Friday, 19 January 2024

দুদ্ধর্ষ দুবাই: দশম পর্ব: মলে-বাজারে

আমরা তখন বেলুড়ে থাকতাম। আমি তখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, বেলুড় হাই স্কুলে। সাতাশি সাল। বাবার পা মচকে গিয়ে গোড়ালীতে একটা ক্র্যাক। ডাক্তার বললেন একদম শয্যাশায়ী থাকতে হবে, আগামী দু সপ্তাহ। পায়ে প্লাস্টার হল। বাবার স্কুল সালকিয়াতে। বেলুড় থেকে সালকিয়া - বাবাকে স্কুলে যাওয়ার সময় বাসে ঝোলাঝুলি করে যেতে হত। সুতরাং যাঁকে শয্যাশায়ী থাকতে হবে বলে ডাক্তার প্রেসক্রাইব করেছেন, তিনি আর যাই হোক বাড়ি থেকে বাইরে বের হতে পারবেন না, সেটা নিশ্চিত। এখনকার সময় দাঁড়িয়ে সমস্যাটা বেশ ক্ষুদ্র এবং হাস্যকর মনে হলেও সেই আশির দশকে সমস্যাটা বেশ গভীর ও গম্ভীর ছিল। কথায় কথায় ঊবর তো দূর, ট্যাক্সি বা ভাড়ার গাড়ির চল ছিল না। আর থাকলেও, আমাদের সেই অর্থনৈতিক সামর্থ ছিল না।

এমনিতেই ছোটবেলা থেকে নানা রকম পারিবারিক সমস্যার জেরে আমার বড় হওয়ার মানসিকতাটা একটু ছোট থেকেই শুরু হয়েছিল বটে। তবে অনেক দূর থেকে শুধু খাবার জল ভরে বয়ে আনা আর সকালবেলা রোজ দায়িত্ব নিয়ে দোকান বাজার করার মধ্যে ফারাক ছিল বৈ কি। আমার টেম্পোরারী প্রোমোশন হল। রোজের বাজার ও মুদিখানা -- সবটাই আমার হাতে এসে পড়ল।

আমি প্রথম বাজারে গেলাম। না ভুল বললাম আমি প্রথম একা বাজারে গেলাম। তার আগে বাবার সাথে মাঝেমধ্যেই বাজারে যেতাম। শিখতাম। কিভাবে দর করতে হয়, পয়সা ফেরত দেওয়ার সময় কিভাবে হিসেব করতে হয়, যোগ বিয়োগের সহজ পদ্ধতি, নামতার প্রয়োগ -- এ সমস্ত ওই বাজার থেকেই শেখা।  কোন ডাক্তারের বা শিক্ষকের আমাদের সমাজের কি কি বিরাট সম্মান তা আমি বাবার সঙ্গে বাজারে গিয়ে বুঝতে পারতাম। 


সমস্ত সমস্ত শিশু-কিশোররাই মনে মনে চায় বড় হয়ে তারা তাদের বাবা-মা মায়ের মত হবে। আজকাল আমরা ও-টি-টি তে হামেশাই যে রকম পিতা-মাতা-সন্তান জটিলতা দেখি, তার সাথে আমাদের সময়ে ব্যাপারটা আলাদা রকমের ছিল।  সন্তানরা তাদের বাবা বা মা মায়ের প্রতি এরকম মনে মনে ঘেন্না পুষে রেখে ঘুরে বেড়াত না। আর তারা বাবা-মা বা গুরুজনদের সাথে কথায় কথায় ওরকম কিলোদরে ইংরেজী 'ফ'-যুক্ত শব্দ ব্যবহার করত না। রাগ কি হত না? আলবাৎ হত! সে রাগ থাকলেও তা গভীর হওয়ার আগেই বাবা-মায়ের স্নেহের স্রোতে,  ভালোবাসার টানে কোথায় যেন তলিয়ে উধাও হয়ে যেত। রাগ পুষে রাখার সুযোগ হত না। সারা জীবন ধরে পিতৃ বা মাতৃঘৃণার জের বয়ে নিয়ে চলার দায় ছিল না। 


আমাদের বাবা মায়েরা যেভাবে আমাদের প্রজন্মকে বড় করেছেন তার থেকে সময় অনেকটাই বদলে গেছে বলে আমাদের অনেক কিছুর সাথেই আজকালকার সময়ের সাথে মিল খোঁজাটা বাতুলতা বৈ আর কিছু নয়। তবে কিছু কিছু বিষয় সত্যিই মেনে নিতে বেশ কষ্ট হয়, যখন দেখি মূল্যবোধের এক বিরাট দেওয়াল দুটো প্রজন্মের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে পড়ে | সেই দেয়ালের এপার এবং ওপারে ভালো-খারাপের নিক্তিটা সামাজিকভাবে খুবই আপেক্ষিক।

সেই প্রথম যে একা বাজারে যাওয়া শুরু করলাম তারপর থেকে বাবা সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠার পরেও মাঝেমধ্যেই বায়না করে বাজারে যেতাম। ভালো লাগতো যেতে | ওই যে বললাম নিজের মধ্যে একটা প্রাপ্তবয়স্ক -মনস্কতা কাজ করতো, বাজার গেলেই। দায়িত্ব যেমন অনেকেই নিতে চায় না। ঠিক উল্টোদিকে আমি বোধহয় দায়িত্বটা নিতে চাইতাম | কারণ বুঝেছিলাম যে বাজার দোকান করার মধ্যেই বড় হওয়ার আসল রহস্যটা লুকিয়ে আছে।


বেলুড় বাজারে কি আর এমন পাওয়া যাবে! অন্য দশটা বাজারের মতো - মাছ মাংস সবজি মুদিখানা মুড়ি বাতাসা চানাচুর - এইসব নিয়েই আমাদের বেলুড় বাজার।  সেই বাজারে সব ছোট ছোট ব্যবসায়ী। যে যার ক্ষেতের জিনিস নিয়ে এসেছে বা নিজেদের পুকুর থেকে মাছ | চালানি বরফের মাছের চল খুব একটা ছিল না। সবই জ্যান্ত মাছের কারবার | চালানি বরফের  মাছ শুধুমাত্র নিমন্ত্রণ বাড়িতেই হত।  খানিকটা বড় মাছ নিলে কয়েকটা পমফ্রেট, অল্প চিংড়ি কাঁকড়া মৌরলা পুঁটি এসব আমরা অল্প হলেও ফ্রি-তে ই কপালে জুটত |


কোনো দোকানদারকে আজকালকার মত নিক্তি মেপে ওজন করতে বা বেশি দাম চাইতে দেখি নি।  এখন দুটো লঙ্কা কোন সবজিওয়ালা প্রাণ ভরে নিজের থেকে দেয় না, বাগিয়ে নিতে হয়। একসময়ে যে জিনিসগুলো আমরা বাজারে  উদ্বৃত্ত হিসেবে পড়ে থাকতে দেখেছি এবং যে সব দোকানদারেরা আমাদের বিনামূল্যে দিতেন, সে সব আজ অগ্নিমূল্য |  


দরের দিক থেকে সে উন্মুক্ত বাজারে আমরা  আজ আন্তর্জাতিক|  আর বাকি সব ক্ষেত্রেই আমরা একটুও যে এগোইনি তা অরিন্দম চৈতালিদের বর্তমান কর্মস্থল ও বাসস্থান দুবাই এর বাজারে গিয়ে বুঝতে পারলাম।

দুবাইয়ের শপিং মলগুলির সবক'টিই দর্শনীয় স্থান এবং সেইসব বাজারের প্রত্যেকটির র‍্যাঙ্কিং রয়েছে |  বাজারের কোয়ালিটি ও র‍্যাঙ্ক অনুযায়ী একই জিনিসের দাম সেগুলিতে বেশি বা কম হয়। তবে এইটুকুই বলা যায় ওখানে আলাদা করে দোকান বলে কোনো বস্তু খুব একটা চোখে পড়ে না। সব থেকে ছোট দোকানও একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। হাইপার মার্কেট হলে তো কথাই নেই! সেখানে নেই, এমন কোন জিনিস নেই | আমার ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি কলকাতার নিউ মার্কেট নাকি পৃথিবী--বিখ্যাত একটি মার্কেট; চাইলে সেখানে বাঘের গোঁফের লোমও পাওয়া যেতে পারে। দুবাইয়ের হাইপার মার্কেট গুলো অনেকটা সেরকম, কি নেই সেখানে !


অরিন্দম প্রথমে একদিন আমাকে ফাঁকতালে একটা লোকাল মার্কেটে নিয়ে গিয়েছিল, এটিএম থেকে টাকা তুলতে। সেই মার্কেটই এমন চটকদার যে তা বলে বোঝানো যাবে না। অরিন্দম আমাকে বলেছিল

এ কি দেখছিস? চল, তোকে একদিন লুলু মার্কেটে ঘুরিয়ে নিয়ে আসব | 

লুলু মার্কেট -- নামটাই কেমন একটা 'লোলুপ' লোভের উদ্রেক ঘটায়, অবচেতনে।  গত কয়েক দিনে লুলু মার্কেটের পাশ দিয়ে অনেকবার যাতায়াত করেছি। মাথার  ওপরের ছাউনিটা অনেকটা এরোপ্লেনের মতো তার পেটের ভেতরে কি আছে সেটা দেখার জন্য উৎসাহ বেড়েই চলেছিল। 

পরের দিন যেদিন আমাদের বিশেষ কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ছিল না। সেদিন আমাদের গন্তব্য হলো লুলু মার্কেট।


লুলু মার্কেটে গিয়ে তো চক্ষু পুরো চড়কগাছ। কি বিশাল রে ভাই! কি সাংঘাতিক ব্যাপার-স্যাপার! যে ভাবে মাছ-মাংস সবজি-পাতি বিক্রি হচ্ছে, তা আমি জীবনে কোনদিন দেখিনি। তরমুজের  যে  ওরকম সাইজ হতে পারে তা শুধুমাত্র ছোট বেলায় অমর-চিত্র-কথা সিরিজে জাতকের গল্পে ছবিতে দেখেছিলাম। ডাব কেটে তার মুখে স্ট্র লাগিয়ে সেই অবস্থায় রীতিমতো সিল ও প্যাকেজিং করে বিক্রি করা যায় সেটাও প্রথম দেখলাম |

ইংরেজিতে দুটো ব্যাপারের পার্থক্য আমার মাথায় আজও ঢোকেনি:  

একটা হচ্ছে ‘ম্যাল’ আর ‘মল’ (ইংরেজী বানান দুটি ক্ষেত্রেই ‘mall’) – এদের পার্থক্য কি! আর দ্বিতীয় হচ্ছে লাইন আর লেমন এই দুটোরই বা পার্থক্য কি! কোনো সহৃদয় ব্যক্তি এই বিষয়ে জ্ঞাত থাকলে আমাকে জানাবেন প্লিজ | কথাটা এইজন্য মাথায় এলো যে হচ্ছে আমি একটি শপিংমলে লাইম আর লেমনের পাহাড়ের  সামনে দাঁড়িয়ে কনফিউজড হয়ে যাচ্ছিলাম |  কারণ শপিং মল বলতে আমার সর্বোচ্চ দৌড় পার্ক সার্কাসের Quest Mall.

মাছ মাংস কাটাকাটির কথায় যাচ্ছি না। অভিনব ব্যবস্থা। তবে সেই সমস্ত মাছের ভান্ডারে আমাদের সামনে একটা আড়াই ফুটের হাঙর যেভাবে মৃত অবস্থাতেও আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিল তাতে আমার খুব ছোটবেলায় দেখা বিখ্যাত ইংরেজি সিনেমা Jaws এর পোষ্টারের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল | আর মাংস-র যে কত রকমারী তা না দেখলে বিশ্বাস হয় না। মোরগ বা পাঁঠার অ্যানাটমী সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা তৈরী করার জন্য যথেষ্ট। ওদের শরীরের অত্গুলো অংশ যে আছে আর সে সব যে আমরা খাই, তা এতদিন না জেনেই যে খেয়ে এসেছি, তা স্পষ্ট হল। 


প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস কেনার ছিল ঠিকই | সেসবের বাইরে আমরা আবার এই মার্কেটে আসার সময় পাবো কিনা সেটা বুঝতে পারছিলাম না | তাই খেজুরের বিপুল ভান্ডার থেকে বিভিন্ন রকমের খেজুর কিনে নেওয়া হল |  আর কেনা হলো ওই দেশের স্পেশাল মিষ্টি 'বাখলাভা' | 

অরিন্দম যতদিন দেশে ছিল ততদিন যতবারই আমরা একসাথে বাজারে গিয়েছি, ততবারই আমরা একসাথে লাঞ্চ বা ডিনার বা দুটোই করেছি, সে আমাদের কারোর বাড়িতেই হোক বা কোন রেস্তোরাঁয়। ওখানে, মানে বিদেশে ওদের বাড়িটা এত সুন্দর যে আমাদের আর রেস্তোরাঁয় বসে কিছু খাওয়ার ইচ্ছেই হল না | আমাদেরকে চয়েস দেওয়া হয়েছিল কিন্তু আমরা সবাই বললাম, বাড়িতে বসে হাত-পা ছড়িয়ে গল্প করতে করতে টিভি দেখতে দেখতে আমরা একসাথে ডিনারের মজাই আলাদা। এখন, ডিনারে কি খাওয়া হবে - ওখানকার একটা স্পেশালিটি আর সেটা নাকি আবার আমার নেমসেক! -- 'আরিয়াস' |  সে কি বস্তু আমরা আর জিজ্ঞাসা করলাম না, কারণ এমন এক মহান খাদ্য সম্পর্কে যদি আগে থেকে জেনে ফেলি যে কি জিনিস তাহলে তার রহস্যটাই মাটি |  তারপর টেবিল ভর্তি করে যখন খাবার সাজানো হল তখন দেখলাম আরিয়াস হল আমাদের এখানকার ফুল লোডেড মোগলাই পরোটারই আরেক জাতভাই |  অনুষঙ্গে ছিল অনেক রকমের চাটনি এবং সস | বহু প্রকারের কাবাব আর ছিল ওখানকার স্পেশালিটি চর্বি গলিয়ে তৈরি করা 'হামাস'। আর সঙ্গে স্প্রাইট মিশ্রিত সেই বিখ্যাত ড্রিংক– লাবান |


এটা জাস্ট পাঠকদের একটা ধারনা দেওয়ার জন্য বলা |  কিন্তু এই যে আমি বর্ণ্নাটা দিচ্ছি, আমি কিন্তু সত্যিই আরিয়াস নামক খাবারটিকে মিস করছি | 

মনে পড়ে গেল আবার,  ছোটবেলার কথা | বছরে একবার শুধু পুজোর বাজার করতে যাওয়ার সময় আমাদের রেস্তোরাঁতে খাওয়ার সুযোগ হতো। সেই উত্তেজনাটাই অকল্পনীয় |  খাবার এমন কিছু নয়, পারিজাত সিনেমার ঠিক আগে, সুইমিং পুলের গায়ে একটি ছোট্ট রেস্টুরেন্ট - স্টার | অসাধারণ ফিস-ফ্রাই তৈরি করত |  তার সাথে থাকতো এক অদ্ভুত সুস্বাদু কাসুন্দি আর কুচো মিক্সড স্যালাড | তার জন্য যে আনন্দ তৈরী হত মনের মধ্যে, সে বড় মধুর।


ভবিষ্যতে বড় হওয়ার সাথে সাথে অনেকবার অনেক জায়গায় বাজার করলাম |  অনেক ঘুরলাম | অনেক খেলাম | কিন্তু স্টার রেস্তোরাঁতে ওই ফিস ফ্রাইয়ের স্বাদ আজ পর্যন্ত এক অনির্বচনীয় মহিমায় উদ্ভাসিত | পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ফিস ফ্রাই দিলেও ওটার কাছাকাছি হবে বলে এই জীবনে আর মনে হয় না |  ঠিক সেই রকম ভাবেই এই জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ পরোটাও ওই অরিন্দম চৈতালির খাওয়ানো আরিয়াসের স্মৃতিতেই আজীবন আলিঙ্গন করে থাকবে |  এরপর আর যে যতই পরোটা খাওয়াক না কেন, আরিয়াসকে ছাপিয়ে কোন পরোটার স্মৃতি আর মনের মধ্যে এরকম চিরকালীন দাগ রেখে যাবে না।

ভেবেই জিভের গোড়াটা কেমন সুড়সুড় করছে |  দুধের স্বাদ আপাতত ঘোলেই  মেটাই | আমাদের বাড়ি থেকে একটু দূরেই এক দাদা বৌদি খুব যত্ন করে চিকেন মোগলাই পরোটা বানিয়ে দেন।  ওনাদের সেভাবে নাম ডাক নেই। তবে হলফ করে বলতে পারি যে বর্তমানে ধর্মতলার বিখ্যাত অনাদি কেবিন যা মোগলাই বানায় তাকে দাদা-বৌদি যে কোনো দিন যে কোনো সময়ে দাঁড়িযে দাঁড়িয়ে পাঁচ গোল দিয়ে দেবে। 

তাই এখন দাদা বৌদির মোগলাই-ই আমার স্বপ্নের নেমসেক খাদ্যাভিরুচি মেটাক!

কিন্তু যেটা অনেক চেষ্টা করেও এখন পাব না, তা হল সেদিনের খাওয়ার শেষে মিষ্টিমুখে ছোটুর নিজে হাতে বানানো চিজ-কেক। সেটা কেমন ছিল, তা বর্ণনা করার মত ভাষার ওপর দখল আমার নেই। 

(চলবে)


Tuesday, 9 January 2024

স্কিৎসোফ্রেনিক ঢ্যাঁড়স

সকাল বেলা উঠে বাজার যাব, তা বেরিয়েই দেখি, একটা হৈ হৈ কাণ্ড, রৈ রৈ ব্যপার! আমরা যে ফ্ল্যাটে থাকি তার নিচে একটা পায়রার গলা ব্লেড দিয়ে কেটে কে যেন ফেলে দিয়েছে। স্বাভাবিক যে, এরপরে একটা আতঙ্কের পরিবেশ চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে। সবাই ভয়ের চোটে গুম মেরে যে যার কাজে চলে গেল বটে কিন্তু মাথা থেকে কিছুতেই ব্যাপারটা গেল না। পায়রার গলা কেটে ফেলে দেওয়া যে সে ব্যাপার নয়। এরকম ঘটনা তো আর স্বাভাবিক নয়, বা মুখোরোচক-ও নয়, যে বেশ তারিয়ে তারিয়ে ঘোঁটবাজি করে উপভোগ করা যাবে। পায়রা তো আর মুরগি বা পাঁঠা নয় যে গলা কেটে তার মাংস ছাড়িয়ে খেয়ে নেবে! রীতিমতো নৃশংস ভাবে প্ল্যান করে তাকে হত্যা করা হয়েছে এবং এখানে শুধুমাত্র একটা তুচ্ছ পায়রার প্রাণই গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এর পিছনে লুকিয়ে থাকা যে মনস্তাত্ত্বিক বিকৃতি কাজ করেছে , সেটা। কারণ এই কাজ কোনো সুস্থ মানসিকতার লক্ষণ নয় এবং এই ধরনের বিকৃতির অভিঘাত যে কার উপর কখন এসে পড়বে তা দেবা না জানন্তি!


প্রাচীন গ্রীসে শুনেছি এরকম পায়রার গলা কেটে লোকে দেবতাকে উৎসর্গ করতেন এবং সেই স্যাক্রিফাইসে তুষ্ট হয়ে দেবতা সেই ব্যক্তির ইচ্ছা বাস্তবে রূপান্তরিত করতেন। সে সব ইচ্ছা-পূরণের বলিদান রাজা-রাজড়া ও সমাজের উচ্চশ্রেণির মানুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। রাজপুরোহিতরা রাজাকে বা অন্য যে কোনো ক্ষমতাশালী ব্যক্তিকে বলতেন, দেবতার কাছে বলি সমর্পণ করতে, নিজের ইচ্ছাপুরণের উদ্দেশ্যে। তার প্রমাণ হোমার রেখেছেন, ট্রয়ের যুদ্ধের গল্পে -- সেখানে দেখা যায় অ্যাগামেম্নন কিন্তু যুদ্ধ জয়ের উদ্দেশ্যে শুধুমাত্র পায়রা বলি দিয়ে দেবতার মন পান নি। তিনি ট্রয়ের যুদ্ধ যাত্রাকালে দেব্তা আর্তেমিসের বাহন একটি মৃগকে নিহত করে তাঁর রোষানলে পড়েন। আর্তেমিসের অভিশাপে তিনি প্রায় হারতে বসেছিলেন এবং তাঁর সেনার বিরাট ক্ষয় ঘটে চলেছিল। তখন পুরোহিত এসে অ্যাগামেম্ননকে বলেন যে শুধু পায়রায় কাজ হবে না। কোন মানববলি দেওয়াই হচ্ছে এর একমাত্র সমাধান | দেবতা আর্তেমিস স্বয়ং নাকি দিব্যদৃষ্টিতে পুরোহিতের মাধ্যমে অ্যাগামেম্মনকে আদেশ দিয়েছেন যে যদি অ্যাগমেম্নন তাঁর নিজের কিশোরী কন্যা ঈফিজেনিয়া-কে দেবতার প্রতি বলি উৎসর্গ করেন, তাহলেই একমাত্র ট্রয় যুদ্ধে তাঁর পক্ষের জয় নিশ্চিত। যুদ্ধ জয়ের মোহে অন্ধ অ্যাগামেম্নন তা-ই করেছিলেন। ফুলের মত সরল-নিষ্পাপ কিশোরী কন্যা ঈফিজেনিয়াকে মিথ্যে কথা বলে ডেকে, তাকে ঠকিয়ে, দেবতাকে উৎসর্গ করবেন বলে তার গলার নলি চিরে তাকে হত্যা করেন। পায়রার গলা কাটা দেখে আমার সেদিন বারবার সেই ঘটনার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল -- যে আমরা অন্ধ মোহের বশে কি সব করে বসি!

তবে এই সমস্যার মূল উদ্ধার করতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি। কারণ যাঁরা এটা করছিলেন তাঁরা মানসিকভাবে এতটাই অসুস্থ যে এইসব ব্যাপারে রাখ-ঢাকের কোন দিক তাঁদের মধ্যে কাজ করে না। মানে মানসিক বিকৃতি অপরাধ প্রবণ ছিল না। অদ্ভুত ভাবে তাঁদের ফ্ল্যাটের সব কাচের জানলা কোন পর্দা নয়, ভিতর থেকে খবরের কাগজ দিয়ে ঢাকা থাকতো। একদম আঠা দিয়ে আটকানো, যাতে কোন আলো সেখানে প্রবেশ না করে। অনেক হস্টেলে আমরা এরকম দেখেছি, কিন্তু সেখানে কাচের বদলে কাগজ। এরকম গল্প কিন্তু বিভিন্ন বিদেশী অ্যাপোক্যালিপ্টিক ছবিতে আমরা পেয়েছি ৷ যেমন শেষ ভাল এরকম সিনেমা দেখেছি-- Bird Box.

বাস্তবে যখন সেই পরিবারটিকে আইডেন্টিফাই করা হলো আর দেখা গেল যে সেখানে এর পিছনে এক দম্পতি, তাঁরা বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধা, বয়স, প্রায় সত্তরের কাছাকাছি -- তারাই এই ঘটনাটা ঘটিয়ে চলেছেন, সবাই স্তম্ভিত। তাঁরা যেভাবে এই নৃশংস কাজটা করেছেন তা নিয়ে তাদের কোনো রকম দূরভীসন্ধি বা আক্ষেপ কোনটাই নেই। তাঁরা একেবারেই নির্লিপ্ত।

ওনাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে প্রথমেই যেটা হলো সেটা বেশ মজার ব্যাপার। উনি আমাদের মধ্যে আমাদেরই এক বন্ধু কান্তিময়ের স্ত্রী, সুকন্যা-কে বেছে নিয়ে হঠাৎ বললেন,
- এই যে মাগী! তোমার সাহস তো কম নয়, আমি যখন চান করতে গিয়েছিলাম, তখন তুমি আমার বাড়িতে এসে আমার ফ্রিজ থেকে যত ভালো ঢেঁড়স গুলো সব নিয়ে গিয়ে আবার তার বদলে পাকা আর পচা ঢেঁড়স গুলো রেখে দিয়ে চলে গেছো? ভালোই চালাচ্ছো, হ্যাঁ? এভাবেই বাজার দোকান চলে নাকি তোমার বাড়িতে?

সুকন্যা তো অবাক। বাকরুদ্ধ। এরকম ঘটনা যে ঘটতে পারে তার কল্পনার বাইরে। সে একজন স্কুল শিক্ষিকা। শেষে কিনা ঢ্যাঁড়স-চোর! কোনো উচ্চগ্রামে প্রতিবাদ না করে যতটা বিনীত সংযত ভাবে সম্ভব নিজের বিস্ময় প্রকাশ করতে গিয়ে সুকন্যা যা শুনল, তা সত্যিই আমাদের সবার কল্পনার অতীত:

-- আমি আপনার বাড়ি থেকে ঢ্যাঁড়স চুরি করতে যাব কেন, মাসীমা?
-- আরে হ্যাঁ হ্যাঁ জানা আছে....ওসব.... শুধু ঢেঁড়স কেন, উচ্ছে, বেগুন, পটল, মুলো, কিছুই তো বাদ দাও না, বাপু! নিজের পচাগুলো আমাকে গছিয়ে দিয়ে ভালো গুলো রোজ নিয়ে চলে যাও। গতর খরচা করে বাজার করি আমরা, আর তার ফল ভোগ করো তুমি আর তোমার ওই গুষ্টি ৷
-- আপনি এসব কি বলছেন!!!
-- উঃ ... ঢং....কি বলছি ?কেন? তোমার পাশে দাঁড়ানো তোমার ঐ শিবঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করো না....!!!
-- ও কি জানে এসবের?
-- আ হা হা হা গো...ধোয়া তুলসী পাতা!!! ও কি জানে এসবের!!! পিরীত দেখে আর বাঁচি না! শোনো, তুমি যদি চলো ডালে ডালে, তোমার পাশে দাঁড়ানো ওই ডাকাতটা.... ও চলে পাতায় পাতায়...

কান্তিময় অবাক হয়ে জানতে চাইল,
-- কেন মাসীমা, আমি আবার কি করলাম?
-- করোনি? বাব্বা... তোমাকে আমার খুব ভয়...
-- কেন মাসীমা আমাকে ভয় পাওয়ার মত কি এমন কাজ আমি করেছি?
-- আর সাধু সেজ না বাপু!!! তুমি যা করেছো তাতে আমার রাতের ঘুম উড়ে গেছে। তুমি যে কোনদিন আমাদের সর্বস্বান্ত করে দিতে পারো। উরিব্বাস, ভাবা যায় না! তারপর দিন থেকে আমরা খাব কি, সেই নিয়ে আমি খুব দুশ্চিন্তায় আছি।

নিরীহ গোবেচারা কান্তিময় বামপন্থী বটে। কিন্তু অত টাও উগ্র নয় যে সে ফিউডালিজমের চক্করে নিরীহ দুজন সত্তরোর্ধ দম্পতিকে শ্রেণিশত্রু বলে চিহ্নিত করে ধনে-প্রাণে সাবাড় করে দেবে। বেশ বিরক্ত হয়ে কান্তিময় বলল,
-- মাসীমা,আপনি বাজে বকা বন্ধ করুন। আপনার মাথায় কিছু গোলমাল হয়েছে। সোডিয়াম পটাশিয়ামের ব্যালেন্সটা একবার চেক করার দরকার। চলুন, ডাক্তার দেখিয়ে আসবেন আমার সাথে। গাড়িটা বের করছি। আর মেসোমশাই কেউ বলুন রেডি হয়ে থাকতে। ওনাকেও একবার দেখিয়ে নেওয়া যাবে, একসঙ্গে।
-- ওলাউটো তোর হয়েছে রে ড্যাকরা! শোনো হে, আমরা কেউই তোমার সাথে যাবো না, আর তোমাকে আমরা বিশ্বাসও করিনা....
-- আরে মাসীমা আমি করলামটা কি সেটা তো বলবেন, যে এটুকু বিশ্বাস-ও করা যাচ্ছে না!
প্রত্যুত্তরে রীতিমতো বাজ পড়লো। এটা যে কেউ করতে পারে এটা আমরা স্বপ্নেও কোনদিন ভাবতে পারিনি।

মাসিমা হঠাৎ আমার দিকে ধীরে এসে চোখ ছোট ছোট করে বললেন,

-- জান ও কি করেছে? আমার তো ভাবলেই শুধু প্রেসার বেড়ে গিয়ে বুক ধড়ফড় করে!
আমিও অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,
- কি এমন করেছে কান্তিময় যে আপনি এরকম এটা-সেটা ভেবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন? যে কস্মিনকালে কোনদিন কারো ক্ষতি করেছে বলে তো আমাদের জানা নেই, সে আপনাদের সাথে কি এমন করল?
- তুমি জানো ও কি করেছে?
- না... জানি না, তাই জন্যই তো জানতে চাইছি...
- আরে ও তো একটা ডাকাত ... ওর সঙ্গে মিশ না, আর বিশ্বাস-ও কোরো না... সব লুঠে নিয়ে চলে যাবে...
- মানে?
- মানে??? মানে আর কি, শোনো তবে.... আমি আর তোমাদের মেশোমশাই যখন ঘুমিয়ে পড়ি, তখন মাঝরাতে ওই তোমার বন্ধু, আমাদের আলমারির লকার খুলে পাস বই নিয়ে যায়।
- কি নিয়ে যায়?
- ব্যাংকের পাস বই গো!!! তারপর আবার সেই গুলোকে আপডেট করে পরের দিন আমরা ঘুমিয়ে পড়লে যথাস্থানে ফেরত রেখে দেয়।
আমার তলপেটে মোচড় দিচ্ছিল, হাসি চাপতে গিয়ে না, অন্য কিছুর বেগ বশতঃ, ঠাওর করতে পারছিলাম না। ঠিক বিশ্বাস করতে পারলাম না, যা স্বকর্ণে শুনলাম। বুঝতেও পারলাম না যে উনি কি বলতে চাইছেন ৷ তাই আবার জিজ্ঞাসা করলাম।
- মানে আপনি বলছেন যে কান্তিময় আপনাদের আলমারির লকার খুলে ব্যাঙ্কের পাস বই বের করে নিয়ে সেগুলোকে ব্যাঙ্কে গিয়ে আপডেট করে আবার আপনাদের লকারে ফেরত রেখে দেয়।
- ঐ যে...বাহ! এই এতক্ষণে তোমার মাথায় ঢুকেছে দেখছি। একদম ঠিক ধরেছ....
- তাহলে তো কান্তিময় তো ভালো কাজই করছে। আপনারা দুজন বয়স্ক লোক, পাশবই আপডেট করে দেয়, এ তো ভাল কাজ, এর মধ্যে খারাপ কি দেখলেন যে সে জন্য আপনি সেই ভাবে রাতে ঘুমাতে পারছেন না?
- আরে মাথামোটা, এমনি এমনি কি আর আপডেট করে? উদ্দেশ্য আছে.... আমাদের যাবতীয় যা কিছু পুঁজিসম্বল, সব হাতাতে চায়.... আমরা কি ভেবেছো অত বোকা যে ওর ফন্দি-সন্দী বুঝি না?
আমি খুব উৎসুক হয়ে ওনাকে বললাম যে
- আচ্ছা, পাস বইগুলো একবার দেখতে পারি?
- হ্যাঁ নিশ্চয়ই, দাঁড়াও দেখাচ্ছি....

মিনিট দুয়েক পরে উৎসাহী জনতাকে উসকে দিয়ে দুটো পাশ-বই এল। এক্কেবারে তলার দিকের বাসি লুচির সাথে সেই দুটোর বিশেষ কোনো পার্থক্য আছে বলে আমার মনে হলো না। চারিদিকে উৎসুক দর্শক, আমারই বন্ধু-বান্ধব, প্রতিবেশী, তারা ঝুঁকে হুমড়ি খেয়ে পড়্ল, দেখার জন্য। মনে মনে হয়তো অনেকে নিরীহ গোবেচারা তালপাতার সেপাই কান্তিময়কে একজন দুর্ধর্ষ চম্বলের ডাকাত হিসেবে কল্পনা করতে আরম্ভ করেছে। পাশ বই যখন আমার হাতে এলো তখন আমায় ঘিরে প্রায় চোদ্দ-পনেরোটা মাথা ৷ পুরানো ভঙ্গুর পান্ডুলিপি যেভাবে খোলে আমি অতি সাবধানে সেই পাশ-বই দুটির শেষ ছাপানো পাতা পর্যন্ত গিয়ে দেখলাম যে তাতে ব্যালেন্স পড়ে আছে একটিতে দুহাজার তিপ্পান্ন টাকা আর এ আরেকটিতে এগারো হাজার টাকা সাতাশ পয়সা।

আমি তখন বাধ্য হয়েই বৃদ্ধাকে বললাম যে
-- মাসীমা আপনি অত চিন্তা করবেন না। আপনাদের পাশ-বইয়ে এরকম কিছু নেই যা নিয়ে আমার বন্ধুটি বা তার স্ত্রী খুব বড়লোক হয়ে উঠবে ৷
- কেন? কত টাকা আছে দেখছো?
আমি যখন ওনাকে আমার দেখা টাকার অংক গুলো বললাম তখন উনি বললেন,
- এত বড় ধেড়ে একজন লোক একটা পাশ বই পর্যন্ত পড়তে পারে না। ওরে ওগুলো হাজার নয় ওগুলো লক্ষ। একটা নাকি কুড়ি লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা আর একটা এগারো লক্ষ সাতাশ হাজার টাকা ৷

আমরা আর বিশেষ কথা বাড়ালাম না। বুঝলাম সবাই, উনি খুবই অসুস্থ। তাই জন্য কোনক্রমে কাটিয়ে চলে এলাম। মন টা বেশ খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু কিছু করার নেই। একটা মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলাম সবাই। যিনি এরকম ডেল্যুশনে ভুগছেন, সেখানে পাড়ার শিশুরা যারা নিত্য সকাল-বিকেল খেলাধুলা করে, তারা নিরাপদ নয়। বৃদ্ধ্-দম্পতির চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত করা হল। ছোটদের বাবা-মায়েরা যেন তাদের উপর নজর রাখেন, কারণ কে বলতে পারে যে ওই সমস্ত শিশুদের কোনদিন না ওই ভদ্রলোক-ভদ্রমহিলা তাঁদের মোহাচ্ছন্ন কল্পনার জগতে পায়রা বলে ভেবে বসেন।

ওনাদের প্রবাসী সন্তান-সন্ততিদের খবরও দেয়া হল। তাঁরা সমস্যার গুরুত্ব বুঝে খুব অল্প সময়ের মধ্যে তাঁদের বাবা-মাকে এখান থেকে স্থানান্তরিত করেন এবং সেই ফ্ল্যাট অনতিবিলম্বে বিক্রি করে দেন।

সবাই বেশ হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেও গলাকাটা পায়রার স্মৃতি আমাকে এখনো তাড়া করে বেড়ায়। আর মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখি যে আমাদের প্রিয় কান্তিময় সলমন খানের মত চেহারা নিয়ে অ্যাকিলেস-কে দ্বন্দ্বযুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। অ্যাকিলেস ভয়ে সিঁটিয়ে পালানোর চেষ্টা করছে। ঠিক তখন কান্তিময় ওর মুখে থাকা জ্বলন্ত বিড়ি-টা দিয়ে একটা চ্কোলেট বোম ধরিয়ে সোজা অ্যাকিলেসের গোড়ালি লক্ষ্য করে ছুঁড়ে দিতেই
সেটা ফেটে বেরিয়ে আসছে লাস্যময়ী এক নারী। ধোঁয়া কেটে বেরিয়ে আসতে সেই অপ্সরা-রূপিনী দৃশ্যমানা হলেন -- কান্তিময়ের স্ত্রী সুকন্যা, হাতে একটা ঢ্যাঁড়স।

***A survey revelas that alomost one in every three hundred persons are suffering from SCHIZOPHRENIA, globally. It is about 0.32% of the total global population.

Thursday, 4 January 2024

ভিস্টা ডোমে বুলবুলি


Statutory warning:
****এই গল্পটি কাল্পনিক ও অ্যাডাল্ট ৷ নাম ও ঘটনার সঙ্গে কোনো চরিত্র ও বাস্তবের কোনো মিল থাকলে তা নেহাতই কাক-তালীয় (এই শব্দটিও কোনো বিশেষ নামের ইঙ্গিতবাহী নয়) |
-----------
বুলবুলির বয়স পঞ্চাশের কাছে ৷ বয়সের সাথে শরীরের ওজন বেড়েছে ৷ বেড়েছে পায়ের সমস্যা৷ চলা ফেরায় বেশ সমস্যা - উঁচু নিচু জায়গা, সিড়ি, রেললাইন পার হওয়া, পাথুরে রাস্তা বা মেঠো উঁচুনিচু জমি দিয়ে হাঁটা- এসব কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া জয় করার শেষ পর্যায়ের মত মনে হয়। স্বামী গৌতম জমিদারি ও মিলিটারী মেজাজের কম্বিনেশনে রসিক লোক ৷ পৃথিবীর সমস্ত ব্যাধি দু পেগ সিঙ্গল মলট সেবনে নিরাময় হতে পারে বলে বিশ্বাস করে সকলের ওপর ওই টোটকা প্রয়োগে সদা উদ্যোগী ৷ সেই প্রাইমারী থেকে দুজনে একসাথে ৷ গৌতম তাই সর্বক্ষণ স্ত্রী কে দুরছাই করে বটে, কিন্তু ভালবাসার শিকড় খুব গভীর ৷
আমরা এদের বন্ধুবান্ধবদের দল | প্রতিবেশিও বটে ৷ বুলবুলির সারল্য সর্বজনবিদিত এবং ওর কথাবার্তার ধরণ নিয়ে নিছক মজাও সর্বজনীন, এবং বুলবুলি- গৌতম এতটাই উদার মনের যে এইসব কিছু নিয়ে নিছক ঠাট্টা-ইয়ার্কিতে রেগে যাওয়া তো দূর, উল্টে ইন্ধন প্রশ্রয় ও জোগান তিনটেই দিয়ে থাক ৷ ফলে নির্ভেজাল মজা সকলের কাছেই উপভোগ্য হয়ে দাঁড়ায় ৷
সকাল বেলাতে আমরা সেদিন ভিস্টা ডোম কোচে চেপে চালসা থেকে রাজা ভাত খাওয়া স্টেশন অব্দি যাত্রা করলাম ৷ চালসা থেকেই দুজনের নিও ক্লাসিক হিউমর পুষ্ট চলচ্চিত্রের সংলাপের শুরু ৷ গৌতমের রাজকীয় চালচলনের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য উত্তেজিত হয়ে পড়লে ওর বাক্যবাণ ব্রজবুলি সমৃদ্ধ হয়ে আরও ধারালো হয়ে ওঠে ৷ বুলবুলি রেললাইন পেরোতে বেশ ভয় পায় ৷ নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে যুক্তিগত ভাবে সচেতন- পড়ে গেলে অঘটন ঘটতে পারে, তখন বেড়াতে আসটাই মাটি৷ কিন্তু গৌতম ঠিক সেই মুহূর্তে ওর হাত ধরে ওকে ইউসেন বোল্টের মত ফিট করে দিতে প্রত্যাশী হল। গৌতমকে ভীষণ বকে আমি বুলবুলিকে গ্ল্যাটফর্ম অব্দি পৌঁছে দিলাম। ট্রেন আসতে প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা বেশ যুক্তিযুক্ত হওয়ায় উঠতে খুব একটা বেগ পেতে হল না।
আড়াই ঘন্টার ট্রেন জার্নি - গভীর জঙ্গলের বুক চিরে ৷ এক কথায় নয়নাভিরাম ৷ এক অনন্য অভিজ্ঞতা ৷ কিন্তু সেই আনন্দের মধ্যেই মনে পড়ে যাচ্ছিল রেল লাইনে পড়ে থাকা নিরীহ বাঘ হাতি সাপের ক্ষতবিক্ষত দেহের ছবি - ওদের জল খেতে যাওযার পথে, ওদের চরাচরে সভ্যতার ব্যাপ্তির স্বার্থে আমরা রেলপথ বানিয়েছি ৷ আমাদের নিছক আনন্দ ওদের কাছে উপদ্রব ৷ ওরা আমাদের চায় না। আমরা ওদের নিশ্চিন্তে থাকতে দিই না - আত্মরক্ষার জন্য ওদের আক্রমণকে আমরা হিংস্রতা বলে চিহ্নিত করি। এই সব ভাবতে ভাবতে আমরা পৌঁছে গেলাম গন্তব্য স্টেশন রাজা ভাত খাওয়ায় ৷
সবাই নেমে যাওয়ার পরে আমি পুরো কামরাটা চেক করছিলাম কেউ কিছু ফেলে যাচ্ছি কি না। তারপর কামরার দরজার সামনে এক দৃশ্য-
আমাদের মেজদা মানে নয়নদা আমাদের মধ্যে বয়ঃজ্যেষ্ঠ ৷ বুলবুলি কামরা থেকে নামতে পারছে না দেখে সাহায্যের বানী বাড়িয়ে দিচ্ছেন ৷ বুলবুলি ঠিক কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। নামার আগে গৌতম কেটে পড়েছে - ওর ছোটবাইরে যাওযার ছিল, তাই কামরার টয়লেটে ঢুকছিল ৷ বুলবুলি বলল
- আর সময় পেলে না!
- লোকে কখন ছোটবাইরে যাবে সেটাও তোমার পছন্দমত সময়ে হতে হবে নাকি? নিজের চরকায় তেল দাও ৷
এই বলে গৌতম সমাহিত হলেন।
নয়নদা চিৎকার করে বলে চলেছেন
- সামনের দিকে মুখ ফিরে নামতে পারবে না ৷ পিছন ঘুরে নামো ৷ দুপাশের রড ধর৷ তারপর পিছন ঘুরে নামো ৷
আমি সাহায্যের চেষ্টা করার আগে সমস্যা দেখতে গেলাম ৷ দেখলাম বেশ গভীর সমস্যা৷ কামরার ফুটবোর্ড থেকে প্ল্যাটফর্মের উচ্চতার পার্থক্য প্রায় ফুট দুয়েক | কামরা থেকে নামার মইএর মত সিঁড়ির চারটিই দৃশ্যমান ৷ আর বুলবুলি কিছুতেই ৯০ ডিগ্রি কোণ করে থাকা সিঁড়ির ধাপগুলোর একটাও দেখতে পাচ্ছে না।
নয়নদার কথামত পিছন ঘুরে নামার আপ্রাণ চেষ্টা করল বুলবুলি ৷ দুদিকের রড দুহাতে একসঙ্গে ধরার জন্য যতটা স্ট্রেচ করতে হয়, সে তা পারল না।
ততক্ষনে কামরার সামনে বেশ ভিড় ৷ সবাই ই কিছু না কিছু বলছে। অনন্ত বুলবুলির সামনে প্ল্যাটফর্মে দাড়িয়ে - বুলবুলি পড়ে গেলে ক্যাচ করবে বলে। কিছু দূরে একদিকে স্টেশন মাস্টার আর অন্যদিকে রেলের গার্ড সবুজ পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে, বুলবুলির নামার অপেক্ষায়৷ এই ট্রেন লেট হলেও কিছু না, তাঁদের নিস্তরঙ্গ জীবনে একটু প্রানের ছোঁয়া ৷
অবশেষে বুকে অনেক সাহস সঞ্চয় করে, ঠোঁট কামড়ে," বাবা তারকনাথের চরণে সেবা লাগে..... মহাদে এ এ এ ব " বলে বুলবুলি টুক করে এক ঝাঁপ ৷ সেফ ল্যান্ডিং, অনন্তর সাপোর্টের কৃপায় ৷
বুলবুলি এ যাত্রা উদ্ধার হল ৷ কিন্তু বুলবুলির সামনেই অনন্ত নিজের ডানহাতের কনুইএর নিচের অংশটা আমাকে দেখালো ৷ আমি বললাম
- কি হল, লেগেছে নাকি?
- হ্যাঁ লেগেছে... দেখছো না ভিজে...
- মানে?
- বুলবুলির ঘাম... কোথাকার সেটা বলা যাবে না ৷ সাবান জাতীয় কিছু আছে ? ধোব...
বুলবুলি চিৎকার করে উঠল
- আমার ঘাম... এই শীতে আমার ঘাম! মর্কট! দেখো সব শুকনো...তুমি এদিকে এস অনন্ত, শুধু তোমার হাত কেনো পুরো তোমাকেই ধোব... আগাপাশতলা...
- আগা পাশ তলা -সব টা ধোবে? আমি রাজি....
বলেই অনন্ত প্রাণপণ দৌড় লাগালো ৷
বুলবুলি নিচু হয়ে নিজের পায়ের জুতো খুলতে খুলতে অনন্ত পগার পার।

Wednesday, 3 January 2024

কাজলবাবু ও কচিপাঁঠার নলি :

 (একটি মিথ্যা ঘটনা অবলম্বনে)

ইব্রাহিম সেদিন সকালবেলায় নিজের দোকানের তেরপলের খুঁটগুলো লগার মাথায় আটকে ছাউনি করে দোকান দেওয়ার আগে ঘন কুয়াশার মধ্যে দিয়ে চারপাশে দেখার চেষ্টা করল যে কেউ আছে কিনা আশেপাশে। চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। কি যেন মনের মধ্যে একটা খোঁচা!

না না! এর মধ্যে কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, পুলিশি অত্যাচার, পাড়ায় মারপিট, বা অন্য যে কোন রকমের বাজার চলতি সমস্যার কোন সম্পর্ক নেই। কারণ হলো গত সপ্তাহে রোববারে কাজলবাবুর সাথে এক হাত ঝগড়া। কি নিয়ে ? না, কচি পাঁঠার নলি নিয়ে ৷

ইব্রাহিম শান্তিপ্রিয় লোক ৷ প্রতি রবিবার ওই কচি পাঁঠার দোকানটা সকালবেলা খুলে বসে। আজ বলে নয়, বহু বছর আগে থেকেই ৷ রেওয়াজি নয়, কচি পাঁঠার মাংসের দোকান। ঐ কচি পাঁঠার জন্য ইব্রাহিমের বেশ নাম-ডাক আছে, এই অঞ্চলে। প্রত্যেক রবিবার একটা লম্বা লাইন পড়ে যায় বেশ ভোর থেকে। আজ পর্যন্ত ইব্রাহিম চাহিদা অনুযায়ী যোগান দিতে পারে নি। সকাল ন'টা-সাড়ে ন'টার পরে খদ্দের ফিরিয়ে দিতে হয়। ইব্রাহিম তাতেই খুশি। কোনদিন চায়নি যে সে কচি পাঁঠা বিক্রি করে বিরাট বড়লোক হবে।

ইদানিং ইব্রাহিম পড়েছে এক নতুন বিপদে। মাস দুয়েক হল এক ভদ্রলোক তার দোকানে বেশ উৎপাত শুরু করেছেন।প্রত্যেক রবিবার উনি আসেন। প্রায় আড়াই-তিন কেজি মাংস নেন। তাতে ইব্রাহিমের আপত্তি নেই। কিন্তু আপত্তি হল যে ওনার ওই আড়াই-তিন কেজির সমস্তটাই কচি পাঁঠার সামনের রানের নলির অংশ হতে হবে।এতো আচ্ছা ঝামেলা! এখন যদি একটা লোককেই ইব্রাহিম আড়াই তিন কেজি মাংস শুধুমাত্র সামনের রানের নলি থেকে দিয়ে দেয়, তাহলে বাকি খদ্দেররা আর কি পাবে। ইব্রাহিম খদ্দেরদের সবাইকে বেশ তুষ্ট করে চলতে অভ্যস্ত। খানিকটা সামনের রান, দু-এক পিস নলি, খানিকটা গর্দান, খানিকটা পাঁজর, একটু মেটে -- সব মিলিয়ে মিশিয়ে দিব্বি সবাইকে দেয় ৷ সেই নিয়ে কেউ কোনোদিন কোনো অভিযোগও করে নি। উল্টে কদাচিৎ কেউ কোনো বিশেষ অংশের মাংস অনুপাতে বেশি চাইলে তাঁকে অত্যন্ত বিনীত ভাবে ক্ষান্ত করেছে -

- যা দিচ্চি বাবু আবনি শুদু লিয়ে যান। পুরো মালাই চমচম আছে - মুখে দিবেন কি, আর দাঁত লাগবে না... গলে সোজ্জা পেটে চলে যাবে... মালুম ও পাবেন না। আর খরাব হলে নেকস্ট টাইম পয়সা লিব না।

সত্যিই ইব্রাহিমকে কোনোদিন একবারের জন্যও আজ পর্যন্ত কাউকে পয়সা ফিরৎ দিতে হয় নি। ইব্রাহিম যা দেয়, সবাই হাসিমুখে বাড়ি নিয়ে যায়। ওর থেকে মাংস নিয়ে কয়েক দশক যাবত সবাই খুব তুষ্ট। বাড়ির অতিথিদের গর্ব করে অনেকে বলেন,
- খেয়ে দেখ, আমাদের ইব্রাহিমের কচি পাঁঠা! একবার খেলে মুখে লেগে থাকবে, আজীবন্!

সে হেন ইব্রাহিমের এ কি দুর্গতি!

কাজল ঠাকুর, ওনার নাম ৷ ইব্রাহিম জেনেছে ৷ মাস দুয়েক হল ঝিলপারের তেরো তলায় ফ্ল্যাট কিনে এসেছেন ৷ এসেই বিরাট খাদ্যরসিক হিসেবে এলাকায় (বদ) নাম কুড়িয়েছেন ৷ পেটের হজমশক্তির মত এই সব কুকথা তিনি নিমেষে হজম করার ক্ষমতা রাখেন। আর এই হৃদয় এবং পাচনক্ষমতাকে উনি নিজে সর্বসমক্ষে "স্পোর্টসম্যান স্পিরিট" হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন। কথিত আছে কোনো নেমন্তন্ন বাড়িতে ওনার মত আর এক জনেরও এমন 'স্পোর্টসম্যান -স্পিরিট' থাকলে, কেটারার-কে আর লাভের মুখ দেখতে হবে না। ইব্রাহিম খবর পেয়েছে শেষবার কোথায় একটা বেড়াতে গিয়ে এমন রাজকীয় আহার কাজলবাবু করেছেন যে সেই হোটেলের ম্যানেজমেন্ট শেষে ওই ট্যুরের কর্মকর্তাদের ডেকে রোজের খাবারের প্রি-ফিক্সড কোটেশন-রেট বদলাতে বাধ্য হয়েছেন।

সে হেন কাজলবাবু ইব্রাহিমকে থোড়াই কেয়ার করবেন।

তবে ফি-হপ্তা সামনের রানের নলি নিয়ে কথা কাটাকাটি শেষ রবিবারে অকারণে প্রায় হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছল ৷

কাজলবাবু ইব্রাহিম দোকান খুলতেই বললেন,
- দেখ, আজ আমি সবার আগে এসেছি। আমি পাঁঠার যেটা যেটা চাইব তুই দিবি।
- কাজুল সাব , আবনি হর রোজ কেনো এরকম বুলেন - এটা পাসিবল না আছে ৷ সমঝা করুন৷
- কি সমঝাবো বাবা...! আমার লাইন আগে আর আমি তো এক পয়সাও সস্তায় চাইছি না। পুরো ক্যাশে পেমেন্ট ৷ তা তুই দিবি না কেন, নলি?
পিছন থেকে জিমে যাওয়া ঔরঙ্গজেব দাড়ি ওয়ালা একটি তিরিশ বছরের ছেলে প্রায় বচ্চনের মত ব্যারিটোনে টিটকিরি করে বলল -
- কাকু আপনি এক কাজ করুন ৷ গোটা পাঁঠাটাই নিয়ে চলে যান ৷ দেখবেন সবটা থেকেই শুধু নলি বেরোবে ৷
- তুমি কে হে ছোকরা ?
- আমি ? কাষ্টমার ৷ ওই দূরে যে কচিটা ঝুলছে, ওটার সামনের বাঁ দিকের রান ও গর্দান দুটোই আমার ৷
- ধুরঃ পাগলা! আমি সেই ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে লাইনে দাঁডিয়ে! আমি তোমার আগে আছি ৷ তুমি পর্যন্ত পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওগুলো আমার ব্যাগেই ঢুকে যাবে ৷
- তাই নাকি? আমি তো কাল সন্দেবেলা থেকে এই ইঁটটা পেতে গেছি, দেখেন নি?
- ওসব বাজে ফাজলামো আমার সঙ্গে কোরো না হে ছোকরা! ফল ভাল হবে না।
- কেন কি করবেন?
- কি করব দেখবে?
- হ্যাঁ...নিশ্চয়ই দেখব...
- দেখবে?
- আরে দাদা, দেখান না কি দেখাবেন...
সোজা ইব্রাহিমের দিকে ঘুরে গিয়ে বললেন
- ইব্রাহিম, যতগুলো পাঁঠা ঝুলছে, তার সব ক'টার সামনের রানগুলো আমার...কেটে নামাও...
লোকটিও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন৷ তিনি ততোধিক রেগে বললেন,
- ইব্রাহিম দা, ওনাকে একটার সামনের রান তুমি অলরেডি দিয়েছ, আর যদি লাগে, লাইনের শেষে গিয়ে দাঁড়াতে বল।

এ কথাটা সবার বেশ পছন্দ হলেও, কাজল-বাবুর মোটেও পছন্দ হল না, কারণ উনি ভাল করেই জানেন যে, লাইনের শেষে দাঁড়ানো মানে খালি হাতেও ফিরত যেতে হতে পারে। তাই বললেন

- ইব্রাহিম, আমি লাইনে আগে আছি, যা বলছি তাই কর!
- দেখেন বাবু, আবনি একটু সমঝা করুন, এ রোকোম বায়না করলে আমি সব কাস্টমার-কে দেখব কি করে!
- এটা বায়না নয় ৷ আমার অধিকার ৷ আমি ও কাস্টমার...না আমি বিনি পয়সায় কিনছি , না আমি লাইন ভেঙেছি !!
- বাত পয়সা আউর অধিকার কি নহি হ্যায়। ওসুল ভি এক চিজ হোতি হ্যায়, যো কি আপকা সমঝ কে বাহার হ্যায় ৷
- কি বললি !!!! আমার সমঝকে বাহার?... দেখাচ্ছি মজা...সমঝে দিচ্ছি আমি তোকে...
এই বলেই ছুটে গিয়ে সোজা চপারটা হাতে তুলে নিয়ে তাড়া করলেন ইব্রাহিমকে ৷ কাজলবাবুর চোখে তখন খুন চেপে গিয়েছে ৷ শ্রীমান পৃথ্বিরাজ সিনেমায় উৎপল দত্তর উত্তেজিত চোখে রক্ত জমাট বাঁধলে যেমন দেখায়, তেমন তেজস্বী দেখাচ্ছিল ওনাকে।

পাগল ভেবে কি করে বসেন এই ভয়ে লাইনও এক নিমেষে ফাঁকা ৷ তবে কাজলবাবু একলাফে সেই বীরপুরুষের সামনে ৷ সে সবে পাশে রাখা বাইকে চড়ে পালাতে যাবে, কাজলবাবু সাঁ করে চাবিটা বাইকের কি-হোল থেকে খুলে নিয়ে নিজের পকেটে ৷ তারপর কবাডি খেলার মত সামনে দাঁড়িয়ে চপার হাতে বলতে থাকলেন,
- আয় তবে সম্মুখ সমরে!!!!
- দাদা কাজটা কিন্তু ঠিক করছেন না.....
- তোর গর্দান কেটে নিলে তখন কি ঠিক আর কি ভুল, হা হা হা হা!!!!
- আমি পুলিশ ডাকব...
- ডাক... পুলিশ যেন কচিপাঁঠা খায় না!!!
- কি যে বলছেন, আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে...আরে ও দাদা... চপার টা ওভাবে ঘোরাবেন না... খুব ধার কিন্তু... আপনার নিজেরই ক্ষতি হতে পারে...
- মামাদোবাজির জায়গা পাওনি? আমারই ক্ষতি হবে, নাকি? ভীতু ডরপোক আরশোলা টিকটিকি...
বলে কাজলবাবু পুরো ক্যাপ্টেন হ্যাডক স্টাইলে ছুটে আক্রমণ করতে গেলেন ঔরঙ্গজেবকে ৷ সে বাইক থেকে নেমে সটান দৌড় ৷

লোকটিকে ধাওয়া করতে করতে কাজলবাবু নিজেই হোঁচট খেয়ে মুখ থুবড়ে সামনের দিকে পড়লেন ৷ চপারটা ছিটকে রাস্তার মাঝখানে ৷ ইব্রাহিম দেখল এই সুযোগ ৷ সোজা গিয়ে চপারটা তুলে নিয়ে পোঁপাঁ দৌড়! খুন খারাপির থেকে অন্তত: বাঁচল, ব্যাপারটা।

কাজলবাবুও উঠে হাত-পা ঝেড়ে দেখলেন, ময়দান ফাঁকা। ইব্রাহিমের দোকান থেকে ঝুলতে থাকা কচি পাঁঠা দুটো নামিয়ে সামনে দাঁড়ানো একটা টোটোতে চেপে ধাঁ ৷ রোমহর্ষক কচিপাঁঠা-এক্সট্র্যাকশণ্।

ইব্রাহিম পুলিশের কাছে গিয়ে জবাই করা পাঁঠা চুরির ডায়েরী করেছে বটে ৷ কিন্তু এলাকায় খবর আছে যে সেই রোববার রাতে থানায় চড়ুইভাতি হয়েছে -- কচিপাঁঠার ঝোল আর ভাত ৷ আর রান্না না কি করেছিলেন কাজলবাবু স্বয়ং |

তারপর থেকে এখনও অব্দি কাজলবাবুকে আর এলাকায় দেখা যায় নি।

এক সপ্তাহও কাটে নি ৷ এই রোববারে দোকান খুলতে ইব্রাহিমের ভয় তো একটু হবেই ৷ তাই না !

Tuesday, 2 January 2024

Ulyssian 3


Looking at the trivialities, she was busy with the 'mixture' in a paper-cone upside down. She was hungry. Hungry in stomach and body. This hunger kept her philosophical as she intermittently started to weave the webs to trap herself in. Freudian liberation of conflicts, merged with the primordial vices lurking in the theory of 'the survival of the fittest' by Darwin, stirred the animal instincts in her. Her mind was predominated by the symbolism of everything around with sharp sensuous awareness and sexual metaphors. The infamous cantilever bridge, at a distance shaped like her own breasts, joined together the twin cities - one completing her third century, the other one turning septua-cent-genarian. Had the bridge not been there, she thought, would the cities be masculine enough to keep life inclined towards prosperity!!! She felt like the super-symbol of the youth in the tale of these two-cities. 

 

She could see at a distance a man half naked, after his holy bath from the sacred river, was trying to dry his multi-coloured chequered piece of loin in the river breeze. She philosophised, if Shivalinga is a holy thing or not, as amidst street-fresco on the walls of the ghat, in one of the small temples looking on the river she saw a dog sleeping peacefully beside Lord Shiva. Up the strairs she confronted a girl, clearly a school-truant. Her face was full of jollity though she had nothing. She seemed perpetually happy with less of nutrition, purple skin, and dotted face and half-blonde tangled lock of hair as she had nothing to lose excepting the books in her bag.

We all are born with nothing to lose. We all do not die with such bliss. This time between our birth and death, as we all grow up, we are taught to do and feel things so that we are engrieved by an inculcated sense of 'loss'. 

This sense of 'loss', in turn, is our sense of 'belonging'.

সোশ্যাল মিডিয়া ও আমি (As published in Durgotsava Souvenir 2023, HDLRCA)

 

প্রবন্ধ:

আজকাল আমার একটা রোগ হয়েছে, বেশি জানা মানুষদের এড়িয়ে চলি, আর ক্ষমতাবানদের থেকে শত-হস্ত দূরে ৷


আগে ছিলাম ঠিক উল্টোটা -- আজ যাদের থেকে দূরত্ব তৈরী করছি তাদের নিকটে আসার জন্য অনেক চেষ্টা,পরিকল্পনা, কষ্ট --সব করে হয়ত সামান্য কাছে এসে এমন কিছু শিখেছিলাম যা সারাজীবনের পাথেয় হয়ে রয়ে গিয়েছে ৷ আর ক্ষমতাবান মানুষদের কাছ থেকে শিখেছিলাম বিনয়, ক্ষমতাহীন মানুষদের কাছে কিভাবে তা বিন্দুমাত্র প্রদর্শন না করে তাদের কাছে টেনে এনে ক্ষমতাবান করে তোলার শিক্ষা, যার মূলে আছে শিক্ষা ৷

এখন সময় বদলেছে৷ সোশ্যাল মিডিয়ার জের এতই তীব্র, ঝাঁঝালো ও দিশাহীন যে সময়ে সময়ে তা অসহিষ্ণুতার উদ্রেক ঘটায়৷ ওখানে লিখতে লিখতে, বলতে বলতে, দেখাতে দেখাতে, মানুষ এখন নিজের হিতাহিত জ্ঞানশূন্যতা সম্পর্কেও নির্লিপ্ত। Virtual World -lostবাহ্যজ্ঞানলুপ্ত...তাকে আবার আমরা self confidence নামে অভিহিত করে থাকি। সেই আত্মম্ভরিতা এতটাই যে সোজা মিথ্যা বলতে ও প্রচার করতে বাধে না৷ যেমন কালীপূজোর দিন জ্ঞানগর্ভ ফরওয়ার্ড করা পোস্ট পেলাম যে পৃথিবী কাঁপানো Rolling Stones এর লোগো - এক লাস্যময়ীর লোলুপ জিহ্বা (which is an obvious symbolic reflection of sensuous and lustrous boisterousness) যার সঙ্গে ত্রিসীমানায় অন্তত: শক্তির পবিত্র ভক্তিরসের কোনো যোগ নেই। এই অজানা চতুর্থ মাত্রাটি মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়েছে।লক্ষণীয়,  নিজের মস্তিষ্ক্প্রসূত ফ্রাশ্ট্রেশনের বানী একটা পোস্টার বানিয়ে বাজারে ছেড়ে দিচ্ছে এক শ্রেণির মানুষনীচে লেখা থাকছে কোনো মহাপুরুষের নাম, ক্ষেত্রবিশেষে তাঁদের ছবি সমেত। সেসব আবার রক্তবীজের মত ছড়িযে পড়ছে। যারা ছড়াচ্ছে, তাদের জীবনের একটাই লক্ষ্য যে তাদের সে সব ভুয়ো পোস্টে কত লাইক হল! হাজার হাজার হয়! আর যারা ছ্ড়ায়, তারা মনে মনে ভাবে যে মানুষ কি রকম *ণ্ডুতাই আবার লেখে আবার ছ্ড়ায়কারণ *ণ্ডু জনগণ তা-ই চেটেপুটে খায়, আর সোশ্যাল মিডিয়া-তে ঢেকুর তোলে। আটকানোর কেউ নেই তো! বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন স্থানে তারা শুধু আবর্জনার স্তূপ তৈরি করছে, যা সমাজের পক্ষে খুবই ক্ষতিকারকফলে দিনের শেষে যাঁরা সত্যিই সৃষ্টি করতে চান তাঁরা ওই পর্বত্প্রমাণ স্তুপের নিচে অনায়াসে চাপা পড়ে পিষ্ট হচ্ছেনসারা দিন ধরে খারাপ কিছু দেখতে দেখতে মানুষের রুচি ও মূল্যবোধ দুই-ই ক্রমাগত খারাপ থেকে আরো খারাপের দিকে -- নিম্নগামী

সব থেকে মজার কথা হলো যে খারাপটা বলতে বলতে, করতে করতে, এমন জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে যে সে খারাপ থেকে পালাবার কোন পথ নেই আরো মজার কথা হলো এই যে খারাপটাই ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করা হয় কারণ যত খারাপ হবে, তত বেশি মানুষ দেখবে, শুনবে খারাপের বিরুদ্ধে ভালোর অনুপাত চিরকালই কম পৃথিবীতেযদি ১ লক্ষ মানুষ থাকেন তার মধ্যে মাত্র একশো জন ভালো বলে পৃথিবী ভালোভাবে চলে আজকে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সেই ভালো খারাপের অনুপাত একলক্ষে একজনও কিনা সে সন্দেহের অবকাশ রেখে যায় আসলে সমস্যাটা আরো গভীরে আমরা সমাজের যে স্তরে বাস করি আমাদের পারিপার্শ্বিক মানুষগুলোকেও সেই একই স্তরে বলে ভেবে নিই। যেমন একজন শিক্ষিত মানুষ তিনি কি আশা করবেন? - যে তাঁর পারিপার্শ্বিক সমস্ত মানুষ,তাঁরাও শিক্ষিতই হবেন। কিটি পার্টিতে শুনলে তাঁরা অবাক হয়ে যান যে ভারতবর্ষের প্রায় এক্শো পঞ্চাশ কোটি জনগনের মধ্যে  এখনো মাত্র ষাট শতাংশ স্বাক্ষরতাঁরা কবাব-প্ল্যাটার বা সিঙ্গল মল্টে আলোচনা করে অবাক হন যে ভারতবর্ষের ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ মানুষ এখনো সরকারি হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল,আর ৯৫ থেকে ৯৮ শতাংশ মানুষ এখনো পর্যন্ত সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থার উপরনিজেদের বেশিরভাগ-ই কিন্তু ওই সরকরী ব্যবস্থায় মানুষ হয়েছেন

বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে আমাদের দেশ এখনো একশো বছরের স্বাধীনতা ও পার করেনি, কিন্তু পৃথিবীর বৃহত্তম সেকেন্ডারী স্টেট বোর্ড এজুখেশনের মাথা, যিনি গত চোদ্দ বছর ধরে সমস্ত মাধ্যমিক মার্কস শিট আর সার্টিফিকেটে সই করে আসছেন,তিনি বর্তমানে জেলবন্দী।

ভেঙেচুরে তছনছ করে যে অবস্থার সম্মুখে সময় আমাদের দাঁড় করিয়ে দিয়েছে, তাতে অরুণ মুখোপাধ্যায়ের মারীচ সংবাদের একটা ডায়লগ মনে পড়ে যায়,

n  গণতন্ত্র কি,  ওওও গণতান্ত্রিক দেশের মানুষ বেশ ভালই বোঝে....

সোশ্যাল মিডিয়া নিশ্চিত ভাবে এক গণতান্ত্রিক মাধ্যম বটে কিন্তু তার হাত ধরে মানুষ যে স্তরে নামতে শিখে যায় বা শিখছে তার দায় কার?

মূল্যবোধ সমাজবদ্ধ মানব জীবনের পক্ষে খুবই মূল্যবান কিন্তু বিষয়টি যখন সোশ্যাল মিডিয়ার ক্ষেত্রে উঠে আসে তখন সে এক সম্পূর্ণ ভিন্ন সমাজ এবং তার মূল্যবোধ ও ভিন্নকিন্তু সেই ভিন্ন সমজের ভিন্ন  মূল্যবোধ সম্পর্কে সম্পর্কে ধারণা বেশির্ভাগ মানুষের -ই নেই। এই নেট দুনিয়ায় মূল্যবোধের ব্যুত্পত্তি ঘটাতে হলে মানুষকে আরো অনেক সংযত হতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়াকে ঠিক ভাবে হ্যান্ডেল করার জন্য পরিণত শিক্ষার দরকার সোশ্যাল মিডিয়াতে আলাদা করে মূল্যবোধ গঠন করা এবং সেখানে প্রত্যেক নাগরিকের সেই মূল্যবোধকে আত্মস্থ করা -- কঠিন। কিন্তু করতেই হবে, আজ না হয় কাল। তবেই ভবিষ্যতের আমরা একটি সুস্থ উন্নততর সমাজ জীবনকে দেখতে পাবো, কারণ আজকের বাস্তব সমাজ জীবনের বেশ খানিকটা সোশ্যাল মিডিয়া নিয়্ন্ত্রণ করে। organized mediain print and audio visual are mostly in ahands of the competent and very responsible and wise people. কিন্তু আজকের সোশ্যাল মিডিয়া কারোর ধার ধারে না। সোশ্যাল মিডিয়া আমদের প্রত্যেকের জীবনে একটি বড় অংশ অধিকার করে ফেলেছে, আমাদের বেশ অজান্তেইআর সেখানে কারো কোনো দায়িত্ব নেই যে তাকে নিয়ন্ত্রণ করেতাই সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের ঈশ্বর! পরম! চরম! আমদের সবার মনসিক ভাবে ভাল বা খারাপ থাকার কারণ ঐ সোশ্যাল মিডিয়া!


আমি সেই জন্য সমাজ মাধ্যমে থেকে দেখতে থাকি বোঝার চেষ্টা করতে থাকি,যা কিছু আসে,ঘটে। নিজে যে ব্যবহার করি না তা নয়।  নিজে যা কিছু  তৈরি করার চেষ্টা করি, অন্তর থেকে, সেগুলো শেয়ার করতে থাকি কারণ সমাজে থাকতে গেলে, সমাজ কে জানাটা খুবই জরুরী সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে কিন্তু বাঁচা যায় না আবার আমি সেখানে মরাল পুলিশিং-ও করতে পারি না, কারণ, সেটা মানছে কে আর শুনছে কে! যে যার জায়্গায় অনড়। আমরা দেখতেই পাচ্ছি কেউ যদি ন্যায্য কথা বলেন, তার বিরুদ্ধেও বিদ্বেষের এবং বিদ্বেষীদের সংখ্যা নেহাত কম নয়! এমনকি কোন সেন্সিটিভ কথা ভাইরাল হলে প্রাণ-সংশয় পর্যন্ত হতে পারেকারোর কোন কিছুকে যদি সততার সাথে খারাপ বলি, বলি যে আমার পছন্দ হয়নি,  আর তাতেই হয়্ত দেখা গেল্, আমার বিপরীতে কয়েক হাজার লাইক পড়েছেএর ফলে খুব খারাপ সৃষ্টি করা একজন মানুষ ভেবে বসেন যে,আরে এত মানুষ যখন ভালো বলছে, এ ব্যাটা কে রে যে আমাকে খারাপ বলার হিম্মত দেখাচ্ছে! উল্টে আমিই ট্রলড হতে থাকি। এখানে ক্ষমতা দেখিয়ে পেশি ফোলানো খুব সহজ, কারণ, রাস্তায় নেমে মারপিঠ করতে হয় না। তাই যে যত খারাপ কথা বলতে পারবে তার জয় হবে। ঈলন মাস্ক যে মাইক্রো ব্ল্গার ট্যুঈটার্-কে এক্স্ নামে ভূষিত করলেন্, তার কারণ বোধ করি প্রতিদিন কয়েক মিলিয়ন এক্স-রেটেড পোস্টের জের। আর রইল পড়ে ব্যাঙের আধুলী আমাদের প্রাথমিক গণতান্ত্রিক অধিকারের বলে নিজের নিরাপত্তাসারা শহরে সাইবার পুলিশ স্টেশন আছে মাত্র একটি যেখানকার কর্মী-অফিসারদের বেশিরভাগই সাইবার ক্রাইম কাকে বলে বললে বলবে, বিভিন্ন সাইটে অফেন্সিভ ছবি পোস্ট আর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা চুরি যাওয়া (দ্বিতীয়্টায় শুধু কেস হয়্, কোনোদিন কেউ ফিরত পেয়েছে বলে শোনা যায় নি, আর পঞ্চাশ হাজারের কম চুরি গেলে কেউ সেভাবে পাত্তাও দেয় না) আর সাইবার ক্রিমিনাল লয়্যর কতজন আছেন তা গুনতে গেলে হাতের একটা আঙুলের চারটে কর-ও লাগবে বলে মনে হয় না।

তাই সচেতন হয়ে গিয়েছি জ্ঞানী ব্যক্তিদের আজকাল ভয়ই পাই কারণ আজ সবাই জ্ঞানীতাদের বেশিরভাগের কাছ থেকে শেখার কিছু না থাকলেও অযাচিত অপমানটুকু পাওনা হয়ে যায়।

তাই ভয় পাই বলতে, যে,হে কল্কি!  তুমি এসো বা না এস, এতটা গাঁটের কড়ি খরচা করে এমন দশমঅব্তার আমাদের দেখিও না!