#warmwintertales
বাবা-মা, শিক্ষক,আত্মীয়-পরিজন, এনাদের বাইরে যারা আমাকে পৃথিবী-তে কিছু করে খাওয়ার জন্য একটা শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, এবং যা নিয়ে আমার আজকে এত আস্ফালন (আসলে আত্মসম্মানবোধ-কে মানুষ এই চোখেই দেখে আজকাল)তারা হল আমার বন্ধুরা। এবং সেও অতি মুষ্টিমেয়। শুরুতে যাঁদের কথা আমি বললাম, মানে বাবা-মা ও অন্যান্যরা, তাঁরা যখন হাল ছেড়ে দিয়েছেন, সেই হাল অজান্তেই শক্ত করে ধরেছে সেই বন্ধুরা। এখন তাদের মধ্যে প্রত্যেকেই আমার একান্ত কাছের হলেও তাদের মধ্যে chief architect-রা ছিল হাতে গোনা। পাঁচে পঞ্চবান-ও পেরোবে না। তাদের সঙ্গে দ্যাখা হলে উল্লাট উল্লাস, আর whatsapp/facebook-এ নিরন্তর আপাত ঝগড়ার আড়ালে খুংশুটি বা বিতর্ক। আর সবথেকে মজার কথা একটা অদ্ভূত অনুভূতি যে বিপদে বা খারাপ থাকলে, একবার ডাকলেই পাশে পাওয়া যাবে, যা সত্যি-ই আজ প্রায় অবলুপ্তির পথে – এ এক পরম পাওয়া। এটা একটা website এর মত continuous development আমার জীবনে। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে কিছু না কিছু শিখেই চলেছি, আর তাঁরাও শিখিয়ে চলেছেন। সবাই।
সেইরকম এক পরম নিকট বন্ধু,যার হাত ধরে আমার কর্মজীবনের হাতেখড়ি হঠাৎ-ই যারপরনাই উৎসাহে লিখছেন বছর খানেক ধরে। এবং এই শীতের লেখার মরশুমি নাম রেখেছেন, #warmwintertales. কিছু কথা জমা হয়েছে ক’দিনে। ভাবলাম এই হ্যাশট্যাগেই ছাড়ি।
#১
পার্ক স্ট্রীটে কি এমন আছে যে যেত্তেই হবে সব্বাইকে, খ্রীসমাসের সময়ে? আমাই তো ক’দিন আগে এক্রোপলিস মল এর রাস্তায় ঢুকে গুলিয়েই ফেলেছিলাম। পার্ক স্ট্রীটের থেকে কম কিসে!সঙ্গে উলটো দিকের মাঠ-টা যা সাজিয়েছে না! পুরো একঘর!অনেকগুলো কচিকাঁচা ছিল, বিভিন্ন সাইজের। বড়দের মধ্যে আমরা সবথেকে বড় হওয়ার সুবাদে, বড়দিনের মরশুমে পকেটে বড় ধাক্কা। আর ওই হাসিমুখ দেখতে আমরা যে খলখলে হয়ে গেলাম, সেটা টের ও পেলাম না। প্লাস্টিক মানি-র এই সুবিধা,পথে যে বসলাম বুঝতে পারি না। কিন্তু এ রকম পথে বসায় আমি বার বার রাজি। এরা বড় হয়ে গেলেই কেলো। …’coz time flies/come with me (Godzilla Soundtrack)।
#২
২৫ শে ডিসেম্বর। নাটক দেখে বেরিয়ে থ’ হয়ে গেলাম। লাল টুপিতে আর নানান সাজে জনস্রোত। কলকাতা ভাসছে। নন্দন-রবীন্দ্রসদন চত্তরে থৈ থৈ করছে শুধু মানুষ। চলছে গানমেলা। তার-ই তিনখানা মঞ্চ। একটা আবার নিবেদিত হয়েছে যে কোনো সাধারণ গাইয়ে মানুষের প্রতিবেদনের তরে। রোজ ৬ টার সময়ে দাও অডিশন, পাশ করলে, গেয়ে ফেলে মন মাতিয়ে দাও। অনেকদিন পর এত ভিড় দেখে কেমন যেন একটা out-of-the-world অনুভূতি হচ্ছিল। খাপ খাইয়ে নিলাম। মনে হল সব কিছু এরকম-ই থাকুক!
#৩
আমার কাছে ছবি তোলার মত ভাল ক্যামেরা নেই। এই ক’দিন আগে আমার স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে রায়পুরে গিয়েছিলাম। ওরা বারবার বলছিল, আমার সেই একখান ডিজিটাল এস-এল-আর এর কথা যা আমি আমদানি করেছিলাম আমার বিদেশে থাকা বন্ধুর মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে। তখন কলকাতা সেভাবে ডিজি্টাল এস-এল-আর চোখেই দেখেনি। আমার প্রাণের ক্যামেরা চলে বটে কিন্তু তার আসল যে মজা ৮০-৩০০ মি মি-তে, সেই লেন্সটার মাউণ্টিং-এ সমস্যা। নস্টালজিক হয়ে যতবার মেট্রোগলিতে ডঃ লোধের কাছে নিয়ে গিয়েছি, উনি তাকে ভায়াগ্রা খাইয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। যে মুহূর্ত-কে ধরব বলে তাক করে বসে আছি, কয়েক ঘন্টা ধরে ট্রাইপডে আটকিয়ে, সেই ক্লাইম্যাক্সে, যখন সেই প্রতীক্ষীত মুহূর্ত ও শাটারের মিলনে অনবদ্য একটি ছবির জন্ম হবে বলে, শাটারটাই ফলস। ফেক অরগ্যাসম। রেগে-গিয়ে আর তাকে নিই না। মোবাইলে দিব্বি খুব অল্প আলোতেও ছবি উঠে যাচ্ছে। হাজার একটা দুর্দান্ত এডিটিং আপ, দিব্বি পকেটে পুরে ঘোরা যায়। পোস্ট করার ইচ্ছে হলে যেখানে ইচ্ছে বসে করে দেওয়া যায়, ডাম্প করে ফটোশপ করার ঝক্কি থেকে মুক্ত। আর এস-এর-আর এ সেলফি? হবে কি?…কেউ জানলে বলে দেবেন।
#৪
-স্কুল কবে খুলবে আর্য-দা?
-জানি না। আমাদের যেতে হচ্ছে সপ্তাহে কয়েকদিন, কিন্তু ছাত্রদের জনয় কবে খুলবে ঠিক বলতে পারছি না।
-অনলাইন ক্লাস তো চলছে।
-মনে মনে হাসলাম। যে দেশে মিড-ডে মিলের লোভ দেখিয়ে স্বাক্ষর করে তোলায় ব্রতী হয়েছি, সেখানে অনলাইন ক্লাস! রাজ্য সরকার চেষ্টা করছেন। শুনলাম ছাত্র-ছাত্রী-রা ট্যাব পাবে। কিন্তু আমার ধারণা অনুসারে ৮০ শতাংশ শিক্ষকই এখনো ডিজিট্যাল ক্লাসরুম ব্যাপারটা জানেন না। এর সঙ্গে কিন্তু তাঁদের বিদ্যা-বুদ্ধি-মেধা কে গুলিয়ে ফেলবেন না। আমার মনে হয়েছে, এই নিয়ে সবার আগে, দরকার হোক বা না হোক, শিক্ষকদের প্রযুক্তিগত দিক থেকে যথার্থ ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
স্কুলের বন্ধুদের সঙ্গে যখন রায়পুরে বেড়াতে গেলাম, দেখলাম হুগলী নদীর প্রায় মোহনার কাছে অবস্থিত গ্রামটি একটি ডক-এর মত। নৌকা মেরামত-ই তাদের প্রধান পেশা। ১৪ বছরের ছেলে থেকে ৬০/৬৫ বছরের বুড়ো সবাই সকাল থেকে কাজে ব্যস্ত। যেখানেই আড্ডা জমানোর চেষ্টা করলাম, কেমন একটা সন্দিগ্ধ চোখে দেখতে লাগল অথবা পাত্তাই দিল না। বুঝেই উঠতে পারছিলাম না, গোলমাল-টা কোথায় হচ্ছে।
একজায়গায় ছবি তুলতে গিয়ে, একটি কুড়ি-পেরোনো ছেলে ধমকের সুরে বলল,
-কতা কানে যাচ্চে নি। ত্যাকুন থে কইতিসি, ফটো তুল্বে নি কো। ফোন ছুঁড়ে ফেলি দেব!
আমি ফোন পকেটে ঢুকিয়ে রাখলাম।দলের একজন বলল,
-আসলে আমরা সবাই চোলাই খাসসি তো, তাই ও অমন করে বলল। ককুন কে কি করে কোনো ঠিক লাই গো।আসসা একটা কতা কয়েন, ঊই ফটকগুলান লয়ে আপনি কি করবেন?
-আমি তো মানুষ!কখনো কখনো মনে হয়, আমি খুব খারাপ আছি। বুঝলে। আমি যখন তোমাদের মত সুন্দর অথচ গরীব মানুষদের নিজের তোলা ছবি দেখি, মনে হয় আমি সুখের স্বর্গে আছি। খুব খুব ভাল আছি। কে বলতে পারে, তুমি যদি আমার মত সুযোগ সুবিধা পেতে, হয়ত আমার থেকেও বড় মানুষ হতে।
শুনে সবাই কেমন যেন হঠাৎ গলে গেল।
খানিকটা আড্ডা হল, মন প্রাণ খুলে।
রাস্তায় উঠলাম। একটা ছোটা হাতি ম্যাটাডোর থামাল একটি বাইক-চালক। দুই চালকেরই গোঁফের রেখা উঠছে সবে। বাইকের চালক বলল,
-কি বে শালা, আমার কই?
দেখলাম গ্লাস ভর্তি চোলাই নেমে এল জানলা দিয়ে। এক ঢোঁকে সাবাড়।
-মোড়ের মাথায় থাকবি, পরেরটা আমি খাওয়াবো, আসছি।
…আম সাধারণ আকন্ঠ ডুবে থাকুক চোলাই চালানে। চলুন, আমরা ততক্ষণ একটু অনলাইনে ক্লাস করে দেশের ভবিষ্যৎ গড়ি...
No comments:
Post a Comment