Sunday, 24 November 2024
ভিখিরি
Friday, 15 November 2024
জগদ্ধাত্রী পূজা: 2024
এই নিয়ে জানার প্রথম আগ্রহটা চাগাড় দিল যখন আমি রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরে স্নাতক (সাম্মানিক) স্তরে লেখাপড়া করতে গেলাম। যাঁরা জানেন, তাঁরা জানেন যে, বেলুড়মঠে কি মহাসমারোহে জগদ্ধাত্রী পূজা সম্পন্ন করা হয়!
তা ওখানকার ছাত্র হিসেবে পুজোর বেশ কিছু গুরুদায়িত্ব এসে পড়ত। সেই সূত্রে খানিকটা জানলাম। এর মধ্যে আবার আমার আগ্রহে ধুনো দেওয়ার জন্য ছিল আমার খুব কাছের বন্ধু অনিন্দ্য। তাদের আদি ও পুরুষানুক্রমে বর্তমান নিবাস চন্দননগর এবং উপাধি রায়চৌধুরী। (উপাধি উল্লেখের কারণ ক্রমশ প্রকাশ্য)।
বিদ্যামন্দিরে অনিন্দ্য আমার রুমমেটও ছিল বটে। সারাদিন ধরে প্রাপ্ত দায়িত্ব সামলে যখন বিছানায় বসে বেলুড়মঠের জগদ্ধাত্রী পুজো, বিশেষতঃ প্রসাদের শুকনো বোঁদে (এ বস্তুটি একমাত্র ওখানেই পাওয়া যায় বলেই আমার এখনো স্থির বিশ্বাস) সম্পর্কে বিস্ময় প্রকাশ করতাম, তখন, খুব ঠাণ্ডা গলায় অনিন্দ্য বলত,
- এ আর কি দেখছিস...আমাদের বাড়িতে আয় একবার। দেখিয়ে দেব সারারাত ঘুরিয়ে, যে চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো কি জিনিস। কলকাতার যে কোনো হাই-প্রোফাইল দুর্গাপূজাকে যে কোনো দিন এক ডজন গোল দিয়ে দেবে। তবে হ্যাঁ, বোঁদেটা বাদ দিয়ে।
সব শুনে মনে মনে ভাবতাম গালগল্প।
পুজো চলছে। ঠিক করলাম, যাব। দেখি কতটা বাড়িয়ে বলছে। কিন্ত বললেই কি আর যাওয়া যায়? আবার তার ওপরে ছুটি! সে তো মহারাজ কিছুতেই দেবেন না!
অনিন্দ্য পাবে, কিন্তু আমি তো পাব না।
তবুও হল। কপালে থাকলে খণ্ডাবে কে !
অনিন্দ্যর নিজের কাকা, শ্রী সুব্রত রায়চৌধুরী (এস আর সি), আমাদের ইংরেজি বিভাগের তখন নবীনতম শিক্ষক। তিনি আদ্যোপান্ত আধুনিক, আর বিদ্যামন্দিরের দম-বন্ধ করা পরিবেশে এক বিশুদ্ধ প্রাণদায়ী অক্সিজেন বয়ে আনা মানুষ।
অনিন্দ্য উপদেশ দিল,
- চুপিচুপি কাকাইএর সঙ্গে কথা বল, যদি কিছু হয়। আর খবরদার বলবি না যে আমি বলেছি। তাহলে কিন্তু যাও বা চান্স আছে, সেটা যাবে।
স্যারকে গিয়ে বললাম। তাতে স্যারের প্রথম রিঅ্যাকশান:
- ও, অনিন্দ্য তোকে বুদ্ধি দিয়েছে বুঝি?
- না স্যার, অনিন্দ্য জানে না। ওকে সারপ্রাইজ দেব বলে আপনার কাছে আসা। ওর কাছে এত গল্প শুনেছি, একবার চোখে না দেখলে বিশ্বাস হচ্ছে না যে এ সব সত্যি।
- বেশ, আমি প্রভাকর মহারাজ (আমাদের তৎকালীন প্রিন্সিপ্যাল মহারাজ, অফিসিয়াল নাম, স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ)- কে বলে রাখব। তুমি কিন্তু আর কাউকে বলবে না। যদি এরকম কিছু ঘুণাক্ষরেও আমার কানে আসে, তাহলে কিন্তু আমি নিজেই তোমার যাওয়াও আটকে দেব।
- আচ্ছা স্যার।
জগদ্ধাত্রী জগদ্ধাত্রী (দুগ্গা দুগ্গা- র সমার্থক প্রতিশব্দদ্বয়) করে আমার পারমিশন হয়ে গেল।
বেলুড় রেলস্টেশন থেকে সপ্তমীর বিকেলে পঞ্চাশ মিনিটে চন্দননগর। স্টেশনে নেমে বাঁ দিকে অনিন্দ্যদের বাড়ি।
রায়চৌধুরীরা চন্দননগরের অভিজাত পরিবার | অনিন্দ্যদের বাড়ি নতুন হলেও সর্বক্ষেত্রে ও সর্বস্তরে সেই অভিজাত্যের ছাপ বিরাজমান। আমাকে নিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হতেই কেমন একটা চাপা উদ্দীপনা অনুভব করলাম। বাড়ির ছেলের বন্ধু এসেছে উৎসবের সময়ে, সে আপ্যায়ণ ও উষ্ণতা ভোলার নয় |
সন্ধেবেলায় স্বয়ং এস আর সি স্যার হাজির | আমি তো শ্রদ্ধায় সঙ্কোচে কি করব কি বলব ভেবে পাচ্ছি না। অনিন্দ্য ওনার সামনেই আমাকে ফস করে বলে বসল,
- তুই ওকে ভয় পাচ্ছিস? আমি তো কাকাইকে প্রাইভেট স্পেসে তোর মত 'তুই' বলেই ডাকি! ছোটবেলার অভ্যাস। আর বদলাই নি। কি করে জানব হঠাত আমার কলেজের স্যার হয়ে যাবে। তাহলে একবার চেষ্টা করে দেখতাম ... কি রে কাকাই, বল্ না!
- হ্যাঁ, আর্য, এখন তুমি আমাদের অতিথি... আর এটা কলেজ নয় | খুব আনন্দ করে কাটাও | অনিন্দ্য তোমাকে সব ঘুরে দেখিয়ে দেবে। আর কাল সকালে আর্যকে আমার বাড়িতে একবার নিয়ে আসিস।
অনিন্দ্য-কে বললেন স্যার।
- ঠিক আছে... তুই এখন বাড়ি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নে।
অনিন্দ্য স্যার- কে বলল ।
আমি আমার বাবাকে ছোটবেলা থেকে 'আপনি' বলে সম্বোধন করি, সেখানে অত বড় একজন কাকাকে কেউ 'তুই' বলে! হজম ই হচ্ছিল না। হস্টেলে এক রুমে এতদিন থেকেও এ সিক্রেট তো জানতে পারি নি। ক্লাস চলে যখন তখন তো দিব্যি 'আপনি আজ্ঞে' করে! রেগে গিয়ে সে কথা বলতেই অনিন্দ্য হা হা করে হেসে বলল,
- প্রোটোকল ও এটিকেট...
- তা বলে আমাকে এভাবে কি অপ্রস্তুতে ফেলেছিল বলত! উনি তো আমার স্যার, না কি!
আবার হেসে বলল,
- তা তুই তো আর কাকাই কে 'তুই তোকারি' করতে যাচ্ছিস না! চল, একটা পান দিয়ে সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে একটা চক্কর মেরে আসি।
তখন নতুন নতুন সিগারেট খেতে শিখেছি। হপ্তায় একটা কোনোরকমে লুকিয়ে দুজনে খেতাম। আমার কেনার ক্ষমতা ছিল না। অনিন্দ্যই খাওয়াত, দুটোই - জরদা পান আর সিগারেট। ওর থিওরি অনুসারে,
এক, তামাকু সেবনে সকালে কোষ্ঠ সহজে পরিষ্কার হয়। ( হস্টেলে এটা একটা মূল্যবান বিষয় - দ্রুত কোষ্টস্খলন)
আর দুই, যে পরিমাণ ভেজাল ও দূষণ আমরা প্রতিনিয়ত গ্রহণ করছি, তাতে ওই মাঝে মধ্যে এট্টুখানি তামাকু সেবনে বিশেষ কোনো ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না।
এবারে সন্ধ্যেবেলায় দুজনে বেরোলাম ঠাকুর দেখতে | সেদিন এক অংশ আর তার পরের দিন আর এক অংশ -- এভাবে অনিন্দ্য ভাগ করে নিয়েছিল।
চাক্ষুস করে সত্যি বলছি আমি না হাঁ হয়ে গেলাম!
চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পূজা বড় মানে শুধু মনে বা উৎসবের মাপে বড় নয়, ঠাকুরের মাপেও সেরকম। বেশিরভাগ ঠাকুরই দেখলাম এত বড় যে বিসর্জনের সময় আগে প্যান্ডেল খুলে তবে সেই সমস্ত ঠাকুরকে বের করতে হয়। আর সব থেকে বড় কথা, জগদ্ধাত্রী ঠাকুরের মূর্তি নিয়ে দুর্গাপুজোর মতো আধুনিক 'থিম থিম' ছেলে খেলাটা ওখানে হয় না। সবই বিভিন্ন ধাঁচের, কিন্তু সেই সাবেকি ধরনের ঠাকুর।
সাবেকিয়ানার কথায় মনে পড়ে গেল, বাংলার ঐতিহ্যের ইতিহাসের সাথে জগদ্ধাত্রী পুজোর একটা যোগ আছে। নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই চন্দননগরের অবিসংবাদিত অধিপতি ও ফরাসিদের দোর্দণ্ডপ্রতাপ দেওয়ান, ও রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নিকট বন্ধু ইন্দ্রনারায়ণ রায় চৌধুরীর কাছে অর্থ ধার করতে মাঝেমধ্যেই আসতেন। ভাবুন, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র আসতেন অর্থ ঋণ করতে এক দেওয়ানের কাছে ! বুঝুন সেই দেওয়ানের প্রতিপত্তি কি!) এই ইন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরীর মৃত্যু হয় ১৭৫৬ সালে। ইন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরী জগদ্ধাত্রী পুজোর শুরু করেন ১৭৫০ সাল নাগাদ, চন্দননগরে নিজ গৃহে। তারপর থেকে রায়চৌধুরীদের দেখাদেখি রাজা কৃষ্ণচন্দ্র জগদ্ধাত্রী পূজা শুরু করেন, নদীয়ায়। জগদ্ধাত্রী পূজা করলেও রাজা কৃষ্ণচন্দ্রই প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন বলে বিশ্বাস। কলকাতায় আবার বেহালার সাবর্ণ রায়চৌধুরী পরিবার তারও আগে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন বলে সময় বলে।
আর আমার বিশ্বাস অনিন্দ্যরা এই ইন্দ্রনারায়ণ রায়চৌধুরীর বংশেরই অংশবিশেষ, যদিও সে নিয়ে কোনো কথা কোনোদিন হয় নি।
যায় হোক, অনিন্দ্যর বাড়িতে ওই তিন দিনের স্মৃতি এখনো অমলিন।
কিন্তু বাস্তব হল এস আর সি স্যার বিদ্যামন্দির কলেজ থেকে রিটায়ার করলেন ৩১ শে অক্টোবর, ২০২৪। জগদ্ধাত্রী পুজোর ঠিক কদিন আগে।
কি সমাপতন!
....
....
....
আমি এখন যেখানে থাকি সেখানে ১৭ বছরের এই বসবাসের প্রত্যেকবারই জগদ্ধাত্রী পুজো হয়ে আসছে।
এই বিশেষ দিনটাতে হাত ফাঁকা থাকে বলে আমি বেশ কিছু ছবি অকারনেই তুলে থাকি। ফেসবুক এনালিটিক্স বলে যে শুধু ছবি এখানে পোস্টালে যতটা রিচ (মানে যত লোকের কাছে পৌঁছায়, তার ব্যাপ্তি) হয়, লেখা দিলে তত হয় না।
কিন্তু তাতে আমার কি! ছবির সাথেও লেখাও না হয় রইল। যার ইচ্ছে পড়বে, যার ইচ্ছে হবে না, সে পড়বে না। সে শুধু ছবি দেখবে।
আবার যার ইচ্ছে শুধু পড়বে, ছবি দেখবে না, তাহলে তাই।
মোদ্দাকথা, এমন একটা লোভনীয় প্ল্যাটফর্মে, যেখানে হাজারো তারকা আর নেতাদের লোভনীয় কিন্তু অকারণ চাপান-উতর ও গালিগালাজের ভিড়ের মধ্যে আমার পোস্ট করা ছবি বা লেখা দু-চার জন পড়ে, তখন আমি কৃতার্থ বোধ করি। মনে হয় এর থেকে বেশি আনন্দ আর কিছুতে নেই।
তবে এই সূত্রে বলে রাখি পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপুজো করতে গেলে বা চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজো করতে গেলে পুজো পারমিশন লাগে। সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটার রেজিস্ট্রেশন কর্পোরেশন ভিত্তিক।কিন্তু এ সম্পর্কে নিখুঁত কোন তথ্য হাজার খুঁজেও পাওয়া যায় না।
ঠিক কতগুলো পুজো হচ্ছে তার একটা তথ্য থাকাটা খুব জরুরী।
একটা রাফ ওভারভিউ হিসেবে বলা যায় যে,
১) সারা হাওড়াতে প্রায় তিন হাজার দুর্গাপূজা হয়।
২) শুধু চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পূজার সংখ্যা প্রায় একশো পঞ্চাশ।
কথাগুলো ফুরোয় না/ নটেগাছটাও মুড়োয় না:
হাটখোলার দত্ত পরিবারের কথা কে না জানে!
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে পিতা মদনমোহন দত্তের মৃত্যুর পরে পরিবারের প্রধান ছিলেন রামতনু দত্ত| ওনাকে সবাই ‘তনু বাবু’ বলে জানতেন। এই তনু বাবু ছিলেন তৎকালীন নব্য ‘বাবু’ সমাজের একজন প্রথম সারির বাবু। বলা হতো ‘আট বাবুদের এক বাবু হলেন তনুবাবু’। তাঁর দাপটে বাঘে গরুতে এক ঘাটে জল খেত। সাথে ছিল ভয়ংকর বিলাসব্যসন। কথিত আছে যে তাঁর বাড়ি প্রত্যহ উপর থেকে নিচ পর্যন্ত আতর দিয়ে ধোয়া হত।
এই দত্ত পরিবারের প্রধান প্রতিদ্বন্দী ছিল গিয়ে তখনকার বাগবাজারের মিত্তির বাড়ি।
রমতনু দত্তের সমসাময়িক মিত্তির বাড়ির প্রধান ছিলেন গোকুল মিত্র।
গোকুল মিত্রের কাছে তনুবাবুর খবর গিয়ে পৌঁছালো
যে রামতনু দত্ত নাকি সারা বাড়ি আতর দিয়ে রোজ ধোয়ান। এখন রেষারিষী করতে গোকুল মিত্তিরও সারা বাড়ি অনায়াসে আতর দিয়ে ধোয়ার
ব্যবস্থা করতেই পারতেন। কিন্তু তাতে আবার তনুবাবুকে নকল করা হয়ে যায়। কিন্তু কি
করে এর জবাব দেবেন তার জন্য তিনি পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না। অস্থির হয়ে পড়ছিলেন।
অবশেষে সুযোগ এলো।
একদিন এক গরীব ব্রাহ্মণ হঠাৎ এসে উপস্থিত হলেন
গোকুল মিত্রের দুয়ারে। বললেন,
- আমার একমাত্র পুত্রের কর্ণমল (কানের খোল)
বিষাক্ত হয়ে এমন অবস্থা যে তাতে তার
শ্রবণশক্তি চলে যেতে পারে, এমন কি সে বিষ ছড়িয়ে পড়ে তা প্রাণঘাতি
হতে পারে।
- আপনি আমার কাছে কি চান?
- কবিরাজ বলেছেন খুব ভালো ধরনের আতর এর একমাত্র
চিকিৎসা। আপনি যদি কৃপা করে আমাকে একটু আতর দেন তবে আমার সন্তানের রোগের নিরাময়
ঘটানোর চিকিৎসা আরম্ভ করতে পারি। ভাল আতর শুনেছি সোনার থেকেও বেশি মূল্যবান। সে
আমি চিনিও না আর তা ক্রয় করা আমার সাধ্যাতীত।
গোকুল মিত্র দেখলেন তনুবাবুকে জব্দ করার এই
সুযোগ। তিনি গরিব ব্রাহ্মণ কে বললেন,
- আরে হাটখোলার দত্ত পরিবার থাকতে আতর চাইতে এসেছেন আমার কাছে! আমি কি অত বুঝি না কি! শ্রেষ্ঠ আতর তো আপনি পাবেন তনু বাবুর কাছে। ওনার সম্ভারে যা আছে, আর কারো কাছে নেই। আপনি বরং ওখান থেকে আতর নিয়ে আসুন। দেখি কেমন আতর উনি আপনাকে দেন!
ব্রাহ্মণ সরল বিশ্বাসে বাগবাজার থেকে হেঁটে
উপস্থিত হলেন হাটখোলায়। তনুবাবুকে সব
বলতেই উনি ধরে ফেললেন যে গোকুল মিত্রই তনুবাবুর আতরের সত্যতা যাচাই করতে এই
ব্রাহ্মণকে ওনার কাছে পাঠিয়েছেন। কয়েক রতি আরবি বা ফরাসী আতর দিয়ে দেওয়া গোকুল
মিত্তির অনায়াসেই পারতেন। কোন ব্যাপারই ছিল না। তার বদলে গরিব ব্রাহ্মণকে এত দূরে
পাঠানোর কোন মানে হয়! যাকগে এসব যখন
হয়েই গেছে তখন দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কি হয়!
তনুবাবু ব্রাহ্মণকে বললেন,
- হে ব্রাহ্মণ! আপনি বরং এই আতর নেওয়ার জন্য
একটি যথার্থ পাত্র নিয়ে আসুন, যে আধারে আপনার সন্তানের নিরাময়ের
জন্য আপনাকে আমি সঠিক পরিমাণে আতর দান করতে পারব!
গরিব ব্রাহ্মণের আতরের পাত্র কেনার পয়সা
কোথায়! আতর তো আর মাটির কোনো পাত্রে রাখা যাবে না! তাই ‘যে আজ্ঞে’ বলে হাটখোলা থেকে পুনরায় উপস্থিত হলেন বাগবাজারে।
এসে গোকুল মিত্র কে বললেন
- হ্যাঁ তনুবাবু আতর দিতে রাজি হয়েছেন বটে। কিন্তু উনি সঠিক মাপের এবং সঠিক গুণমানের একটি
পাত্র চেয়েছেন, যাতে আতর দেওয়া যায়। আমার সে অর্থবল নেই যে আতর
গ্রহণের জন্য যথার্থ পাত্র ক্রয় করব।
গোকুল মিত্র বুঝতে পারলেন সবটা। তিনিও কম যান না! বুঝতে পেরেই একটি বিরাট পিতলের কলসী ব্রাহ্মণকে
দিয়ে বললেন
- যান, ওনাকে বলুন যে এই পাত্র আপনি এনেছেন
আতর নেওয়ার জন্য।
মনে
মনে ভাবলেন খুব জব্দ করলেন তনুবাবুকে। কলসী ভরা দামী আতর.... আর যাই হোক অতটা দিতে
পারবেন না।
ব্রাহ্মণ তনু বাবুর গৃহে পুনরায় উপস্থিত হলেন,
ওই
বিশাল কলসী সমেত। পাত্রের গুণমান ও আকার দেখে তনুবাবু তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারলেন যে
তাঁর ধারণা ভ্রান্ত নয়, যে মিত্তির ওনাকে জব্দ করতে চাইছেন।
কিন্তু বেচারা ব্রাহ্মণকে ওভাবে আর অকারণে খাটানোর ইচ্ছে হল না। তাই তিনি
ব্রাহ্মণকে বললেন,
- হে ব্রাহ্মণ আপনাকে এতটা কষ্ট দেওয়ার জন্য
আমাকে ক্ষমা করবেন। আপনি আজ সারাদিন আমার
গৃহে অতিথি হয়ে থাকুন। আমার এখানে খাওয়া-দাওয়া করে বিশ্রাম নিন। দিনের শেষে আমি
আপনাকে নিশ্চয়ই আপনার সন্তানের নিরাময়ের জন্য এই কলসী ভরে আতর প্রদান করব।
ব্রাহ্মণ স্নান আহারদি সেরে নিজের সন্তানের জন্য এতটাই ব্যাকুল হলেন
যে তিনি বিকেল হওয়ার আগেই খুব ব্যস্ত
হয়ে তনুবাবুর কাছে উপস্থিত হয়ে বললেন,
- আমি আপনার আতিথেয়তায় মুগ্ধ। কিন্তু আমার মন
আমার প্রিয় সন্তানের জন্য বড়ই বিচলিত হয়ে আছে। আমি সন্ধ্যাবেলা পর্যন্ত থাকতে
পারবো না। যদি আপনি এখনই ব্যবস্থা করে দিয়ে আমাকে আজ্ঞা করেন, তবে
আমি আমার সন্তানকে যত শীঘ্রই সম্ভব ওষধি প্রদান করে সুস্থ করার জন্য চেষ্টা শুরু
করতে পারি।
তনুবাবু বিচক্ষণ মানুষ। তিনি সবটা বুঝলেন এবং
সেই কলসি ভরে তাঁকে আতর প্রদান করলেন। কলসি ভরে যে আতর তিনি ব্রাহ্মণকে দিলেন সেই আতর ছিল তার সংগ্রহে রাখা
সর্বশ্রেষ্ঠ আতর। ওই আতরের তৎকালীন
বাজারমূল্য হবে মোটামুটি আট হাজার টাকা।
ব্রাহ্মণ বিদায়ের সময় ব্রাহ্মণকে তিনি আতর
ছাড়াও যথারীতি আরও অনেক প্রয়োজনীয় দ্রব্য প্রদান করলেন, উপঢৌকন হিসেবে।
পাঁচশো এক টাকা প্রণামীও দিলেন।
বিদায়কালে তনু বাবু ব্রাহ্মণকে বললেন
- আপনাকে একটা অনুরোধ যে যিনি আপনাকে ঐ পাত্র
দিয়ে আতর গ্রহণের জন্য পাঠিয়েছেন, তাঁকে বলবেন যে আশা করি যে এই সামান্য
পরিমাণ আতরে তাঁর মত বড় মানুষের কর্ণের মল নিশ্চয়ই পরিষ্কার হবে। তবে তার পূর্বে
আপনি আপনার সন্তানের জন্য যতটা আতরের প্রয়োজন তা কিন্তু একটি আলাদা কাচের পাত্র
তুলে রাখবেন। ঐ বিশাল পাত্র যখন দিতে পেরেছেন, এ সামান্য
পাত্রটুকু উনি নিশ্চয়ই আপনাকে দিতে পারবেন।
ব্রাহ্মণ সবটুকু বুঝতে পেরে তনুবাবুর কাছ থেকে
ক্ষমা চেয়ে বিদায় গ্রহণ করলেন।
এর কয়েক মাস পরে ব্রাহ্মণ তনু বাবুর কাছে ফিরত
এসে তাঁকে সংবাদ প্রদান করলেন যে ওনার সন্তান সম্পূর্ণ রূপে সুস্থ হয়েছে এবং বাকি
আতরটুকু নিয়ে ব্যবসা করে তিনি তাঁর দরিদ্রদশা থেকে মুক্ত হয়েছেন। আর উনি
বাগবাজারের মিত্তিরবাড়িতেও গিয়েছিলেন, তনুবাবুর বার্তা পৌঁছাতে। তাতে গোকুল
মিত্তির, ক্রোধে লাল হয়ে শুধু বলেছেন্,
- আপনি এখন আসুন! আর এর পরে কোনো দিন আমার দরজায়
সাহায্য চাইতে এলে, ফল ভাল হবে না।
তবে ব্রাহ্মণের পুনরায় তনুবাবুর কাছে ফেরত
আসার উদ্দেশ্য একটাই -- তনুবাবুকে দুহাত তুলে আশীর্বাদ।
কথনে: অনিন্দ্য রায়
অনুলিখন: আর্য
চিত্রঋণ: আন্তর্জাল
Saturday, 2 November 2024
দুদ্ধর্ষ দুবাই: পর্ব দশম (অ্যানেক্স)
বলাই বাহুল্য যে পৃথিবীর সবথেকে মূল্য্বান (Expensive) শহরের মধ্যে দুবাইয়ের স্থান ১৫ নম্বরে আর কলকাতা সে দিক থেকে ২০৫ নম্বরে। সহজ কথায় কলকাতার রোজগারে দুবাই-তে এসে পনেরো দিন থেকে খেয়ে শহরটাকে সম্পূর্ণরূপে ঘুরে দেখতে গেলে আমাদের সারা জীবনের সঞ্চয় শেষ করে ফেললেও তা সম্ভব হবে না। অরিন্দম-চৈতালী তাই বারবার আমাদের ওখানে ডেকেছে, যাতে ওরা ওখানে থাকতে থাকতে আমরা ঘুরে আসতে পারি। যখন সে সুযোগ পেয়েছি আর যখন আমাদের ফেরার টিকিট ও কাটা আছে ১৫ দিন বাদে, তখন একদিন একটু রেস্ট নিতে ক্ষতি কি! আর সব থেকে বড় কথা আমি এ কথা বলেছিলাম আরো একটা বৃহত্তর কারণে। অরিন্দম-চৈতালী আমাদেরকে যেভাবে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উৎসাহ নিয়ে শ্হরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘোরচ্ছে, তাতে শুধু আমাদের নয় আমার মনে হয়েছিল ওদেরও একটু রেস্ট দরকার।ইন্দ্রানী প্রথমে সেটা বুঝতে পারেনি তাই ঝগড়ার সূত্রপাত। পরে যখন বুঝতে পেরেছে তখন আর কিছু বলেনি।
সেদিন পুরো সকালটা তাই আমরা সিমপ্লি কাটা ঘুড়ির মত ল্যাদ খেলাম। ব্রেকফাস্ট করলাম অনেক দেরিতে। লাঞ্চ হলো প্রায় বিকেলে। তারপর অরিন্দমই বলল যে
- বসে থেকে আর কি করবি? চ' আমরা একটা শপিংমলে ঘুরে আসি।
ওদের বাড়ি থেকে যাওয়া-আসার পথে একটা উল্টো করা নৌকার মত মল পথে পড়ত। নামটাই খুব লোভনীয় -- লুলু মল।
বাঙালির কানে এই 'লুলু' শব্দটা এলেই কেমন একটা উলু দিয়ে যেন সম্ভাষণ করছে মনে হয়। কিংবা মানুষের কনজিউমার বিহেভিয়ারকে সম্পূর্ণরূপে তার সংযমের বিরূদ্ধে 'লু লু' বলে লেলিয়ে দিচ্ছে মনে হয়। আর সাথে যদি মহিলারা থাকে তাতে তো মলটির এরকমের লোভনীয় নামকরণের সার্থকতা নিয়ে কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না! কারণ, এটা প্রতিষ্ঠিত সত্য যে মহিলাদের মত buying spree পুরুষদের নেই (রাগ করার কিছু নেই। এটা নারীজাতির 'গুণ' হিসেবে মান্যতা পেয়েছে)। পুরুষদের টাকা ওড়ানোর আরো অনেক উপায় আছে। কিন্তু বেশিরভাগই নেহাত নিপাট ভদ্রলোক বলে সাহস করে সেসব পথ মাড়ায় না। কিন্তু কাউকে এক বেলায় সর্ব্স্বান্ত করতে গেলে দুটি উপায় আছে, এক, জুয়াতে ভিড়িয়ে দেওয়া আর দুই, কোনো প্রিয় মহিলার সাথে একটি শপিং মলে গিয়ে বলা
- তোমার কি কি চাই...ফিল ফ্রি...।
- ব্যাস্, কেল্লা ফতে!
তবে চৈতালী বা ইন্দ্রানী কেউই এখানে বিশেষ কিছু ঘটাবে বলে মনে হয় না। কারণ, ওদের ফিল্ড অন্য -- শাড়ী। আর লুলু মলে তা কিছুতেই পাওয়া যাবে না।
তার সাথে ওদের একটা নীতিবোধের নবজাগরণ ডোজ অরিন্দম দিয়ে রেখেছিল। সেই ভরসায় বুক বেঁধে আমরা লুলু মত মলের দিকে প্রস্থান করলাম।
এটা একটা সাধারণ শপিংমল এবং এখানে সব পাওয়া যায় (শাড়ী ইত্যাদি ছাড়া) অনেক মলের মধ্যে লুলু মল তার নিজ বৈশিষ্ট্যে এবং গুনে অনন্য। মলটি সাতটি ভাগে বিভক্ত এবং প্রতিটি ভাগ ইসলাম অনুসারে, সাতটি 'জন্না' বা স্বর্গের নামে নামাঙ্কিত, আর সে নামাঙ্কন ঘটেছে অয়েল -এ আঁকা অ্যাবস্ট্র্যাক্ত আর্টের মাধ্যমে।
জ্ঞাতার্থে ইসলাম অনুসারে সাত স্বর্গের নাম পর পর লেবেলের ক্রমানুসারে নিচে দেওয়া হল:
১ জন্নত -আল -আদাঁ
২ জন্নত -আল- ফিরদৌস (স্বর্গের দ্বিতীয় ও সবথেকে প্রিয় তল বলে পরিচিত্)
৩ জন্নত -আন- নঈম
৪ জন্নত -আল -মাওয়া
৫ দর্-উল্- খুল্দ
৬ দর-উল্-মকাম
৭ দর্-উস্-সালাম
সপ্তম স্বর্গের শেষ প্রান্তে রয়েছে 'সিদরাত আল মুনতাহা' নাম্ক এক বিশালকায় লোট বৃক্ষে। এর পরে স্বর্গের শেষ। ঈশ্বর সৃষ্ট সমস্ত জীব ও তাদের দিব্য জ্ঞানের সীমানা এখানেই।
যা আমাকে প্রথমে অবাক করেছে তা হল লুলু মার্টের মাছ-মাংসের ডিপার্টমেন্ট। সে যে কত রকমের প্রকারভেদ তা জানতে গেলে যেতেই হয় লুলু। চিকেন -মাটন প্রয়াসই আনা হয় বাড়িতে। কিন্তু এরকম অ্যানাটমি ধরে ধরে মাংস বিক্রি হয়, (লিভার্, কিড্নি হার্ট, আরো কত কি) তা আমার আগে জানা ছিল না। সব থেকে বড় কথা মুরগি বা পাঁঠার শরীরের মধ্যে এতগুলো অংশ থাকে এবং সেই অংশগুলোকে এত সুন্দর করে প্যাকেজিং করে আলাদা করে বিক্রি করা যায় তা সত্যি আমার কাছে অজানা ছিল।
মাছের কাউন্টার তো একেবারেই ওপেন। ওখানে যা আমার নজর কাড়ল তা হল একটা প্রায় দু'ফুট সাইজের হাঙ্গর। সে যেন পুরো জীবন্ত ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মনে পড়ে গেল স্পিলবার্গের সেই বিখ্যাত মুভি 'Jaws'-এর কথা। অরিন্দম আমার আগ্রহ দেখে একবার এসে বিড়বিড় করে বলল বটে,
- কিরে খাবি নাকি!
- না...প্লিজ্...!
বিশ্বাস করুন, আমি জীবনে কোনদিন খাবার ব্যাপারে বিভিন্ন জীবজন্তুর আস্বাদ নিতে একেবারেই বিমুখ। সমুদ্রের ধারে গেলেই যেমন সি-ফুড খায় আমি ওসবের ধারেবাড়েও নেই। যা স্ট্যান্ডার্ড, যা স্বাভাবিক, যা বাড়িতে থাকলে খাই বা আনিয়ে খাই, সেই সমস্ত খাবারেই আমি অত্যন্ত নিরাপদ বোধ করি এবং তাতে দেখেছি বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে গিয়ে উল্টোপাল্টা খাওয়ার জন্য মানুষের যেরকম পাইকারি হারে শরীর খারাপ হয়, সেসব অন্তত আমার হয় না। সৌভাগ্যক্রমে ইন্দ্রানী বা বুমবুম কেউ-ই খাবার দাবার নিয়ে খুব যে ওয়াইল্ড এক্স্পেরিমেন্ট করতে চায় তা নয়।
তাই অরিন্দমের প্রস্তাব রিফিউজ করলাম। বললাম
- বরং শুনেছি যে সব থেকে ভালো মানের যে ইলিশ মাছগুলো ওঠে, সেগুলো নাকি বিভিন্ন বড় বড় দেশে চলে আসে। তোদের এখানেও নিশ্চয় ই আসে বলে মনে হয়। এই হাঙর খাওয়ার থেকে বরং এক একটা ইলিশ মাছ নিয়ে পরখ করে দেখা করে যেতে পারে যে আমাদের দেশের গুলোর সাথে এখানে এক্সপোর্ট কোয়ালিটি ইলিশের পার্থক্যটা কি !
অরিন্দম বললো
- সেই বাজারটা অন্য জায়গায়। আর লুলুতে সেরকম ভাল ইলিশ পাবি না। আমরা এখান থেকে কিন্তু মাছ কিনি না। এখান থেকেই চিকেন টিকেন ইত্যাদি কিনে নিয়ে যাই বটে। কিন্তু মাছ আমরা অন্য একটা মার্কেট থেকে কিনি। সেটা বাড়ি থেকে অনেক দূরে। তাই যখন যাই তখন একেবারে পনেরো দিনের মতো মাছ একসঙ্গে নিয়ে চলে আসি। ওখানে একটি বাঙালি ছেলে আছে। বাংলাদেশী। তাকে বলা থাকে। সে আমাদের জন্য যত্ন করে আমাদের ফেভারিট মাছগুলো আলাদা করে রাখে।
শুনে বললাম
- বেশ তবে তাই হবে
- হ্যাঁ ওই মাছের বাজারটা শারজার কাছাকাছি। যেদিন ওদিকে যাব সেদিনই একেবারে ইলিশ্টা নিয়ে আসব। কিন্তু আজ ডিনারে আমরা একটা স্পেশাল খাবার খাব।
- কি খাবার?
- আমি এটা প্রায়ই অর্ডার করি। খেয়ে দেখ কেমন লাগে। একটা কমপ্লিট প্ল্যাটার্। সঙ্গে একটা স্টাফ্ড মোগলাই পরোটার মতো জিনিস কেটে কেটে দেয়। আর সাথে থাকে কাবাব। আর তার সাথে তার সাথে স্পেশাল সস: হুমুস্। অনেকে হমাস বা হামুস-ও বলে।
- প্ল্য়াটারটার নাম কি?
- আরিয়াস্....
- আর হুমুস তা কি?
- ছোলা কে ভিজিয়ে তারপর অলিভ অয়েল দিয়ে মিহি করে বাটা।
- শুনেই কেমন জিভে জল আসছে বুঝলি। আর এর সঙ্গে যদি লাবান আর স্প্রাইট থাকে। তাহলে তো আর কথাই নেই। পুরো জমে যাবে।
- চল তাহলে লুলু থেকে তাড়াতাড়ি কাজ সেরে নিয়ে আমরা আজকে ফুল বিনজ করব ।
চৈতালি বললো,
- হ্যাঁ, ছোটুও নাকি আমাদেরকে খাওয়াবে বলে চিজ পুডিং বানিয়েছে।
এর পর লুলু মলের সমস্ত জিনিসই বেশ মায়াময় ঠেকতে লাগলো। মনে হচ্ছিল আর তো বিশেষ কিছু এখানে দেখার নেই। এবার আপাতত বাড়ি ফিরলেই হয়। দেশটা অনেকটা পশ্চিমে। তাই সূর্যাস্তও দেরিতে। সেটা নিশ্চয়ই আগেই বিভিন্ন পর্বে সকলে বুঝতে পেরেছেন। সাড়ে আটটা নাগাদ যখন আমরা ফিরছি তখন সূর্য ডুবছে।
অরিন্দমরা যে পাড়ায় থাকে সেখানে খুব উঁচু বিল্ডিং বলতে একটাই রয়েছে সেখানে। এর পরে ঐ অঞ্চ্লে অত উচু বিল্ডিং এর কোন পারমিশন পাওয়া যায়নি। এখন নিয়ম ম্যক্সিমাম আট তলা। সেই প্রাসাদের মত বিল্ডিংটার ছবি এখানে রইল। এটাও কিন্তু একটা রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স। যখনই আমরা ওদের পাড়া ছেড়ে হাইওয়েতে এসে পড়ি তখন রাস্তা চেনার জন্য একটা দারুণ উপায় ছিল। চিহ্ন ছিল, একটা বিশেষ বাড়ি, যার আকৃতি আনারসের মত। ওই আনারস বাড়ি দেখে আমরা বুঝতে পারতাম যে আমরা নিজেদের বাড়ির কাছাকাছি এসে গেছি বা এবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে হাইওয়েতে পড়বো। ওই আনারস বাড়ির এক অপূর্ব অবয়ব দেখতে দেখতে আমরা লুলু মল থেকে সেদিন বাড়ি ফিরে এলাম।ততক্ষণে আরিয়াসের অর্ডার হয়ে গেছে। শুধু যা আসার অপেক্ষা! আমরা লাবানের সাথে স্প্রাইট মিশিয়ে সঙ্গে সাউথ ইন্ডিয়ান চিঁড়ে ভাজা খেতে থাকলাম যাতে পিত্তি না পড়ে যায়! সঙ্গে টিভিতে লাগানো হলো এতদিন পর্যন্ত বিভিন্ন ক্যামেরায় তোলা ছবি ও ভিডিও। আমরা এই ক'দিনে যে পরিমাণে ছবি ও ভিডিও তুলেছি সেগুলো সঠিকভাবে দেখা তো দূর, ঠিকমতো ডাম্প্-ই করা হয়নি। এই প্রথম যতটুকু সময় পাওয়া গেল, তাতে বিভিন্ন ক্যামেরা থেকে ছবি ও ভিডিও এক জায়গায় করে তার সাথে টিভি কে কানেক্ট করে আমরা দেখতে শুরু করলাম।
রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা নিয়ে দেখলাম আমাদের মরুভূমিতে চরে বেড়ানোর দিনটা। ঠিক যেন স্বপ্নের মত!
এই স্বপ্ন নিয়ে আলোচনা করতে করতে আরিআস এসে গেল। সুন্দর করে সাজিয়ে আমরা খাবার খেতে আরম্ভ করলাম। সঙ্গে চলল বলিউড সিনেমা। অরিন্দমের ফেভারিট প্ল্যাটার সম্পর্কে কি আর বলি! সে এক অনবদ্য খাবার যা বারবার খেতে ইচ্ছা হয় !
এটি যে কি জিনিস তার তুলনামূলক সংজ্ঞা দিতে গেলে বলা যেতে পারে যে, আরিয়াস হল অত্যন্ত উন্নত মানের চিকেন মোগলাইয়ের একটি ভিন্ন সংস্করণ। সঙ্গে থাকে বিভিন্ন ধরনের কাবাব ও চাটনি হুমুস।
বুমবুম আর ছোটুর ডিনার সেদিন বাইরে। ছোটু সেদিন বুমবুমকে নিয়ে গিয়েছিল ওর ওখানকার বন্ধুদের সাথে আলাপ করাতে। কাছাকাছি কোথাও তাদের সাথে একসাথে ডিনার।
আমরা বড়রা বলিউড আর আরিয়াসে বুঁদ হয়ে রইলাম।
আরিয়াস, লাবানাদি শেষ করে আমরা যখন ডেজার্টের দেশে ডেসার্টের খোঁজে তখন পেলাম জিভে জল আনা বাড়িতে বানানো ছোটুর তৈরি করা চিজ পুডিং।
ছোটু রান্না করেছে বলে বাড়িয়ে বলছি না, আমার খাওয়া সেরা চিজ পুডিং হচ্ছে। যতদিন পর্যন্ত গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল ছিল, ওদের নিজস্ব বেকারিতে প্রস্তুত করা চিজ পুডিং। সে স্বাদ অনবদ্য ও ভাষায় অবর্ণনীয়। এখন ললিত গ্রুপ অধিগ্রহণের পরে আর হয় কিনা জানি না। তা যাই হোক, ছোটু আজকে যে চিজ পুডিংটা বানিয়ে ছিল সেটা প্রায় গ্রেট ইস্টার্নের পুডিং টাকে চ্যালেঞ্জে ফেলে দেওয়ার মত।
আমার পেট ভর্তি থাকা সত্ত্বেও আমি যতটা চিজ পুডিং খেলাম তাতে আবার উল্টে বকুনিও খেতে হল ইন্দ্রানীর কাছে, যে অন্য কারোর কথা না ভেবেই আমি নাকি পুরোটা সাবাড় করে দেওয়ার তালে আছি। তাই নেহাত চক্ষুলজ্জাজনিত কারণে তখনকার মতো খান্ত দিলাম। আর ছোটুর সাথে চোখে চোখে কথা হল যাতে আমার জন্য কিছুটা থাকে, সকালবেলায় কফি দিয়ে খাওয়ার জন্য।
ছোটু দেখলাম সকলের গল্প করার ফাঁকে বাকি চিজ পুডিং-টা চুপচাপ ফ্রিজে তুলে রেখে দিল।বাকিটা আবার কাল সকালে চেখে দেখবো।
সুবিধা একটাই। এখানে এসে দেখছি, ঘুম থেকে সবার আগে আমি উঠি। সুতরাং একা একা বিভিন্ন দুষ্কর্ম করার সুযোগ আমার কাছে সকালবেলাতেই যথেষ্ট।
আপাতত্: নিপাট ভাল মানুষের পো এর মত ঘুমোতে গেলাম।
ঝাউতলার গল্প : পর্ব ৭
ঝাউতলার ধন:
একবার হয়েছিল কি, এক টুনটুনি এক রাজার জিনা হারাম করে দিয়েছিল। বলেছিল
- রাজার ঘরে যে ধন আছে আমার ঘরেও সে ধন আছে
রাজা বনাম টুনটুনি!!
লড়াই এর ফলাফল ?
- এক টুনিতে টুনটুনালো/সাত রানীর নাক কাটালো |
তারপর শেষে রাজা টুনটুনিকে মারতে গিয়ে নিজের নাকেই কোপ।
ধনের প্রতিযোগিতায় নাকই ঘ্যাঁচাত।
ঝাউতলার গল্পটা অনেকটাই অন্যরকম | কিন্তু মিল যেখানে পাওয়া যেতে পারে তা হল একের ধনে অন্যের ঈর্ষা |
ঝাউতলায় এখন ট্রেন্ডিং যে আমাদের নবীনদাকে দেখা গিয়েছে ধনের জন্য তরস খেয়ে ধনতেরাসের পূন্য তিথিতে বিভিন্ন সোনার দোকানে লাইন দিতে | ওনার পিছনে আমাদের পাড়ার পেপারাৎজিরা (যাদের পাতি বাংলায় 'ঘোঁটবাজ' বলে) ছদ্মবেশে ঘুরে বেড়ায় | তাতে ওনার বিশেষ কিছু যায় আসে না। আগেকার দিনে পাড়ায় বিভিন্ন লোকের হাঁড়ির খবর রটে যেত কারণ সে সময়ে দেওয়ালেরও কান ছিল। এখন দুয়ারে উন্নয়নের দরুন দেওয়ালরা বধির হয়ে গেছে | খবর আর দেওয়াল ভেদ করে ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে ঢুকতে চায় না। কারন ফ্ল্যাটের দেওয়াল বড়ই পাতলা। হাঁড়ির খবরের সম্মানে লাগে অত পাতলা দেওয়াল ভেদ করতে । আমরা উন্নততর হয়েছি, আরও সভ্য হয়েছি, তাই খবর এখন চ্যানেলে আর মোবাইলে | আর ঘোঁট হল অসভ্যতা | ভদ্রলোকেরা এসব নিয়ে চর্চা করে না। তাই ধরন বদলে আমাদের হাউসিং কমপ্লেক্সে ঘোঁট আর্কাইভ করা থাকে কমপ্লেক্সের মেইন এন্ট্রান্সে সিকিওরিটি কাউন্টারে। উৎসাহী ব্যক্তিরা যাতায়াতের পথে ওখান থেকে ঘোঁট সংগ্রহ করেন | এর জন্য মেম্বারশিপ লাগে না।
সপ্তাহ খানেক আগে সেখান থেকে যে তথ্য পাওয়া গেল তা হল নবীনদা মাসখানেক আগে রিটায়ার করার পরে নাকি পাঁচ কোটি টাকা পেয়েছেন|
খবর মেন গেট থেকে গেলেও তার উৎস ঝাউতলার অর্থনীতিবেত্তারা | আমাদের ঝাউতলায় ব্যাংক এবং ফিনান্স নিয়ে জটিল কাজকর্মে ওস্তাদ লোকজন আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রধান তিনজন হলেন, এক, দেবাঞ্জন দুই, সমীর ও তিন, অনন্ত | জোকস অ্যাপার্ট, এনারা প্রত্যেকেই জাস্ট ব্রিলিয়ান্ট বললেও কম বলা হয়।
এঁরা নবীনদার কর্মজীবন ও কাল্পনিক বেতনের ভিত্তিতে বেশ কয়েকদিন খুব খেটে হিসেব করে দেখেছেন যে নবীনদা সুপার অ্যানুয়েশনের অব্যবহিত পরে পাঁচ কোটি লিক্যুইড ক্যাশের মালিক হয়েছেন। রিটায়ারমেন্টের পরে উনি এত টাকা নিয়ে করবেন তা নিয়ে আমরা সবাই খুবই চিন্তিত। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো নবীনদা নিজেই জানেন না ওনার পোস্ট-রিটারমেন্ট বেনিফিট হিসেবে উনি পঞ্চকোটি ভারতীয় অর্থ লাভ করেছেন।
আর নবীনদার বাস্তবের সাথে কিছুতেই এই তিন জনের হিসেব মিলছে না | রোজই এ নিয়ে সবার তর্কাতর্কি | একদিন আর না পেরে আগবাড়িয়ে বলতে গেলাম যে
- দাদা আপনি যা পাচ্ছেন, তা পাচ্ছেন | আর ওরা যা হিসেব করছে, তা করছে | তার সাথে আপনি আসলে যা পেয়েছেন বা পাচ্ছেন, আর ওরা যা হিসেব করে বের করেছে, সে দুটোকে যে মিলতেই হবে, এমন মাথার দিব্যি তো কেউ দেয়নি। সুতরাং আপনি এ নিয়ে এত চিন্তা করবেন না| মিছিমিছি রাতের ঘুম নষ্ট হবে। যেমন আছেন থাকুন।
কিন্তু আমি যে উলুবনে মুক্তো ছড়ালাম তা তখন বুঝতে পারি নি। নবীনদা আসলে আরও বড় খিলাড়ী |
সাথে ওনার পেটে পেটে অন্যের ধনের প্রতি টুনটুনির মত ঈর্ষা তা আমরা ঘুনাক্ষরেও টের পাই নি।
এখন প্রশ্ন দুটি
এক, ঈর্ষা কার প্রতি?
না, পনেরো বছর আগে রিটায়ার করে যাওয়া ব্যাঙ্ক অফিসার মিহিরদার প্রতি |
আর দুই, কেন এ হেন ঈৰ্ষা?
কারন সিকিওরিটির কাছে গচ্ছিত আর্কাইভ থেকে পুরোনো তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে যে মিহিরদার নাকি কয়েক কেজি সোনা আছে |
নবীনদা ভাবলেন,
- টাকা আমার থাকতে পারে | সোনা তো নেই।
ব্যাস! এবারে সেই মিহিরদার সাথে নবীনদার টক্কর | অথচ দেখলে মনে হবে দুজনে যেন হরিহর আত্মা | দুজনে দুজনকে এই বয়সেও বাঁ... জাতীয় ব্রজবুলিতে নিত্য সম্বোধন করেন ৷
ওনাদের যেমন সদভাব, তেমন আদায় কাঁচকলায় | কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেন না | পুরো সমান সমান | একমাত্র খামতি যদি কিছু থেকে থাকে তা শুধু ওই কয়েক কেজি সোনায় | সুতরাং এই সোনার হিসেবটা আগে মিলিয়ে নিতে হবে। তবে না সমানে সমানে টক্কর!
ফলস্বরূপ ধনতেরাসের দিনে হাওড়া কলকাতা চত্বরে যত সোনার দোকান আছে সব দোকান নবীনদা ঘুরে ফেলেছেন। সেটাও আমরা জানলাম নবীনদার কাছ থেকেই | গেটে খবর যে ছিল না তা নয় | কারণ কাকতালীয় ভাবে আমাদেরই ঝাউতলার এক বেচারা কিন্তু বিশিষ্ট বন্ধু সবজির আগুন বাজারে কালী পুজোর দিনে একটু ভালো-মন্দ খাবে বলে বাজার করতে গিয়েছিল। তার পরে বাজার ছাড়াও আরও অনেকগুলো কেনাকাটা করার ছিল |
কদমতলা বাজার বিভিন্ন প্রান্তে বিস্তৃত। এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে যেতে যতগুলি সোনা রুপোর দোকান পড়ে, সব ক'টা দোকানেই নাকি আসা যাওয়ার পথে আমাদের বন্ধুবর নবীনদাকে দেখেছে | এটা সকালের দিকে । দুপুরবেলায় আরেক বন্ধু ওনাকে দেখেছে হাওড়া ময়দানের বড় সোনার দোকানের কাছে | আর সন্ধেবেলায় আমাদের অন্য এক ঝাউতলিস্ট ওনাকে সস্ত্রীক দেখেছে বৌবাজারে সোনাপট্টিতে |
কিন্তু তারা কেউই এসব বলেনি কাউকেই, এক সিকিওরিটি ছাড়া কারন ওখানকার আর্কাইভে তথ্যভাণ্ডারকে নিয়মিত পুষ্ট করা আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব।
কিন্তু কথায় কথায় নবীনদা নিজেই ফস করে বলে বসলেন,
- সবকটা সোনার দোকানে কি ভিড় মাইরি! কি লম্বা লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লোকজন | ঢোকাই যাচ্ছে না, একটাতেও |
ব্যাস! আর যায় কোথায়!
এই কি যথেষ্ট নয় জানার জন্য যে, নবীনদার মনে আমাদের আমাদের মিহিরদার সোনার ধনের প্রতি কি মারাত্মক চাপা হিংসা !
সেই চাপা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে নবীনদা ঘুরে বেড়াচ্ছেন সোনার দোকানে দোকানে, একটু সোনা পাওয়ার আশায় | কিন্তু হায়রে বিধাতা! সোনা কিনতে চাইলেই কি আর পাওয়া যায়? লাইন দেখেই তিনি ঘেঁটে গিয়েছেন। ওনার বক্তব্য অনুসারে
- জামাইষষ্ঠীতে পাঁঠার মাংসের দোকানে যেরকম লাইন হয়, ঠিক সেরকম লাইন !
কিন্তু পাঁঠার কিলো আর সোনার কিলো তো আর এক নয় |
এখন বিষয়টা গিয়ে দাঁড়ালো এরকম যে ব্যর্থ মনোরথে তিনি ফিরে আসবেন তা তো হতে পারে না! শোনা গেছে যে উনি পিসি চন্দ্রকে বাড়িতে ডেকে পাঠিয়েছেন, বরাত দেবেন বলে।
মেইন গেটে সিকিওরিটি কে কড়া হুকুম দেওয়া আছে যে এই ধরনের অতিপ্রীতিকর কোন ঘটনা যদি ঘটে তাহলে যেন তৎক্ষণাৎ রিপোর্ট করে!
আসলে নবীনদা সুতনুর হাত থেকে লাটাইটা নিঃশব্দে কবেই কেড়ে নিয়েছেন তা আমরা বুঝতে পারিনি। সুতনু সেটা বুঝতে পেরে আজকাল বিশেষ আসে না | এলেও কোন কথা বলে না। ঠোঁটের একদিকে একটা না-ধরানো কিং সাইজের সিগারেট ঝুলিয়ে ফুল সাউথের আন্না স্টাইলে ধুলো উড়িয়ে লঝঝড়ে স্কুটিটা নিয়ে সাঁ করে এসে দাঁড়ায়। তারপর সিগারেটটা ধরায়। তারপর খুব রয়ে সয়ে দু-একটা বাক্য বিনিময়ে করে আবার সাঁ করে স্কুটি টা নিয়ে ওর বাড়ির দিকে চলে যায়।
নবীনদা এসব চেয়ে চেয়ে দেখেন আর মিচকে মিচকে হাসেন | ওনার ভাবনার তল পাওয়া মুশকিল।
আমার স্থির বিশ্বাস সোনা কেনার বরাত দেওয়ার প্রচার একটা ভাঁওতা মাত্র | আসলে কিন্তু তলে তলে সেদিনই সোনা স্টক করে মিহিরদাকে ছাপিয়ে গেছেন | বাকিটা সবাই বুঝতে পারছেন, যে দাদা মানে আমাদের নবীনদা আমাদের একটু ল্যাজে খেলাচ্ছেন । টুনটুনির মত।
তবে আশা করি এ খেলায় কারোর নাক কাটা যাবে না।
কালীপূজার রাতে ওনার নামে সংকল্প করা হয়। তাই উনি নির্জলা উপবাস করেন৷ আর উপবাস ত্যাগ করেন এক দিস্তে লুচি আর পাঁচকোল গ্রাম পাঁঠার নল্লী নিহারী সেবন মাধ্যমে | এ পাঁঠা যে সে পাঁঠা নয় | বলি দেওয়া পাঁঠা | এখন পাবলিকলি পশুবলি বন্ধ হয়েছে বলে উনি দোকানেই বলি চড়িয়ে আসেন | তারপর গোটা পাঁঠা পিস করে মোড়া হয় সবুজ শালপাতায় | তারপর তা বাড়িতে আসে | মায়ের প্রসাদ দিয়ে উপবাস ভঙ্গ করবেন বলে সে পাঁঠা রান্না হয় নিরামিষ পদ্ধতিতে | মানে তা পেঁয়াজ রসুন বর্জিত। বলির পাঁঠার নল্লী নিহারী রান্না শুরু হয় রাত দশটা নাগাদা | লোহার কড়ায় ঢিমে আঁচে নিহারী রান্না হতে লাগে পাঁচ ঘন্টা |
কালীপূজো শেষ হল রাত তিনটে নাগাদ | লুচি আর নিহারী প্রস্তুত | সিল্কের গাঢ় লাল পাঞ্জাবী আর তসরের ধুতি বাগিয়ে আসনে উপবিষ্ট হলেন নবীনদা, উপবাস ত্যাগ করতে |
ধনে ধনে মিহিরদার সোনার সমান হয়ে উৎফুল্ল নবীনদা একটা লুচি গুছিয়ে পাঁঠার নলীর গা থেকে মাখনের মত নরম মাংস তাতে ভরে ঝোলের মধ্যে দু-বার ডুবিয়ে দুহাত কপালে ঠেকিয়ে ' জয় মা!' বলে মুখে পুরে চোখ বুজে স্বর্গীয় আস্বাদ অনুভব করতে করতে উপোস ত্যাগ করলেন।
এই না হলে অভিজাত্য! এই না হলে ধনী!
বিদিবদ্ধ ঘোষণা:
- এই গল্পের সব চরিত্ররা কাল্পনিক
- এই গল্পে কোনো পশুপাখির কোনোভাবে কোনো ক্ষতি করা হয় নি।










