Friday, 10 February 2023

তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে

 মা সরস্বতীর যখন ভীষণ অস্তিত্ব সংকট, তখন অভ্যুত্থান ঘটে সেন্ট ভ্যালেনটাইনের ৷ বাসন্তী রঙের অপটু হাতে পরা শাড়ী আর সদ্যস্নাত চুল থেকে টপতে থাকা জলের প্রতিটি ফোঁটায় প্রেমিকের স্বপ্ন কোন এক অজানা টানে কবে ডার্ক চকোলেট গোলাপ - এই সব হয়ে দুর্গাপুজোর থেকেও লম্বা এক একসপ্তাহব্যাপি পালায় রূপান্তরিত হয়েছে ৷ অজান্তেই ৷ ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমীরা হয়ে গিয়েছে রোজ ডে কিস ডে প্রপোজ ডে৷ এবং শেষে সেন্ট ভ্যালেনটাইন নামক সেই সাধু যাঁর সম্পর্কে কেউ ই প্রায় কিছুই জানে না, তাঁর নামে দিবস যাপন - বিশ্ব প্রেম দিবস ৷


সবটা কেমন বদলে গিয়েছে ৷ সময় বদলে গিয়েছে ৷

নিঃশব্দে একান্তে বসে তারা খসতে দেখলেই মনে মনে বলার অবকাশ নেই
- ওকে ভাল রেখ... ওর সব দুঃখ কষ্ট সব আমার হোক!
সেই সময়ে চোখ থাকে মোবাইলের স্ক্রীণে ৷ তারারা খসতেই থাকে ৷ আমরা আর পাত্তা দিই না।
খসতে খসতে প্রশ্ন ওঠে না আর- ওরা খসে গিয়ে কোথায় পড়ে? চাঁদের বুকের মাঝের ক্ষতচিহ্নকে কত রকমের নামে ডাকতে ডাকতে ছেলেভুলোনো গল্পের ছলগুলোও প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে ৷ রূপকথা উপকথার সরল চিন্তন হারিয়ে যায় অযাচিত নিষ্প্রয়োজনীয় দেশোদ্ধারের রাজনৈতিক নামাবলির জটিল চোরা গলিতে ৷

কবিতারা নাকি গ্রামেই ঘোরাফেরা করে ৷ শহরের জঞ্জালে কোনো রোমান্স আছে নাকি - সেখানে শুধু পরকীয়া আর একাকীত্ব ৷ মজার ব্যাপার হল জঞ্জাল আর দারিদ্র্যকে মূলধন হিসেবে খাটিয়ে কত লোক বিত্তবান হয়ে গেল ৷

তবুও শহরে সেভাবে কবিতা নেই, নাকি! কারণ...

বইমেলায় প্রতিভাসের স্টলে দাড়িয়ে বই দেখছি ৷ একটি কিশোর তার বাবাকে বলছে -
এত বড় international book fair এ বেশিরভাগ বাংলা বই কেন? যেখানেই যাই বাংলা বাংলা বাংলা....



আর SBI auditorium এ তখন Barry O Brien বলে চলেছেন অকপটে -
"... Who is an Indian?
If I am not a Bengalee first, I am not an Indian.
If I am not a Gujrati first, I am not an Indian.
If I am not a Marathi first, I am not an Indian.
If I am not a Keralite first, I am not an Indian.
..And so forth because India is the treasureland of all the cultures embedded in it. We must not forget our less individual culture to satisfy the greater one because the lesser ones integrate to make the whole. 
In the same way Anglo Indians are Indians and they have their own independent culture as an integrated part of greater India...If India talks about the freedom of women today, it started with the Anglo Indian Women, first, in this country.

এরপরে চারিদিকে যখন তাকাই খুব insecure লাগে ৷ কিছুদিন আগেই 'umbrella' বানান নিয়ে শিক্ষিত মানুষরা সোশ্যাল মিডিয়াকে মাধ্যম করে যখন শিক্ষাব্যবস্থার তুলোধোনা করছেন, তখন কিন্তু মেয়েটির ব্যক্তিগত জীবন সেই ঘটনাকে ঘিরে কোন অবস্থায় পৌঁছালো কেউ সেখবর রাখেন নি। শিক্ষা ব্যবস্থার সেই যন্ত্রে প্রচুর উচ্চশিক্ষিত মানুষ বাজারে রীতিমতো করে খাচ্ছেন যাঁরা জানেন না যে
Congress কথার প্রকৃত অর্থ কি?
CPI (M) এর বাৎসরিক Congress তাঁদের কাছে তাই ভন্ডামী l কারণ oxymoron কথাটার মানে যে তাঁরা জানবেন সে আশা রাখি না ৷ তবে ভাবখানা কিন্তু তাইই ৷
ঠিক সেভাবে কোনো তৃনমূল - বিজেপি কর্মীকে তাঁর একজন সতীর্থ যদি ফস করে 'কমরেড' বলে বসে...
ঠিক সেভাবে যদি কেউ বলে যে ' হিন্দুত্ববাদ কোনো ধর্ম নয়, সমসাময়িক দর্শনের প্রতিফলন মাত্র... ফলে এই ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার কোনো রীতি নেই ৷ ওটা একটি দেড়েলের মস্তিষ্কপ্রসূত, যিনি পৃথিবীর তাবড় বিজ্ঞানীদের মন জয় করে নিয়েছিলেন এই বলে যে হাওয়া কলের ব্লেডগুলোকে এমন ধারালো বানানো যায় না কি, যাতে সেই ব্লেড আনায়াসে বাতাস থেকে অক্সিজেনকে আলাদা করে কেটে বের করে আনতে পারে '...
সব বিজ্ঞানীরা তখন মনে মনে বাল্লার রাজার বরফি আর মনে মনে বলছেন,
হাঁস ফাঁস ফুসফুস .... মুশ মুশ... দুরমুশ...!!!!

এরকম আরো কত আছে যাঁরা আকাট মূর্খের মত কথা বলে চলেন আর সবাই হাঁ করে শোনে--
কারণ বক্তার ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি আছে ৷ তিনি আজকাল প্রকৃত শিক্ষিতদের আঙুলের ডগায় নাচান বলে দেখান ৷
আসলে নাচতে যাঁরা চান যাঁদের ঝুড়ি ঝুড়ি সার্টিফিকেট থাকলেও মনের মধ্যে শিক্ষার রশ্মি প্রবেশ করেনি, তাঁরা নাচতে চান। আর যাঁরা প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করেছেন তাঁরা এই বালখিল্যপনা থেকে অধরাই থেকেছেন ৷ ফলে ফাঁকা মাঠে খেলা হয় ৷

.
.
.

চারদিকটা এত ভারি বিষয়বস্তুতে ভরে গিয়েছে দেখে
আমি তিনদিন ধরে সারা বইমেলা ঘুরে অনেক ভেবে চিন্তে দুটো বই কিনেছি

১ রবীন্দনাতের... ও না...সরি... মানে বিদ্যাসাগরের 'বন্নপরিচয়'
২. আর মাওবাদীদের লেখা 'ম্যানিফেস্টো অব দা কমুনিসট পাটি'




অনেকগুলো মূল্যবান আলোচনা শুনেছি, ফ্রি তে....আর অনেক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করেছি ৷

অনেক সেলিব্রিটি এখানে এসে তাঁদের 'সাঁঙসক্রিতিক' ভাবে উদ্বেল হৃদয়ের পরিচয় দিতে আসেন ইন্সট্যাগ্রামে হ্যাশট্যাগিয়ে ৷ নন-সেলেব সাধারন মানুষ 'আই লাভ কলকাতা বুক-ফেয়ার' লেখা সেলফি কর্নারে এক ঝলক সেলফি তোলার জন্য গুঁতোগুঁতি করে ৷ পুলিশ বেচারা তাদের সামাল দিতে যেই হুইসিল দেয়, তক্ষুনি পাশের মুক্তমঞ্চে পার্লার-থেকে-নিখুঁত-সেজে-আসা কণ্ঠশিল্পী বেসুরো গলায় গেয়ে ওঠেন -
- নাম নেব মহম্মদের কেটে যাবে ভয় বিপদের....

কোনো মতে পালিয়ে সোজ্জা SBI auditorium -এ

নীলাঞ্জনা ভৌমিক একজন অতি সাধারণ মধ্যবিও পরিবার থেকে উঠে এসে আজ বেশ নামকরা সাংবাদিক ও লেখিকা ৷ ওনার একটি বই সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এবং অবশ্যই ইংরেজীতে ৷ উনি যখন SBI auditorium এ বক্তব্য রাখলেন তখন পুরোটাই ইংরেজিতে বললেন ৷ বাইরে ওনার সঙ্গে মিনিট পাঁচেকের কথোপকথন হল আমার ৷ আমি ভাল ইংরেজী জানি না, তাই পুরোটাই বাংলায় কথা হল ৷ উনি বাংলায় কথা বলার জন্য কোথাও আমাকে অসম্মানের চোখে দেখলেন না ৷ দিব্যি আড্ডা দিলেন ৷ তারপর ভাবলাম এরকম সুন্দর চিন্তাভাবনার মানুষের স্বাক্ষরটা নিয়েই রাখি ৷



আমার কাছে কাগজ নেই... এখন যে ফোনটি ব্যবহার করি সেটি সেকেন্ড হ্যান্ড (ইন্দ্রানী আর ব্যবহার করে না বলে নিয়ে নিয়েছি) হলেও বেশ স্মার্ট - একটি অমূল্য স্টাইলাস আছে ৷ তাই স্টাইলাস-টা স্যাট করে বের করে ফোনের নোটপ্যাডে স্বাক্ষর চাইতেই তিনি চকিত হয়ে বললেন,
- জীবনে এরকম সই প্রথম করব।
তারপর সই করতে করতে একটু ব্যাঙ্গের সুরেই বললেন,
- গোয়িং ডিজিটাল!
আমি স্বীকার করে নিয়েই বললাম,
- শেষ কবে হাতে লিখেছেন বলতে পারেন, কোনো ডক্যুমেন্টে সই করা ছাড়া?
উনিও স্বীকার করে নিয়ে অপ্রস্তুত হেসে বললেন
- মনে নেই জানেন !!!


লেখাটার ল্যাজা মুড়ো নেই - যেন সেই পিরানদেল্লোর সেই নাটকের মত "Six Characters in Search of an Author"
- নান্দীকার, মানে রুদ্রপ্রসাদ সেন সেটিকে বাংলায় রূপান্তরিত করেছেন ৷ নাম - কোথাকার চরিত্র কোথায় রেখেছ ।

মার্চের প্রথমেই মধুসূদন মঞ্চে শো আছে ৷
















No comments: