Sunday, 31 May 2020
দাগ
অবসরে...
Saturday, 30 May 2020
ঝাউতলায় ঝঞ্ঝাবাত্: প্রথম পর্ব
জ্যোতির্ময় কে যত বলি, ওরে চুপ কর, শুনতে দে, ও সেই অতনু-র গল্পে যুক্তি খুঁজবেই।
অতনু হল গিয়ে আমাদের ঝাউতলার টেনিদা। এমন সব গল্প আছে
না, ওর ঝুলিতে যে পঁয়তাল্লিশ বছর বয়েসের আশেপাশে পৌঁছানো সবাই কিন্তু মোহিত
হয়ে শোনে। আর সে সব শুধু গল্প-কথা নয়। কি যেন বলে ইংরেজীতে -- ‘বেসড অন র্যিল
স্টোরিজ’।
তবে,সত্যি বলতে কি, অতনু
কে বাদ দিলে আমাদের সকলের সারাবছর ধরে নানান ছুতোয় খাওয়া দাওয়ার অংশটা বাদই চলে
যেত। এই যে পুজোর ক'দিন পাড়ার বেশির ভাগের বাড়িতেই
হাঁড়ি চড়ে না, কোনো বেলাতেই, এর পুরোভাগে অতনু ছাড়া আর কেউ নেই। কার দায় পড়েছে, নবমীর
দিন কয়েক শো লোক পাঁঠার মাংস কব্জি ডুবিয়ে খাবে বলে আর মুখে দিলেই গলে গেল বলে ‘সাধু অতনু’ না বলে ভাববে
যে ‘দু’শো তিরিশ টাকা জন প্রতি, একটু বেশিই
নিয়েছে পুজো কমিটি’ আর সেই জন্য ভোর চারটের সময়ে মাংসর
দোকানে গিয়ে লাইন দিয়ে বেস্ট কোয়ালিটি মাটন কিনে আনবে!
অথবা, আমরা সকলে মিলে একসাথে খাওয়া দাওয়া
করতে ইচ্ছুক, এবং আমাদের মধ্যে কেউ খাওয়াতে ইচ্ছুক – এটা শুনলেই অতনু
আর অসীম সবসময়ে ব্যাগ নিয়ে প্রস্তুত, তাদের দৈনন্দিন জীবনের সব কাজ সেরেও।
আমাদের কোনো কাজই থাকে না, শুধু খাওয়া আর অনাবিল আনন্দ উপভোগ
করা ছাড়া। এরকম মনের মানুষদের বন্ধু হিসেবে পাওয়া আজকালকার সময়ে পরম সৌভাগ্যের।
এ রকম মন আছে বলেই আমরাও এই বয়সে এসেও ঠাট্টা-ইয়ার্কি
করি অতনু কে নিয়ে। ও কিছু মনে করে না, আমরা যখন বারে বারে রসিয়ে, তারিয়ে ওরই বলা গল্পের স্বাদ ওরই সামনে উপভোগ করি।
গতবারে তখন দূর্গাপুজো আসন্ন। বছর পাঁচেক আগের
দূর্গাপুজোর একটা ছবি নিয়ে একদিন রাত্রে ঝাউতলার সবাইকে দেখাচ্ছিলাম। সেবারের
মহাষ্টমীর সকালে তোলা ছবি। আমাদের পাড়ার জনা পনেরো বিভিন্ন বয়েসের ব্যক্তি একসাথে
ধুতি-পাঞ্জাবীতে। এদের সকলের মধ্য একটা বিষয় সাধারণ -- ছবিতে দৃশ্যমান সক্কলের
সেলুনের খরচ নিতান্তই অল্প, কারণ ন'মাসে ছ'মাসে একবার গেলেই চলে, আর কারো কারো একেবারেই নেই।
দাড়ি-গোঁফ কামাতে গেলে আলাদা কথা, কিন্তু মাথার চুলের জন্য
প্রায় কোনো খরচ-ই নেই। ছবিটা দেখে সকলে ‘পাঁচ-বছর-আগে
আর এখন’ -- সেই তুলনামূলক আলোচনায় চলে গেল, প্রত্যেক-কে
ধরে ধরে, সুজয়-দা, বাবলু-দা, সন্দীপন-দা ইত্যাদি ইত্যাদি। সন্দীপন-দা সেবছর ঐ খাতায় সবেই নাম লিখিয়েছেন,
সৌজন্য, পাড়ার লৌহ-মিশ্রিত হার্ড ওয়াটারে
নিয়মিত গোসল। অতনু-ও সৌভাগ্যক্রমে সেই বিশেষ দলভুক্ত। ছবিতে বছর পাঁচেক আগে মাথার
পিছনে খানিকটা ছিল। এবারে দেখা গেল প্রায় নেই বললেই চলে।যেহেতু অতনু তখন সামনে
আড্ডায় উপস্থিত,আর যায় কোথায়!
যথারীতি জ্যোতির্ময়,
-কই, অতনু দেখি?
অতনু ঘাড় ঘুরিয়ে মাথার পিছনের দিকটা জ্যোতির্ময়ের
দিকে বাড়িয়ে হাতে জ্বলন্ত বড় গোল্ডফ্লেকে একটা সুখটান দিয়ে মৃদুমন্দ ধোঁয়া ছাড়তে
ছাড়তে বললঃ
- দেখতে পাবি না, আজই
কেটেছি তো! সাড়ে সাতশো টাকা দিয়ে, পার্ক স্ট্রীট হাবিব'স-এ।
- ও, তাই বল...”রাজবস্ত্র অতি
সূক্ষ্ম”, কেস!
এ হেন উক্তি ও প্রত্যুক্তির পর কি কৌতুহল আর ধরে রাখা
যায়! আমরা সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লাম, কারণ আমাদের দৌড় রাস্তার উল্টোদিকে
তিরিশ টাকার রামবিলাস-দার সেলুন, আমরা কায়দা করে মাঝে মাঝে
যেটাকে ‘স্যালোঁ’ বলে থাকি, কল্পনায় জাতে
উঠব বলে।
ঝাঁপিয়ে পড়ে দেখে আমার আধো-আলো-ছায়ার মায়াতে যা মনে
হল তা হল, আমাদের এই পাড়ার মাঠটা একসময়ে ফ্লাই-অ্যাশে
ভর্তি ছিল। মাটি কিনে এনে যখন সেটাকে একটা সম্পূর্ণ মাঠের রূপ দেওয়া হল, তখন যখন মাঠের এক কোনায় ঘাস গজানো শুরু হয়েছিল। অতনুর হাবিব'স-ফিরৎ-সাড়ে-সাতশো-টাকার চুল অনেকটা সেরকম। মাথার পিছনে চুলের নিচের দিকের
লাইনে একটা হালকা অঙ্কের সেকেন্ড ব্র্যাকেটের পারফেক্ট ভাঁজ আছে, অনেকটা আক্সয়-কুমার স্টাইলে। কিন্তু সামনে-টা মরুভূমি, আনুপম খের। ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে হলে পোস্ট-রিটায়ারমেন্ট বিবাহিত অন্দ্রে
আগাসি।
আবার জ্যোতির্ময়ের বাক্যবান,
- তুই একাই কাটলি, না
কি পুরো ফ্যামিলি তোর সঙ্গে ফ্রি ছিল?
এই ধরণের গা-জ্বালানো মন্তব্য অতনুর গা সওয়া তো হয়েই
গিয়েছে, উলটে ওর লজিক্যাল ডিফেন্স মেকানিজম এতোটাই জোরালো, যে
আমরাও অবাক হয়ে শিখি, প্রত্যেকবার। উত্তর এল,
- না রে ভাই, হেয়ার
ডাই-ও করিয়েছি, ন্যাচারাল বারগান্ডি। রাতে বুঝতে পারবি না।
দিনের আলোয় দেখিস। সঙ্গে জানবি, যাদের মাথায় চুল ভর্তি তাদের
চুলে কাজ করা অনেক সহজ। কোনো সূক্ষ্ম কাজ করতে হয় না। আমার মত চুলে কাজ করা খুব
চাপের। এদিক থেকে ওদিক হলেই ব্যাস! আর কিন্তু মেক আপ দেওয়ার জায়গা নেই।
আমরা জীবনে প্রথম বুঝতে পারলাম, খানিকটা হলেও, যে অতনুর চুল আর কৈলাসের গুহা,
বা খাজুরাহোর পাহাড়ে খুব একটা পার্থক্য নেই। আর চুল কাটা কোনো
চিরকালীন, অমর স্থাপত্য-ভাষ্কর্য শিল্পের থেকে কম নয়। নাপিত
বলে যাদের হেয় করা হয়, তা একেবারেই উচিত নয়। বা বড়জোর তাদের
ক্ষৌরকার বলে যেটুকু সম্মান দেওয়া হয়, তা-ও ঠিক যথেষ্ট নয়।
আর সবথেকে বড় কথা শিল্পী থাকলেই হল না, রসদ তো চাই। হাবিব’স- ই হোক আর যে-ই
হোক সারা বছরে অতনুর মাথার চুলের মত বড় রসদ ক’টাই বা তাদের
কাছে আসে, নিজের ঐ উচ্চমানের শিল্পকর্মকে বিকশিত করার
জন্য!
আমরা অতনুর মাথায় সেই অনবদ্য শিল্পকর্ম চাক্ষুস করার
পর এমন বুঁদ হয়ে গেলাম যে সেদিনের মত ঝাউতলার রাতের আড্ডা শেষ হয়ে গেল। নিজেদেরকে
হঠাৎ খুব খেলো মনে হতে লাগল। মন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠল যে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে এত
শিল্পকর্মের মধ্যে কোথাও একটু ন্যূনতম শরীকও তো হতে পারতাম! জীবনে তেমন করলাম-টা
কি!
অতনু কিন্তু কোনোদিন-ই এই হাসি-তামাশা নিয়ে কিছু মনে
করে নি। তবে কে যে নজর দিল, জানি না! এখন তো আর সেভাবে আড্ডা হয় না।
করোনার প্রকোপে আমাদের আড্ডা-শিল্পও চরম সঙ্কটে। ভিডিও কন-কল যতই থাকুক, ওভাবে কি আর ঝাউতলা হয়!
আবার কবে আমরা যে একজায়গায় জড় হয়ে হাসি-মজা-ঠাট্টা করব, অতনু-অসীমের
নেতৃত্বে পেট পুরে খাব, সেই অপেক্ষায় আছি।
যা আর ফেরত আসবে না তা হল, আমাদের প্রিয় ঐ
ঝাউগাছটি। বারো বছর আগে রোপন করার সময় থেকেই আমাদের সকলকে সে একটা ‘ঝাউতলা’ বলে প্রাকৃতিক
ক্লাব উপহার দিয়েছিল, জীবনের অনেক অক্সিজেন সমেত। আম্ফান/উম্পুন তাকে কেড়ে নিয়েছে, চিরতরে...এখনো মরদেহ পড়ে
আছে তার, ওখানেই। যাতায়াতের সুবিধার্থে তার কিছু
অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে ছেঁটে দেওয়া হয়েছে। শেষকৃত্য কিভাবে করা হবে,
আমরা কেউ-ই জানি না। দেখলেই মন বড় ভারী হয়ে আসে...
তবে একটা কথা সত্যি যে সেই গাছ যতই “ শুষ্কঙ কাষ্ঠ্ঙ
তিষ্ঠতি অগ্রে” বলা হোক না কেন্, আমাদের মন খারাপের থেরাপী কিন্তু অসীম
আর অতনু-র হাতেই... আশা রাখি, ওই গাছও একদিন প্রাণ ফিরে পাবে...
আমাদের কালিদাস তো অতনু-ই: “নীরস তরুবর পুরস ভাগে” – শুকনো কাঠে এ
ভাবেই রসের সঞ্চার হয়্...
যারা আমাদের দেহ্-মনে তরতাজা রেখেছে তাদের প্রতি এই লেখা
উত্সর্গ করলাম্।
(আশা রাখি, নিছক মজা
হিসেবেই সবাই এই মধুর স্মৃতি-রোমন্থন কে গ্রহণ করবেন। আর অতনু-ও কিছু মনে করবে না।
আমি সকলের, বিশেষতঃ অতনু আর জ্যোতির্ময়ের, নাম বদলে অনায়াসে এই গল্প জমিয়ে লিখতে পারতাম, কিন্তু
তাতে গল্পটা থাকত বটে, তার প্রাণ থাকত না। ধন্যবাদ অতনু-কে
আর ঝাউতলার বাকি সবাইকে।)
***এটা লেখার জন্য বিশেষ প্ররোচনায়ঃ অসীম
Saturday, 23 May 2020
Angry Wolf
Smile though your heart is aching...
Friday, 22 May 2020
হোল্ড অন, হোল্ডার
Tuesday, 12 May 2020
'মাস্কবাদী'-আমার চোখে...
সুজনের অভিনয় ভাল। তবে আরো ভাল ওর কম্পোজ করা ভিস্যুয়ালস। স্টেজে এমন এমন আবহ তৈরী করে তা স্বপ্নের মত, মনে হয় যেন এর থেকে ভাল হতে পারত না। 