Monday, 28 August 2023

দুদ্ধর্ষ দুবাই: অষ্টম পর্ব

আগের দিনের মরুভূমির স্মৃতি এতই প্রবল যে আমাদের পরের দিন সেই স্বপ্ন দেখতে দেখতে উঠতে বেশ দেরী হয়ে গেল। অরিন্দম চৈতালীদের রাধুনী রত্নাকর সেদিন চিকেনের যে দক্ষিণ ভারতীয় পদটি রান্না করেছিল, সে অতি উপাদেয়। আমরা পেট ভরে ব্রাঞ্চ করে বেরিয়ে পড়লাম। 

দুবাই- এ আর কিছু থাকুক না থাকুক, শপিং মলের কোনো অভাব নেই। তার মধ্যে একটি মল বেশ অন্য রকমের। নাম হল 'ঈবন বতুতা' মল। 'ঈবন বতুতা' হলেন সেই ব্যক্তি যিনি প্রাক-আধুনিক যুগে পৃথিবীর বুকে সবথেকে বেশি দুরত্ব ভ্রমণ করেছিলেন। ঈবন বতুতার কথা সেই কবে ছোটবেলায় ইতিহাসের পাতায় পড়েছিলাম ৷ তারপর কোনোদিন কোনো প্রয়োজন বা আগ্রহ হয় নি পৃথিবীর চিরকালের এই সবচেয়ে বেশি ভ্রমণকারী গ্লোব ট্রটারের সম্পর্কে জানতে ৷ এই মলটির নাম ও থীমের সজ্জা মনের মধ্যে সেই ইচ্ছেকে জাগিয়ে তুলল ৷ 

এনার পুরো নাম হল, আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ ঈবন বতুতা (২৪ ফেব্রুয়ারি ১৩০৪– ১৩৬৪/৬৫)। তিনি ছিলেন একজন মাগরেবী  অভিযাত্রী এবং পণ্ডিত। ১৩২৫ থেকে ১৩৫৪ সাল পর্যন্ত ত্রিশ বছরের সময়কালে ঈবন বতুতা উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, পূর্ব আফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, চীন, আইবেরিয়ান উপদ্বীপ এবং পশ্চিম আফ্রিকা সফর করেন। তার জীবনের শেষের দিকে, তিনি তার ভ্রমণের একটি বিবরণও লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ছিল "A Gift to People Who Contemplate the Wonders of Cities and the Marvels of Travelling"। কিন্তু সাধারণভাবে এটি "The Rihla" নামে পরিচিত। আচ্ছ কেন বলুন তো, ঈবন বতুতা প্রাক-আধুনিক ইতিহাসে চিরকালের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ অভিযাত্রীর স্থান পেয়েছেন? কারণ - যে কোনো অভিযাত্রীর চেয়ে তিনি বেশি ভ্রমণ করেছেন, সর্বসাকুল্যে মোট প্রায় ১১৭,০০০ কিমি (৭৩,০০০মাইল)। মানে, তিনি ঝেং হে-র প্রায় ৫০,০০০ কিমি (৩১০০০ মাইল) এবং মার্কো পোলোর ২৪০০০ কিমি (১৫০০০ মাইল) ভ্রমণ  ছাড়িয়ে গেছেন।
 

এরকম আবহে যখন একটা শপিং মল তৈরী হয়েছে, বোঝাই যাচ্ছে যে এটা একটা থিম মল। তাই মলটি ছয়টি অংশ নিয়ে গঠিত, যার প্রতিটি ডিজাইন ইবন বতুতা দ্বারা পরিদর্শন করা কিছু দেশ থেকে অনুপ্রাণিত। এগুলোকে এক একটা কোর্ট বলা হয়ঃ
আন্দালুসিয়া কোর্ট, 
চায়না কোর্ট, 
মিশর কোর্ট,
ইন্ডিয়া কোর্ট, 
পারস্য কোর্ট 
এবং 
তিউনিসিয়া কোর্ট।
আর সব ক'টা কোর্ট ওই একবেলায় ঘুরতে গিয়ে আমাদের দশাও ওই ঈবন বতুতার মত। তা যাই হোক, আমাদের ওখানে সেরকম কিছু করার ছিল না। ঘুরে ঘুরেই কেটে গেল। সময় কাটানোর উদ্দেশ্য একটাই -- সন্ধ্যে ছ'টা বাজিয়ে দেওয়া কারণ সেদিনের আইটিনারারী (কথাটা 'আইটেনারী' নয়)তে অরিন্দম-চৈতালী ঠিক করেছিল যে Dhow Cruise-এ যাওয়া হবে। Dhow Cruise মানে পাতি বাংলায় নৌকা ভ্রমণ৷ দুবাই মারিনা মলের গায়ে যে ক্রিকটা আছে তার পাশ থেকে Dhow Cruise এর যাত্রা শুরু হয়। ওদের ভাষায় 'ঢাও' মানে হল 'পাল তোলা নৌকা'। কিন্তু যুগের সঙ্গে সঙ্গে সে নৌকা ভ্রমণের ধরণও বদলে গেছে৷ এখন যে সব নৌকায় চড়ে  Cruise-এ যাওয়া হয় সে সব এলাহী কান্ড, প্রলাহী ব্যাপার ৷ 

টাইম কিল করার জন্য যখন আমরা ঈবন বতুতা মলে ঘুরছিলাম তখন চোখে পড়ল একটি বাদ্যযন্ত্রের দোকান ৷ আমার আর বুমের জামাকাপড় ইত্যাদি প্রভৃতি -- মানে একটা শপিং মলে সাধারণতঃ যা সব পাওয়া যায় -- সে সবে খুব যে কোনো আগ্রহ আছে তা নয় ৷ ফলে এই দোকানটিতে আমরা ঠেক মারলাম। বুম দিব্বি একটা গিটার নিয়ে বসে পড়ল ৷ 
সেখানে যা লেভেলের কালেকশন তাতে চোখ জুড়িয়ে যায় ৷ মন ভরে যায়। কিন্তু সে সব কেনা আমাদের নাগালের বাইরে ৷ বুম প্রাণ ভরে গীটার বাজিয়ে আশ মিটিয়ে নিল ৷ তারপর আমাকে ডেকে বলল একটা গান গাইতে৷ আমিও লোভ সামলাতে না পেরে রুপম ইসলামের গান ধরলাম। গান শেষ হলে চক্ষুলজ্জার খাতিরে বুম ওর ইলেকট্রিক গীটারের জন্য এক সেট স্ট্রিং কিনল। বেরোনোর সময়ে চোখে পড়ল Guns n' Roses এর Slash এর Gibson Lespol গীটার। 

ঐ আপাত নিরীহ যন্ত্রটা ওই ব্যক্তিটির হাতে প‌ড়্লে কি হয় তা ভাবতে গিয়ে মনে পড়ে গেল, November Rain এর ভিডিও-র মরুভূমির মাঝ্খানে চার্চের পাশের সেই দৃশ্য। আমি আর বুম আলোচনা করতে করতে সেই স্যুক (Souk) বা দোকান থেকে বেরোলাম। গল্প করতে করতে আমরা একটা ব্যাটম্যান পার্ক এর সামনে এসে দাঁড়ালাম। সেখানে ব্যাটম্যানের নানান কস্টিউমস রাখা যা পরে শিশু কিশোরদের স্বপ্নকে বেশ খুঁচিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু সে সবই ভাড়ায় ৷ ক্রয়যোগ্য নয়। সেখান থেকে একটু এগোতেই পড়লাম এক তুখোড় পারফিউম সেলসম্যানের খপ্পরে ৷ আমাদের তিনি আরবের বিখ্যাত  সুগন্ধী বিক্রি করেই ছাড়বেন। ইংরেজি ভাল জানেন না। ভাঙা হিন্দিতেই যে ভাবে অত্যন্ত ভদ্র ও মার্জিত ভাবে আমাদের চেপে ধরলেন তাতে আমাদের যঃ পলায়তি সঃ জীবতি অবস্থা ৷ অনেক কষ্টে তাঁর খপ্পর থেকে বেঁচে আমরা সবাই চললাম দুবাই মারিনা মলের উদ্দেশ্যে ৷ 

দুবাই এর হাই প্রোফাইল মলগুলোর মধ্যে মারিনা মল অন্যতম। আধুনিক স্থাপত্য ও প্রযুক্তির উন্নতির এক একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ ওখান্কার প্রত্যেকটি শপিং মল ৷ এর সাথে রয়েছে ওখানকার মানুষের সিভিক সেন্স ও পরিচ্ছন্নতা ৷ লক্ষ্যনীয় এই যে আপামর জনসাধারণ উচ্চশিক্ষিত না হয়েও কিভাবে যৌথ সামাজিক জীবনের প্রাথমিক রীতিনীতিগুলো সর্বান্তঃকরণে মেনে চলে৷ আইন প্রনয়ণ করে, তা চাপিয়ে দিয়ে জন জীবনের শৃঙ্খলা আনা যায় না। ওটা সমাজ আর পরিবেশ ছেলেবেলা থেকে তৈরী করে দেয় ৷ তাই যেখানে সেখানে থুতু ফেলা, খাবার খেয়ে প্যাকেট ফেলে দেওয়া, গাড়ির জানলা দিয়ে ঝড়তি পড়তি জিনিস ফেলতে ফেলতে যাওয়া, রাস্তার ধারে যেখানে জায়গা পেলে নেমে একটু ছোটবাইরে করে ফেলা - এসব নেই। সত্যিই, দেখে শুনে  মনের মধ্যে অনেকবার কথাটা এসেছে - গনতন্ত্রের চেয়ে বরং রাজতন্ত্রই ভাল ৷

নাঃ আলোচনার মোড় ঘুরে যাচ্ছে। মারিনা মলে ফিরে যাই। মারিনা মলের গায়ে যে ক্রিক টা আছে তার দুপাশেই অসাধারণ ব্যান্ড স্ট্যাণ্ড ৷ বসে সময় কাটানোর অঢেল জায়গা ৷ আর টলটলে কালো জলের ওপর ভেসে রয়েছে অসংখ্য ঢাও, মানে অত্যাধুনিক ছোট জাহাজ এবং ইয়ট। আমরা মারিনা মলে ছবি টবি তুলে হাঁটতে থাকলাম মারিনা ওয়্ক-ওয়ে ধরে, খুঁজে বের করতে হবে যে আমরা যে Dhow Cruise এ যাব, তার জন্য নির্ধারিত জাহাজ কোনটি ! তার আগে বলে রাখি যে দুবাই মারিনা ব্যাপারটা আসলে কি: দুবাই মেরিনা (আরবি ভাষায়, মার্সা দুবাই) হল সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর দুবাইয়ের একটি জেলা। এটি একটি কৃত্রিম খাল-শহর যা পারস্য উপসাগরের উপকূলরেখার তিন কিলোমিটার (দু’ মাইল) বরাবর নির্মিত। ২০১৮ সালের হিসাবে, এর জনসংখ্যা ৫৫,০৩২ জন। উন্নয়ন সম্পূর্ণ হলে আবাসিক টাওয়ার এবং ভিলা মিলিয়ে মোট ১২০,০০০ জনেরও বেশি লোকের বাসযোগ্য হবে এই অঞ্চলটা। এটি ইন্টারচেঞ্জ ৫-এ, মানে, জেবেল আলী বন্দর এবং দুবাই ইন্টারনেট সিটি, দুবাই মিডিয়া সিটি এবং দুবাইয়ের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ঘেরা এলাকার মধ্যে অবস্থিত। 

এ প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ শেষ হয়েছে। দুবাই মেরিনা আসলে ভ্যাঙ্কুভার, বিসি, কানাডার ফলস ক্রিক বরাবর কনকর্ড প্যাসিফিক প্লেস -- এসব দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।  কিন্তু দুবাই মারিনার কাজ শেষ হলে ওটাই পৃথিবীর বৃহত্তম মারিনায় পরিণত হবে। মনুষ্য-নির্মিত মেরিনা তৈরি করার জন্য ডেভেলপাররা পারস্য উপসাগরের জল দুবাই মেরিনার সাইটে নিয়ে আসে; একটি নতুন ওয়াটারফ্রন্ট তৈরি করে। আশ্চর্যজনক ভাবে তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এই কেন্দ্রীয় জলপথের পুরোটাই মরুভূমি থেকে খনন করা। সাইটের মোট জমির ১২%  এরও বেশি কেন্দ্রীয় পাবলিক স্পেসে দেওয়া হয়েছে। যদিও এই এলাকার বেশিরভাগ অংশ মেরিনা জলভূমি, তবে এটিতে প্রায় আট কিমি ল্যান্ডস্কেপ ও পাবলিক ওয়াকওয়েও রয়েছে। অবাক হতে হয় যে, মেরিনা সম্পূর্ণরূপে মনুষ্যসৃষ্ট এবং সংযুক্ত আরব আমীরশাহীতে রিয়েল এস্টেট ডেভেলপমেন্ট ফার্ম Emaar Properties দ্বারা তৈরি এবং এটির ডিজাইন করেছে HOK  কানাডা। সমাপ্তির পরে, এটি বিশ্বের বৃহত্তম মানবসৃষ্ট মেরিনা বলে দাবি করা হয়। এর আগে বিশ্বের বৃহত্তম মানবসৃষ্ট মেরিনা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার মেরিনা দেল রে। আর সবথেকে মজার ব্যাপার হল, খোলা সমুদ্রের কাছাকাছি থাকার কারণে সামুদ্রিক বন্যপ্রাণী (বিশেষ করে তিমি এবং হাঙ্গর) মেরিনায় প্রবেশের অনেক ঘটনা ঘটেছে।

(তথ্য ঋণ: চৈতালী-অরিন্দম ও উইকিপিডিয়া)
 
Dhow Cruise যাওয়ার জন্য মারিনা ধরে হাঁটতে হাঁটতে শেষে আমাদের জন্য নির্ধারিত একটি স্কার্লেট রেড বিশাল নৌকা খুঁজে পাওয়া গেল। ই-পাশ স্ক্যান করে আমরা ছ'জনে ঢুকলাম নৌকার পেটের মধ্যে। এ নৌকা তো আর নৌকা নয় - ছোটখাটো একটা জাহাজ বলা চলে। প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গেই বিশাল ডাইনিং হল৷ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত৷ আর তার ছাদে ওপেন ডাইনিং স্পেস। আমরা নিচেই বসলাম৷ এখানেও ডিনার সহযোগে গান-বাদ্যি আর পারস্য উপসাগর ছুঁয়ে আবার ফিরৎ আসা৷ মোটামুটি আড়াই থেকে তিন ঘন্টার ব্যাপার৷ আমরা নির্ধারিত সময়ের একটু আগেই ঢুকেছিলাম কারণ সিট এর কোনো অ্যালোকেশন নেই। যে আগে আসবে সে আগে পাবে - এই ভিত্তিতে৷ মাঝামাঝি দুটো বিশাল জানলার পাশে গিয়ে বসলাম সবাই ৷ 

আগের দিনের ডেজার্ট সাফারির মত আনলিমিটেড জল ও সফট ড্রিঙ্ক | হার্ড ড্রিঙ্ক ওপরের তলায় আর তার জন্য আলাদা করে পয়সা দিতে হয় ৷ আমরা নানা রকম জুস আর এরিয়েটেড ড্রিঙ্ক নিয়ে গল্প করতে করতে জানলা দিয়ে দেখি আমাদের ঢাও পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানমেড ক্রিক ছাড়িয়ে  মূল সমুদ্রে এসে পড়েছে।

ততক্ষণে বুফে টেবিলে খাবার সাজানো হয়ে গেছে। আমরা এরকম শুভকাজে বিলম্বে দেরী না করে সোজা খাওয়া দাওয়া শুরু করলাম ৷ হতে পারে এর আগের দিনও ডেজার্ট ক্যাম্পে বুফে ডিনারই ছিল বটে, তবে মেনু কিন্তু একেবারেই আলাদা ৷ 

এখানে অনেক রকমের সালাড, কন্টিনেন্টাল, চাইনিজ্, আরবী খাবারের সঙ্গে বিরিয়ানীও ছিল। আর মিষ্টিমুখেও নানান পদ আর সবশেষে, ফল ৷ মিষ্টিমুখের আগে মেইন কোর্স প্রায় শেষের দিকে যখন, খবর পেলাম ওপরের তলায় বেলি ডান্স শুরু হয়েছে ৷ আমি ভিড় ঠেলে চক্রব্যুহের কেন্দ্রে দৃষ্টিপাত করে সুন্দরী নারীর নাচ যে দেখব, সে সুযোগ পেলাম না, এত ভীড়্! ৷ 
ব্যর্থ মনোরথে আশপাশের ছবি তুললাম কিছু মোবাইলে | আলো যেখানে কম, সেখানে যে কোনো ক্যামেরা ফেল ৷ ছবি তুললাম বটে, কিন্তু ঠিক মনোমত হল না। শাহরুখের 'পাঠান' ছবিতে একটি দৃশ্যে জন আব্রাহাম যে বিল্ডিং এর মাঝখানে থাকা চৌকো ফাঁক দিয়ে হেলিকপ্টারে করে  গলে পালিয়েছিলেন - সেই বিল্ডিংএর ছবি তুললাম। 
আর এক দিকে দুবাই আই জায়ান্ট হুইলের গায়ে খেলা করছে রঙীন আলো৷ ফুটে উঠছে বিজ্ঞাপনের লেখা ৷ সন্ধের পর আলো জ্বললে সব শহরের মতই এই শহরের রূপও বদলে যায় ৷ অনেক সাজানো জোনাকি নিয়ে এক অপূর্ব স্কাইলাইন দেখলাম ৷ 
Dhow টি তখন পারস্য উপসাগরের তীর বরাবর বড় বড় ঢেউয়ের দোলায় এমনই দুলছিল যে মাঝেমধ্যেই দাঁড়ানোর ব্যালেন্স হারিয়ে যাচ্ছিল। ওপরের তলায় এমনিতেই ততক্ষণে অনেকেই ব্যালেন্স হারিয়ে নিজেদের মত করে বেলি ডান্সে ব্যস্ত ৷ আমরা নিচে নেমে এলাম। সবে প্লেট ভর্তি করে খাবার এনে মিষ্টিমুখের সুখ অনুভব করতে যাব, আমাদের এক্কেবারে সামনেই শুরু হল আগের দিনের মত এক যুবকের whirlpool ডান্স আর তারপর এক যুবতীর বেলি ডান্স | সেদিন যাঁরা নাচলেন তাঁরা গত দিনের থেকে আরও বেশি পারদর্শী, বিশেষ করে বেলি ডান্সার মহিলা ৷ এখানে না বলে পারছি না যে, If this is an art-form of seduction, from the perspectives of Arabic ethnicity and traditional culture, I must say, she has mastered it. 

সেদিন রাতে স্বপ্ন দেখলাম: আমি দেবরাজ ইন্দ্র, সামনে লাস্যময়ী অপ্সরার নৃত্য, আর স্বর্ণপাত্রে আমার সেবনের জন্য রাখা আছে চমরী গাই এর দুধে রান্না করা ব্রহ্মকমলের রেণুর পায়েস ...! 



(চলবে)



   

Monday, 7 August 2023

দুদ্ধর্ষ দুবাই: সপ্তম পর্ব

Dune Bashing শেষ ৷ পড়ন্ত সূর্যের সাথে সাথে মরুভূমির মাঝখান দিয়ে আমাদের গাড়ি ছুটছে। বেশি গতি তোলা সম্ভব নয়। ঢাকার হাওয়া সেই যে ১৮তে নামানো হয়েছে তারপর তো ওরকম পাণ্ডববর্জিত খাণ্ডব মরুভূমিতে তাণ্ডব মাচানোর পর আর ভরার কোনো সুযোগ নেই। সেই ক্যাম্পে গিয়ে তারপর ৷ 

গাড়ি প্রায় সমতল মরুভূমি দিয়ে মাত্র পঞ্চাশ কিলোমিটার বেগে ধাবিত হওয়া সত্ত্বেও ইন্দ্রানী পুরো চুপ। Dune Bashing এর মত দুদ্ধর্ষ অভিজ্ঞতার ফলেই বলে মনে হল। আমরা কথাবার্তা বলতে থাকলাম ৷ যেখান দিয়ে গাড়িটা যাচ্ছে সেটা গাড়ির ম্যাপে দেখলাম দিকশূন্যপুরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় ৷ একেই বলে ম্যাপের বাইরে ৷ তবে অদ্ভূতভাবে বালির রং মাঝে মাঝেই কালো ৷ ড্রাইভার নৌফেল জানালেন যে এখানে পাঁচ রকমের বালি আছে, এটা তারমধ্যে অন্যতম৷ কালো বালির অর্থ হল ও গুলো কোনো না কোনো নদীগহ্বর বা river bed I বুঝলাম যে বালির সঙ্গে খানিকটা পলি মিশে আছে বলে ওরকম কালচে রঙ হয়েছে ৷ এখানকার বর্ষাকালে বেড়াতে এলে তখন কিন্তু আর এসব দেখাই হত না। কারণ বর্ষার জলে পুষ্ট হয়ে উঠলে এই সব স্থানে অনেক অনেক বহমান নদী। যদিও গভীরতা কম, তবে স্রোতস্বিনী ৷ আর সারা বর্ষাকাল ধরে এইসব অঞ্চলে আসাই নিষিদ্ধ ৷ বন্ধ থাকে Dune bashingl 

অর্থাৎ আসলে আমরা তখন মরুভূমির বুক চিরে নদীগর্ভের মধ্যে দিয়ে চলেছি তো চলেছি তো চলেছি ৷ শারজা থেকে দুবাই যাওয়ার এটাই শর্টকাট ৷ শারজা অঞ্চলের মরুভূমি থেকে দুবাই অঞ্চলের মরুভূমিতে প্রবেশ করলে বেশ বোঝা যায় ৷ শারজার বালির লালচে আভা আর থাকে না। ফিকে হলুদ হয়ে যায় ৷ 

গাড়িটা এসে দাঁড়ালো মরুভূমির মধ্যে একটা ঘেরা জায়গার সামনে। ঘেরা জায়গাটা একটা ক্যাম্প | আর তার বাইরে চলছে দুটো ব্যাপার --
এক, উটের পিঠে চড়া
দুই, স্যান্ড সার্ফিং

উট যে সোনার কেল্লার মত রাজস্থানের পোখরান বা রামদেওরাতে নিয়ে চলে যাবে এরকম নয় ৷ উটে ওঠার একটা অভিজ্ঞতা মাত্র ৷ সেই সামনের পা - পিছনের পা থিওরী। ওখানকার উটচালক তো আর সোনার কেল্লা দেখেন নি। তাই ভাঙা ভাঙা হিন্দি ভাষায় সওয়ারীদের সেটাই বোঝানোর চেষ্টা করছেন ৷ আমাদের দল থেকে প্রথম সওয়ারী হল বুম আর ছোটু ৷ তারপর আমি আর ইন্দ্রানী৷ মানুষ ছাড়া অন্য যে কোনো জ্যান্ত প্রাণীকে ছুঁতে বেশ ভয় পায় ইন্দ্রানী ৷ তবে লালমোহন বাবুর মত এই অ্যাডভেঞ্চারের হাতছানিকে উপেক্ষা করতে পারল না। সমস্ত ভয় কাটিয়ে উটের পিঠে উঠল ৷ উঠেই কোলোর কীর্তি : দুদিকে পা ঝোলাতেই  উটের পেটের শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত ওঠানামা অনুভব করার পরেই দুপা দুদিকে স্ট্রেচ করে পুরো ফুল আউর কাঁটে -র অজয় দেবগণ ৷ ছোটু তো ইন্দ্রানীর মুখের দিকেই ক্যামেরা তাক করিয়ে রেখে দিল আর ইন্দ্রানীর হাবভাব দেখে বলেই ফেলল,

- তা বলে কি উট নিশ্বাস নেবে না!

তারপর সেই আইকনিক সিন- যেটা সত্যজিত রায় জীবদ্দশায় দেখলে হয়ত সন্তাষ দত্তের মৃত্যুর পর তৃতীয় ফেলুদাটা বানানোর কথা একবার হলেও ভাবতেন ! হয়ত সেটাই হত কোনো মহিলা চরিত্র সম্বলিত প্রথম ফেলুদা ৷ কিন্তু বড় দেরীতে ঘটল সে ঘটনা।

উট বাবাজি একপাক ঘুরে এসে সেফ ল্যান্ডিং দিয়েছে কি দেয় নি, ইন্দ্রানী টকাস করে নেমেই উটকে ঠকাস করে পেন্নাম ঠুকে দিল -  একেবারে অন্তর থেকে উৎসারিত শ্রদ্ধা ও ভক্তি মিশ্রিত, Aldous Huxley র ভাষায় awe and veneration থেকে । 

সেই পেন্নামের জেরে video টা হেব্বি হিট৷ নিচে লিঙ্ক দেওয়া রইল৷ 


উটচালক ভদ্রলোক খুবই বেরসিক। তিনি হাসেন না। ছবি তোলার সময়ে হাসতে বলা হয়েছিল। তাতে তিনি সোনার কেল্লার মুকুলের মত বলেই ফেললেন তাঁর ভাঙা হিন্দীতে,

- হাসব কেন! আমার তো হাসি পাচ্ছে না।


এরপর ঘেরা ক্যাম্পের মধ্যে ঢুকে সবে বসব , দেখি পাশেই বাইরে বালির চূড়ার পর একটা বিরাট স্কেটবোর্ড হাতে বুম দাঁড়িয়ে ৷ স্কেটবার্ডে পা গলিয়ে sand surfing করতে গিয়ে ঘেমে নেয়ে একাক্কার কাণ্ড ৷ ধারণা ছিল যে ধূলোর মত মিহি বালির চূড়ায় উঠে স্কেটবোর্ড পায়ে পরে ঢালের দিকে দাঁড়ালেই সাঁ করে নেমে আসবে ৷ নেমে আসা তো দূর, অনেক লম্ফঝম্প করেও এক ইঞ্চি নড়াতে পারল না নিজেকে ৷ ও ছাড়া আরও যাঁরা চেষ্টা করছিলেন তারাও দেখলাম খানিকটা নেমেই হত্যে দিয়েছেন। অবশেষে স্কেটবোর্ড হাতে ছবিতে মারিতং জগৎ মার্কা ইনস্টা পোজ দিয়ে সেখান থেকে নেমে এসে ঘামে চুবচুবে হয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
-...... জঅঅল"
অরিন্দম বুম কিছু ঘটালেও ঘটাতে পারে এরকম আশায় কেজি তিনেকের ক্যামেরা অনেকক্ষন তাক করে ছিল। সে ও সব গুটিয়ে ব্যর্থ মনোরথে ক্যাম্প অভিমুখে যাত্রা করল।


ক্যাম্পে ওয়েলকামে ছিল একটা করে ভেজ র‍্যাপ আর সফট ড্রিঙ্ক। খাবার জল আর সফট ড্রিঙ্ক  যতক্ষণ থাকব - মানে সেই ডিনার অব্দি, আন্লিমিটেড। ক্ষিদে ভালই পেয়েছিল৷ আর তেষ্টার কথা বলাই বাহুল্য ৷ তারপর সে সব মিটিয়ে আমরা ক্যাম্পের মধ্যে থাকা বিভিন্ন স্টলে ঘুরতে লাগলাম। সেখানে আরবের একটা drink খেলাম৷ লোকাল হার্বল টি, নাম "Qawah" ( 'Q' এর উচ্চারণ 'ক' এবং 'গ' এর মাঝামাঝি),  সঙ্গে খেজুর ৷ তারপর গড়গড়া, বা Sheeshaa৷ পথের পাঁচালীর ট্রেনের মত কালো ধোঁয়ার বদলে ভসভসিয়ে সাদা ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে দেখি ইন্দ্রানী হাতে বাজপাখি বসিয়ে ছবি তোলার জন্য ডাকছে। 

দিনরাতের সন্ধিক্ষণে তখন সূর্যের আলো আর ক্যাম্পের বাল্বের আলো মিলে মিশে একাকার | চাঁদটাও পলিউশন ফ্রি আকাশে স্বপ্নের মত ৷ 

আমরা আমাদের জন্য নির্ধারিত পাঁচ নম্বর ক্যাম্পে গিয়ে বসলাম। কিছুক্ষণ পরে আমাদের সামনে বুম-ছোটুর বয়সী একটি ছেলে ফায়ার জাগলারী দেখাতে আরম্ভ করল। তখন সন্ধে সাড়ে সাতটা। আমরা মুগ্ধ নয়নে দেখতে লাগলাম। আগুনের আলোর রেখার সম্মোহনে কখন যে চারদিক অন্ধকার হয়ে সন্ধে হয়ে গেছে বুঝতে পারি নি। জানানো হল যে ডিনার রেডি ৷


এলাহী ডিনার ৷ সেখানে সবথেকে লোভনীয় ছিল ভেড়ার পাঁজর - কাঠকয়লার আঁচে ঝলসানো ৷ এছাড়া অনবদ্য বীফ  ৷ বন্ধু প্রীতম পরে জানিয়েছিল যে এখানে বছর পনেরো আগে পঞ্চাশ দিরহাম -এর বিনিময়ে বার্বি কিউ করা বাছুরের জিভ পাওয়া যেত | নাকি, অনবদ্য স্বাদের। তবে আমরা সে জিনিস পাই নি। আর পেলেও অমন অবলা জীবের জিভ আমি খেতে পারতাম না। 


ডিনার শেষ হতে না হতেই শুরু হল নাচ | আমরা যেদিন গিয়েছিলাম সেদিন পূর্ণিমার আশেপাশে হবে। মরুভূমির মাঝখানে পূর্ণচন্দ্র আর খেজুর গাছে ঘেরা স্টেজ ৷ আরবি ঢঙের সঙ্গীতের তালে তালে শুরু হল এক পুরুষের অপূর্ব জাগলারী। তারপরে এক রূপসীর নাচ - বেলি ডান্স | শরীরের প্রত্যেকটি পেশীকে ক্ষিপ্রতায় সঙ্গীতের তালে তালে কিি দৃশ্যমাধুর্য্য তৈরী করা যায় তা নিজে চোখে এত কাছ থেকে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না। Vulgar বলে শারজায় banned এ রকমের বেলি ডান্স | কেন vulgar তা আমার মাথায় ঢোকে নি ৷ দুটো কারণ হতে পারে: এক, লাস্যময়ী নারীর স্বল্পবাস যৌবন আমাকে আর আকৃষ্ট করে না, আর দ্বিতীয়তঃ আমাদের মন ও দৃষ্টিভঙ্গী একবিংশ শতাব্দীর এক চতুর্থাংশের শেষের কাছাকাছি পৌঁছে অনেক বেশি উদার ও উন্মুক্ত হয়েছে ৷ 


নাচের শেষে নাটকীয়ভাবে দিনের শেষে একজন আরবী উটওয়ালা কেমন করে রোজ ঘরে ফেরেন তার দৃশ্য তৈরী হল উঁচু একটা বালিয়াড়ীর টিলায় ৷ 

সে দৃশ্য দেখতে দেখতে মনে পড়ল জয়বাবা ফেলুনাথে রুকুবাবুর শিশুমনের প্রশ্ন
- এ সব কি সত্যি?
- মিথ্যে কি করে বলি রুকুবাবু ....


..... আমারও সেদিন ঠিক তাইই মনে হল - যে সব সত্যি
আলিবাবা সত্যি, মরজিনা - আবদাল্লা সত্যি, আলাদিনের দৈত্য সত্যি, সিন্দবাদের রকপাখির ডিম সত্যি....আর সহস্র এক আরব্য রজনীর অ্যাডাল্ট গপ্পগুলোও.....


 

Saturday, 5 August 2023

দুদ্ধর্ষ দুবাই - পঞ্চম পর্ব

আজ থেকে ঠিক এক মাস আগে ঠিক এই দিনে সকালবেলায় উঠেই ফ্রেশ হয়ে বাড়িতে রাঁধুনি রত্নাকরের বানানো দারুণ ইউলি খেয়ে ব্রেকফাস্ট করে কি করব কি করব একটা ভাব আসতেই অরিন্দম বলল

- চ'... আশেপাশে ঘুরে আসি ৷ আজ তো বিকেলে আমরা desert safari তে যাবই ৷ কিন্তু সেটা হল গিয়ে একটা স্পেশাল লোকেশন ও সিলেক্টেড ইউনিক প্লেস ৷ কিন্তু তার আগে এখানকার লোকাল মরুভূমি কেমন তার একটা feel নিয়ে আসবি চল ৷ কম্পারেটিভ স্টাডি করতে সুবিধা হবে।

বাইরে গরমের চোটে অরিন্দমের অফারে কেউই সেরকম উৎসাহিত বোধ করল না দেখলাম; যেন, 'সেই  তো বিকেলে একই জিনিস দেখতে যাব! এখন আর সুস্থ শরীরকে ব্যস্ত করে কি লাভ!' - এর মত ভাব করে ভাবলেশহীন হয়ে রইল সবাই ৷ 


তখন অরিন্দম চৈতালীকে বলল,

- Spinneys থেকে কি সব আনতে হবে বলছিলে...

- এখন যাবে? 

- যাই... সেরে ফেলি...

- সাড়ে বারোটা বাজে কিন্তু... গাড়ি আমাদের সাড়ে তিনটে নাগাদ নিতে আসবে... এখনও সবার চান-খাওয়া বাকি ৷ বেশি দেরী কোরো না...

- না না এই যাব আর আসব..

কোনো এক অজ্ঞাত কারণে দেখলাম বুম এই আপাত- নিরীহ বাজারে যাওয়ার পিছনে একটা গভীর ষড়যন্ত্র আঁচ করতে পারল ও আমাদের দুজনের সঙ্গে ঝুলে পড়ল।

আমরা প্রথমে ওদের বাড়ির নিচের শপিং মার্টের বাইরে সবথেকে কাছের আর একটু বড় মার্ট Spinneys এ পৌঁছালাম ৷ এমন সব ফ্রেশ ফল ও সবজি যে দেখে যেন একটা fb - র ভাষায় 'feeling খাই খাই' হয়। তার পাশেই একটা liquor store l সেটাতে ঘুরে যা বুঝলাম যে ওখানকার লোকজন মোটামুটি বেশিরভাগই হয় বিয়ার না ওয়াইন পান করে ৷ ওয়াইনের বিরাট সম্ভার | হুইস্কির নানা রকমের ব্র্যান্ড আছে বটে, তবে বিয়ার-ওয়াইনের মত চলে না। তবে পান না করলেও ওন্ড মঙ্ক -এর বিরাট ভান্ডার দেখে বেশ আহ্লাদিত হলাম। পানের কথা যখন উঠলই তখন এখানে বলে রাখা ভাল যে এ দেশে লোকে খেতে বসলেই লাবান নামক এক দুগ্ধজাত পানীয় পান করেন। সবার শপিং কার্টে আর কিছু থাকুক না থাকুক লাবান থাকেই৷ দুধ থেকে বানানো ঝাঁঝালো পানীয় ৷ তাতে Sprite জাতীয় সফট ড্রিঙ্ক মিশিয়ে খেলে অনবদ্য স্বাদের হয়ে ওঠে। আমি আর অরিন্দম দুতিন বেলা রোজ এক গেলাস করে তো খেতামই ৷  অরিন্দমের যা কেনার ছিল, মানে যা কেনার অছিলায় আমরা বের হয়েছিলাম তা হল এই লাবান ৷  সেটা spinneys থেকে কিনে আমরা চললাম স্থানীয় মরুভূমির উদ্দেশ্যে ৷ 


কিছুই না... রাস্তা এক জায়গায় যেখানে শেষ, তার সামনে আর দুপাশে ধূ ধূ মরুভূমি ৷ গাড়ি থেকে নামার সময় দরজা খুলতেই যে গরম হলকা টা মুখে এসে লাগল তাতে টের পেলাম সত্যিই মরুভূমি কারে কয় ! বেরিয়ে দু মিনিট কাটানোই খুব কঠিন। মোবাইলে ছবি তুলব কি , চড়া রোদ্দুরে স্ক্রীণের ব্রাইটনেস ম্যাক্সিমাম করেও কিস্যু দেখতে পেলাম না। আন্দাজে দু একটা ছবি তুলে গাড়িতে উঠে জানলার কাচ নামিয়ে যা যতটুকু পাওয়া যায় তুললাম ৷ মরুভূমি একদম সোনার কেল্লার আদলের ৷ সত্যিই যে ছবির মত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

- বিকেলে আমরা যেখানে যাব তার সঙ্গে এই মরুভূমির খুব একটা মিল পাবি না ৷

অরিন্দম জানাল ।

মনে মনে কল্পনা করার চেষ্টা করছি যে মরুভূমি আবার অন্য কেমনতর হতে পারে ! এখন যা দেখছি তাইই তো দারুণ- মরুভূমি হো তো এ্যাইসা !! 

ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ একটা মরুদ্যানের সামনে এনে গাড়িটা দাঁড় করালো অরিন্দম ৷ বলল,

- এগুলো এখানকার নার্সারী ৷

আমি তো দেখে থ! বলেই ফেললাম 

- নার্সারী কি রে! এতো post doctorate ...


গোটা গোটা বিশাল সাইজের গাছের সম্ভার | ছোট, মানে আধ ফুটের গাছ থেকে, বিশাল বড়, মানে কুড়ি ফুটের গাছ বা তার থেকেও বড় গাছ বিক্রির জন্য থরে থরে সাজানো ৷ কোনো জায়গা পার্মানেন্টলি নতুন সবুজ দিয়ে সাজাতে হলে ওখানকার লোকজন এইসব গাছ কিনে নিয়ে গিয়ে সোজা সেখানে পুঁতে দেয় ৷ এমনভাবে সেটা করে যে সেই জায়গাটা কদিন আগেই যে ঊষর মরুভূমি ছিল, তা বিশ্বাস করাই কঠিন।

প্রথম দিন থেকেই অরিন্দম সুযোগ পেলেই আশ-পাশ দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়ে আসত ৷ সেরকম নার্সারী থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে পড়ল একটা pet market | বাড়ির পোষ্যদের শপিং মল। সেখানো পোষ্যদের তো পাওয়া যাবেই সঙ্গে তাদের জন্য খানাপিনা ও খেলধূলার সাজ সরঞ্জাম ৷ নানা ধরনের কুকুর বেড়াল পাখ পাখালি ছাডাও আছে কচ্ছপ, খরগোশ ইত্যাদি। চিড়িয়াখানার মত সুন্দর করে সাজানো সব দোকান। সবটাই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত।


আর যদি সে সব কুকুর বেড়ালের অভিব্যক্তি যদি কেউ দ্যাখে - আহ্লাদে আটখানা তারা৷ সবথেকে ভয় পেয়েছি আমরা সবাই এক বিশাল কুঁদো হুলোকে দেখে ৷ শরীরের দৈর্ঘ্য ফুট দেড়েক হবে। যে গাম্ভীর্য ও দৃষ্টি নিয়ে তাকাচ্ছিল তাতে ওই দিনের বেলাতেই সে খাঁচাতে থাকা সত্ত্বেও আমাদের বুক শুকিয়ে যাচ্ছিল। তার ইতিবৃও নিয়ে খোঁজ নিতে  জানা গেল যে উহা বিক্রির জন্য নহে ৷ জীবনে এই প্রথম নিজের ইন্দ্রিয় দিয়ে অনুভব করলাম যে শীতলা মাতার এই বিশেষ বাহনকে কেন বাঘের মত প্রাণীরও গুরুজন অর্থাৎ 'মাসী' বলা হয়৷

তবে কুকুরগুলো যেভাবে সব ভেঙেচুরে বেরিয়ে আসতে চাইছিল আদর খাবে বলে তাতে ওদের এই বন্দীদশায় বেশ মন খারাপ হয়ে গেল ৷ 

যাওয়া আসার পথে একটা জায়গায় দেখলাম দিগন্তবিস্তৃত যতদূর চোখ যায় শুধুই গাড়ি ৷ প্রথমে ভেবেছিলাম স্ক্র্যাপ ইয়ার্ড | গাড়ির চেহারা দেখে ভাবলাম সেকেন্ডস এর মার্কেট ৷ তারপর দেখলাম বড় বড় করে এক জায়গায় লেখা Emirates Parking l বিস্ময় আর বিস্ময় ৷ কেউ ভাবতেও পারবে না যে বছর তিরিশ আগে এই শহরের সেভাবে কোনো অস্তিত্বই ছিল না। কেউ পুঁছতোও না সেভাবে ৷

ফিরে এসে আমরা সবাইকে বললাম

- মিস করলে কিন্তু...

তাতে উত্তর এল 

- দুটো বাজে... কিন্তু এখনও স্নান খাওয়া কোনোটাই হয় নি। 

বুঝলাম সবাই desert safari র প্রত্যাশায় মশগুল হয়ে আছে ৷

এখানে কেন জানি না এত গরম হওয়া সত্ত্বেও বেলায় বেলায় বেশ খিদে হয়। সকালের অতগুলো ইডলি যে পেটের কোথায় গিয়ে সেঁধিয়েছে কে জানে! দুপুরে লাঞ্চে ছিল সাউথ ইন্ডিয়ান রাইস অ্যান্ড চিকেন উইথ এরিয়েটেড লাবান ৷ খেয়ে উঠে ঢেকুর তুলতে তুলতে দেখলাম তখনও হাতে আধঘন্টা আছে ৷ ব্যাকপ্যাকে নেওয়ার জন্য ঠান্ডা জলের ব্যবস্থা করে ও ক্যামেরা এবং মোবাইলের ব্যাটারীতে ঠিকঠাক চার্জ আছে কি না দেখে নিয়ে ভাবলাম যে এরপর যদি না এখুনি খাওয়া অনবদ্য দক্ষিণ ভারতীয় মুরগীর আত্মার স্মৃতিতে শোক পালনের উদ্দেশ্যে চোখ বন্ধ করে মিনিট কুড়ির শবাসন না করি তাহলে নেহাতই ব্যাপারটা অমানবিক হয়ে যাবে।


সঙ্গে শরীরের সমস্ত এনার্জি কে প্রস্তুতও করতে হবে ৷ যা শুনেছি তাতে এখানকার desert safari এক অনন্য ও অনবদ্য অভিজ্ঞতা ৷ ফলে সম্পূর্ণ প্রস্তুত হয়ে, জুতো মোজা পরা ছাড়া, মিনিট কুড়ির দিবানিদ্রায় মগ্ন হলাম ৷

(চলবে...)

Local Desert Video Link

দুদ্ধর্ষ দুবাই - ষষ্ঠ পর্ব

 Desert Safari - র গাড়ি এসেছে।

সেই বহু প্রতীক্ষিত desert safari...

গাড়িতে করে একটা বিশেষ জায় গায় নিয়ে গিয়ে sand dunes এর চড়াই-উতরাই তে নাগরদোলার মত ভ্রমণ ৷ সেই ভ্রমণের শেষে সূর্যাস্তের সময়ে মরুভূমির মাঝে একটি ক্যাম্পে গিয়ে নামিয়ে দেওয়া হয়৷ সেখানে নানারকম এন্টারটেইনমেন্টের শেষে ডিনার ৷ 

শুনতে যতটা সরল মনে হচ্ছিল ব্যাপারটা অতটা সরল যে নয় সেটা ধাপে ধাপে বুঝলাম। 

বাড়ির সামনে থেকে আমাদের ছজনকে একটা তাগড়া টয়োটা SUV গাড়ি তুলে নিয়ে চলল শারজার মরুভূমির দিকে ৷ যেখানে dune bashing করাবে সেই জায়গাটা শারজায় ৷ বাড়ি থেকে লোকেশন ঘন্টা খানেকের ৷ যাবার পথে একটা পাম্পে দাঁড়িয়ে প্রথমে গাড়িটা fuel rechage করল তারপর ড্রাইভার নৌফেল জানালেন যে আরও একটি গাড়ি আমাদের সঙ্গে যাবে। পেট্রোল পাম্পে সেই গাড়িটা আমাদের সঙ্গে যোগদান করলে আমরা একসাথে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলাম ৷ রাস্তার মিনিমাম গতিবেগ ১২০ কিঃমিঃ / ঘন্টা ৷ বাজছে হিন্দি গান - দিন ইয়ে বেচৈয়ন ওয়ে / রাস্তে পে নয়ন ওয়ে...তাল সে তাল মিলা... দূরে দিগন্তে শারজার পাহাড় ৷ 

পাহাড়ের কাছাকাছি গিয়ে গাড়িটা হঠাৎ জনমানবহীন পাথুরে একটা পথ ধরল ৷ লালচে হলুদ পাথুরে সে রাস্তা ৷ হাইটেনশন পাওয়ার টাওয়ার আর পাহাড় ছাড়া আর কিছু দেখা যাচ্ছিল না। ডানদিকে একটা বাঁক নিয়ে হঠাৎ গাড়ি টা দাঁড়িয়ে পড়ল ৷ পাশে আমাদের সঙ্গী গাড়িটাও ৷ 


আমি গাড়ি থেকে নেমে চারদিকে তাকাতেই প্রকৃতির বিশালত্বের মাঝখানে কেমন যেন নিজেকে ক্ষুদ্র, অতি ক্ষুদ্র এক অস্তিত্ব বলে মনে হতে লাগল। ক্যামেরায় খানিকটা ধরার চেষ্টা করলে কি হবে, ওই বিশালত্ব কিছুতেই  ধরা গেল না। আপ্রান ছবি তোলার চেষ্টা করছি, হঠাৎ কানে এল গাড়ির চাকা থেকে হাওয়া বের হওয়ার ফসসসস করে শব্দ |  এই কেলো করেছে বলে দৌড়ে গিয়ে দেখি ড্রাইভার নৌফেলনিজেই হাওয়া বের করে দিচ্ছেন ৷ কোনো সমস্যা কি না জানতে গিয়ে আবার অবাক ৷ বেয়াল্লিশের এয়ার প্রেশরকে নামিয়ে আঠেরোতে করতে হবে। The tyres needed to be flattened for better grip on the sand. এমনিতেই ওই গাড়ির চাকা বেশ মোটা দেখলাম ৷ তারপরেও better grip! ঢোঁক গিললাম... যাঁদের গাড়ির চাকার air pressure ও grip সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা আছে তাঁরা বুঝবেন যে এই ধরণের ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে চোখের সামনে দেখলে পরে অদূর ভবিষ্যতে যে হাড় হিম করা কিছু হতে চলেছে তা বুঝে উঠতে অসুবিধা হয় না। 


গাড়িদুটো খুব নিষ্পৃহ ভাবে রওনা দিল। দুমিনিটের মধ্যে এমন দৃশ্য দেখলাম যা অসম্ভব সুন্দর ৷ অনেক বালির টিপির ওপর হাওয়ার দাগে ছোট ছোট ripples তৈরী হয়েছে। আর পুরো virgin জায়গা। না আছে কোনো চাকার দাগ না আছে কোনো পায়ের ছাপ ৷ দু একটা dune কে bash করার পর মালুম হতে শুরু করল ড্রাইভার কি করতে চলেছে ৷ মরুভূমির গভীর থেকে গভীরতর জায়গায় যেতে থাকল গাড়ি ৷ একটা প্রায় চল্লিশ ফুট গভীর খাদে আড়া আড়ি স্কিড করে করে নামতে থাকল গাড়ি ৷ চাকাটা মাটি কামড়ে ধরতে চাইছে কিন্তু শুকনো মিহি বালিতে কিছু করতে পারছে না। সরসরিয়ে খাদে নেমে যাচ্ছে আর সেই ঘর্ষণের ফলে গাড়ির একটা পাশ ছিটকে আসা বালির ছটায় অন্ধকার ৷ 

ইন্দ্রানীর এমনিতেই গাড়ির স্পিডিংএ সমস্যা আছে ৷ এরকম ডিউন ব্যাশিং এর ছিরি দেখে ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করেই ফেলল যে

- ইঁহাসে নিকালনেকা রাস্তা কাঁহা হ্যায় ভাইসাব?

ভাইসাব এক গাল হেসে বললেন

- কুছ নেহি পতা...

ব্যাপারটা কি দারুন অ্যাডভেঞ্চারাস ছিল তা আমার পক্ষে ভাষায় বর্ণনা করা অসম্ভব, তাই ওই অবস্থায় যে ভিডিওটা তুলতে পেরেছি তার লিঙ্ক দিলাম ৷ আর সঙ্গে রইল কিছু ছবি।

Desert Safari Video Link



প্রায় মিনিট ১৫ ধরে এইভাবে ডিউন ব্যাশিং করার পর আমাদেরকে ড্রাইভার নৌফেল এনে ছেড়ে দিল মরুভূমির মাঝখানে একটা বিরাট টিলার ওপরে৷ সেই উচ্চতা থেকে মরুভূমিটাকে পুরোটাই দেখতে পাওয়া যায় ৷ 

অসাধারণ দৃশ্য! অসাধারণ অভিজ্ঞতা! 

অনন্ত মরুভূমির মাঝখানে লালচে হলুদ বালির ওপর আমরা ছবি তুলতে আরম্ভ করলাম, বিভিন্ন রকম ভাবে বিভিন্ন রকম পোজে। তখন প্রায় সূর্যাস্তের সময়। তবে এদেশে সূর্যের আলো চলে যেতে বেশ খানিকটা সময় লাগে। বিকেলবেলাটা তাই বেশি লম্বা। আমাদের ছায়া তখনও বেশ স্পষ্টভাবেই বালিকে ছুঁচ্ছে ৷ ছবি তোলার সময় বিভিন্ন পোজ দিতে গিয়ে সবথেকে ইন্টারেস্টিং যে পোজটা হলো, সেটা হচ্ছে চৈতালির বালিকেলি ('জলকেলি' শব্দের অনুপ্রেরণা থেকে নেওয়া) | আমাদের ফটোগ্রাফারদের মান রাখতে যে কত রকম ভাবে চৈতালী কে দিয়ে বালি ছোঁড়ানো হল তার ইয়ত্তা নেই ৷ তবে ওর এর আগে আবির ছুঁড়ে পোজ দেওয়ার অভিজ্ঞতা আছে ৷ ফলে খুব অসুবিধা হল না। ও ও  শূন্যে বিভিন্ন ভাবে বালি ছুঁড়তে থাকল থাকলো আর আমরাও সেই খুব কম শাটার স্পিডে সেই বালুকণার গতিপ্রকৃতি ক্যামেরায় ধরার চেষ্টা করলাম। তার কিছু নমুনা এখানে রইল।


ইন্দ্রানী-কে শান্তি দিয়ে ডিউন ব্যাশিং শেষ হল। কিন্তু যে রাস্তা ধরে চলতে থাকলাম সেখানেও ছোট ছোট অনেক বালিয়াড়ি ছিল। সেই বালিয়াড়িগুলো পেরোনোর সময় ড্রাইভারের সঙ্গে কথাবার্তায় জানতে পারলাম যে অন্যান্য ট্রাভেল এজেন্টরা এই সমস্ত ছোট ছোট বালিয়াড়িতেই ডিউন ব্যাশিং করায়। আমরা মরুভূমির যে গভীর অঞ্চলে গিয়েছি সেখানে সবার যাওয়ার অনুমতি নেই ৷  মাত্র দুটি ট্রাভেল এজেন্সির সেখানে যাওয়ার অনুমোদন আছে ৷ তাদের মধ্যে, আমরা যাদের সাথে গিয়েছি, সেই ওরিয়েন্ট ট্রাভেলস  হল একটি ৷ কিছু সিলেক্টেড স্পেশালি ট্রেইনড ড্রাইভার ছাড়া এখানে গাড়ি নিয়ে আসার ছাড়পত্র  অন্য কারোর নেই কারণ এই ড্রাইভিং স্কিল সবার থাকে না ৷  সেই লেভেলের ড্রাইভিং স্কিল না থাকলে এখানে যে কোন রকমের দুর্ঘটনা যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে এবং এক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটা মানে এখানে মৃত্যু নিশ্চিত ।

যা বলছিলাম, ফেরার পথে ছোট ডিউনস প্রচুর৷ সেগুলো পেরানোর সময় আমরা লক্ষ্য করলাম সারে সারে গাড়ি দাঁড়িয়ে ৷ তার আশেপাশে অনেক ডিউন ব্যাশিং চলছে ৷ আর পাশে রয়েছে অনেক ছোট ছোট ক্যাম্প ৷  সেখানে এত লোক যে তিল ধারনের ঠাঁই নেই ৷ শুধু গাড়িতেই নয়, আবার quad bike - এও বাইকেও ডিউন ব্যাশিং হচ্ছে।  আমাদের ড্রাইভার আমাদেরকে জানালো যে সাধারণত খুব সাধারণমানের ডিউন ব্যাশিংগুলো এখানেই হয়ে থাকে ৷ আমরা যে  ডিউন ব্যাশিং করলাম সেটা একটা রেয়ার এক্সপেরিয়েন্স | এটা সবাই পায়না ৷ আমরা ওর কথায় বিশ্বাস করতাম না ৷ কিন্তু যেহেতু অরিন্দম চৈতালিরাও আগে এরকম ডেসার্ট সাফারিতে এসেছে, অন্য কোনো এজেন্সির মাধ্যমে, ওদের সেই অভিজ্ঞতা খুব একটা মধুর নয় ৷ তাতে টাকা হয়তো অনেকটাই কম লেগেছিল কিন্তু আজ এই ড্রাইভারের মাধ্যমে এখনো পর্যন্ত যে অভিজ্ঞতা আমরা সঞ্চয় করলাম, আগেরটা তার ধারে কাছেও সেই ছিল না বলে ওরা স্বীকার করল ৷ এরপর আমরা গাড়িতে করে ফিরতে রইলাম শারজা থেকে আবার দুবাইয়ের দিকে ৷  ডিউন ব্যাশিং শারজাতে হলেও ক্যাম্পিং হবে দুবাইয়ের মরুভূমিতে। 


আসলে শারজা হল খুব রক্ষণশীল এমিরেট ৷ এখানে অ্যালকোহল এবং বেলি ডান্স অনুমোদিত নয় ৷ এর অনুমোদন রয়েছে দুবাইয়ে ৷ সুতরাং আমরা যত রকমের ফুর্তি করব সেগুলো হবে দুবাইয়ের মরুভূমির ক্যাম্পে ৷ 

ফুর্তির অঙ্গ হিসেবে এই ক্যাম্পে যাওয়ার পথে আমাদের সাথে সাক্ষাৎ হবে একদল উটের ৷ আমাদের ড্রাইভার আমাদেরকে জানালেন যে এবার তিনি উটের খোঁজে হন্যে হয়ে বেড়াচ্ছেন ৷ মিনিট দশেক ধরে আবার তথাকথিত পাতি ডিউন ব্যাশিং করতে করতে করতে উটের দলের খোঁজ চলল। অবশেষে আমাদের সাথে সাক্ষাৎ হলোএক দঙ্গল উটের ৷ সেই উটেরা সব একসাথে রয়েছে এবং এরা কারো প্রতিপালিত উটের দল ৷ যাতে বেশি দূর চলে না যেতে পারে দেখা গেল সেজন্য এদের প্রত্যেকেরই সামনের দুটো পা কাপড় দিয়ে বাঁধা ৷  আমার দাঁড়ালাম | ওদের কাছে গেলাম। এই উটেরা কিন্তু মানুষদের বিশেষ ভয় পায় না ৷   বুম যখনই একটা উটকে আদর করতে আরম্ভ করল সে ঝোপের কাঁটা বেছে বেছে খাওয়া থামিয়ে চোখ বুজে দিব্যি বুমের হাতের আদর নিতে থাকলো ৷ আমরা সেই উটটির নাম দিলাম 'মহেশ' ৷ তিনি একটি উট যাঁকে আদর করলে আহ্লাদে গলে পড়ার জোগাড়!


এই উটের দলের সঙ্গেও চলল খানিকক্ষণ ফটোগ্রাফি সেশন। তারপর পড়ন্ত রোদে আমরা উটদেরকে বিদায় জানিয়ে উঠলাম গাড়িতে ৷ এবার গন্তব্য ডেজার্ট ক্যাম্প ৷ শুনেছি সেখানে অন্য অনেক কিছুর সাথে উটের পিঠে চড়ার ব্যবস্থাও আছে ৷

(চলবে...)