Thursday, 30 July 2020

বন্ধু হে, কোন সুখে....খুঁজেছি তোমারি দু'চোখে, ক্রান্তি-কে শান্তি-কে...

আমার স্কুলের সব থেকে প্রিয় বন্ধু whats app এ wish করল -- 'Happy Friendship Day'....ধাঁ করে কিছু কথা মনে পড়ে গেল, দুই বন্ধুর মাঝে কত কি না কি ঘটেছিল, বাস্তবের টানা পোড়েন কেমন করে দু জনকে দুই মেরুতে ছিটকে দিল! এক একটা জীবনের ধাপ পেরোলাম। প্রতি ধাপেই একজন করে best friend হতে লাগল। ইংরেজি তে superlative degree-র plural হয় না। তাই আমার জীবনে এক এক ধাপে এক জন করেই ছিল, best friend। ক্রাইসিস অনেক ছিল, কিন্তু ধাপের সংখ্যা আমার মত ছা-পোষা মানুষের খুব কম বলে best friends এর সংখ্যা-ও বেশ কম। হাতে গোনা। ফেসবুক প্রোফাইল এর friends' list কিন্তু বিভ্রান্তিমূলক। ওই সংখ্যা দেখে কিন্তু আমার আসল বন্ধুবর্গ কে judge করা মুশকিলের। আবার এমন একজনও আছেন তিনি আমার খুব কাছের মানুষ কিন্তু ফেসবুকে তাঁকে খোঁজা মানে, খড়ের গাদায় সূঁচ খুঁজে বেড়ানো...পুরো 'ধরি ধরি মনে করি, ধরতে গেলে আর পেলে না' case...মানে facebook দেখে ও সব বোঝা যায় না। হ্যাঁ যা বলছিলাম। এই যে যাঁরা best friends হলেন, তাঁরা কি আমার পরের ধাপে পৌঁছানোর পরেই হাওয়া? না, বরং time test হল। আমি ধন্য হলাম, প্রত্যেকেই আমার পরিবারের এক জন হয়ে উঠলেন খুব নিঃশব্দে। কেউ বেশি কেউ কম রইলেন না। কারণ প্রত্যেকেই আমার কাছে এতই বেশি যে অন্যের সঙ্গে তুলনা করতে যাওয়া বাতুলতা। আমি আজ যা যতটুকুই হয়ে উঠি না কেন, তার সিংহভাগ credit তাঁদের বই কি...বাবা-মা-শিক্ষক এনাদের অনেক দায়বদ্ধতা থাকে। বন্ধুদের থাকে না। অনায়াসে আনন্দ, দুঃখ, হতাশা, প্রত্যাশা সব নিঃসন্দেহে ও নিঃসংকোচে এঁদের ওপর ঢেলে দেওয়া যায়। কখনো মনে হয় নি, কি মনে করবেন তাঁরা, বা তাঁদের কাছে আমি মানুষ হিসেবে সম্মান হারাবো। ভুল করে থাকতেই পারি, মানুষ তো। তাই যারা আমার মধ্যে এক মানবিক বীজ বপন করে খুব সাধারণ স্বাভাবিক মানুষের মত অনুভূতিগুলো দিয়েছেন, বা দিয়ে চলেছেন রোজ, কেউ বলে আর কেউ না বলে, অস্বীকার করার কোনো জায়গাই নেই যে আজও আমি তাঁদের ছাড়া একটি বিরাট শুন্য মাত্র। 
তাই আমার স্কুলের বন্ধুকে লিখলাম, তিনটে দিন আমার কাছে আলাদা করে কোনো মানে রাখে না ১. শিশু দিবস, ২. নারী দিবস আর ৩. বন্ধুত্ব দিবস। যাদের ঘিরে আমার জীবনের প্রতি মুহূর্ত কাটছে, তাদের উদ্দেশ্যে আলাদা করে  দিন বেছে শ্রদ্ধা জানানো আমার কাছে তাদের অপমানের নামান্তর। বাকি অনেক দিন আছে, যা আমাদের ছেলেবেলায় মনে রাখার প্র‍য়োজন ছিল না, আজকাল হয়েছে। যেমন এম. আলি-র মত দুর্ধর্ষ ডিজিটাল কার্টুনিস্ট এর ছবি দেখে জানতে পেরেছিলাম গতকাল এক যোগে  ছিল ব্যাঘ্র দিবস ও বরষা দিবস, মোহনবাগান দিবসের সাথে। অনেক বন্ধুর জন্মদিন এখনো অজানা। ছবি দেখে জানতে পারি। বা নানা রকমের reminder থেকে। যদি ভুলেও যাই, সম্পর্কের সমীকরণে কি খুব ব্যাঘাত ঘটবে! সত্যি মিথ্যে জানি না, আমার কিন্তু মনে হয়নি কোনোদিন ই এতে খুব কিছু যাবে আসবে। আর যদি মনে থেকে বা পড়ে  যায়, আনন্দ করব, খুব। ঠিক যেমন করে এখন লিখছি, খুব আনন্দের সঙ্গে, যে "মিত্রোঁ, (এটা ফরাসী নয়, ভারতীয়  শব্দ, যা বিগত কয়েক বছরে জাতীয় স্তরে উন্নীত হয়েছে) তোমাদের সকলের ভার লাঘব করতে আমার এই লেখা যে, আমাকে আজ - Happy Friendship Day-র গুচ্ছের wish না পাঠালেও তোমরা তোমাদের স্বকীয় মহিমায় প্রতিভাত আমার কাছে এক বিশাল দিগন্ত বিস্তৃত রামধনু....যেখান থেকে আমি নিশ্চিন্তে যখন ইচ্ছে যেদিকে ইচ্ছে শরনিক্ষেপ করতে পারব!!!!"
(স্কুলের বন্ধু সন্দীপ দে কে দিনটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য আলাদা করে দুই খান গালাগালি পরে দিয়ে নেব)

Friday, 24 July 2020

On-অর্গল

কাহারে করিছ মার্জনা,
অযুত যুগ ধরিয়া 
যে শুধু তোমারে খুঁজিছে ভ্রমিয়া?
কোন ধূম্রপটে লুটাইছ মোহ মায়া!
অনন্তের পট আঁকি বসে।
আগমনী গায় পিতৃপুরুষ, 
দেব ও দানবে।
আহুতিতে কেশরাশি,
মুণ্ডিত  হৃদয় আচ্ছাদিত
বিস্মরণের কণা কৃত্তিকে।
অপেক্ষায় মজিছে ইন্দ্রজাল,
ভ্রষ্ট পথিক লুটায় প্রান্তরে।
সন্ধানী রক্তবীজ 
ব্রহ্মাস্ত্রে করিয়া স্বাক্ষর
মুক্তি দিয়াছে তারে।
সাজিয়াছে ভিক্ষুক
তব অর্গল সুরক্ষিত 
মোক্ষলাভের দ্বারে...

Thursday, 23 July 2020

পুনশ্চ

চুপ ছিল কথা সব, ভরে রাখা খামে
কলতলা ভেসে লাল শিরা দিয়ে নামে--
ছাতে ছিল বড়ি, মা'র কাপড়ের ভাঁজে,
শুকতোর কাঁচকলা, মনে পড়ে না যে!
দমে ছিল ঘড়ি এক, উল্টোনো হাত
চশমার ফ্রেমে হাঁকলেই কুপোকাত!
চুল ছিল পাখিবাসা, বিলি মাথা কেটে
ভাই শুধু মাপত সে লম্বা না বেঁটে। 
নখ ছিল তীক্ষ্ণ, ঢাকা নেল পালিশে
গল্পের রাতগুলো একটাই বালিশে। 
ও-ও ছিল খুব ভাল, আঙুলের ফাঁকেতেঃ
মধুচাঁদ উড়ে গেল ক্রাবি আর ফুকেতে।
আর ছিল পোলাপান, ধ্যান-জ্ঞান সব সে,
মোগলাই চেটে খেত ইলিশেতে সরষে।

বান আসে হড়পা, বালিবাঁধ টপকে!!
খোলা বেল্ট  কোমরের,  ঘাড় ধরে মটকে।
নগ্নতা শিহরিত, যন্ত্রণা যোনিতে
জিমখানা প্যাক ভাঁজে, কন্ডোমে শনিতে।
ঘাম দিয়ে রোজ কষে এ দেহের মাংস,
ভাবিনি তো কোনোদিন কালা হবে কংস!
শুষে নেয় ব্যথা সব শীতাতপ যন্ত্র,
আজ আর মাফ কর, ফুরিয়েছে মন্ত্র!
ভাঙা কাচ আয়নার,বড় তার লজ্জা!
কেটেছে শিরায় ধার, পেতে ফুলসজ্জা।
মন চল বাঁচি গে! -- বলেছিল শেষবার,
ক্লান্তির উত্তরঃ বার বার নয় আর।
কথা সব নটে গাছে যাবে দেখ মুড়িয়ে,
ভালবাসা বড় ভাল, গেল প্রাণ জুড়িয়ে!


Wednesday, 22 July 2020

Bloodline

Intravenous 
Just one shot through the vein
Life turns so wild
Flowers bloom again

Intravenous
Just there the father lies
His caudal gland unburnt
Beatitude beautifies

Intravenous
His lustful hunger strikes
On wasteful vessel of
Closing food stall aside

Intravenous
Who is there for him
His sleek  skeletal bust
Breathing for a scream

Intravenous
Steal for one shot more
In nightmaring dreams
Abuse and abhor

Intravenous
A jestful decadence 
Astride a languid  landing
Across  coarse defiance

Intravenous
He's in love with you
Father of him and all
In happiness or woe

Intravenous
Feet are on the clouds
With rings of writhing smoke
Protecting stars about

Intervenom
A snake with its fang
Safe deception beguiled
A cactus in quicksand





Tuesday, 21 July 2020

Necropolis

Dead are the lines 
No war
Only cold
Men women and children
Carry the lamp
When all are sold


Dead are the lines 
No sound
Only wave
Women children and men
Hear the echo
Throng the cave


Dead are the lines
No eye
Only light
Children women and men
Save the grail
Through the night


The lines are all dead
Everything
But the net
Every man child and woman
Gets caught up 
And turns up-set




Monday, 20 July 2020

কাটা-ছড়া

চিৎকার ফুৎকারে
নীল তিমি কালো
সেলফোনে ডলফিন
লেজ নাড়ি চলো
হাত কাটা, কাটা কান
কাঁটা বাছে পুঁটি মাছ
বগলে পুরেছি সোনা
কোরো না গো soft touch
ডাক্তার মোক্তার
রোগ-টা যে ঠিক কি
কাটা পাঁঠা কাঁদে কেন
ঝরে কেন নাকে ঘি
ঝর্ণায় ঝরঝরে
ধোঁয়া ওঠে ঘি-ভাতে
ধূমপান পানমুখে
গিলে করা কাছাতে
জলছাতে বাটিছাঁট
প্যাঁচা ডাকে লক্ষ্মী
গিঠকিরি পুরাতনী
রূপচাঁদ পক্ষী
পাখিকুল মশগুল
দানা দিয়ে পাতা জাল
ভরে দিলে দানা নলে
কপালেতে কঙ্কাল
কালশীটে মার্কশিট
পিঠে বেঁধে কম্বল
রসায়ণ রসাতলে
আমলার অম্বল
আমলকি হরতুকি
গান আর বাজনা
ভূতের রাজার বরে
মুখোশেতে খাজনা
খাজনায় খাঁজ কাটে
স্ট্রিপটিজ মুর্তি
মস্তির ভাঁজে চোখ
কার্দ্যেঁ-র ফুর্তি
আলবাৎ ডালভাত
বিরিয়ানী কাচ্চি
গোমূত্রে ঢাল সুরা
গারনিশে কাগজী
ফুৎকারে চিৎকার
আলো জ্বেলে হল পাপ
মন মাঝি ফাটে খাপে
পঞ্চু-ও বলে 'বাপ'

Saturday, 18 July 2020

চল, রাস্তায় সাজি ট্রামলাইন

-          আমি বাড়ি যাব না কিছুতেই।

-          তোর পায়ে পড়ি, লক্ষ্মী, ভাইটি আমার, চল আমার সঙ্গে! আর কোনোদিন বকবো না  তোকে এরকম করে।

দু- ভাই। একজনের বয়েস বছর বারো আর একজন বছর চোদ্দ্য় পা দিয়েছে বলে মনে হল।

রেসকোর্সের পাশ দিয়ে বাড়ি ফেরার সময়ে হঠাৎ কিছু ছবি তুলতে ইচ্ছে হল, প্রকৃতির রূপ দেখে। নামলাম। যে ট্রামলাইন দিয়ে আগে খিদিরপুরের দিকে ট্রাম যেত, এখন আর যায় না। লাইন-টা পড়ে আছে মরচে ধরে। নিজেদের লুকিয়ে রাখার চেষ্টায় আছে যেন, সদ্য বর্ষায় গজানো ঘাসের আড়ালে। ওদের রূপ দেখে মনে হচ্ছে ভয় পাচ্ছে, যদি সৌন্দর্য্যায়নের জোয়ারে, গতি বৃদ্ধির লক্ষ্যে শহরের মানুষ যদি একদিন এই প্রাচীন ধ্রূপদী ঐতিহ্য কে লুপ্ত করে দেওয়ার চেষ্টা করে! তখন হয়ত ওদের আমার তোলা এই আধমড়া মৃত্যু শয্যার ছবি কোথাও একটা কাজে লেগে যাবে! দুটো লাইনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতে গিয়ে বড্ড ফাঁকা লাগল। সমান্তরাল লাইন দু’টো সেই যে দূরে গিয়ে একটা বিন্দুতে মিশে গিয়েছে, ফ্রেম টাই কেমন একঘেয়ে। একটু দূরে একটা গাধা বাঁধা আছে। কিন্তু সেটাকে টেনে তো আর লাইনের ওপরে তোলা যাবে না। তাই অপেক্ষায় রইলাম কোনো অচেনা পথিকের।

অবশেষে, পাওয়া গেল। একটি ছেলে হেঁটে আসছে। পিছনে আর একজন। সামনের ছেলেটিকে ইশারায় বললাম, লাইনের মাঝখানে দাঁড়াতে। ছবি তুললাম। এগিয়ে গেলাম। দেখালাম ওকে ছবি, কেমন হল।

-          মুছে দিন স্যর।।ছবিটা…

-          কেন কি হয়েছে? আর একবার তুলব? তোমার পছন্দ হয় নি, বুঝি!

-          না…আমি চাই না…কিচ্ছু চাই না…দেখুন না আমার ওপর রাগ করে আমার ভাই কিছুতেই আমার সঙ্গে বাড়ি ফিরতে চাইছে না।

চেয়ে দেখলাম পিছনের ছেলেটা পাশেই রাখা ভাঙা পাইপের ওপর বসে পড়েছে। গেলাম ওর কাছে।

-কি রে কি হয়েছে তোর?

উত্তর পেলাম, যেখান থেকে গল্প শুরু হয়েছিল।

জিজ্ঞেস করলাম,

-          কি করেছ তুমি ওকে?

-          খুব বাজে ভাবে বকে ফেলেছি…বলছি আমি সরি, কিছুতেই শুনছে না।

-          বাড়ি কোথায় তোমাদের? কে কে আছেন বাড়িতে?

-          আমাদের কেউ নেই। বাবা মা-ও নেই। আমার সব কিছু এই ছোটভাই কে ঘিরে। খিদিরপুরে ফ্যান্সি মার্কেটের গায়ে একটা জায়গায় থাকি। ফুটপাতে।

-          সকাল থেকে কিছু খেয়েছ দু’জনে?

-          নাহ!

হাতে ঝোলানো থলি থেকে একটা ছোট প্লাস্টিকের প্যাকেট বের করল। দেখলাম চারটে রসগোল্লা আছে তাতে।

-          কাল যা রোজগার করেছিলাম, তা থেকে যতটুকু বেঁচে ছিল তাই দিয়ে ওর জন্য আর আমার জন্য দু’টো করে রসগোল্লা কিনেছিলাম। দেখুন কিছুতেই খেতেও চাইছে না।

-          এতে তোমাদের পেট ভরে যাবে?

-          হ্যাঁ, রসগোল্লার রস টা রেখে দেব, রাতে ক্ষিদে পেলে একটু মুড়িতে মেখে খেয়ে নেব তখন। ভালই লাগে নোনতা-নোনতা-র সঙ্গে মিষ্টি মিষ্টি। কিন্তু ও কিছুতেই খাচ্ছে না, দেখুন…আমি যে কি করি!!!

আমি ছোট ভাই এর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম।

-          দেখ, তোর দাদা তোকে কত ভালবাসে! কি হয়েছে তোর? কেন এরকম করছিস! খেয়ে নে একটু!

কান্নায় ভেঙে পড়ল ছেলেটি।

-          বাজে ছেলে ও…কাল দোকানের সামনে মোটা মত ভুঁড়িওয়ালা লোকটার সঙ্গে কি সব কথা বলছিল। আমি গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম, ওকে ডেকে আনব বলে। ওরা দু জনে কথা বলেই যাচ্ছে, বলেই যাচ্ছে। তারপর ও আমাকে দেখতে পেল,  ওই লোকটাও। আমাকে ও জিজ্ঞেস করল,

-          কি রে তুই এখানে কি করছিস?

-          তোকে ডাকতে এসেছি, আমার একা একা ভাল লাগে না।

মোটা লোকটা ওকে বলল,

-          এ তো আমাদের সব কথা শুনে ফেলেছে রে।

…বলে আমার কাছে এল আর বলল,

-          আর করবি এরকম?

-          হ্যাঁ করব! কেন? আমার দরকার হলে আমার দাদাকে আমি ডাকতে আসতেই পারি।

শুনেই লোকটা ভীষণ রেগে গিয়ে সকলের সামনে আমাকে রাস্তায় ফেলে মারতে লাগল। আমার গায়ে হাতে পায়ে মেরে দাগ করে দিয়েছে। দেখবে?

জামা তুলে দেখালো। দেখলাম আমি। কালশিটে। সব জায়গায়। একটা পোড়ার দাগ ও আছে হাতে। জিজ্ঞেস করলাম, -- এটা কি করে হল?

-          ভাত রাঁধতে রাঁধতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। হাঁড়ির কানায় ঠেকে গিয়ে হয়েছে। …কিন্তু ওই লোকটা বাজে, আর ও-ও বাজে! একদম বাজে। আমি কিছুতেই যাব না আর ওর সঙ্গে।

-          ওর সঙ্গে না গেলে, তোকে দেখবে কে, খাবি কি?

সপাটে উত্তর এল,

-          আমি একাই যথেষ্ট…চুরি টুরি কিছু একটা করে নেব ঠিক।

বড় ছেলেটি বলে উঠল,

-          আমি ওই মোটা লোকটার সঙ্গে আর কোনো সম্পর্ক রাখব না। তুই দেখিস! একটু খেয়ে নে, আর আমার সঙ্গে চল, প্লিজ! এসব চুরি-টুরি করার কথা কেন বলছিস!

আগুন ঠিকরে বেরোল ছোট ছেলেটির চোখ দিয়ে, যেন ভস্ম-ই করে দেবে বড় ভাই কে।

-          কেন জানিস না তুই?

-          আমি তো কোনোদিন চুরি করি নি।

-          যাচ্ছিলি তো…

বুঝলাম, সবটা। থামিয়ে দিলাম দু জনকেই। বললাম,

-          দাদা যখন ভুল বুঝতে পেরেছে ক্ষমা তো করে দে এবার… দেখ তোর জন্য খায় ও নি সকাল থেকে। এবার তুই খেয়ে নে। আর চুরি করবি, এসব কি কথা! নিজেকে এমন করে তৈরী কর যাতে এসব খারাপ ভাবনা ভাবতে না হয়। নে এবার খেয়ে নে।

বড় ভাই সুযোগ বুঝে প্যাকেট থেকে একটা রসগোল্লা বের করে ওকে খাওয়াতে লাগল। নাকের জলে চোখের জলে মিশিয়ে ছেলেটি গোগ্রাসে গিলতে লাগল খাবার। বুঝলাম, অনেকটা অভিমান আর কান্না জমেছিল। সব বেরিয়ে গিয়েছে।

-          কি রে, ভাল খেতে? জিজ্ঞেস করলাম।

একমুখ হাসি!

-     দেখ আমি তো এখন চলে যাব। আর দেখাও হবে না কোনো দিন। তুই দাদাকে দেখবি, ওর যত্ন নিবি। সঙ্গে শাসন-ও করবি। কি রে, পারবি তো?


আবার একগাল হেসে ঘাড় নাড়ল, যে ও পারবে।

-          যা…এবার বাড়ি যা। কতক্ষণ লাগবে বাড়ি যেতে?

-          কুড়ি পঁচিশ মিনিট।

লক্ষ্য করলাম এতক্ষণে, কারোর পায়ে জুতো নেই।

-          কি রে তোদের পায়ে জুতো নেই কেন?

-          নেই তাই। আমাদের খালি পা-ই ভাল।

কিছু বলতে পারলাম না সেরকম। পকেট থেকে শুধু দু’শোটা টাকা বের করে দু’জনের হাতে দিলাম।

-          আজকের দিন-টা অন্তত ভাল করে কাটা

কোনো কথা না বলে দু’টো উজ্জ্বল মুখ চলতে থাকল আমাকে ফেলে, ট্রাম লাইন ধরে। কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলাম ওদের দিকে। অস্তমিত সূর্যের আলোয় দুই কিশোরের সিল্যুয়েট।

চোখ আর মন এক হল। আমাদের ইস্কুলে যে ছেলেগুলো একবেলা মিড-ডে মিল পেটপুরে খাবে বলে পড়ার নাম করে আসে, তারা সবাই, আর এই দুই ভাই, ট্রামলাইনের ট্র্যাক দুটো ওই দূরে যেখানে  বিন্দুতে গিয়ে মিশেছে, সেখানে এক হয়ে যাবে…

 


Friday, 17 July 2020

হাফ-ডজন লিমেরিক

 (১)
ওল খেলে ধরে গলা, টোল খেলে হাসি
পরিচয় বর্ণ-তে কানকাটা মাসি
থলি বড় ভারি
বাংলা-কে ছাড়ি
চশমার ফাঁকে তেড়ে ইংরেজি কাশি

(২)
ভ্যানের ঘরেতে গ্যোঘের বাসা তুলির ছোপেতে ছবি
কফিহাউস থেকে হয়েছে নিখোঁজ  চিত্রকর ও কবি
মুখেতে মুখোশ সব
দেওয়ালেতে কলরব
ভ্যাকসিন আজও দাড়ির আড়ালে রক্তকরবী রবি

(৩)
সুতোয় সুতোয় প্যাঁচের ধার কাচ গুঁড়োনো মাঞ্জায়
পোস্ত-ভাপা এপার-ওপার লড়ছে কেমন পাঞ্জায়
নদী কাটছে দেশ
চিংড়ি ইলিশ বেশ
বাদাম ভাজা গিলবে না খাবে ভাবছেন খাঁ খাঞ্জা

(৪)
একানড়ে তুমি নাকি নুন দিয়ে খাও কান
পটার জাদুতে হাওয়া বেঙ্গল ও বাগান
ঠাকুমার ঝুলি
(মাঠে) ফুটবল খুলি
খোক্কস এসে শেষে ঘিলু খুলে চেটে খান

(৫)
পুস্তিকা মুখে নিয়ে talk টরে টক্কা
অশ্বডিম্ব চাষ জাপান টু মক্কা
হাতি ডোবে হাঁটুজল
পিঁপড়েরা রসাতল
ফাঁকা মাঠে হবুচাঁদ হাঁকাচ্ছে ছক্কা

(৬)
আমার ছিল বাঁশের বাগান তোমার ছিল উনুন
কয়লা-র ট্রেনে দেখতে যাব 'অগ্নিপথ' বা 'জুনুন'
টিকিট আজকে ফ্রি-তে
তুমি-আমি তাই মিতে
গল্প যদি লিখি তবে ডেকে বলব, 'শুনুন'

Saturday, 11 July 2020

হৃদপিণ্ড

জড়াবো না আর তোমাতে আমাতে 
সত্যি বলছি শোনো
ছেড়ে যেতে আর ক' সেকেন্ড লাগে
তুমিই বরং গোনো
ওই যে দেখো আকাশ কেমন 
কাঁদছে জানলা ধরে
গাছগুলো তো আজও সবুজ
যায় নি এখনো মরে
কাঠাবেড়ালীরা খেলছে ডালে
খাচ্ছে বাদাম ভেঙে
মেঘ তো বল জমতেই পারে
রামধনুতে রেঙে
তোমার চোখে জল জমেছে
শ্রীজাত জয় না শক্তিতে
কোটেশান না হয় থমকালো আজ
তোমার আমার মুক্তিতে
মুছতে মুছতে ভিজেই গেলাম
চিঠিগুলো হল মণ্ড
অসীম আর এক বিন্দু হলাম
ভালবাসাটাই পণ্ড