Monday, 3 February 2025

এই রাত তোমার আমার

(একটি সস্যোতি পুজোর আনঅ্যাডাল্ট গপ্প যার সাথে বাস্তবের মিল থাকলেও চরিত্ররা অবাস্তব)

আমাদের গাড়িটা যখন বাঁকের কাছে তখন..... 

- চল চল চল চল ….গেট গোয়িং, ম্যান!!! 

- ওদের গাড়িটা কোথায়? 

- দেখতে পাচ্ছি না…ভাবিস না… আমাদের আরো দুটো গাড়ি পিছনে আছে। আমরা আছি মোট দশ জন। আর ওরা মাত্র দু জন…

সাথে সাথে আমাদের কাছে আমার কাছে একটা ফোন এলো।

- আজ কিন্তু টয়োটা নেয়নি, স্কোডা টা নিয়ে বেরিয়েছে। মনে রেখ, ড্রাইভিং প্যাটার্ন কিন্তু আমাদেরই মতো। Underestimate  করার কোন দরকার নেই। বরং দরকার হলে পাশে কোথাও একটা গুঁজে দাঁড়িয়ে যাও। 

- ওকে … দরকার হলে তাই করব। কিন্তু সেরকম কিছু দেখছি না। 

প্রত্যেকটা সিগনাল যখনই খাচ্ছি তখনই একটা উত্তেজনা কাজ করছে, যে, দেখে না ফেলে যে আমরা ধাওয়া করছি। তাহলেই গেল। পুরো প্ল্যানটা চৌপাট হয়ে যাবে।

কিন্তু শপিং মল অব্দি অল ক্লিন। 

মলের পার্কিং -এ ঢোকার আগে আমাদের তিনটে গাড়ি এবং দশ জন যে যার জায়গা মতো পজিশন নিয়ে নিল। ট্রেইল যেন মিস না হয়। 

কালো রংয়ের স্কোডাটা ধীরে ধীরে পার্কিং -এ ঢুকলো | যে কোনো মুহূর্তে অ্যাকশন নিতে হতে পারে | কিন্তু না, পার্কিং-এ কিছু না | দু’জনকে ঢুকতে দিতে হবে।  

স্কোডা ভরপুর টোপ গিললো। আমরা ঠিক যেখানে গাড়ি পার্ক করেছি, তার ঠিক উল্টোদিকে স্কোডাটা পার্কিং করলেন ভদ্রলোকটি | 

ওনার মিসেসও নামলেন | দুজনের একটা কথোপকথন চলল,  লিফটে উঠবেন, না এসকালেটারে, তা নিয়ে। স্পষ্ট শুনতে পেলাম | অনন্তকে জানালাম লিফটে অনেকটা হাঁটা পথ, এসকালেটার কাছাকাছি। তাই ওনারা দুজনে  এসকালেটারে উঠছেন | 

আমি এবং অনন্ত সজাগ। যেন এই ব্যাপারে কোন ভুল না হয়। একদল লিফটে চলে গেল। আর আমরা এসকালেটারে।

আমাদের কাছে খবর আছে, যে মুভি শো এর টিকিট ওনারা কেটেছেন সেটা  সাড়ে চারটায় শুরু। কিন্তু তখন বাজে সবে ৩:৫০ মিনিট। চল্লিশ মিনিট বাকি। অত আগে কি আর হলে ঢুকতে দেবে? যদি হলে না ঢুকে ফুড কোর্টে যায় তাহলে ব্যাপারটা কিন্তু অন্যরকম হবে। প্ল্যান বদলাতে হবে।  তাই কোন রকম রিস্ক নেওয়া যাবে না। কাউকে না কাউকে তো একদম পিছু পিছু ফলো করতেই হবে। কারণ আমরা কোন হইচই চাই না। কাজ সেরে বেরিয়ে যাব। আমাদের কারোরই টিকিট কাটা নেই। লাউঞ্জে ঢুকতে গেলেও সিকিউরিটি স্টাফদের অনেক বোঝাতে হবে। ততক্ষনে পাখি উড়ে যাবে। তাই যা করার তা করতে হলে হলে ঢোকার আগেই। এটাই একমাত্র সুযোগ। 

পিছনে পিছনে ফলো করতে করতে একদল সিনেমা হলের প্রবেশের সামনে পৌঁছে গেল। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লুকিয়ে পোজিশন নিল | 


না, ওনারা ফুড কোর্টে গেলেন না। সোজা সিনেমা হলের দিকে চলে এসে হুড়মুড়িয়ে সিকিওরিটি চেক করে ঢুকতে গেলেন। আমরা ভেবেছিলাম শো শুরু হতে যতক্ষণ বাকি তাতে ওনাদের ঘুরে আসতে বলবে।| কিন্তু সেসব কিছুই তো হলই না।  

উল্টে আমাদের স্ট্যান্ড বদলাতে হল। হলের লাউঞ্জে ঢোকার আগেই আটকাতে হবে। 

কাজল বাবু কারোর ইনস্ট্রাকশন ছাড়াই চিৎকার করতে থাকলেন ভদ্রলোককে distract করার জন্য

- ও দাদা !!!! ও দাদা!!!!!  দাদা আআআআআ....!!! 

কে কার কথা শোনে!!!

ভদ্রলোক তাঁর বেটার হাফ-কে নিয়ে ততক্ষণে চেকিং শেষ করে হলের মধ্যে প্রবেশ করতে চলেছেন। আমি অগত্যা দুর থেকে সিকিওরিটিকে ইশারায় জানালাম ওনাকে আটকাতে।

উনি আটকাতেই আমি এগিয়ে এসে ভদ্রলোককে আর ওনার বেটার হাফকে বাইরে বেরিয়ে আসতে বললাম | 

চার্লস শোভরাজ স্টাইলে বেরিয়ে এসে হঠাৎ দেখেন কাজল বাবু দাঁড়িয়ে। প্রথমে ঘাবড়ে গিয়ে নিজেকে সংযত করে বললেন,

- আরে আপনি? চলুন আমাদের সাথে ভেতরে সিনেমা দেখবেন নাকি! 


এই কথা বলতে বলতে চারদিক থেকে দশজনে পঙ্গপালের মতো ঘিরে ধরলাম ভদ্রলোক ও তাঁর বেটার হাফকে।

এবারে ভদ্রলোকের দেখার মত হাল।  মুখটা পুরো শুকিয়ে চুন। বেশ অপ্রস্তুতে পড়ে গেছেন, বোঝা গেল। কিংকর্তব্যবিমূঢ়! 

কোনমতে আমতা আমতা করে ভদ্রলোক বললেন

- আরে কি ব্যাপার? আপনারা সবাই মিলে…???

লেটদা মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন

- ব্যাপার কিছু নয়, দাদা।  আমরা শুধু আপনাদের একটু সি অফ করতে এলাম। আজকে সরস্বতী পুজোর দিন বৌদিকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছেন। তাও আবার কোন সিনেমা দেখতে? না, " এই রাত তোমার আমার" ....যে সিনেমা মনে হচ্ছে না আপনি আর বৌদি ছাড়া আর কেউ দেখতে ঢুকছে।

পাশ থেকে উদাত্ত কন্ঠে গেয়ে উঠলাম “এই রাত এই রাত তোমার আমার/ওই চাঁদ তোমার আমার/ শুধু দুজনে…” 

আবার আমতা আমতা করে ভদ্রলোক আমাদের বললেন,

 - এসো তোমরাও এসো…

বললাম,

 - না না শুধু সি অফ করেই চলে যাব আমরা সিনেমা দেখতে আসিনি। আপনারা এনজয় করুন।

যতজন সিকিউরিটি ছিল PVR এ, তাঁরা ভাবলেন নিশ্চয়ই এনারা কোনো কেউকেটা হবেন। না হলে দুটো লোক সিনেমা দেখতে এসেছে, আর তাঁদেরকে সি অফ  করতে এসেছে দশ জনের একটা কনভয়। এতো সহজ কথা নয়! তাই, না চাইতেই জল! একজন সুহৃদ সিকিওরিটি স্টাফ দাদা সহাস্যে এগিয়ে এসে বললেন,

- মোবাইল ফোনগুলো দিন দাদা। কি কি ছবি তুলতে হবে বলুন, আমরা তুলে দিচ্ছি। আপনাদের কষ্ট করতে হবে না।

সিকিওরিটি দাদারাই আমাদের ছবি তুলে দিলেন। 

এরপর ভদ্রলোক ও তাঁর বেটার হাফকে বিদায় জানিয়ে আমরা আবার প্রস্থানোদ্দত হলাম।

কিন্তু হঠাৎ লেট দা ঘুরে গিয়ে সিকিউরিটিদের ডেকে সকলের সামনে বললেন, 

- এই যে…শুনুন দাদা! এনারা দুজন হলেন আমাদের দাদা বৌদি | আজ সরস্বতী পুজো তো! সরস্বতী পুজোর দিনে সিনেমা দেখতে এসেছেন… “ এই রাত তোমার আমার”!  বুঝতে পারছেন তো যা বলছি ! 

- হ্যাঁ স্যার… পারছি স্যার…

- হ্যাঁ ব্যাপারটা কিন্তু বোঝার আছে! আপনারা বরং লক্ষ্য রাখবেন যে সিনেমা দেখার সময় দাদা বৌদির যেন কোন অসুবিধা না হয়। কেউ যেন অযথা ডিসটার্ব না করে । 

বুঝলেন তো… না কি আরো খুলে বোঝাতে হবে! 

সিকিউরিটি পুরো দুকান এঁটো করা হাসি হেসে বললেন

-  হ্যাঁ স্যার আর বলতে হবে না |  স অ অ অ ব বুঝেছি।  কোন্নো অসুবিধা হবে না | আপনারা নিশ্চিন্তে আসুন স্যার!

গল্পটা কোনো থ্রিলার ছিল না। পাতি একটা ঘটনা।

আমাদের প্রিয় মিহিরদা আর বৌদি নতুন বাংলা সিনেমা “এই রাত তোমার আমার” দেখার জন্য অনলাইনে টিকিট কেটেছিলেন। ভুলবশত শ্যামপুকুর PVR এর টিকিট কেটে ফেলেছিলেন। পরে আবার ভুল শুধরে লোকাল PVR এ টিকিট কাটেন। সেটা উনি আমাদের ঝাউতলার রাতের আড্ডায় শেয়ার করেছিলেন। 

******

আগে সরস্বতী পুজোর দিনে যখন কোন বন্ধু প্রেমিকা সমেত সিনেমা দেখার জন্য যেত, আমরা প্রেমে বাগড়া দিতে যাওয়ার প্ল্যান ভাঁজতাম। প্ল্যান হত যে সিনেমা শুরু হওয়ার পরে চুপচাপ দশ পনেরোজন ওদের ঠিক পিছনের সিটে বসা হবে। | সিনেমা দেখার সময়ে হাতে হাত ধরবে, একটু কাছাকাছি ঘন হয়ে ঘেঁষে বসবে |  তারপরে একটু ঠোঁটে ঠোঁট হতে যাবে, সামনে চলবে রুপালি পর্দায় স্বপ্নের নায়ক নায়িকার গান, যেমন “ইয়ে কালি কালি আঁখে”,  আর ঠিক সেই মুহূর্তে ঠিক পিছনের সিটে শিকারের অপেক্ষায় বসে থাকা জনা দশ পনেরো জন ছেলে, যাদের ওরা ‘বন্ধু’ বলে জানে, ওই স্বর্গসুখানুভূতির উত্তেজক মুহূর্তকে বরবাদ করে দেওয়ার জন্য একসাথে বলে উঠবো

- হোওওওওওওওওওওওওওওও!!!!!!!

ব্যাস!!! তারপর ছুটে সবাই হল থেকে পালাবো | 

******

মিহিরদার বয়েস সত্তরের বেশি | আমাদেরও পঞ্চাশের বেশি। আধ্যাত্মিক ভাবধারায় আমরা এখন খুব 'ভাল লোক’ হয়ে উঠেছি | 

তাই মিহিরদা  আর বৌদিকে অকারণে ওরকম করার কোনো প্রয়োজন নেই |  

তাই ওনাদের শুধু সি অফ করেই ফিরে এলাম | 



No comments: