কেমন আছ? new normal -এ?
আরে এক্সাইডের মোড় তো আর excited হয় না...গ্রীন পুলিশে খেদায় না আর। তাদের কেই খেদিয়ে দেওয়ার জোগাড়!
আমি লম্বা চুল রাখার চেষ্টায় আছি। সঙ্গে বুড়ো হব বলে রেখেছি Van Dyke...ঊনবিংশ শতকের শিল্পীর ধাঁচে....শিল্পী-রা বড় পাঁকাল মাছ...বাঁধতে চাইলেই হল, নাকি!...slippery when wet হয়েও...আমিও পাঁকেই ডুবে রইলাম...আঁশ তো নেই, ছাল আছে। কেউ যদি ছাড়িয়ে নেয়, সেই ভয়েই হয়তো!
হ্যাঁ...শিল্পী বলতে মনে পড়ল...এ বছর তো আর কুমোরটুলি যাওয়া হবে না...তোমার সঙ্গে...
আমি একাই গিয়েছিলাম একদিন। দেখে এলাম! জানো, কেমন সব ছেঁড়া...টুকরো টুকরো...পেটের তাগিদে ঠাকুরের মাপ-ও ছোটো হয়ে যায়। মনে পড়ে যায়,
"...বল ভাই কি দাম দেবে/ পুতুল নেবে গো! পুতুল!"
পার্বতী ছিলে স্বপ্রকাশে। গুছিয়ে নিতে হঠাৎ রাধা হলে। শিব বললেন, আরে আরে কর কি! আমার মুখোশ যখন তার বাঁশির সুরে খসালেই, তখন, বিসর্জন ভবিতব্য...পুলকে, আহিরীটোলা না বাঁধাঘাট? লঞ্চে সাতটাকা। কিন্তু সাঁতরালে আমি অজেয়...যদিও জানি না কোন ঘাটে উঠব। একটাই ভরসা, নদীতে পাঁক নেই। শুধুই পলি।
অবগাহনে তো মুখোশ পরতে হয় না। গঙ্গার জলের গন্ধ বদলে গিয়েছে। নেই সে সব বর্জ্য আজ আর, যেখানে হঠাৎ ভাসলে পচা গরুর পেটে জেগে ওঠে মাথা...সাঁতার কাটি নদীর বুক চিরে, আজ ও, অকারণে...
এতদিন ভরসা ছিল, তুমি নেই তো কি! কলাবৌ তো ছিল, পরম বিশ্বাসে, নিঃস্বাসে। ডোবাবো তোমাকে, সব নিয়ে...
New normal-এ আমিই ডুব-সাঁতার...জলসাঘরে...জল-সাগরে।
মহাভারতের লেখকের মত আজ আমারও সেই একটা দাঁত ভাঙ্গাই রয়ে গেল...চিরকালের পুরাণের মত....
এই সব যখন লিখে চলেছে আমার মনের গভীরের আমি, তখন কানের পাশে বাজছে, ক্যাকটাসের 'শিকড়ের গান', পটা-র গলায়। আমি যেন স্থির। পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, কামিনী স্কুল লেনের বারোয়ারীতলা, সেই বটগাছ, পুকুর আর ঠিক 'জয় বাবা ফেলুনাথ'- এর আদলে তৈরী হতে থাকা ঠাকুর। ঢুকে পড়লাম, দুগগা দুগগা বলে। একই রকম আছে সব। শুধু পুকুর ঘাট বাঁধানো। বাঁধানো ঠাকুর দালান-ও। সেখানে চলছে কচিকাঁচাদের মহালয়ার শুটিং। খড়ের গায়ে মাটি পড়ে আবহ প্রায় শেষের পথে। বটগাছের ঝুরিগূলো বাড়তে বাড়তে শিকড় বেঁধে ফেলেছে। পাতার ফাঁক দিয়ে ওপরের দিয়ে তাকিয়ে গাছের ডগাটা দেখার চেষ্টা করলাম। পেলাম না। শান বাঁধানো ঘাটের ওপর একটা ডাল এমন ভাবে নুয়ে পড়েছে যেন জল কে ছুঁলেই আদর পাবে, এই আশায়। এই সব ভাবতে ভাবতে কোথায় হারিয়ে গেলাম! বাড়িতে গরম হলেই, আমাদের লোহালক্কড় মার্কা শহরে, এই বটগাছের স্নিগ্ধ ছায়াতেই জুড়িয়েছি প্রাণ, সব বন্ধুরা মিলে। ফ্রেম টু ফ্রেম বেশ যাচ্ছিলাম। হঠাৎ 'কাট'। এই শর্ট ফিল্মটা প্যাক আপ হয়ে গেল। মনে পড়ে গেল, আমাকে যেন-তেন-প্রকারেণ মায়ের দু-পায়ের হাঁটুর ক্যাপ কিনে আনতেই হবে। না হলে চলা ফেরা করাটাই দায় হয়ে উঠেছে তাঁর পক্ষে। বাবা তো পা ভেঙে বসে আছে। জানি না, এর পর কি। তবু-ও এত কাব্য বের হয় কি করে! কেনই বা!
অনেক হযবরল পাকাতে পাকাতে যখন চিন্তায় এমন জট পড়ে গেল, যে খুলতেই পারছি না, দেখলাম হিন্দু হস্টেলের সামনে দাঁড়িয়ে। হাতে 'মৌচাক'-এর পূজাসংখ্যার জন্য লেখা পাণ্ডুলিপি।
পাণ্ডুলিপির মতই পানসে মুখে গ্যারেজ করা অনেকগুলো হাতে টানা রিক্সা গাড়ি, কলকেতা শহরের অন্যতম পুরোনো ঐতিহ্য, ট্রামের থেকেও পুরোনো, প্রায় পালকির সমসাময়িক। প্রথম যখন চড়েছিলাম, মনে আছে, ভেবেছিলাম উল্টোদিলে পড়েই যাব। রিক্সা ওয়ালার খালি পা, আর হাতের আঙুলে পাকানো পিতলের ঘন্টি। প্রথম অভিজ্ঞতার দিক থেকে বলতে পারি, বিমানে চড়ার থেকেও অনেক বেশি সাংঘাতিক। অনেকটা লালমোহনবাবু ওরফে জটায়ূ নামক 'বড়ীয়াঁ পাকষী, জেটায়ূ'-র প্রথম উটের পিঠে চড়ার মত।
অনেক বুকে কান্না নিয়ে সবাই এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন কবরের সারি, শতযুগ ধরে তাদের আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে শহরের বুকে। তাদের মধ্যে একটি পাশের ট্রান্সফরমারে মুখ গুঁজে পড়ে আছে, যদি ইলেকট্রিক শকের তাড়সে নিস্তব্ধ স্নায়ুন্দ্রিয়ে উত্তেজনা প্রবাহের মাধ্যমে কোনক্রমে প্রাণের সঞ্চার ঘটে।
কিছুদিন ধরেই উত্তমকুমারের বেশ কিছু সিনেমা দেখছিলাম। ক্যালকাটা মেডিকেল কলেজ আর ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালকাটা - দু-টির সামনের মোটা থামওয়ালা স্থাপত্যকর্ম বেশ ঘুরেফিরে আসে। সংস্কৃত কলেজের সামনের দিকটাও অনেকটাই এ রকম। ট্রামলাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখলাম বেশ ভাল ফ্রেম। তুলে নিলাম ছবি। এটাও ধ্রুপদী, কিন্তু একসময়ের ঝুল নোংরা পড়া দৈন্যদশার বদল ঘটেছে। পাশাপাশি দেখতে পেলাম, শহর কি রাখতে চাইছে আর কি থেকে নিষ্কৃতি পেতে চাইছে, বিশ্ববিদ্যালয় আর হাতে টানা রিক্সা। সাম্যবাদের কথা যতই কপচাই না কেন, কিছু ব্যাপার রাখা আর না রাখার সিদ্ধান্তে কিন্তু 'প্রিভিলেজড সেকশন'-এর হাত থেকেই যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন তাই চিরকালীন, কিন্তু শহরকে দূষণ থেকে বাঁচাতে হাতে টানা রিক্সার আর যুক্তিগত প্রয়োজন নেই। এম্বাসাডর কোম্পানী অবলুপ্ত হলেও সরকারী গাড়ি আর হলুদ ট্যাক্সি এর বিকল্প খুঁজে পায় নি। কিন্তু হাতে টানা রিক্সার বিকল্প পেয়ে গিয়েছে কলকাতা -- উবের আর ওলা ক্যাব।
মা-এর জন্য হাঁটুর ক্যাপ সেন্ট্রাল এভিনিউ থেকে কিনে নিয়ে যতক্ষণে 'মৌচাক'-এর অফিসে গিয়ে পৌঁছালাম, ততক্ষণে মাস্কের মধ্যে দিয়ে বের হওয়া উষ্ণ কার্বণ-ডাই-অক্সাইড আমার চশমার কাচ কে স্মোকড গ্লাস করে দিয়েছে।
-- বড় দেরী করে ফেললেন। শারদীয় সংখ্যায় জায়গা হবে কি না জানি না। প্রুফ রিডিং পর্যন্ত সমাপ্ত।
-- এই রে! যাক গিয়ে! আপনারা আজ পর্যন্ত আমাকে কোনোদিন নিরাশ করেন নি। দেখবেন যদি কিছু করে ঢোকানো যায়! না হলে তো পরের সংখ্যা আছেই।
-- আপনি আমাকে ফোন করে মনে করিয়ে দেবেন একটু।
-- নিশ্চয়ই।
ফোন করে মনে করিয়ে দেওয়ার কথায় মনে পড়ে গেল। আমার ডিজাইনার মিউজিক সিস্টেম টা যাঁকে সারাতে দিয়েছি, তিনিও বলেছিলেন, ফোন করে মনে করিয়ে দেওয়ার কথা। ভুলেই গিয়েছি। ডিজাইনার মিউজিক সিস্টেম শুনে অবাক হবেন না। কারণ এটি আমার এক বিশেষ বন্ধু প্রায় পনেরো বছর আগে নিজে হাতে বানিয়ে দিয়েছিল। পুরো টেইলর মেড। সারাতে নিয়ে গেলেই সবাই নাক কুঁচকে বলে, ধুর মশাই ফেলে দিন, এসব খুচরো কাজের যুগ আর নেই। মায়া করে ফেলতে পারি নি। অবশেষে এই ভদ্রলোক, অনেক পুরোনো রেডিও-র আর স্পিকারের মধ্যে বসে পুরু চশমার কাচের মধ্যে দিয়ে, বিড়ির ধোঁয়ায় মোহময় হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, "রেখে যান, দেকচি!" আমি এই আশ্বাসেই ধন্য হলাম।... তাই মনে পড়ল, জিনিষটা যেদিন দিয়ে এসেছিলাম, বলেছিলেন, ফোন করে মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দেবেন।"
এই বিশ্বব্যাপী পরিবর্তনের ফলে অনেক কিছু হারিয়েছি যেমন আবার এমন কিছু নিজের মধ্যে খুঁজে পেয়েছি যে সে সমস্ত দড়ি টানাটানির ফলিত বল শেষ পর্যন্ত সরণ বিন্দু-কে শূণ্যতেই এসে দাঁড় করিয়েছে। চেষ্টায় আছি এই শূণ্যকে পরমশূন্যতে টেনে নিয়ে গিয়ে অন্তরের মোক্ষলাভ করার....
facebook link of publication:
No comments:
Post a Comment