Friday, 22 May 2020

হোল্ড অন, হোল্ডার

হঠাৎ ফেসবুকে কয়েকটা ছবির সমাহার। সালকিয়া বেনারস রোডের ওপর গাছ ভেঙে পড়ে রাস্তা বন্ধ। যথারীতি জল থৈ থৈ, প্রায় হাঁটুজল। আম্ফানের ভূমিকার কবলে পড়ে বিকেল চারটে নাগাদ, আটকে আম্বুল্যান্স। আমার মানুষ হওয়ার জীবনশৈলীর শিক্ষার পিছনে যে কয়েকজন দারুণ মানুষের হাত আছে, তাদের একজনের ছবি সামনে থেকে, হাসিমুখে। সেই স্মিত হাসি, একইরকম আছে। 
ফ্ল্যাশ-ব্যাকঃ-
মানুষ কালো না জানলে সাদা বোঝে না। তাই কালো কেমন আর তারপর সাদা কে সম্মান জানিয়ে জীবন আঁকড়ে কি ভাবে চলা যায়, সেই পথ চলতে শেখানো এক দমকা হাওয়া ছিল 'হোল্ডার'।

 পাড়ায় আলো নেই তিন দিন হয়ে গেলো। চার বন্ধু মিলে বারোয়ারীতলায় বিড়ি খাচ্ছিলাম। এক কাকীমা পুকুরের জল নিতে এসে স্বগতোক্তি করে চলে গেলেন যে আর পারা যাচ্ছে না। হোল্ডার হঠাৎ বিড়ি ফেলে প্যান্টের পিছন হাত দিয়ে ঝেড়ে বলল "চ' তো দেখি, পথ অবরোধ করি'। ফুচান চিরকালই সাবধান প্রকৃতির একটু ভীতু মানুষ। তোতলাতে তোতলাতে বলল 'কি সব বলছিস, মার ধোর খাবি না কি'! কে কার কথা শোনে, যেমন বলা তেমন কাজ। হোল্ডার আর আমি মিলে উল্টোদিকের অয়েল মিলের গায়ে রাখা একটা ঠেলা নিয়ে রাস্তায় আড়াআড়ি রেখে দিয়ে মুদির দোকানের চাতালে বসে আবার বিড়ি ধরালাম। রাস্তায় যে-ই সেই ঠেলা সরাতে গেল, শুধু চারজনে সমস্বরে তার উদ্দেশ্যে হুঙ্কার-- 'ওই ওই ওই ওই, কে বে!!!' ব্যাস, আবার ময়দান ফাঁকা। ঠ্যালা সরানোর সাহস আর কারো হয় না। কিছুক্ষণের মধ্যে জ্যাম-জট। পাড়ার বড়রা এসে হাল ধরলেন। জনা পঞ্চাশ লোক জমে গেল। কারেন্টের লাইন না সারালে অবরোধ বহাল থাকবে। আমরা চারজনে কিন্তু ওই পঞ্চাশজনের কেউ ছিলাম না। পুলিস এল। বড়রা বললেন সি-ই-এস-সি আসুক আগে তারপর অবরোধ তোলার কথা ভাবা যাবে। অবরোধের জেরে সালকিয়া চৌরাস্তা থমকে গিয়েছে কি না দেখার জন্য আমরা সান্ধ্যকালীন হাঁটা দিলাম। গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ --- পুরো জিলিপির প্যাঁচ। ওই জট ছাড়াতে রাত্তির গড়িয়ে যাবে। হোল্ডার দেখি সোজা কাঁধে তিন-তারা পুলিশের দিকে ধাবমান। গিয়ে বলল, 'স্যার এভাবে কি করে চলবে?' উনি বললেন, 'কি করব!'
- মেরে তুলে দিন না স্যার।
- হ্যাঁ সেই করতে গিয়ে পাবলিকের মার আমরা খাই, না কি।
- আমরা স্যার কতক্ষণ ধরে আটকে আছি!
- সি-ই-এস-সি এসে লাইন ঠিক করার কথা না দিলে আটকেই থাকবে। যাও তো এখান থেকে!
- কিছু করা যাবে না স্যার????!!!!
- আরে **** না রে, কিছু করা যাবে না...যাবি না কি!
হোল্ডার আমাদের দিকে তাকিয়ে চোখ মারল। আমরা ফিরে এলাম। কামিনী ইস্কুল লেনের মোড়ে তখন লোকে লোকারণ্য।  আমরা পাশ কাটিয়ে চলে এলাম। আমাদের হাতে গরম ডালপুরী। বারোয়ারীতলায়  খেতে খেতে হোল্ডার বলল,'আজ মাঝরাতের মধ্যে কারেন্ট চলে আসবে'। 

------
আজ যখন ফেসবুকে ছবিগুলো দেখলাম, সেখানে দেখলাম রাজনৈতিক ভাবাবেগের 'লাইক' আর 'কমেন্ট'- এ ভরে গিয়েছে। একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের যুব নেতা হিসেবে সমিত ঘোষ আজ বিশেষ পরিচিত ও সম্মানীয় ব্যক্তিত্ব। তাই আজ তার সাকরেদরা সমিতের নেতৃত্বে রাস্তায় এই দারুণ ঝড়ে পড়ে থাকা গাছকে হাঁটুজলে ডুবে  সরিয়ে আম্বুল্যান্স যেতে দেওয়ার মত মানবিক কাজকেও রাজনীতির রঙে রাঙিয়ে ভোটব্যাংক সুনিশ্চিত করতে চায়।

....আর আমি ভাবি, যারা রাঙাচ্ছে, তারা সমিতের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সব রঙের ঊর্দ্ধে সেই পরম মানবিক বন্ধু 'হোল্ডার'- কে কতটুকুই বা চেনে আর জানে....!

No comments: