্টরমশাই: পর্ব ২

 



(ইংরেজীতে)

-আপনি কি পড়াবেন?

-তৃতীয় লেসন-এর গল্পটা…

-ওটা বেশ কঠিন…

-আমার আবার ওটাই পছন্দ।

- বেশ, শুরু করুন, তবে…

-কতক্ষণ সময় পাব? পড়ানোর জন্য?

-পনেরো মিনিট।

আমার এই নিয়ে রাজ্য সরকার পোষিত ইস্কুলে চাকরী করার জন্য তৃতীয় ডাক। আগের দুই ডাকের প্রথমটিতে সারাদিন নানা সরকারী পদ্ধতি অনুসারে নথি পেশ এবং অন্যান্য সব সমাধা হওয়ার শেষে জানতে পারলাম যে আগে থাকতেই নাকি সেখানে অন্য  আর এক জনের ‘খুঁটি’ বাঁধা ছিল। তখন আমি নানা সংবাদ পত্রে লেখালিখি করে বেশ খানিকটা এগিয়ে পড়েছি। কিন্তু ওই জীবন ও তার মূল্যবোধের সঙ্গে কিছুতেই খাপ খাচ্ছে না – সাংবাদিকের স্বাধীনতা টেঈলরমেড হলে যা হয় আর কি! সঙ্গে আমার অতিকষ্টে  যোগাড় করা খবর মাননীয় সাব-এডিটরের দয়ায় একটু অদল বদল করে অন্যের নামে ছাপা হয়ে যাচ্ছে। কারণ, আমি ঠিক করে তৈলমর্দন করতে পারছি না। উল্টোদিকে সিনগল-মল্ট পৌঁছোচ্ছে তৈলের বদলে। দেখতে পেলাম, অন্যদের কেরীয়ার গ্রাফ কেমন হু হু করে আমাকে ছাপিয়ে চলে যাচ্ছে। ফ্রি-লান্সার হিসেবে একা সুদীপ-দার  আমাকে আগলে চলল। এছাড়া দেবিকার কাছ থেকে পেলাম যথারীতি বাইরের জগতের সঙ্গে লড়ে যাওয়ার পাঠ। ১৯৯৭ সালের নভেম্বর মাস – হাতে দুটো চাকরী, একদিকে কর্পোরেট মিডিয়া আর এক দিকে ছা-পোষা ইস্কুল মাস্টারী। খবরের কাগজে আমার নাম সমেত খবর ছাপা হবে, এই বাই-লাইনে নিজের নাম দেখে দেখে এত হেজে গিয়েছি যে সেটা তখন আর আলাদা করে কোনো  অর্থ বা গুরুত্ব কোনোটাই রাখে না। যা অর্থবহ তা হল কোনটা আমাকে ভাল রাখবে।

 ছোটবেলায় একটা স্বপ্ন দেখতাম, যেমন সব ছোটরাই দেখে যে আসেপাশে বড়দের মত স্বাধীন কবে হব। বড় হতে হতে বুঝেছিলাম, ছোটরাই বরং সবথেকে বেশি স্বাধীন। যত বড় হব জীবন তত আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে পরাধীন তো বটেই, অজগরের মত ধীরে ধীরে আমাকে একটা মাংসপিণ্ডে পরিণত করলেও আশ্চর্য হব না। তাই তুল্যমূল্য বিচার করে দেখলাম, যে হয়ত অনেক কম বেতনের চাকরী, তবে একটা অন্য ভাললাগা আছে। বাবা-মা-দাদু সবাই শিক্ষক। তাই বংশানুক্রমে এই পেশার প্রতি আনুগত্যস্বরূপ সচেষ্ট হলাম। আমাকে এই ব্যাপারে কেউ জোর করে নি। বাবা বলেছিলেন

-         তুমি যা ভাল বোঝ…।

ভেবে দেখলাম, বিকেল সাড়ে চারটের পরে আমি সম্পূর্ণ স্বাধীন। ষাট বছর বয়েস পর্যন্ত চাকরী করতে পারব, অত্যধিক মানসিক চাপ ও সংঘাত-কে ব্যতিরেকেই। সবথেকে বড় কথা দিনের এতটা সময় নিজের। সেই সময়ে আমি ফ্রি-লান্সিং চালিয়ে যেতেই পারি। আর এই চাকরীতে কাউকে আমার কাজের আউটপুটের জন্য কৈফিয়ৎ দিতে হবে না। না থাকবে টার্গেট না ডেডলাইন। সিলেবাস এমনিই শেষ হয়ে যাবে কারণ মানুষ কিছুর জন্য সবটুকু উজাড় করে দিতে পারে, যখন তার মধ্যে সেই বিষয়ে দুটো জিনিস থাকে –প্রথমতঃ, সেই কাজ-কে ভালবাসা আর দ্বিতীয়ত, সেই কাজে তার অপার স্বাধীনতা। দেখলাম, জীবন ও কাজ -- দুটোতেই স্বাধীনতা দেয় এই পেশা। সিদ্ধান্ত নিলাম, সাংবাদিক নয়, শিক্ষকই হব, প্রধানত।

 সে কি আর হব বললেই হওয়া যায়! সরকারী চাকরী বাবা! অত্ত সস্তা নয়। আমার ছোট্মামা আমার সিদ্ধান্ত শুনেই কোথায় একটা কথা বলে ফেল্‌ল দক্ষিণ চব্বিশ পরগণায় মুচিশার কাছে। সেই ইস্কুল আমাকে চাকরীতে নিয়ে নেবে, কিন্তু তার আগে লাখ দুয়েক টাকা দিতে হবে। বাবা আমাকে ভেবে দেখতে বললেন। আমি জানতাম আমার বাবার অত পুঁজি নেই। আমি রাজী হলে হয়ত কোথাও থেকে টাকা জোগাড় করে নিঃশব্দে কাজটা করে দেবেন, নিজের নীতিবিরোধী হলেও। কিন্তু আমি কি এতই নিম্ন মানের, যে শেষে টাকা দিয়ে চাকরী করতে হবে, তাও শিক্ষকতার মত একটি সম্মানীয় পেশায়? এর থেকে নীচ মূল্যবোধ এর হতেই পারে না। তার থেকে সাংবাদিক হওয়াই শ্রেয়। এই অফার গ্রহণ করলে, আমি যাদের পড়াব, তাদের দিকে কোনোদিন চোখ তুলে তাকাতেই পারব না। সারাজীবন অকারণে এক হীনম্মন্যতায় ভুগব, শিরদাঁড়া বিক্রি করার দায়, বাবার অকারণ ঋণের দায় মাথায় নিয়ে। আমি বেকার তো থাকব না! সেই ক্লাস এইট থেকে লোকের বাড়িতে অবসরে টিভির অ্যান্টেনা সারানো, অ্যামপ্লিফায়ার অ্যাসেম্বল করে, টিঊশন পড়িয়ে কোনো না কোনো ভাবে স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা করা আমি, শেষে এভাবে বিক্রি হয়ে যাব? হতে পারে না।সপাটে সোজা ‘না’ বলে দিলাম। এ আমার দ্বারা সম্ভব নয়।

 তারপর এল পর পর ডাক। প্রথমটির কথা আগেই বলেছি। দ্বিতীয় ডাকের দিন, আমার ছোট মামাতো বোন শিউলির বিয়ে। তখন বিয়েবাড়ি ভাড়া করে বিয়ে হত না। বিয়ের তিন চার দিন আগে থেকেই আমরা সপরিবারে মামারবাড়িতে পাত পেতেছি। সাতসকাল বেলায় কিছু একটু মুখে দিয়ে এসে পৌঁছালাম লিলুয়ার একটি নামকরা ইস্কুলে। মামারবাড়ি বাখরাহাটে। সেখান থেকে ইস্কুলে পৌঁছাতেই প্রায় তিনঘন্টা লেগে গেল। তারপর সব কাগজ পত্র জমা দিয়ে হঠাৎ দেখি, আমাদের মোট চব্বিশ জনের মধ্যে একজন এক ধুতি-পাঞ্জাবী পরিহিত ব্যক্তির আবির্ভাবের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর দুই চরণে প্রায় সাষ্টাঙ্গে সমাহিত। খোঁজ নিয়ে জানলাম, ওই ব্যক্তি ওই বিদ্যালয়ের সেক্রেটারী এবং রাজনৈতিক ভাবে বেশ প্রভাবশালী ব্যক্তি। পুর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে অসুবিধা হল না যে ম্যাচ ফিক্সড। ভালই হল। সিদ্ধান্ত নিলাম, যে সারাদিন নষ্ট করে এখানে পড়ে থাকার কোনো মানে হয় না। বরং বিয়েবাড়িতে তাড়াতাড়ি ফিরৎ গেলে সকলের সঙ্গে অনেকটা আনন্দ ভাগ করে নেওয়া যাবে। যাঁরা শুরু থেকে সরকারী কাগজপত্র দেখছিলেন, তাঁদের গিয়ে সোজা অনুরোধ করলাম যে আমি এই ইন্টারভিউ- এ থাকতে পারব না এবং তাঁরা যেন দয়া করে আমাকে উপস্থিত হিসেবে চিহ্নিত করেন, কারন প্রয়োজনীয় নথি আমি সবই জমা দিয়েছি যার ভিত্তিতে সত্তর শতাংশ বিচার হবে। ক্লাস-প্রেসেন্টেশন / ডেমোন্সট্রেশন আর পারসোনাল ইণ্টারভিউ-এ বাকি তিরিশ শতাংশ। বাকি তিরিশ শতাংশ-তেই ম্যাচ বাঁধা হয়ে গিয়েছে, আগেই। সিলেকশন কমিটির লোকজন তো হাতে চাঁদ পেলেন। তাঁরা সাগ্রহে এই প্রস্তাবে রাজী হলেন। একজনের ক্লিন ওয়াকওভার তাঁদের অনেকটাই স্বস্তি দিল। আমি বিয়েবাড়ি তে ফিরে প্রায় বিকেলবেলায় লাঞ্চ সেরে চলে গেলাম বর আনতে। চুটিয়ে আনন্দ করলাম আরো প্রায় চারদিন।

তারপর সেপ্টেম্বরে এই ডাক। একটাই ভরসা, টাইমস অফ ইন্ডিয়া-র চাকরীটা মোটামুটি পেকে এসেছে, আর মাস দু-একের অপেক্ষা। তবুও স্বাধীনতার স্বাদ পেতে একবার শেষ চেষ্টা করে দেখা যাক। সেদিন মোট ক্যাণ্ডিডেট আমাকে নিয়ে বাঈশ জন। বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, নাম কালিবাবু, এসে সটান আমাকে বললেন,

-আপনার যা রেকর্ড দেখছি, তাতে আশেপাশে কেউ নেই। শুধু ক্লাস-প্রেসেন্টেশন / ডেমোন্সট্রেশন আর পারসোনাল ইণ্টারভিউ- দুটো যেন ভাল করে উতরে যায়, দেখবেন। মনে রাখবেন এখানে পুরোটাই কিন্তু ফেয়ার গেম। কোনো কারচুপি নেই।

 সত্যি-মিথ্যে গোবিন্দ জানে, কিন্তু সত্যি বলতে কি, ভরসা পেলাম। বাবা সবসময়েই শেখাতেন, যে কোনো সিস্টেমে খারাপ আছে বটে, কিন্তু সবটাই খারাপ, এটা হতেই পারে না। তাহলে কোনো সিস্টেম-ই চলে না। দেখি কি করতে পারি, মনে হল। মন থেকে সব মুছে ফেলে, একটাই অনুভুতি পড়ে রইল, বাকি একুশ-জনকে আজ ধুয়ে দেব।

 আমি শেষ ক্যান্ডিডেট। ক্লাস-প্রেসেন্টেশন –এ পুরো সিলেকশন কমিটি বসে আছেন পিছনের বেঞ্চে। ঘর ভর্তি ক্লাস এইটের ছাত্র। দু-এক জন ছাড়া সবাই বেশ পিছিয়ে পড়া ঘরের, দেখেই বোঝা গেল। শুরুতেই বলেছি, কেমন করে শুরু হল। পনেরো মিনিটের মধ্যে আমাকে প্রমান করতে হবে আমি আলাদা।

 পড়াতে শুরু করলাম, নিজের মত করে। তখন নিয়ম ছিল, ইংরেজী ক্লাসে ইংরেজী ছাড়া এর অন্য কোনো ভাষা বলা যাবে না, কিছুতেই। মানলাম না। বাংলা ও ইংরেজী দুটি ভাষাতেই পড়াতে লাগলাম, প্রচুর বোর্ড ওয়ার্ক সমেত। দুতিন মিনিট পর পর বিষয়-বিশেষজ্ঞ, সেক্রেটারী মহাশয় ও দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান, সকলেই বার বার আমাকে থামিয়ে বলে চলেছেন,

-আপনি মেথড ফলো করুন। হচ্ছে না…

আমি কোনো কথায় কর্ণপাত না করে আমার মেথডেই পড়িয়ে চললাম।

মিনিট দশেক পরে বলা হল,

-ঠিক আছে…আর দরকার নেই।

আমি খুব বিনয়ের সঙ্গে বললাম,

-         দশ মিনিট হয়েছে। আমি কি আমার জন্য বরাদ্দ পনেরো মিনিটের আর পাঁচ মিনিট পেতে পারি?

সবাই এ-ওর দিকে তাকিয়ে শেষে রাজি হলেন।

আমি ছেলেদের আমার পড়ানো অংশ থেকে প্রশ্ন করতে থাকলাম। সব্বাই ঠিক উত্তর দিল। দুটো এম-সি-কিউ লিখতে দিলাম। দু-তিন জন ছাড়া সকলেই ঠিক উত্তর ও লিখল।

আমার আগে যাঁরা অত্যন্ত সহজ পাঠ পড়িয়ে গিয়েছেন, সেখান থেকে প্রশ্ন করতে ক্লাসের ছাত্ররা একটি প্রশ্নের উত্তর-ও দিতে পারল না।

তখন আমি সিলেকশন কমিটিঢ় উদ্দেশ্যে বললাম,

-         আমি শিক্ষক। আমার লক্ষ্য সার্থক শিক্ষাদান। যে ছাত্ররা শিক্ষালাভের আশায় উন্মুখ হয়ে ক্লাস আলো করে আছে, তাদের আমি এমন ‘মেথড’-এ পড়াতে নারাজ, যে গোটা ক্লাসটাই অন্ধকারে ডুবে যায়। আমার আগে যাঁরা মেথড ফলো করে পড়িয়েছেন, আমার বিশ্বাস তাঁরা সাফল্যের সঙ্গে শিক্ষাদানে ব্যর্থ হয়েছেন, এবং তা আমি আপনাদের সামনে প্রমান করে দিলাম। শিক্ষক হিসেবে আমার প্রাথমিক কর্তব্য সফল শিক্ষাদান, তা সে যে মেথডেই হোক না কেন। ধন্যবাদ সকলকে আমাকে এই এক্সট্রা সময়টুকু দেওয়ার জন্য।

কালিবাবু আমাকে এসে বললেন,

-         তুমি আমার থেকে অনেক ছোট। তাই ‘তুমি’ করেই বলছি। এটা তুমি কি করলে। তুমি পুরো সিলেকশন কমিটি কে চটিয়ে কেন দিলে, এভাবে? তুমি কি সত্যি-ই চাকরীটা করতে চাও না!

-       না স্যার, অবশ্যই চাই। কিন্তু আমার যেটা ঠিক মনে হয়েছে আমি করেছি। এবার সবটাই ওনাদের হাতে। কি ঠিক কি ভুল ওনারা বিচার করুন।

পারসোনাল ইণ্টারভিউ-তেও তাই-ই হল। অনেক কিছু নিয়ে বিতর্ক। কিন্তু মাথা গিয়েছে চড়ে, দমবার পাত্র আমি নই।

সাংবাদিকতা আমাকে একটি বিষয়ে ভীষন অনুশীলিত করেছিল। অনেক তাবড়-তাবড় মানুষের সামনে নির্ভিয়ে কথা বলতে, তাদের বিরোধীতা করতে। তাদের কথার প্যাঁচেই তাদের ঘায়েল করতে। তাই বুক এর দুরুদুরু করে না, পা-ও কাঁপে না, তিনি যে তালেবর-ই হন না কেন। 

তাই লাগাতার চলল সেই রেশ…একনাগাড়ে।

এক্সপার্ট বললেন,

-এত অ্যারোগ্যান্স নিয়ে শিক্ষকতা করবেন কি করে?

-আমি ছাত্রদের পড়াব, শিক্ষকদের নয়। কারণ এখানে উপস্থিত সকল শিক্ষক আমার থেকেও অ্যারোগ্যান্ট, কারণ তাঁদের বিশ্বাস যে তাঁদের থেকে বেশি কেউ জানতে পারে না। তাই তাঁদের বিরোধীতা করলেই মনে হয় সেটা অ্যারোগ্যান্স। তাঁরা ওপেন মাঈন্ডেড নন কোনো স্বাস্থ্যকর আলোচনা বা বিতর্কের ক্ষেত্রে। ‘ইন্টারভিউ' শব্দের অর্থ ভাবের বিনিময়। আমি তাই-ই করার চেষ্টা করছি। ভুল বলে থাকলে মাফ করবেন। বলুন তো, এই কথাটা কেউ কোনো ক্যান্ডিডেট-কে জিজ্ঞেস করেন, “আচ্ছা আপনি চাকরীটা করবেন তো?” …আমরা এই বাইশজন আজ সব কাজ ছেড়ে এখানে  সারাটা দিন খরচ করে কি জন্য এসেছি?

-আমাদের জানতে হয়, সরকারী ভাবে যে ক্যান্ডিডেট 'উইলিং' না 'আনউইলিং'।

-সেটাই বলছি, কেউ আনউইলিং হলে আসতেন না। এটা জিজ্ঞেস করা মানে তাঁদের সবাইকে বেশ ঘুরিয়ে অপমান করা...বলতে বাধ্য হচ্ছি সেই বোধের খুব অভাব আছে তাহলে...উচ্চশিক্ষিত হয়েও..।।

যখন ঘর থেকে বেরোলাম, কালিবাবু আমাকে এই মারেন তো সেই মারেন। জানি না, একজন অপরিচিত ব্যক্তি হটাৎ সকাল থেকে কেন আমাকে এত স্নেহ করে চলেছেন। আমি সবথেকে জরুরী দু’টো জায়গায় বাকি একুশ জন কে ছাপিয়ে কিছু করলাম বটে, কিন্তু যা করলাম, তাতে কোনো আশা রইল না আর। একুশজনের আট-দশ জনের মুখে এক অব্যক্ত আনন্দ ফুটে বেরোচ্ছে। ওদের মধ্যে যে কোনো একজন পাবে বটে, চাকরীটা। কিন্তু ভাবে নি, আমি এইভাবে ওয়াক ওভার দেব।

তবে বেশ মনে মনে আনন্দ পেলাম, ওই একুশ জনের সঙ্গে আরো পাঁচজনকেও ধুয়ে এসেছি। চাকরীটা না পেলেও সারাজীবন এই ইন্টারভিউ তাঁদের মনে থাকবে…যেমন আমার আছে, আজও।

নভেম্বরের শুরুর দিকে হঠাৎ একদিন আমাদের সালকিয়ার বাড়িতে ওই ইস্কুলের প্রধান  শিক্ষক মহাশয় হাজির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার নিয়ে। বললেন,

-ভারতীয় ডাক ব্যবস্থার যা অবস্থা তাতে সবটুকু ভরসা করতে পারলাম না। ডাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদি দেরী হয়ে যায়, তাই তোমাকে হাতেও একটা পৌঁছে দিলাম।

ঠিক পরের দিনই অপ্রত্যাশিত ভাবে ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-র প্রোবেশানারী অফার লেটার এল, স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে। উত্তেজনা ও মোহ পাশে রেখে নীল রক্তের ডাকে সাড়া দিলাম। পেরিয়ে গেল তেইশ বছর, এই ইস্কুলেই।

বাবা ঠিকই শেখান…সিস্টেমের সব খারাপ, এটা কখনই হতে পারে না। লাল ফিতের বজ্র-আঁটুনিতে ফস্কা গেরো-ও রয়েছে বই কি!

 (চলবে)

 

 

 

No comments: