Tuesday, 25 October 2022

"স্মৃতিকল্পদ্রুম":


আমাদের বাড়িতে বেশ কিছু পুরোনো বাংলা পুঁথি ছিল ৷ বাবা সাধারণ সালকের ইস্কুলের মাস্টার মশাই হলেও তাঁর জ্ঞানের পরিধি উপলব্ধি করতে হলে সেই পুঁথিগুলো নিয়ে গত ১৫ বছর ধরে তা উদ্ধার করে একটি বই ছাপতে উদ্যোগী হয়েছেন ৷ " এবং মুশায়েরা" এই বই টি প্রকাশ করতে রাজি হয়েছে। দ্বিতীয় প্রুফ রিডিং চলছে ৷ প্রকাশক একান্ত অনুরোধ করেছেন আর কিছু যোগ না করতে, কারণ বিষয় এমন জটিল , আর তার content ও যে কম্পোজার এডিট করতে চান না।

বাবার বর্তমান বয়স ৮৮ | বয়সের ভারে ন্যুব্জ... একমাত্র আশা জীবিত অবস্থায় ওনার লেখা বইটির প্রকাশটুকু দেখে যাওয়া...

রাখলাম বইটির শেষ অংশ থেকে খানিকটা,আমাদের বাড়ির পুঁথির কিছু ছবি আর সংস্কৃত গ্রন্থাগারের কিছু অমূল্য সম্পদের ছবি, যা নিয়ে কাজ করার মানুষও দুষ্প্রাপ্য হচ্ছে ধীরে ধীরে....

বাবার পক্ষ থেকে আলাদা করে ধন্যবাদ শ্রী কমল ঘোষ মণ্ডল মহাশয়-কে যাঁর সাহায্য ছাড়া এই কাজ হয়ে ওঠা অসম্ভব ছিল।

আর বাকি থাকে আশীষ কাকুর কথা (বাবার ছাত্র ও লেখক শ্রী আশীষ মুখোপাধ্যায়) যিনি প্রথম বুঝ্তে পারেন যে বাবা-কে দিয়ে কাজটা না করিয়ে নিলে, এটা চিরতরে অন্ধকারে হারিয়ে যাবে।


শেষকথা

বাক্যের পরিশেষে নিবেদনঃ


অনুমান করি যে বাংলা বাক্যের বিচিত্র ব্যবহারে মূল সংস্কৃত গ্রন্থের সঙ্গে যথেষ্ট ঘনিষ্ঠতা আছে স্মৃতি নিবন্ধের এই অনুবাদ, ভাবানুবাদ, কোথাও বা আক্ষরিক অনুবাদের অনুবাদ প্রায়শই মূলের সংস্কৃতের অনুরণন৷ ভাষান্তর বা অনুবাদে তা হওয়াই স্বাভাবিক যেহেতু সংস্কৃত ও বাংলার বংশ কুলজি এক, যদিও সংস্কৃতে পদ বসাবার রীতি সুনির্দ্দিষ্ট নয়, তুলনায় বাংলায় তা নির্দ্দিষ্ট অনেকখানি 'স্মৃতিকল্পদ্রুম -এর মূল সংস্কৃত পুঁথি থাকলে তা আমাদের অজানা এই স্মৃতি নিবন্ধ প্রায়শ্চিত্ত ইত্যাদি বিষয়ে নানা প্রাচীন স্মৃতিগ্রন্থের বক্তব্য বা মতের একটি সংকলনও হতে পারে (নানা স্মৃতিকারের মতের উল্লেখ, 'পূর্বপক্ষ '  'উত্তরপক্ষ ' রীতিতে তাদের স্থাপন আমরা লক্ষ করেছি আগেই) আমরা রঘুনন্দনের 'মলিম্লুচতত্ত্ব'-এর পুঁথি এবং প্রায়শ্চিত, অশৌচ, শ্রাদ্ধ ইত্যাদি বিষয়ে দু'তিনটি অন্য পুঁথির কিছু কিছু অংশ পাঠ করতে গিয়ে দেখি যে বক্তব্যে মিল থাকায় সেখানেও সংস্কৃত নানা বাক্যের গঠন, বড়ো বা ছোট বা ভাঙ্গা ক্ষুদ্র বাক্যের ব্যবহার আমাদের আলোচ্য 'স্মৃতিকল্পদ্রুম'-এর বাংলা বাক্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়, বক্তব্যের উপস্থাপনাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া কিন্তু আমাদের আলোচ্য রাধাব‌‍ল্লভের 'স্মৃতিকল্পদ্রুম" নিবন্ধের বাংলা ভাষার প্রকৃতিকে আড়ষ্ট বা ছায়াবৃত করতে পারেনি বরং ভাষান্তর পেয়ে বাংলা গদ্যে তা সমৃদ্ধি, বৈচিত্র্য ও স্ফুর্তি এনেছে

 "স্মৃতিকল্পদ্রুম"-এর গদ্য ব্যবহারিক গদ্য, প্রয়োজনের গদ্য এর লক্ষ্য যা ই হোক, এর বাংলা গদ্য ভাষা যথেষ্ট মূল্য পাবার যোগ্য উপেক্ষা যা পেয়েছে তা আমাদের অজ্ঞতা ও অনবধানতার জন্য পণ্ডিতেরা বলছেন স্মৃতি, জ্যোতিষ, ন্যায়, চিকিতসা ইতাদি বিষয়ে ১৭শ -১৮শ শতব্দীতে লেখা গ্রন্থের পুঁথি খোঁজ করলে অনেক পাওয়া যাবে অর্থাৎ এ-সব উপলক্ষে বাংলা গদ্যের চর্চার অভাব ছিল না সেকালে কেবল মিশনারিদের বা ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের পাঠ্যপুস্তক রচনার উদ্যোগে বাংলা গদ্যের পরিকল্পিত ধারাবাহিক চর্চা সেক্ষেত্রে ছিল না  পরন্তু কলেজের প্রকাশিত গদ্য গ্রন্থে সাহিত্য গুণ যা ছিল তার কারণ সেগুলি ছিল প্রধানতঃ কোনো সাহিত্য গ্রন্থের অনুবাদ  স্মৃতিকল্পদ্রুম ইত্যাদি মধ্যযুগের বাংলা গদ্যগ্রন্থ ছিল শ্রেণি বিশেষের মধ্যে সীমাবদ্ধ প্রয়োজনের গদ্য ৷ সাহিত্য রচনা তাদের লক্ষ্য নয়, মুদ্রনের আশীর্বাদ ও তারা পায় নি ৷ প্রবল বাংলা কাব্যধারার প্রতিস্পর্ধী স্বতন্ত্র সাহিত্য ধারার বিচিত্র শক্তি তারা নানা কারনে প্রতিষ্ঠা করতে পারে নি ৷ ঐ কালপর্বে রাজনৈতিক পটবদল, দুর্ভিক্ষ, অরাজকতা ইত্যাদি তার কারণ হতে পারে ৷ কিন্তু রামরাম, মৃত্যুঞ্জয় রামমোহনেরা (সতেরো বছর বয়সেই রামমোহন মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে একটি গ্রন্থ লেখেন ) আকাশ থেকে পড়েন নি, হঠাৎ তাঁদের দ্বারা বাংলা গদ্য আবিষ্কৃত হয়নি বরং তাঁদের লেখায় স্মৃতিকল্পদ্রুম -এর স্বচ্ছতা স্বাচ্ছন্দ সর্বত্র কোথায় !



No comments: