গত পর্বে আমরা ছিলাম লেকচার হলের বিবরণে। সেই লেকচার হলের বিবরণই আমাদেরকে দিয়ে চললেন আমাদের ষাঠোর্ধ গাইড কামলা সিং-জি।
"এই লেকচার হলে প্রবেশদ্বারের দুদিকে বুদ্ধ মূর্তি থাকতো। সেগুলো *মাইকাস্টোনের তৈরি।( মাইকা স্টোন ব্যাপার্-টা কি সে সম্পর্কে আবার পরে বলছি।) এর ওপরে খোদিত থাকত বর্ণমালা ও লতাপাতার চিত্র। অভ্র থাকলে তো চকচক করবেই। সেই ঝকমকে প্লেট যখন পাওয়া গেল, তা সরকার নিজের কাছে রেখে দিলেন। আপনারা যা দেখতে পাচ্ছেন ত হল ওই প্লেটের নিচের অংশ। দেখা যাচ্ছে যে সেটা ওই একই স্টোনে গঠিত – মাইকা স্টোন। মাইকার ঝলমলে ব্যাপারটা কিন্তু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। টর্চ, সূর্যের বা চাঁদের আলো পড়লে অপূর্ব দেখতে লাগে।
আচ্ছা, এবারে ওই দূরে কোণে দেখতে পাচ্ছেন পানীয় জলের উতস, ইঁদারা। আর ওইদিকে ছিল সবজি পাতি ও খাদ্যশস্যের গুদাম। ওখান থেকে পাওয়া আগুনে ঝলসে যাওয়া চাল এখানকার মিউজিয়ামে সুরক্ষিত আছে।
![]() |
| Approach to the Lecture Hall |
এই বিল্ডিংটার (গুদাম ঘরের) কিন্তু ছাদ ছিল। দেব পালের রাজত্বকালে নির্মিত হয়েছিল আজ থেকে বারোশো সাল আগে।”
আমাদের মধ্যে কেউ একজন বলে উঠলেন,
- ছাদের ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না
“কিছুই না আরে পুরো যে গোডাউন-টা, সেটা ছাদ দিয়ে ঢাকা ছিল। আর সে ছাদ ছিল আর্চ (খিলান) আকৃতির। ভিতরের ছাদ বা সিলিং-ও অনুরূপ। এখনকার মত ফ্ল্যাট বা সমান ছিল না কিন্তু। সেসব যদিও এখন ভেঙে চুরে গিয়েছে।”
আচ্ছা মন্দিরটা কোনটা? (যে সপ্তম চৈত গঠিত হয়েছিল, তার কথা আগের পর্বে বলা আছে)।
“এই যে এইটা হচ্ছে মন্দির। আর পুরো জায়গাটা, আগে যে বলছিলাম ন'বার পুনর্গঠিত হয়েছে, তার প্রমাণ হল সব থেকে নিচের তল। অর্থাৎ প্রথম ফ্লোর হল এটাই। দ্বিতীয়টা ওই টা। তৃতীয়টা এটা। চতুর্থ ও পঞ্চম হচ্ছে ওইগুলো। ষষ্ঠ হল ওই ১২ নম্বর পিঠ-এ। সপ্তম এখানে। অষ্টম হল নিচে জ্বলে যাওয়া দেওয়াল আর নবম হল ওই উপরের কালো প্রাচীর।”
এভাবে লেক্চার হলের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে কমলা সিং-জি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে চলেছেন।
“ওগুলো খুব উঁচু কারণ ন’ বারের মধ্যে তিনবার তো নতুন বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছে। আর বাকি ছ’ বার আবার সেগুলোর রেস্টোরেশান। এতবার ওপরে ওপরে পুনর্গঠন হলে লেভেল উঁচু তো হবেই। ভেবে দেখুন যে অতগুলো স্তর থাকলে উচ্চতার তারতম্য থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।
তবে আজকাল একটা মজা হয়েছে যে গাইডরা খুব সহজেই ট্যুরিস্টদের একটা জিনিস বুঝিয়ে দিতে পারেন:
পঞ্চম শতাব্দী গুপ্ত রাজবংশ
সপ্তম শতাব্দী হর্ষবর্ধণ
নবম শতাব্দী পাল রাজবংশ
কিন্তু আমি এসব আপনাদের বলি নি। উল্টে আপনাদের ভুল করে ঠিক গল্পটা বলে ফেলেছি।”
![]() |
| Layers of Lecture Hall |
আমাদের কাজলদা বাসে আসার সময়ে বলছিলেন যে এখনো অব্দি নালন্দার মাত্র দুটো লেভেল্-ই পাওয়া গেছে। বাকি চারটে মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে।
কমলা সিং-জি কে জিজ্ঞেস করলাম,
- এটা কি সত্যি!!
উনি সপাটে উত্তর দিলেন:
" আরে বাইরে ওরকম ভুলভাল অনেক কথা ঘুরে বেড়ায়। আমি তো আপনাদের নির্দিষ্ট করে প্রত্যেকটা স্তর দেখিয়ে দিলাম।"
কাজলদা বললেন্,
- ও সবই তো ছাদ, নাকি!!
আবার সপাটে উত্তর্:
"আরে আপনি তো এখনো বুঝতেই পারেন নি, ব্যাপারটা। যখন নতুন স্তরটি পুরোনো স্তরের ওপরে চাপছে, তখন আগের স্তরের ছাদটাই তো পরের স্তরের ফাউন্ডেশন বা বেস হিসেবে ব্যবহার করা হবে, তাই না?
কাজল-দা ও নাছোড়বান্দা!
- আমার প্রশ্নটা হল অন্য। আমরা জানতে চাইছি যে এর নিচে আর কোন স্তর পাওয়া গিয়েছে কিনা।
কমলা সিং-জি বললেন,
“না নেই । এর নীচে আর নেই। এটাই প্রথম লেয়ার বা স্তর। হোস্টেল রুমের নিচে আট ফুট গভীর অব্দি খুঁড়ে দেখা হয়েছে যে তার নিচে আর কোন স্তর আছে কিনা। কিন্তু কিছু পাওয়া যায়নি। শুধু মাটিই পাওয়া গিয়েছে। তবে হ্যাঁ! ইতিহাসে অন্যরকম গল্প থাকতেই পারে। তবে আর্কিওলজি অনুসারে যেখানে মাইকাস্টোনের মূর্তির কথা বললাম, ওটাই প্রথম স্তর। এর বাইরে অন্য কোন গল্প থাকলেও আমার সেটা জানা নেই। আমি আপনাদের যা বললাম ও দেখালাম সবটাই আর্কিওলজির ওপরে ভিত্তি করে। যা যা বলেছি সবটার এভিডেন্স ও প্রুফ আছে। ইতিহাসের কোন কাল্পনিক গল্পএর মধ্যে নেই।
এখান থেকে এবারে আমি বিদায় নেব। এবার আপনারা নিজেদের মত এনজয় করুন, ঘুরে ফিরে দেখুন্, ছবি তুলুন। আর ভাল লাগলে আমার কথা আপনাদের আত্মীয়-পরিজন-বন্ধু বান্ধবদের বলবেন।"
বলে দু-হাত তুলে সবাইকে নমস্কার করলেন, কমলা সিং-জি।
(চলবে)
![]() |
| Other Side of the Lecture Hall |



No comments:
Post a Comment