“এবার যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তা হল ইউনিভার্সিটির প্রধান লেকচার হল। ওপেন এয়ার। এর কোন ছাদ ছিল না। এক কোণের দিকে দেখা যাচ্ছে পুরনো পয়:প্রণালী। লেকচার হল নীচেও, আছে উপরেও আছে, স্তরীভূত অবস্থায়। আর ফ্লোর যখন এই ওপর পর্যন্ত ছিল,তখন ওই পর্যন্ত জল নিকাশি নালাও ছিল। খোলা জায়গায় জল তো পড়বেই, তাই এই ব্যবস্থা।
![]() |
| Lecture Hall and Podium |
লেকচার হলের মোট চারটি স্তর স্পষ্ট প্রত্যক্ষমান। সবথেকে নিচে লেকচার হলের যে স্তরটি দেখা যাচ্ছে, সেটাই হচ্ছে প্রথম লেকচার হল। লেকচার হল হোস্টেল থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না। সবটাই একই জায়গায় কেন্দ্রীভূত ছিল। তারপর প্রথম লেকচার হল ঢেকে দ্বিতীয়টি তৈরি হল। ফলে প্রথমটা বন্ধ হয়ে গেল অর্থাৎ প্রথমটি দ্বিতীয়টির দ্বারা ঢাকা পড়ে গেল। আবার দ্বিতীয়টি খারাপ হতে তৃতীয়টি তৈরি হলো ও দ্বিতীয়টি একই রকম ভাবে ঢাকা পড়ে গেল। আবার একই রকম ভাবে তৃতীয়টি খারাপ হতে চতুর্থটি তৈরি হলো, আর তৃতীয়টি ঢাকা পড়ে গেল তার নীচে। মোট চারটি লেভেলে লেকচার হল থেকে গেল। চতুর্থ লেভেলে সমস্তটাই যে একটিই তলে ছিল, সেও স্পষ্ট।
চারটি লেকচার হল ছিল চারটি স্তরে। তাহলে চারটে পোডিয়ামও ছিল, নিশ্চয়ই। সামনে যেটা দেখতে পাচ্ছি সেটা হল চতুর্থ পোডিয়াম। বাকিগুলো এটার নিচে চাপা পড়ে গেছে। কিন্তু প্রত্যেকটি লেকচার হলের লেভেলে একটি করে পোডিয়াম ছিল তা কিন্তু সহজেই অনুময়।
যতদিন পর্যন্ত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় মহাযান বৌদ্ধ ধর্মের জন্য বিখ্যাত ছিল, ততদিন পর্যন্ত লেকচার হল ও পোডিয়াম দুই-ই ছিল এবং তা শুধুমাত্র পঠন-পাঠনের জন্য শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হত। পরে যখন এখানে আবার তন্ত্র শাস্ত্র নিয়ে চর্চা শুরু, তখন এই নালন্দাই তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান হয়ে উঠল। ফলে তখন আর ব্যাপারটা শুধুমাত্র ধর্মে ও শিক্ষায় সীমাবদ্ধ রইল না। সে সবের বাইরে গিয়ে এই স্থান অনেক বেশি ritualistic হয়ে উঠল| সেই সমস্ত ritualistic practices-এর জন্য এখানে গঠিত হল পঞ্চম চৈত।
এই তন্ত্র শাস্ত্রের চর্চার কারণে লেকচার হলের উদ্দেশ্যই গেল আমূল বদলে। গেল পূজা,পাঠ, যজ্ঞ ইত্যাদি নান রকম কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে গেল এখানে, এই লেকচার হলের মধ্যে। প্রথমেই পঞ্চম চৈত কিন্তু এখানে ছিল না। সেই উদ্দেশ্যে আরো তিনটি স্তর - পঞ্চম ষষ্ঠ ও সপ্তম চৈত - এই কাঠামো অনেক পরে গঠিত হয়েছে। তার প্রভাব হিসেবে বিভিন্ন symbols এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই symbols গুলো আমরা আগেও বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি|
বার বার এটাই প্রমাণিত হয় এখানে যে যা তৈরি হয়েছিল তা ঢেকে গেছে নবগঠিত স্তরের নিচে। এই সিম্বল গুলিকে আর্কিওলজির ভাষায় মুনস্টোন অর্থাৎ চন্দ্রশিলা বলা হয়। এরকম সিম্বলখচিত চন্দ্রশিলা শ্রীলঙ্কাতেও পাওয়া গেছে। সিঁড়ির নিচে মন্দিরের গায়ে বা স্তূপের নিচে যে সব মুনস্টোন সিম্বলস আছে তা সংসার জীবনের বিভিন্ন যে সকল স্তর আছে সেগুলোকেও সিম্বলাইজ করে। মুনস্টোন বা চন্দ্রশিলার এটাই সিগনিফিকেন্স। আমাদের মধ্যে কিছু গাইড এই মুনস্টোনকে কুমারগুপ্তের চিহ্ন হিসেবে ধরে নিয়ে নানান গল্প বানিয়ে চালিয়ে দেন বটে, কিন্তু আসল ঘটনা মোটেও তা নয়।
![]() |
| Foundation/Base of the Pilllars |
এবারে এই অংশে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে এগুলি ছিল পিলার। বেসগুলো পড়ে আছে। পিলারের বেস হচ্ছে গ্রানাইট। মানে পিলারগুলিও ছিল গ্রাণাইটের। আর পিলার ছিল মানে তো এপাশে ছাদও ছিল।”
অনেক ইঁটের মধ্যে হঠাত গ্রাণাইট দেখে ফস করে প্রশ্নটা মুখ থেকে বেরিয়ে গেল।
আমি প্রশ্ন করলাম
- এই পিলারের বেস-গুলো কি অরিজিনাল?
উত্তরে উনি বললেন,
- একটা সিম্পল ব্যাপার বুঝে নিন। নালন্দায় যত শুধু পাথর আছে সব অরিজিনাল। আর যতটা সিমেন্ট দিয়ে জোড়া পাথরের টুকরো আছে, সেগুলো ফলস। কারণ সেগুলো প্যাচওয়ার্ক ও রেস্টোরেশনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।
(চলবে)
![]() |
| Beside the Store House/ Go-Down |



No comments:
Post a Comment