Thursday, 4 January 2024

ভিস্টা ডোমে বুলবুলি


Statutory warning:
****এই গল্পটি কাল্পনিক ও অ্যাডাল্ট ৷ নাম ও ঘটনার সঙ্গে কোনো চরিত্র ও বাস্তবের কোনো মিল থাকলে তা নেহাতই কাক-তালীয় (এই শব্দটিও কোনো বিশেষ নামের ইঙ্গিতবাহী নয়) |
-----------
বুলবুলির বয়স পঞ্চাশের কাছে ৷ বয়সের সাথে শরীরের ওজন বেড়েছে ৷ বেড়েছে পায়ের সমস্যা৷ চলা ফেরায় বেশ সমস্যা - উঁচু নিচু জায়গা, সিড়ি, রেললাইন পার হওয়া, পাথুরে রাস্তা বা মেঠো উঁচুনিচু জমি দিয়ে হাঁটা- এসব কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া জয় করার শেষ পর্যায়ের মত মনে হয়। স্বামী গৌতম জমিদারি ও মিলিটারী মেজাজের কম্বিনেশনে রসিক লোক ৷ পৃথিবীর সমস্ত ব্যাধি দু পেগ সিঙ্গল মলট সেবনে নিরাময় হতে পারে বলে বিশ্বাস করে সকলের ওপর ওই টোটকা প্রয়োগে সদা উদ্যোগী ৷ সেই প্রাইমারী থেকে দুজনে একসাথে ৷ গৌতম তাই সর্বক্ষণ স্ত্রী কে দুরছাই করে বটে, কিন্তু ভালবাসার শিকড় খুব গভীর ৷
আমরা এদের বন্ধুবান্ধবদের দল | প্রতিবেশিও বটে ৷ বুলবুলির সারল্য সর্বজনবিদিত এবং ওর কথাবার্তার ধরণ নিয়ে নিছক মজাও সর্বজনীন, এবং বুলবুলি- গৌতম এতটাই উদার মনের যে এইসব কিছু নিয়ে নিছক ঠাট্টা-ইয়ার্কিতে রেগে যাওয়া তো দূর, উল্টে ইন্ধন প্রশ্রয় ও জোগান তিনটেই দিয়ে থাক ৷ ফলে নির্ভেজাল মজা সকলের কাছেই উপভোগ্য হয়ে দাঁড়ায় ৷
সকাল বেলাতে আমরা সেদিন ভিস্টা ডোম কোচে চেপে চালসা থেকে রাজা ভাত খাওয়া স্টেশন অব্দি যাত্রা করলাম ৷ চালসা থেকেই দুজনের নিও ক্লাসিক হিউমর পুষ্ট চলচ্চিত্রের সংলাপের শুরু ৷ গৌতমের রাজকীয় চালচলনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য উত্তেজিত হয়ে পড়লে ওর বাক্যবাণ ব্রজবুলি সমৃদ্ধ হয়ে আরও ধারালো হয়ে ওঠে ৷ বুলবুলি রেললাইন পেরোতে বেশ ভয় পায় ৷ নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে যুক্তিগত ভাবে সচেতন- পড়ে গেলে অঘটন ঘটতে পারে, তখন বেড়াতে আসটাই মাটি৷ কিন্তু গৌতম ঠিক সেই মুহূর্তে ওর হাত ধরে ওকে ইউসেন বোল্টের মত ফিট করে দিতে প্রত্যাশী হল। গৌতমকে ভীষণ বকে আমি বুলবুলিকে গ্ল্যাটফর্ম অব্দি পৌঁছে দিলাম। ট্রেন আসতে প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা বেশ যুক্তিযুক্ত হওয়ায় উঠতে খুব একটা বেগ পেতে হল না।
আড়াই ঘন্টার ট্রেন জার্নি - গভীর জঙ্গলের বুক চিরে ৷ এক কথায় নয়নাভিরাম ৷ এক অনন্য অভিজ্ঞতা ৷ কিন্তু সেই আনন্দের মধ্যেই মনে পড়ে যাচ্ছিল রেল লাইনে পড়ে থাকা নিরীহ বাঘ হাতি সাপের ক্ষতবিক্ষত দেহের ছবি - ওদের জল খেতে যাওযার পথে, ওদের চরাচরে সভ্যতার ব্যাপ্তির স্বার্থে আমরা রেলপথ বানিয়েছি ৷ আমাদের নিছক আনন্দ ওদের কাছে উপদ্রব ৷ ওরা আমাদের চায় না। আমরা ওদের নিশ্চিন্তে থাকতে দিই না - আত্মরক্ষার জন্য ওদের আক্রমণকে আমরা হিংস্রতা বলে চিহ্নিত করি। এই সব ভাবতে ভাবতে আমরা পৌঁছে গেলাম গন্তব্য স্টেশন রাজা ভাত খাওয়ায় ৷
সবাই নেমে যাওয়ার পরে আমি পুরো কামরাটা চেক করছিলাম কেউ কিছু ফেলে যাচ্ছি কি না। তারপর কামরার দরজার সামনে এক দৃশ্য-
আমাদের মেজদা মানে নয়নদা আমাদের মধ্যে বয়ঃজ্যেষ্ঠ ৷ বুলবুলি কামরা থেকে নামতে পারছে না দেখে সাহায্যের বানী বাড়িয়ে দিচ্ছেন ৷ বুলবুলি ঠিক কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। নামার আগে গৌতম কেটে পড়েছে - ওর ছোটবাইরে যাওযার ছিল, তাই কামরার টয়লেটে ঢুকছিল ৷ বুলবুলি বলল
- আর সময় পেলে না!
- লোকে কখন ছোটবাইরে যাবে সেটাও তোমার পছন্দমত সময়ে হতে হবে নাকি? নিজের চরকায় তেল দাও ৷
এই বলে গৌতম সমাহিত হলেন।
নয়নদা চিৎকার করে বলে চলেছেন
- সামনের দিকে মুখ ফিরে নামতে পারবে না ৷ পিছন ঘুরে নামো ৷ দুপাশের রড ধর৷ তারপর পিছন ঘুরে নামো ৷
আমি সাহায্যের চেষ্টা করার আগে সমস্যা দেখতে গেলাম ৷ দেখলাম বেশ গভীর সমস্যা৷ কামরার ফুটবোর্ড থেকে প্ল্যাটফর্মের উচ্চতার পার্থক্য প্রায় ফুট দুয়েক | কামরা থেকে নামার মইএর মত সিঁড়ির চারটিই দৃশ্যমান ৷ আর বুলবুলি কিছুতেই ৯০ ডিগ্রি কোণ করে থাকা সিঁড়ির ধাপগুলোর একটাও দেখতে পাচ্ছে না।
নয়নদার কথামত পিছন ঘুরে নামার আপ্রাণ চেষ্টা করল বুলবুলি ৷ দুদিকের রড দুহাতে একসঙ্গে ধরার জন্য যতটা স্ট্রেচ করতে হয়, সে তা পারল না।
ততক্ষনে কামরার সামনে বেশ ভিড় ৷ সবাই ই কিছু না কিছু বলছে। অনন্ত বুলবুলির সামনে প্ল্যাটফর্মে দাড়িয়ে - বুলবুলি পড়ে গেলে ক্যাচ করবে বলে। কিছু দূরে একদিকে স্টেশন মাস্টার আর অন্যদিকে রেলের গার্ড সবুজ পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে, বুলবুলির নামার অপেক্ষায়৷ এই ট্রেন লেট হলেও কিছু না, তাঁদের নিস্তরঙ্গ জীবনে একটু প্রানের ছোঁয়া ৷
অবশেষে বুকে অনেক সাহস সঞ্চয় করে, ঠোঁট কামড়ে," বাবা তারকনাথের চরণে সেবা লাগে..... মহাদে এ এ এ ব " বলে বুলবুলি টুক করে এক ঝাঁপ ৷ সেফ ল্যান্ডিং, অনন্তর সাপোর্টের কৃপায় ৷
বুলবুলি এ যাত্রা উদ্ধার হল ৷ কিন্তু বুলবুলির সামনেই অনন্ত নিজের ডানহাতের কনুইএর নিচের অংশটা আমাকে দেখালো ৷ আমি বললাম
- কি হল, লেগেছে নাকি?
- হ্যাঁ লেগেছে... দেখছো না ভিজে...
- মানে?
- বুলবুলির ঘাম... কোথাকার সেটা বলা যাবে না ৷ সাবান জাতীয় কিছু আছে ? ধোব...
বুলবুলি চিৎকার করে উঠল
- আমার ঘাম... এই শীতে আমার ঘাম! মর্কট! দেখো সব শুকনো...তুমি এদিকে এস অনন্ত, শুধু তোমার হাত কেনো পুরো তোমাকেই ধোব... আগাপাশতলা...
- আগা পাশ তলা -সব টা ধোবে? আমি রাজি....
বলেই অনন্ত প্রাণপণ দৌড় লাগালো ৷
বুলবুলি নিচু হয়ে নিজের পায়ের জুতো খুলতে খুলতে অনন্ত পগার পার।

No comments: