Tuesday, 25 February 2025

আমার প্রিয়তম কবি: John Keats

ইংল্যাণ্ড ছেড়ে যখন নিজে ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও, যক্ষা রোগে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছেন, হাতে পয়সা নেই, তখন সবে মাত্র চার বছর হয়েছে যে তাঁর কবিতা প্রকাশ পাচ্ছে। বন্ধু লেই হান্ট তাঁকে চিঠিতে জানাচ্ছেন, কবি তুমি কি কাণ্ড করেছ তুমি জান না। এখানে তোমার কবিতা নিয়ে হই-হই, রই-রই!' তার কয়েকমাস পরেই কবির মৃত্যু। 31st October, 1795 to 23rd February, 1821 (25 years)...

১৮৮৮ সালে Encyclopedia Britannica তাঁর লেখা একটি Ode নিয়ে মন্তব্য করেঃ "One of the final masterpieces." 

আজ পর্যন্ত কত লাখ লাখ কবি তাঁর মত হতে চেয়েছেন কাছাকাছিও যেতে পারেন নি। কেন, তার জন্য নিচের লাইনগুলো দিলাম। একবার পড়ে দেখুন, কিরকম চিরন্তন সত্য, পৃথিবীকে নিয়ে, তিনি উপলব্ধি করেছিলেন, যার ব্যত্যয় আজ অব্দি হয় নি।

Beauty is truth, truth beauty,—that is all
                Ye know on earth, and all ye need to know."
-: Ode on a Grecian Urn (Published anonymously in 1819)

সেই আশা মানুষকে কোন নেশায় টেনে নিয়ে যেতে পারে, দেখুনঃ
(Ode to a Nightingale)

O for a beaker full of the warm South,
         Full of the true, the blushful Hippocrene,
                With beaded bubbles winking at the brim,
                        And purple-stained mouth;
         That I might drink, and leave the world unseen,
                And with thee fade away into the forest dim:

কিন্তু হায় মানুষ ও তার সভ্যতা, যেখানে চিন্তা করতে বসলে বেদনা ছাড়া কিছু নেই। চারিদিকে ছড়ানো সৌন্দর্য দেখে উপলব্ধি করার মত মন বা চোখ কোনোটাই নেই, সারা বিশ্বের মানুষের। কি যন্ত্রণা, কি যন্ত্রণা! 

He feels that he does not belong here. We drably call him 'an escapist', we mark his imaginative height as 'sensuality', but they are much bigger than what we call, because our vocabulary is too scanty to express the visuals that he managed to transcend into words: 

Fade far away, dissolve, and quite forget
         What thou among the leaves hast never known,
The weariness, the fever, and the fret
         Here, where men sit and hear each other groan;
Where palsy shakes a few, sad, last gray hairs,
         Where youth grows pale, and spectre-thin, and dies;
                Where but to think is to be full of sorrow
                        And leaden-eyed despairs,
         Where Beauty cannot keep her lustrous eyes,
                Or new Love pine at them beyond to-morrow.

:(একটি অদৃশ্য পাখির তরে, Ode to a Nigjtingale) 

কি ভীষণ প্রতিবাদ, কি সাংঘাতিক জেহাদ! সত্যিই ভিতর থেকে যক্ষার রক্তক্ষরণের মত, সারা মানবজাতির...

আজও কি আছে মানুষের, সুন্দর কে দেখার বা উপলব্ধি করার ক্ষমতা বা সাহস?

উত্তরপুরুষ


পূর্বপুরুষরা আজ
নিয়মের খেয়ালে 
শুধু কেমন যেন 'insta' 
হয়ে যান
ধ্রুবতারা মুচকি হেসে 
শুধু আকাশেই শোভা পায়
প্রজন্মান্তরে নয়

ব্লাডলাইন প্রশ্ন তোলে
"ঘুমিয়েছিলে তো, ঠিক করে?"

Thursday, 13 February 2025

রাজগীর ভ্রমণ: একাদশ পর্ব: নালন্দা ৮


গত পর্বে আমরা ছিলাম লেকচার হলের বিবরণে। সেই লেকচার হলের বিবরণই আমাদেরকে দিয়ে চললেন আমাদের ষাঠোর্ধ গাইড কামলা সিং-জি।

"এই লেকচার হলে প্রবেশদ্বারের দুদিকে বুদ্ধ মূর্তি থাকতো। সেগুলো *মাইকাস্টোনের তৈরি।( মাইকা স্টোন ব্যাপার্-টা কি সে সম্পর্কে আবার পরে বলছি।) এর ওপরে খোদিত থাকত বর্ণমালা ও লতাপাতার চিত্র। অভ্র থাকলে তো চকচক করবেই। সেই ঝকমকে প্লেট যখন পাওয়া গেল, তা সরকার নিজের কাছে রেখে দিলেন। আপনারা যা দেখতে পাচ্ছেন ত হল ওই প্লেটের নিচের অংশ। দেখা যাচ্ছে যে সেটা ওই একই স্টোনে গঠিত – মাইকা স্টোন। মাইকার ঝলমলে ব্যাপারটা কিন্তু পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। টর্চ, সূর্যের বা চাঁদের আলো পড়লে অপূর্ব দেখতে লাগে। 

আচ্ছা, এবারে ওই দূরে কোণে দেখতে পাচ্ছেন পানীয় জলের উতস, ইঁদারা।  আর ওইদিকে ছিল সবজি পাতি ও খাদ্যশস্যের গুদাম। ওখান থেকে পাওয়া আগুনে ঝলসে যাওয়া চাল এখানকার মিউজিয়ামে সুরক্ষিত আছে।

Approach to the Lecture Hall

এই বিল্ডিংটার (গুদাম ঘরের) কিন্তু ছাদ ছিল। দেব পালের রাজত্বকালে নির্মিত হয়েছিল আজ থেকে বারোশো সাল আগে।”

আমাদের মধ্যে কেউ একজন বলে উঠলেন,

- ছাদের ব্যাপারটা ঠিক বুঝলাম না

“কিছুই না আরে পুরো যে গোডাউন-টা, সেটা ছাদ দিয়ে ঢাকা ছিল। আর সে ছাদ ছিল আর্চ (খিলান) আকৃতির। ভিতরের ছাদ বা সিলিং-ও অনুরূপ। এখনকার মত ফ্ল্যাট বা সমান ছিল না কিন্তু। সেসব যদিও এখন ভেঙে চুরে গিয়েছে।”

আচ্ছা মন্দিরটা কোনটা? (যে সপ্তম চৈত গঠিত হয়েছিল, তার কথা আগের পর্বে বলা আছে)।

 “এই যে এইটা হচ্ছে মন্দির। আর পুরো জায়গাটা, আগে যে বলছিলাম ন'বার পুনর্গঠিত হয়েছে, তার প্রমাণ হল সব থেকে নিচের তল। অর্থাৎ প্রথম ফ্লোর হল এটাই। দ্বিতীয়টা ওই টা। তৃতীয়টা এটা। চতুর্থ ও পঞ্চম হচ্ছে ওইগুলো। ষষ্ঠ হল ওই ১২ নম্বর পিঠ-এ। সপ্তম এখানে। অষ্টম হল নিচে জ্বলে যাওয়া দেওয়াল আর নবম হল ওই উপরের কালো প্রাচীর।” 

এভাবে লেক্চার হলের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে কমলা সিং-জি আঙুল দিয়ে দেখিয়ে চলেছেন। 

“ওগুলো খুব উঁচু কারণ ন’ বারের মধ্যে তিনবার তো নতুন বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছে। আর বাকি ছ’ বার আবার সেগুলোর রেস্টোরেশান। এতবার ওপরে ওপরে পুনর্গঠন হলে লেভেল উঁচু তো হবেই। ভেবে দেখুন যে অতগুলো স্তর থাকলে উচ্চতার তারতম্য থাকবে সেটাই স্বাভাবিক।

তবে আজকাল একটা মজা হয়েছে যে গাইডরা খুব সহজেই ট্যুরিস্টদের একটা জিনিস বুঝিয়ে দিতে পারেন:

পঞ্চম শতাব্দী গুপ্ত রাজবংশ

সপ্তম শতাব্দী হর্ষবর্ধণ

নবম শতাব্দী পাল রাজবংশ

কিন্তু আমি এসব আপনাদের বলি নি। উল্টে আপনাদের ভুল করে ঠিক গল্পটা বলে ফেলেছি।”

Layers of Lecture Hall

আমাদের কাজলদা বাসে আসার সময়ে বলছিলেন যে এখনো অব্দি নালন্দার মাত্র দুটো লেভেল্-ই পাওয়া গেছে। বাকি চারটে মাটির নিচে চাপা পড়ে গেছে। 

কমলা সিং-জি কে জিজ্ঞেস করলাম,

- এটা কি সত্যি!! 

উনি সপাটে উত্তর দিলেন: 

" আরে বাইরে ওরকম ভুলভাল অনেক কথা ঘুরে বেড়ায়। আমি তো আপনাদের নির্দিষ্ট করে প্রত্যেকটা স্তর দেখিয়ে দিলাম।" 

কাজলদা বললেন্, 

- ও সবই তো ছাদ, নাকি!! 

আবার সপাটে উত্তর্: 

"আরে আপনি তো এখনো বুঝতেই পারেন নি, ব্যাপারটা।  যখন নতুন স্তরটি পুরোনো স্তরের ওপরে চাপছে, তখন আগের স্তরের ছাদটাই তো পরের স্তরের ফাউন্ডেশন বা বেস হিসেবে ব্যবহার করা হবে, তাই না? 

কাজল-দা ও নাছোড়বান্দা! 

- আমার প্রশ্নটা হল অন্য। আমরা জানতে চাইছি যে এর নিচে আর কোন স্তর পাওয়া গিয়েছে কিনা। 

কমলা সিং-জি বললেন, 

“না নেই । এর নীচে আর নেই। এটাই প্রথম লেয়ার বা স্তর। হোস্টেল রুমের নিচে আট ফুট গভীর অব্দি খুঁড়ে দেখা হয়েছে যে তার নিচে আর কোন স্তর আছে কিনা। কিন্তু কিছু পাওয়া যায়নি। শুধু মাটিই পাওয়া গিয়েছে। তবে হ্যাঁ!  ইতিহাসে অন্যরকম গল্প থাকতেই পারে। তবে আর্কিওলজি অনুসারে যেখানে  মাইকাস্টোনের মূর্তির কথা বললাম, ওটাই প্রথম স্তর। এর বাইরে অন্য কোন গল্প থাকলেও আমার সেটা  জানা নেই। আমি আপনাদের যা বললাম ও দেখালাম সবটাই আর্কিওলজির ওপরে ভিত্তি করে। যা যা বলেছি সবটার এভিডেন্স ও প্রুফ আছে।  ইতিহাসের কোন কাল্পনিক গল্পএর মধ্যে নেই। 

এখান থেকে এবারে আমি বিদায় নেব। এবার আপনারা নিজেদের মত এনজয় করুন, ঘুরে ফিরে দেখুন্, ছবি তুলুন। আর ভাল লাগলে আমার কথা আপনাদের আত্মীয়-পরিজন-বন্ধু বান্ধবদের বলবেন।" 

 

বলে দু-হাত তুলে সবাইকে নমস্কার করলেন, কমলা সিং-জি। 

(চলবে)

Other Side of the Lecture Hall


Tuesday, 11 February 2025

রাজগীর ভ্রমণ: দশম পর্ব: নালন্দা ৭:

“এবার যেখানে দাঁড়িয়ে আছি তা হল ইউনিভার্সিটির প্রধান লেকচার হল। ওপেন এয়ার। এর কোন ছাদ ছিল না। এক কোণের  দিকে দেখা যাচ্ছে পুরনো পয়:প্রণালী। লেকচার হল নীচেও, আছে উপরেও আছে, স্তরীভূত অবস্থায়। আর ফ্লোর যখন এই ওপর পর্যন্ত ছিল,তখন ওই পর্যন্ত জল নিকাশি নালাও ছিল। খোলা জায়গায় জল তো পড়বেই, তাই এই ব্যবস্থা।

Lecture Hall and Podium 

লেকচার হলের মোট চারটি স্তর স্পষ্ট প্রত্যক্ষমান। সবথেকে নিচে লেকচার হলের যে স্তরটি দেখা যাচ্ছে, সেটাই হচ্ছে প্রথম লেকচার হল। লেকচার হল হোস্টেল থেকে খুব বেশি দূরে ছিল না। সবটাই একই জায়গায় কেন্দ্রীভূত ছিল। তারপর প্রথম লেকচার হল ঢেকে দ্বিতীয়টি তৈরি হল। ফলে প্রথমটা বন্ধ হয়ে গেল অর্থাৎ প্রথমটি দ্বিতীয়টির দ্বারা ঢাকা পড়ে গেল। আবার দ্বিতীয়টি খারাপ হতে তৃতীয়টি তৈরি হলো ও দ্বিতীয়টি একই রকম ভাবে ঢাকা পড়ে গেল। আবার একই রকম ভাবে তৃতীয়টি খারাপ হতে চতুর্থটি তৈরি হলো, আর তৃতীয়টি ঢাকা পড়ে গেল তার নীচে। মোট চারটি লেভেলে লেকচার হল থেকে গেল। চতুর্থ লেভেলে সমস্তটাই যে একটিই তলে ছিল, সেও স্পষ্ট।

চারটি লেকচার হল ছিল চারটি স্তরে।  তাহলে চারটে পোডিয়ামও ছিল, নিশ্চয়ই। সামনে যেটা দেখতে পাচ্ছি সেটা হল চতুর্থ পোডিয়াম। বাকিগুলো এটার নিচে চাপা পড়ে গেছে। কিন্তু প্রত্যেকটি লেকচার হলের লেভেলে একটি করে পোডিয়াম ছিল তা কিন্তু সহজেই অনুময়।

যতদিন পর্যন্ত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় মহাযান বৌদ্ধ ধর্মের জন্য বিখ্যাত ছিল, ততদিন পর্যন্ত লেকচার হল ও পোডিয়াম দুই-ই ছিল এবং তা শুধুমাত্র পঠন-পাঠনের জন্য শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হত। পরে যখন এখানে আবার তন্ত্র শাস্ত্র নিয়ে চর্চা শুরু, তখন এই নালন্দাই তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান হয়ে উঠল। ফলে তখন আর ব্যাপারটা শুধুমাত্র ধর্মে ও শিক্ষায় সীমাবদ্ধ রইল না। সে সবের বাইরে গিয়ে এই স্থান অনেক বেশি ritualistic হয়ে উঠল| সেই সমস্ত ritualistic practices-এর জন্য এখানে গঠিত হল পঞ্চম চৈত। 

এই তন্ত্র শাস্ত্রের চর্চার কারণে লেকচার হলের উদ্দেশ্যই গেল আমূল বদলে। গেল পূজা,পাঠ, যজ্ঞ ইত্যাদি নান রকম কর্মকাণ্ড শুরু হয়ে গেল এখানে, এই লেকচার হলের মধ্যে। প্রথমেই পঞ্চম চৈত কিন্তু এখানে ছিল না। সেই উদ্দেশ্যে আরো তিনটি স্তর - পঞ্চম ষষ্ঠ ও সপ্তম চৈত - এই কাঠামো অনেক পরে গঠিত হয়েছে। তার প্রভাব হিসেবে বিভিন্ন symbols এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি। এই symbols গুলো আমরা আগেও বিভিন্ন জায়গায় দেখেছি| 

বার বার এটাই প্রমাণিত হয় এখানে যে যা তৈরি হয়েছিল তা ঢেকে গেছে নবগঠিত স্তরের নিচে। এই সিম্বল গুলিকে আর্কিওলজির ভাষায় মুনস্টোন অর্থাৎ চন্দ্রশিলা  বলা হয়। এরকম সিম্বলখচিত চন্দ্রশিলা শ্রীলঙ্কাতেও পাওয়া গেছে।  সিঁড়ির নিচে মন্দিরের গায়ে বা স্তূপের নিচে যে সব মুনস্টোন সিম্বলস আছে তা  সংসার জীবনের বিভিন্ন যে সকল স্তর আছে সেগুলোকেও সিম্বলাইজ করে। মুনস্টোন বা চন্দ্রশিলার এটাই সিগনিফিকেন্স। আমাদের মধ্যে কিছু গাইড এই মুনস্টোনকে কুমারগুপ্তের  চিহ্ন হিসেবে ধরে নিয়ে নানান গল্প বানিয়ে চালিয়ে দেন বটে,  কিন্তু আসল ঘটনা মোটেও তা নয়।  

Foundation/Base of the Pilllars

এবারে এই অংশে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যে এগুলি ছিল পিলার। বেসগুলো পড়ে আছে। পিলারের বেস হচ্ছে গ্রানাইট। মানে পিলারগুলিও ছিল গ্রাণাইটের। আর পিলার ছিল মানে তো এপাশে ছাদও ছিল।” 

অনেক ইঁটের মধ্যে হঠাত গ্রাণাইট দেখে ফস করে প্রশ্নটা মুখ থেকে বেরিয়ে গেল।  

আমি প্রশ্ন করলাম

 - এই পিলারের বেস-গুলো কি অরিজিনাল?  

উত্তরে উনি বললেন,

- একটা সিম্পল ব্যাপার বুঝে নিন। নালন্দায় যত শুধু পাথর আছে সব অরিজিনাল। আর যতটা সিমেন্ট দিয়ে জোড়া পাথরের টুকরো আছে, সেগুলো ফলস। কারণ সেগুলো প্যাচওয়ার্ক ও রেস্টোরেশনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে।

(চলবে) 

Beside the Store House/ Go-Down








 


 

 

 

 

Saturday, 8 February 2025

রাজগীর ভ্রমণ:নবম পর্ব: নালন্দা ৬:

আমরা আমাদের গাইড কমলা সিং-জি কে ফলো করতে করতে একটা গলির মত জায়গায় এসে দাঁড়ালাম। পরপর অনেক ঘর, এক সারে আর আমরা সেই ঘরগুলোর করিডোরে দাঁড়িয়ে। 

কমলা সিং-জি বলে চললেন: 

“এখানে পয়:প্রণালীর (নালা/নর্দমা) যে স্ট্রাকচার দেখছেন তা কিন্তু নতুন। ‘নতুন’ এই অর্থে নয় যে সিমেন্ট দিয়ে তা করা হয়েছে বলে। ‘নতুন’ এজন্য বলছি যে তখন এখানে যেসব ঘর ছিল তার চারপাশে কোন দেওয়াল ছিল না। ছিল শুধু ‘পিলার’ বা স্তম্ভ। এবার যদি পিলার থাকে তাহলে ছাদ-ও তো থাকবে নাকি। তার মানে এই ঘরগুলি ঢাকা ছিল ছাদ দিয়ে। তাহলে ছাদঢাকা জায়গায় পয়:প্রণালীর প্রশ্ন আসে কোত্থেকে, কারণ জল বের করার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আর দেওয়াল-ই বা কোথা থেকে এল? 

আসলে কালচক্রে এই স্থানটি বারংবার্, ছ’বার, পুনর্গঠিত হয়। তখন নতুন যুগে দেয়াল তৈরির জন্য নিচের ঘরের ওপরে কাঠামো বানাতে হল। আর এই করিডরের পুরোটাই, এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত অব্দি, ঢাকা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল। তবে দেখা গেছে যে যতবার বানানো হয়েছিল, ততবার একই উপকরণ দিয়ে এই ছাদ বানানো হয়েছিল। 

ঘরের দেওয়ালের গায়ে যে ছিদ্র দেখছেন, নতুন ইট ওই পর্যন্তই পাওয়া গিয়েছে। যখন নতুন স্তর গঠনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হল, পুরনো অংশটি চলে গেল নিচের স্তরে, মাটির ভিতরে। আর ওই কোণের দিকে যে লাইন দেখা যাচ্ছে, সেটা কিন্তু পুরনোই। এখান থেকে সহজেই বুঝতে পারা যায় যে, এই বিহারটি দু’টি তলা বিশিষ্ট, বা দ্বিতল। উপরেরটা তো ভেঙেই গেছে। ইতিহাসে তো তিন তলা থেকে ছয় তলা – সবটার কথাই শোনা যায়। কিন্তু তার প্রমাণ? প্রমাণ কই? পুরোটাই তো কাল্পনিক!  তবে এখানে অন্তত দুটো তলা যে ছিল তা আমরা স্বচক্ষে দেখতেই পাচ্ছি।” আসলে ইতিহসের গল্পের সঙ্গে আর্কিওলজিক্যাল ফাইন্ডিং এর বেশ অনেক ফারাক নালন্দার ক্ষেত্রে দেখা যায়।  


এই কথা বলে করিডোরে ঘুরতে ঘুরতে কমলা সিং-জি আমাদের সোজা একটি কামরার মধ্যে ডেকে নিয়ে এলেন। 

“এবারে আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেখানে রয়েছে হোস্টেল। পৃথিবীর প্রথম রেসিডেন্সিয়াল ইউনিভার্সিটিতে এই সেই স্থান,  যেখানে হোস্টেল অবস্থিত ছিল। আরো অন্যান্য জায়গাতেও বেশকিছু হোস্টেল ছিল। তবে এটাই সবথেকে পুরোনো। এখানে একজন বিদ্যার্থীর জন্য একটা গোটা ঘর দেওয়া হত। Single Occupancy| প্রত্যেকটি কামরা-র বাইরের দেওয়ালে যে গর্ত দেখতে পাচ্ছেন, তা ছিল ওনাদের পোস্ট বক্স বা লেটার বক্স। এর ফ্রেমটা সিমেন্ট দিয়ে রিকনস্ট্রাকট করা হয়েছে বটে. কিন্তু আগে ছিল কাঠের ফ্রেম। সেই ফ্রেম নষ্ট হয়ে গেছে। আর এই দিকে  (ঘরের উল্টোদিকের জান্লাহীন দেওয়াল দেখিয়ে) নিজেদের ব্যক্তিগত জিনিস রাখার জন্য স্থান আর একটা স্থানে আপনারা যাকে বলেন কুলুঙ্গি।” ঘরের মধ্যে দেওয়ালে বাইরের লেটারব্ক্সের মত একটা আরও বেশি বড় একটা গর্ত। তাতে জ্বলত প্রদীপ। সেই আলোই ছিল একমাত্র ভরসা। মশালের চল কিন্তু ঘরের মধ্যে ছিল না।” 


সবাই ঘর থেকে চলে যাবার পরে, একা কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। অনুভব করতে লাগলাম কারা এখানে থাকতেন, ঐ করিডোর দিয়ে কারা হেঁটে যেতেন! 

গৌতম বুদ্ধ স্বয়ং, শীলভদ্র, হিউ-এন্-সাং…

আমি সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে। 

গায়ে কাঁটা দিল। 

(চলবে)




Monday, 3 February 2025

এই রাত তোমার আমার

(একটি সস্যোতি পুজোর আনঅ্যাডাল্ট গপ্প যার সাথে বাস্তবের মিল থাকলেও চরিত্ররা অবাস্তব)

আমাদের গাড়িটা যখন বাঁকের কাছে তখন..... 

- চল চল চল চল ….গেট গোয়িং, ম্যান!!! 

- ওদের গাড়িটা কোথায়? 

- দেখতে পাচ্ছি না…ভাবিস না… আমাদের আরো দুটো গাড়ি পিছনে আছে। আমরা আছি মোট দশ জন। আর ওরা মাত্র দু জন…

সাথে সাথে আমাদের কাছে আমার কাছে একটা ফোন এলো।

- আজ কিন্তু টয়োটা নেয়নি, স্কোডা টা নিয়ে বেরিয়েছে। মনে রেখ, ড্রাইভিং প্যাটার্ন কিন্তু আমাদেরই মতো। Underestimate  করার কোন দরকার নেই। বরং দরকার হলে পাশে কোথাও একটা গুঁজে দাঁড়িয়ে যাও। 

- ওকে … দরকার হলে তাই করব। কিন্তু সেরকম কিছু দেখছি না। 

প্রত্যেকটা সিগনাল যখনই খাচ্ছি তখনই একটা উত্তেজনা কাজ করছে, যে, দেখে না ফেলে যে আমরা ধাওয়া করছি। তাহলেই গেল। পুরো প্ল্যানটা চৌপাট হয়ে যাবে।

কিন্তু শপিং মল অব্দি অল ক্লিন। 

মলের পার্কিং -এ ঢোকার আগে আমাদের তিনটে গাড়ি এবং দশ জন যে যার জায়গা মতো পজিশন নিয়ে নিল। ট্রেইল যেন মিস না হয়। 

কালো রংয়ের স্কোডাটা ধীরে ধীরে পার্কিং -এ ঢুকলো | যে কোনো মুহূর্তে অ্যাকশন নিতে হতে পারে | কিন্তু না, পার্কিং-এ কিছু না | দু’জনকে ঢুকতে দিতে হবে।  

স্কোডা ভরপুর টোপ গিললো। আমরা ঠিক যেখানে গাড়ি পার্ক করেছি, তার ঠিক উল্টোদিকে স্কোডাটা পার্কিং করলেন ভদ্রলোকটি | 

ওনার মিসেসও নামলেন | দুজনের একটা কথোপকথন চলল,  লিফটে উঠবেন, না এসকালেটারে, তা নিয়ে। স্পষ্ট শুনতে পেলাম | অনন্তকে জানালাম লিফটে অনেকটা হাঁটা পথ, এসকালেটার কাছাকাছি। তাই ওনারা দুজনে  এসকালেটারে উঠছেন | 

আমি এবং অনন্ত সজাগ। যেন এই ব্যাপারে কোন ভুল না হয়। একদল লিফটে চলে গেল। আর আমরা এসকালেটারে।

আমাদের কাছে খবর আছে, যে মুভি শো এর টিকিট ওনারা কেটেছেন সেটা  সাড়ে চারটায় শুরু। কিন্তু তখন বাজে সবে ৩:৫০ মিনিট। চল্লিশ মিনিট বাকি। অত আগে কি আর হলে ঢুকতে দেবে? যদি হলে না ঢুকে ফুড কোর্টে যায় তাহলে ব্যাপারটা কিন্তু অন্যরকম হবে। প্ল্যান বদলাতে হবে।  তাই কোন রকম রিস্ক নেওয়া যাবে না। কাউকে না কাউকে তো একদম পিছু পিছু ফলো করতেই হবে। কারণ আমরা কোন হইচই চাই না। কাজ সেরে বেরিয়ে যাব। আমাদের কারোরই টিকিট কাটা নেই। লাউঞ্জে ঢুকতে গেলেও সিকিউরিটি স্টাফদের অনেক বোঝাতে হবে। ততক্ষনে পাখি উড়ে যাবে। তাই যা করার তা করতে হলে হলে ঢোকার আগেই। এটাই একমাত্র সুযোগ। 

পিছনে পিছনে ফলো করতে করতে একদল সিনেমা হলের প্রবেশের সামনে পৌঁছে গেল। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে লুকিয়ে পোজিশন নিল | 


না, ওনারা ফুড কোর্টে গেলেন না। সোজা সিনেমা হলের দিকে চলে এসে হুড়মুড়িয়ে সিকিওরিটি চেক করে ঢুকতে গেলেন। আমরা ভেবেছিলাম শো শুরু হতে যতক্ষণ বাকি তাতে ওনাদের ঘুরে আসতে বলবে।| কিন্তু সেসব কিছুই তো হলই না।  

উল্টে আমাদের স্ট্যান্ড বদলাতে হল। হলের লাউঞ্জে ঢোকার আগেই আটকাতে হবে। 

কাজল বাবু কারোর ইনস্ট্রাকশন ছাড়াই চিৎকার করতে থাকলেন ভদ্রলোককে distract করার জন্য

- ও দাদা !!!! ও দাদা!!!!!  দাদা আআআআআ....!!! 

কে কার কথা শোনে!!!

ভদ্রলোক তাঁর বেটার হাফ-কে নিয়ে ততক্ষণে চেকিং শেষ করে হলের মধ্যে প্রবেশ করতে চলেছেন। আমি অগত্যা দুর থেকে সিকিওরিটিকে ইশারায় জানালাম ওনাকে আটকাতে।

উনি আটকাতেই আমি এগিয়ে এসে ভদ্রলোককে আর ওনার বেটার হাফকে বাইরে বেরিয়ে আসতে বললাম | 

চার্লস শোভরাজ স্টাইলে বেরিয়ে এসে হঠাৎ দেখেন কাজল বাবু দাঁড়িয়ে। প্রথমে ঘাবড়ে গিয়ে নিজেকে সংযত করে বললেন,

- আরে আপনি? চলুন আমাদের সাথে ভেতরে সিনেমা দেখবেন নাকি! 


এই কথা বলতে বলতে চারদিক থেকে দশজনে পঙ্গপালের মতো ঘিরে ধরলাম ভদ্রলোক ও তাঁর বেটার হাফকে।

এবারে ভদ্রলোকের দেখার মত হাল।  মুখটা পুরো শুকিয়ে চুন। বেশ অপ্রস্তুতে পড়ে গেছেন, বোঝা গেল। কিংকর্তব্যবিমূঢ়! 

কোনমতে আমতা আমতা করে ভদ্রলোক বললেন

- আরে কি ব্যাপার? আপনারা সবাই মিলে…???

লেটদা মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললেন

- ব্যাপার কিছু নয়, দাদা।  আমরা শুধু আপনাদের একটু সি অফ করতে এলাম। আজকে সরস্বতী পুজোর দিন বৌদিকে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছেন। তাও আবার কোন সিনেমা দেখতে? না, " এই রাত তোমার আমার" ....যে সিনেমা মনে হচ্ছে না আপনি আর বৌদি ছাড়া আর কেউ দেখতে ঢুকছে।

পাশ থেকে উদাত্ত কন্ঠে গেয়ে উঠলাম “এই রাত এই রাত তোমার আমার/ওই চাঁদ তোমার আমার/ শুধু দুজনে…” 

আবার আমতা আমতা করে ভদ্রলোক আমাদের বললেন,

 - এসো তোমরাও এসো…

বললাম,

 - না না শুধু সি অফ করেই চলে যাব আমরা সিনেমা দেখতে আসিনি। আপনারা এনজয় করুন।

যতজন সিকিউরিটি ছিল PVR এ, তাঁরা ভাবলেন নিশ্চয়ই এনারা কোনো কেউকেটা হবেন। না হলে দুটো লোক সিনেমা দেখতে এসেছে, আর তাঁদেরকে সি অফ  করতে এসেছে দশ জনের একটা কনভয়। এতো সহজ কথা নয়! তাই, না চাইতেই জল! একজন সুহৃদ সিকিওরিটি স্টাফ দাদা সহাস্যে এগিয়ে এসে বললেন,

- মোবাইল ফোনগুলো দিন দাদা। কি কি ছবি তুলতে হবে বলুন, আমরা তুলে দিচ্ছি। আপনাদের কষ্ট করতে হবে না।

সিকিওরিটি দাদারাই আমাদের ছবি তুলে দিলেন। 

এরপর ভদ্রলোক ও তাঁর বেটার হাফকে বিদায় জানিয়ে আমরা আবার প্রস্থানোদ্দত হলাম।

কিন্তু হঠাৎ লেট দা ঘুরে গিয়ে সিকিউরিটিদের ডেকে সকলের সামনে বললেন, 

- এই যে…শুনুন দাদা! এনারা দুজন হলেন আমাদের দাদা বৌদি | আজ সরস্বতী পুজো তো! সরস্বতী পুজোর দিনে সিনেমা দেখতে এসেছেন… “ এই রাত তোমার আমার”!  বুঝতে পারছেন তো যা বলছি ! 

- হ্যাঁ স্যার… পারছি স্যার…

- হ্যাঁ ব্যাপারটা কিন্তু বোঝার আছে! আপনারা বরং লক্ষ্য রাখবেন যে সিনেমা দেখার সময় দাদা বৌদির যেন কোন অসুবিধা না হয়। কেউ যেন অযথা ডিসটার্ব না করে । 

বুঝলেন তো… না কি আরো খুলে বোঝাতে হবে! 

সিকিউরিটি পুরো দুকান এঁটো করা হাসি হেসে বললেন

-  হ্যাঁ স্যার আর বলতে হবে না |  স অ অ অ ব বুঝেছি।  কোন্নো অসুবিধা হবে না | আপনারা নিশ্চিন্তে আসুন স্যার!

গল্পটা কোনো থ্রিলার ছিল না। পাতি একটা ঘটনা।

আমাদের প্রিয় মিহিরদা আর বৌদি নতুন বাংলা সিনেমা “এই রাত তোমার আমার” দেখার জন্য অনলাইনে টিকিট কেটেছিলেন। ভুলবশত শ্যামপুকুর PVR এর টিকিট কেটে ফেলেছিলেন। পরে আবার ভুল শুধরে লোকাল PVR এ টিকিট কাটেন। সেটা উনি আমাদের ঝাউতলার রাতের আড্ডায় শেয়ার করেছিলেন। 

******

আগে সরস্বতী পুজোর দিনে যখন কোন বন্ধু প্রেমিকা সমেত সিনেমা দেখার জন্য যেত, আমরা প্রেমে বাগড়া দিতে যাওয়ার প্ল্যান ভাঁজতাম। প্ল্যান হত যে সিনেমা শুরু হওয়ার পরে চুপচাপ দশ পনেরোজন ওদের ঠিক পিছনের সিটে বসা হবে। | সিনেমা দেখার সময়ে হাতে হাত ধরবে, একটু কাছাকাছি ঘন হয়ে ঘেঁষে বসবে |  তারপরে একটু ঠোঁটে ঠোঁট হতে যাবে, সামনে চলবে রুপালি পর্দায় স্বপ্নের নায়ক নায়িকার গান, যেমন “ইয়ে কালি কালি আঁখে”,  আর ঠিক সেই মুহূর্তে ঠিক পিছনের সিটে শিকারের অপেক্ষায় বসে থাকা জনা দশ পনেরো জন ছেলে, যাদের ওরা ‘বন্ধু’ বলে জানে, ওই স্বর্গসুখানুভূতির উত্তেজক মুহূর্তকে বরবাদ করে দেওয়ার জন্য একসাথে বলে উঠবো

- হোওওওওওওওওওওওওওওও!!!!!!!

ব্যাস!!! তারপর ছুটে সবাই হল থেকে পালাবো | 

******

মিহিরদার বয়েস সত্তরের বেশি | আমাদেরও পঞ্চাশের বেশি। আধ্যাত্মিক ভাবধারায় আমরা এখন খুব 'ভাল লোক’ হয়ে উঠেছি | 

তাই মিহিরদা  আর বৌদিকে অকারণে ওরকম করার কোনো প্রয়োজন নেই |  

তাই ওনাদের শুধু সি অফ করেই ফিরে এলাম |