Tuesday, 25 July 2023

দুদ্ধর্ষ দুবাই - চতুর্থ পর্ব


মিউজিয়াম অফ দ্য ফিউচর থেকে বেরিয়ে সেদিন আমরা প্ল্যান করেছিলাম যে মেট্রোতে চেপে দুবাই মল পর্যন্ত যাব। পাব্লিক ট্রানসপোর্টে একটা অভিজ্ঞতা লাভ করার জন্য। সেখান থেকে বিকেলে আমদের নিয়ে নেবে অরিন্দম-চৈতালী ৷

বাইরে তখন ৪৩ ডিগ্রী সেঃ তাপমাত্রা ৷ হিট যে ড্রাই তা নয়। যথেষ্ট হিউমিড৷ তার সঙ্গে সারাদিনই হালকা বালির ঝড় চলতেই থাকে ৷ ফলে একটা ঝাপসা ফিল্মের মত কিছু থেকেই যায় যা আবহাওয়াকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার হতে দেয় না। তবে তা কখনই তা সূর্যের দাবদাহকে আটকাতে পারে না। ভরসা এই যে সে তাপ চামড়াতে চিড় বিড়ানি জ্বলন সৃষ্টি করে না আর মিউজিয়াম থেকে মেট্রো স্টেশন একটুখানি হাঁটা পথ - এক্সাইডের মোড় থেকে এলগিন রোডের মোড় অব্দি যতটা, মোটামুটি ততটাই ৷ ওখান থেকে দুবাই মল দুটো স্টেশন৷ ড্রাইভারবিহীন ট্রেন ৷ ড্রাইভিং এর সেই প্রথম কেবিনের অভিজ্ঞতা লাভ করতে হলে মাথাপিছু মিনিমাম ভাড়া এমনি ভাড়ার আড়াই গুণ ৷ কলকাতা মেট্রোর নতুন রেকগুলো যেমন সুদৃশ্য , সেরকমই৷ মেট্রোর জার্নি অকল্পনীয় কিছু ছিল না। অকল্পনীয় ছিল মেট্রোর বাইরেটা। তবে মেট্রোর স্পিড ৪০ থেকে ৬০ কি.মি প্রতি ঘন্টা আর পাশের রাস্তায় ভরা শহরে গাড়ি ছুটছে ১২০ কি.মি. প্রতি ঘন্টায় ৷
নানারকম দুবাই স্কাইলাইন দেখতে দেখতে পৌঁছালাম আমরা দুবাই মল স্টেশনে ৷ স্টেশন থেকে দুবাই মলে যেতে খোলা রাস্তায় নামতে হল না। এয়ারকন্ডিশনড স্কাইওয়াক ৷ ধারণার বাইরে ছিল যে এরকম স্কাইওয়াক দিয়েই মিনিট পনেরো টানা হাঁটতে হবে ৷ তবে সেখানেও সুবিধা যে তাড়া না থাকলে হাঁটার প্রয়োজনই নেই। পর পর ওয়কিং বেল্ট ৷ একটা ছেড়ে আবার পরেরটাতে উঠে পড়লেই হল। এরকম মোট পাঁচটা বেল্ট পেরিয়ে দুবাই মলে প্রবেশের পথে এসে পৌঁছালাম ৷
আগেই বলেছি যে ঈদের মরশুম বলে শহরের চারিদিকে মানুষের বেশ ভিড় ৷ প্রবেশের পথেই পর পর ছোট ছোট 'স্যুক ' | 'স্যুক ' মানে যেখানে শপিং-সুখ পাওয়া যায়, অর্থাৎ কিনা 'দোকান' | প্রবেশের পথে থাকা দোকানগুলো দেখে মনে হল যে ওই অংশটা আধুনিক ও সভ্য ধর্মতলার ফুটপাত ৷ অনায়াসে দরদস্তুর করা যায় ৷ ছোটু যেহেতু আমাদের থেকে এই শহর ও তার বাজার সর্ম্পকে বেশ অভিজ্ঞ, আমরা ওর মতামতের ওপর ভরসা করলাম। একটি বুমের বয়সী ছেলে আমাদের তার দোকানে ঢোকাল ৷ তারপর আরবের পারফিউম অফারে ভালই দাম বলল ৷ আমরা আর একটু মার্কেট ঘুরে বুঝে তারপর সবার জন্য কেনাকাটি শুরু করব স্থির করেছিলাম। হাসিমুখে 'না' বলে বেরিয়ে আসব, ইন্দ্রানী একটা যুক্তিযুক্ত কথা বলল (যেমন বেশিরভাগ স্ত্রী রা শপিং-এর সময়ে বলে থাকে)
- পৃথিবীর সবথেকে বড় মলে আবার ঠিক এই জায়গায় পরে ফিরে আসতে কিন্তু বেশ মুশকিল হবে।
ততক্ষণে দোকানের ছেলেটি আবার আমাদের দিকে ফিরে বলে কি না
- হোয়াত হ্যাপেন্দ ... ইউ আর ফ্রোম হোয়্যার?
বুম বলল
- ইন্ডিয়া
- ওওও.... ইন্দিয়াআ... মিস্তার নরেন্দ্র মোদী... ওয়েল আই গিফ ইউ আনাদার ওয়ান...
আমি হেসে হেসে আরো .বার্গেন করতে যাব, তাতে দেখলাম ছোটু বলল এটা ঠিক ঠাক অফার আর ইন্দ্রানীর চোখে আর বার্গেন না করার চক্ষুলজ্জা ৷ ফলে আরও কিছু টোকেন ওই রিসোনেবল দোকান থেকে কিনে নিয়ে এগোলাম ফুড কোর্টের দিকে ৷

সত্যিই দুবাই মল আর হাওড়া জেলা বোধ হয় একই সাইজের ৷ আরও মিনিট দশেক লড়াইএর পর আমরা ফুড কোর্ট এবং অরিন্দম চৈতালীকে খুঁজে পেলাম ৷ ভিড়ের চোটে তিল ধারনের জায়গা নেই। চেয়ার ফাঁকা পেলেই অন্য লোকে টেনে নিয়ে চলে যাওয়ার তালে আছে ৷ আমরা সেখানে সারভাইভ করে বহুদিন ধরে বহুচর্চিত আল বেইক এর নানা রকম খাবার পরখ করে দেখতে লাগলাম ৷ আল বেইক হল গিয়ে ওখানকার কেন্টাকী ফ্রায়েড চিকেন (কে-এফ -সি ) র জাতভাই ৷ সবারই এত খিদে পেয়েছিল যে হুশ করে খাবার উদরস্থ হল। প্রথম একদিনেই বুঝেছিলাম ওখানে পানীয় জল বড্ড দামী৷ তাই আমার কাজ ছিল ভিস্তির ৷ ফ্রিজে ঠাণ্ডা করা তিন চার লিটার জল কাপড়ে মুড়িয়ে রোজ ব্যাকপ্যাকে নিয়ে বেরোতাম ৷ সঙ্গে থাকত ক্যাপ আর সানগ্লাস | শেষের দু'টো র প্রয়োজন সেভাবে না হলেও জলের আইডিয়াটা খুব কাজের বলে প্রমাণিত হয়েছে বারে বারে ৷
ওখান থেকে বেরিয়ে অরিন্দম চৈতালী আমাদের নিয়ে চলল পাম জুমেইরা তে ৷ পাম জুমেইরার তাল গাছের মত আকৃতির ম্যানমেড আইল্যান্ড শুধু এরিয়াল ভিউতেই পাওয়া যায় ৷ গ্রাউণ্ড লেভেল থেকে সেই ভিস্যুয়াল ওয়ান্ডার প্রত্যক্ষ করা অসম্ভব ৷ ফ্লাইট টা দুবাই এয়ারপোর্টে নামার আগে দুবাই ওয়ার্ল্ড ম্যাপ আইল্যান্ডের ওপর দিয়ে উড়ে এসেছিল বলে দেখতে পেয়েছিলাম ৷ কিন্তু পাম জুমেইরা আমরা জানলা দিয়ে দেখতে পাই নি।
পাম জুমেইরা যাওয়ার পথে আমরা গেলাম পৃথিবীর অন্যতম সেভেন স্টার হোটেল আটলান্টিসের পাশ দিয়ে৷ সারা পৃথিবীতে অন্যান্য প্রাইম হোটেল স্বঘোষিত সেভেন স্টার | কিন্তু আটলান্টিস ওসব দাবীর পথে হাঁটে না। এমনিতেই তাকে এই রেটিং দেওয়া হয়েছে। শাহরুখের হ্যাপী নিউ ইয়ারের লোকেশন ছিল এই আটলান্টিস ৷আটলান্টিস পেরিয়ে পড়ল আনডারগ্রাউণ্ড টানেল | আসলে সেটা আন্ডার সি টানেল, মানে সমুদ্রের নীচ দিয়ে চলে যাওয়া টানেল। পাম জুমেইরা ব্যাণ্ড স্ট্র্যান্ড টা ফাঁকাই বলা চলে ৷ জনমনিষ্যি কম । স্ট্র্যান্ডের একপাশে পরপর সুদৃশ্য লালচে বালির রঙের বাংলো আর একদিকে সমুদ্র ৷ আর সূর্যাস্তের আলোয় দূরে দেখা যাচ্ছে Marina স্কাইলাইন |

গল্পে প্রকাশ যে পাম জুমেইরার বাংলোগুলোর বেশির ভাগই বিক্রি হয় নি। ফ্লপ প্রজেক্টের মধ্যে অন্যতম। সূর্য ডোবার পর সত্যিই বাড়িগুলো খুব সুন্দর করে সাজানো সত্ত্বেও কেমন গা ছমছমিয়ে দেয়।
এটা মানতেই হল যে জায়গাটা অত্যন্ত সুন্দর - ফটোগ্রাফি লোকেশন হিসেবে৷ কিন্তু আলোর অভাবে দু-দুটো SLR camera আর ছ'জনের ছ-ছ'টা মোবাইল ক্যামেরা কোনো আলোকছটাই ধরতে পারল না ৷ তাতেই যা যতটুকু পাওয়া যায় তুলে নিয়ে আমরা তালগাছ-দ্বীপের শেষ পাতা ও তার কাণ্ড ধরে বাড়ির পথে যাত্রা করলাম।

অরিন্দম-চৈতালী ওখানে থাকার সুবাদে আমাদের দুবাই শহরের এমন সব জায়গায় নিয়ে গিয়ে ঘুরিয়েছে যেখানে ট্যুরিস্টরা সাধারণত সময়ের অভাবে গিয়ে উঠতে পারেন না। পাম জুমেইরা সবার কাছে প্রাইম স্পট নয় বটে, তবে আট্লান্টিস হোটেল দেখা, সমুদ্রের নীচ দিয়ে চলার সময়ে কান বন্ধ হয়ে যাওয়া, প্রাসদোপম বাংলোর সারির পাশে দাঁড়িয়ে পারস্য উপ সাগরের ভারিনোনা বাতাসে দরদরিয়ে ঘেমে ওঠা -- এ সবের মধ্যে আমরা একটা থ্রিল অনুভব করলাম বটে।

Friday, 21 July 2023

দুদ্ধর্ষ দুবাই:তৃতীয় পর্ব

পরের দিন সকালে ওঠার কোনো তাড়া নেই ৷ ওখানকার সময় সাড়ে আটটায় হেলতে দুলতে উঠলাম ৷ রান্নাঘরের পাশ দিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকার পথেই সুবাসে আধা সম্মোহিত হয়ে গেলাম - রাঁধুনী রত্নাকর নামে দক্ষিণ ভারতীয় এক ব্যক্তি কি একটা রেঁধেছে৷ ওর হাতে জাদু আছে। সেইই আমাদের প্রাত:রাশ বানিয়ে খাওয়ালো ৷ পেট ভরে খেয়েদেয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম যে সেদিন কি প্ল্যান | আইটেনারারী অরিন্দম - চৈতালীর ৷ যেদিন থেকে আমরা ওখানে যাব বলে স্থির হয়েছিল, সেদিন থেকে প্রতিদিনের প্রত্যেক বেলার প্ল্যান ওরাই করে রেখেছে ৷ কোনো বেলা যেন নষ্ট না হয়। আর তার মাঝখানে মাঝখানে হেভি ট্র্যাভেলের পরদিন একবেলা পুরোপুরি রেস্ট ৷


সেদিনের লিস্টে ছিল 'দ্য মিউজিয়াম অফ ফিউচর' দর্শণ ৷


অনলাইনে অরিন্দম টিকিট কেটেই রেখেছিল। তাই পৌঁছানোর পর গিয়ে টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে আর কাটতে হল না। কাউন্টারে মোবাইলে টিকিটের QR Code স্ক্যান করে রিস্ট ব্যান্ড দিয়ে দিল প্রত্যেককে ৷ অরিন্দম আর চৈতালী গেল না। কথা হল ওদের সঙ্গে আবার বিকেলবেলায় আমরা দেখা করব দুবাই মলে ।

ভেতরে কি আছে তার আগে বলে রাখা দরকার যে পুরো শহরের রাস্তাঘাট চোখ ধাঁধানো। আকাশচুম্বী ইমারতগুলোর প্রত্যেকটির একটি পৃথক আর্কিটেকচারাল বিশেষত্ব আছে । সেই বিশেষত্বের মধ্যে আছে শিল্পবোধ । দৃশ্যত সেগুলো এতটাই সুন্দর যে মনের মধ্যে ছাপ ফেলে যায়। আমরা কলকাতার স্কাইলাইনে একটা ফর্টি টু বানিয়েছি, তাতেই গল্পের শেষ নেই ৷ আর সেখানে, ওই দেশে মরুভূমির বুকে কত শত যে ফর্টি টু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তার ইয়ত্তা নেই। অরিন্দম-চৈতালী- ছোটুরা যে পাড়ায় থাকে তার পাশের পাড়াতেই একটা বাড়ি নজর কেড়েছিল - বাড়িটা পাতাসমেত একটা গোটা আনারসের মত আকৃতির। কি অদ্ভূত!


ঠিক সেরকমই অদ্ভূত লাগল যখন একটা লম্বাটে শোয়ানো ডিমের আকৃতির অট্টালিকার পাশে এসে নামলাম আমরা চারজন, ছোটু বুম ইন্দ্রানী আর আমি । বাড়িটার পেটটা আবার ফাঁকা - যেন একটা মোটা থেকে সরু হয়ে যাওয়া নলকে কেউ ওভাল শেপ - এ এনে জুড়ে দিয়েছে ৷ স্টীল কালারের বিল্ডিংটার সারা গায়ে অজস্র নকশা। লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে ওগুলো সব আরবী অক্ষর । আমরা ভিতরে প্রবেশ করে বুঝতে পারলাম যে ওই অক্ষরগুলোই আসলে স্কাইলাইট বা জানলা ৷ বাড়িটা ৭৭ মিটার উঁচু ৷ ফেঙ শ্যুই আদলে তৈরী স্ট্রাকচারে কোনো পিলার নেই। আছে শুধু ইন্টারসেক্টিং বিমস৷

আমরা রিস্টব্যাণ্ড স্ক্যান করে প্রবেশ করলাম ভবিষ্যতে ... 2071 সালে পৃথিবী কেমন হবে, দুবাই শহর কেমন হবে! একটা ভার্চুয়াল স্পেস ক্রাফটে উঠে পাড়ি দিলাম ৷ জনা পঁচিশেক যাত্রী ৷ পৃথিবী ছেড়ে সাতশ' কিলোমিটার উচ্চতায় মহাকাশে গিয়ে আবার ফিরৎ এলাম ৷

যে ভার্চুয়াল স্পেসক্রাফ্ট - এ আমরা উঠেছিলাম ওটা আসলে একটা বিশাল লিফট ৷

স্পেসক্রাফটের ছুতোয় আমাদের বিল্ডিঙের একদম ওপরে, পাঁচতলায় নিয়ে গিয়ে ছেড়ে দিল। প্রত্যেকটা দরজা খুললেই একজন করে গাইড ৷ দেখলাম ও জানলাম সেখানে নানারকমের ভবিষ্যতের কল্পনায় তৈরী করা বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি আছে ৷ বেশিরভাগটাই জাগতিক ভূগোল ও প্রকৃতি বিজ্ঞানের সঙ্গে যুক্ত ৷ বারংবার ফিরে এসেছে যে প্রকৃতিরক্ষা, বন্যপ্রাণী ও উদ্ভিদের রক্ষার স্বার্থে বিজ্ঞানের ব্যবহারই একমাত্র মানুষের অস্তিত্ব ও প্রগতিকে ধরে রাখতে পারে ৷ স্যাম্পেল হিসেবে দেখানো হয়েছে আমাজন কে ৷

এই আলোচনা সাপেক্ষে উল্লেখ্য যে দুবাই এর রাজা লক্ষ্যস্থির করেছেন যে দুবাই এমিরেটকে আগামী পনেরো বছরের মধ্যে এমন গাছগাছালীতে ঢেকে দেওয়া হবে যে সেখানে মরুভূমি বলে আর কিছু থাকবে না।

আমাদের দেশে যখন মানুষ সভ্যতার বিস্তারের উদ্দেশ্যে জলাজঙ্গল উজাড় করে দিয়ে বোকা কালিদাস হতে ব্যস্ত, তখন অন্যদিকে মরুভূমিকে সবুজ করার উদ্যোগ নিচ্ছে মানুষ ৷ বলা বাহুল্য যে ভারতে যমুনা নদীকে নর্দমায় পরিনত করার ফল ভোগ করছে রাজধানী ৷ বিপাশাকে নষ্ট করার ফল পাঞ্জাব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে ৷ লঙ্কা ৩০০ টাকা কেজি, টমেটো, ১০০  টাকা | আগামী কয়েক মাসে সারা উত্তর ভারত টের পাবে নিজেদের কালিদাসিপনার ৷ এই তো সবে শুরু ; কলকাতা ও তার আশেপাশে পুকুর জলাশয় বুজিয়ে দেওয়া, গঙ্গা নদীর পলিউশন রিপোর্ট, প্রজেক্ট, পেপার পাবলিশ ও পাবলিক না হতে দেওয়ার পাপ আমরা যা ভুগব তার একশো গুণ বেশি ভুগবে আমাদের সন্তানসন্ততিরা৷ নেতারা শুধু ইনসটাগ্রামে চারাগাছ পুঁতবেন আর থানাতে পার্টি অফিসে ফোন করে প্রমোটারীর জন্য তাদের অতিবৃদ্ধপিতামহের বয়সী বট-অশ্বত্থ-পলাশ কেটে সাবাড় করার নির্দেশ দেবেন। কিন্তু তাও ভোট পাবেন, জিতবেন ৷ ঔদ্ধত্যের অন্ধত্বে সম্মোহিত অবস্থায় গাছ ও মানুষ একই ভাবে কাটবেন এবং বলবেন - না পোষালে চলে যান, অন্য কোথাও ৷ কলকাতা কে লন্ডন কেন, বিশ্বের সেরা শহর বানানো যেত, যদি একজন নেতাও সত্যিই মানুষের জন্য ভাবত৷

যাক গিয়ে... শূন্যে থুতু ছেটালে নিজের গায়েই এসে পড়বে ৷ বিষয়ে ফিরি |

MOFT এর পরের তলাতেই প্রকৃতির সাথে সাথে তৈরী করা হয়েছে একটি ডি-এন -এ লাইব্রেরী বা ভল্ট অফ লাইফ। আমরা সাই-ফাই সিনেমায় যেমন দেখি, তেমন ৷ সমান সাইজের ক্রিস্টাল সিলিন্ডারে বন্দী আছে ২৪০০ লাইফ-ফর্মের স্পেসিমেন৷ চোখ জুড়িয়ে যাওয়া সৌন্দর্য আর বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাওয়ার যুগ্ম অভিঘাত থেকে বেরিয়ে এলে শোনা যায় গাইড -ধ্বনিত যাবতীয় তথ্য, এই লাইব্রেরী সম্পর্কে৷ সুপার ফ্লাক্স টেকনোলজিতে তৈরী এই লাইব্রেরীর মনমুগ্ধকর তথ্যাবলী নিচের লিঙ্কে পাবেন:


তার পাশেই আছে ইকো সিস্টেম সিম্যুলেটর ল্যাব - যেখানে পরীক্ষা নীরিক্ষা করা হয় যে নতুন প্রজাতির আবির্ভাব কিভাবে পরিবেশে পরিবর্তন আনতে পারে ৷

এরপর আমরা প্রবেশ করলাম 'আল ওয়াহা' -তে যার বাংলা হল 'মরুদ্যান' ৷ সেখানে মন আর শরীরকে ডিজিটাল আওতার বাইরে নিয়ে গিয়ে সব কিছুর উপশম করা। সবার খুব পছন্দ হল জায়গাটা কারণ সেখানে শোয়া পর্যন্ত যায় আর কতক্ষণ শুয়ে থাকবে, তার কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই ৷ শরীরের ক্লান্তি দূর করতে সবাই একটু ওখানে শুয়ে জিরিয়ে নিল ৷

আল ওয়াহা তে আর আছে উইশ পুল৷ ঘাস বা কার্পেটের মত নরম একটা সারফেসে হাঁটা যায়৷ প্রতিবার পায়ের চাপে একটা করে আলোক তরঙ্গ বর্তনীর মত তৈরী হয়। সেখানে ভবিষ্যতের জন্য উইশ করা হয়। বেশ মজার ব্যাপার ৷ পুকুরের জলে ঢিল মারলে যেমন ঢেউ খেলে যায়, অনেকটা সেরকম ৷
এছাড়া আমাদের চোখ-কান- নাক ও অন্যান্য ইন্দ্রিয়কে আরাম দেওয়ার জন্য আছে অনেকগুলো সেনসরি রুম৷ মজার আরামদায়ক খেলা সব ৷

সবথেকে ইন্টারেস্টিং অংশ হল দ্বিতীয় তলের 'টুমরো টুডে' | এর বাংলা কি হবে জানি না - কালকের আজ, আজকের কাল, আজকাল - তবে সে যাইই হোক না কেন, মনে বিস্ময় জাগায় ৷

অডি র তৈরী ড্রাইভারলেস মোটর গাড়ির মডেল, স্পোকলেস বাইক/সাইকেল, ওয়ান সিটার ড্রোন, সোলার এনার্জি কনসেন্ট্রেটর ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। সবথেকে ভিড় যেখানে ছিল সেটা হল এক কোণে একটা হিউম্যান স্ক্যানার যেটার সামনে দাঁড়ালে কাউকে আপাত স্ক্যান করে তার সম্পর্কে কিছু বলবে, মেশিনটি |
আমাকে স্ক্যান করে আমার সম্পর্কে মেশিনটি যা বলল, তাতে মেশিনটি আমার পরিবারের সবার বিশ্বাস -বল-ভরসা এক নিমেষে জয় করে নিল --
আমার সর্ম্পকে সে বলল -
You are a regular troublemaker.

এরপর বুমের পালা ৷ বুমকে স্ক্যান করে মেশিনটি বলল:
You should see a doctor immediately because you are pregnant.
সারা হল জুড়ে হাসির রোল ৷
তবে ছোটুর ধারনা হল যে কিছু একটা সমস্যা তো বুমকে নিয়ে হচ্ছে ৷ এয়ার পোর্টে ইমিগ্রেশনের পর কে নাকি বুমকে বলেছেন
"Welcome to Dubai Miss Chattopadyay" আর তারপরে ভুল স্বীকার করে sorry ও বলেন নি।

তবে বুম ব্যাপারটাকে অপ্রত্যাশিত ভাবে খুব স্পোটিংলি নিল আর নিজেই সেটা নিয়ে এমন মজা করতে লাগল যে আমরা ওকে এই নিয়ে রাগানোর বিশেষ সুযোগ পেলাম না।

তবে এটা ঠিক যে মেশিনটা যে ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিল তা ফেসবুকে চলতি গেমগুলোর থেকে খুব বেশি উন্নত মানের বলে মনে হল না।

এর পরে একতলায় আছে Future Heroes |

দশ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য ওয়ান্ডার জোন৷ বড়দের প্রবেশ নিষেধ৷ যা আছে শুনলাম তাতে ছোটদের কল্পনাশক্তিকে প্রশ্রয় দেওয়ার অবকাশ সম্পর্কিত মিশন এবং গেমস। আর Proofs skills সম্বন্ধিত কিছু খেলা যা শিশুদের ভবিষ্যতে কাজে লাগবে।


আমরা ঢুকেছিলাম বেলা বারোটার একটু আগে। সব শেষ করে আবার গ্রাউণ্ড ফ্লোরে লবিতে যখন এলাম তখন প্রায় আড়াইটে ৷ স্যুভেনির শপে খানিকটা ঘোরা হল। Self-lit calligraphy book আর customized perfumes তৈরীর ব্যবস্থা দেখে আবার অবাক হলাম।

বুম আর ছোটুর সব দেখে মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছিল ৷ তার বিক্ষিপ্ত কিন্তু স্থির প্রতিফলন ঘটছিল পেটে | সেই অস্থিরতাকে স্থির করতে লবিতে বসে আইসক্রিম খেল ওরা। আমি যে এক কামড় প্রসাদ পেলাম তা থেকে, তাতে মনে হল সত্যিই একটা কাটা হিমসাগর আম ফ্রিজ থেকে বের করে খাচ্ছি ৷


সবার পিত্তরসকে ধরে রেখে আমরা রওনা দিলাম মেট্রো স্টেশনের দিকে ৷ গন্তব্য দুবাই মল ৷ সেখানকার ফুডকোর্টে দেখা হবে অরিন্দম -চৈতালীর সঙ্গে ৷

(চলবে... )



















Saturday, 15 July 2023

দুদ্ধর্ষ দুবাই : দ্বিতীয় পর্ব

বাড়িতে ঢুকেই আমাদের দেখা হল ছোটুর সঙ্গে | দুবাই এয়ারপোর্টে নেমে বুম ছোটুকে দেখতে না পেয়ে, আমার কানে কানে চৈতালী - অরিন্দম কে দেখিয়ে মস্করা করে বলল, 

Art IX: Tiwaries' Home 
"এদের একটা মেয়ে ছিল না!"

সেই বেচারী মেয়েটার কাছ থেকে ওর ঘরটা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, আমরা সেখানে থাকব বলে।  তবে তাতেও ছোটুর যে খুব একটা হেল- দোল আছে, তা দেখলাম না। সে বরং বেজায় খুশি যে সেদিন রাত থেকে হলটা নাকি ওর,  আর ও  বসে বসে পা ছড়িয়ে সারা রাত ধরে টিভি দেখবে। আমি যখন হাঁপ ছেড়ে ঘরে ঢুকে অরিন্দম-কে বললাম, "অবশেষে তুই এখানে এসেছিস বলে আমাদের আসা হল", তাতে ছোটু তীব্র প্রতিবাদ করে ওর সেই বিখ্যাত স্টাইলে বলল, "না, আসলে আমি এখানে পড়্তে এসেছি  বলে বাবা-মা তোমরা সবার আসা হল। 

BITS Pilani Dubai

কথাটা সত্যি, ও যদি BITS Dubai তে চান্স না পেত্, তা হলে তো সত্যি-ই আমরা দুবাই-এ এসে পৌঁছাতাম কি! এয়ারপোর্ট থেকে ওদের বাড়ি আসার পথে আমরা ছোটুর কলেজ ও বুমের কলেজের দুবাই-শাখা Amity University, Dubai ঘুরে এলাম। ওদের বাড়ি থেকে দুটো কলেজই মানে BITS Dubai আর Amity University, Dubai, কাছাকাছি। আর অদ্ভুতভাবে প্রায় উল্টোদিকে।  আমরা ছোটুর ঘর দখল করে  লাগেজ রেখে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেলাম। বাড়িটা অসম্ভব সুন্দর ও সাজানো গোছানো ৷ আমরা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে চেঞ্জ করতে না করতেই চলে এলো লাঞ্চ -- চিকেন কষা আর সাউথ ইন্ডিয়ান পোলাও। 
Amity University Dubai

আরব দেশে খাবার বেড়ে দেওয়ার একটা অদ্ভুত নিয়ম আছে, সে টেবিলেই হোক বা মেঝেতে৷ পরিবার-বন্ধুদের একসাথে খাওয়া দাওয়া যে একটা বন্ডের সৃষ্টি করে তা মুসলিমদের থেকে শেখার বৈকি! ওরা একটা প্লাস্টিকের শিট টেবিলে বা মেঝেতে পেতে দেয়, (যেমন টেবিল ক্লথ হয় বা নেমন্তন্ন বাড়িতে যেরকম এখন ডিস্পোসেবল টেবিল কভার পাওয়া যায় ) আর অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে যে সেই শিট -টার  ওপরে সবার খাবার একসঙ্গে ঢেলে নেওয়া হয় ৷ চারিদিক থেকে প্রয়োজনমত খাবার প্রত্যেকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে খেতে থাকেন৷ যাঁদের ইফতারের অভিজ্ঞতা আছে তাঁরা সহজেই বুঝবেন ৷ এক্ষেত্রে প্রত্যেকের আলাদা বাসনপত্রের কোনো বালাই নেই ৷ নিজের খাবার শুধু নিজের দিকে টেনে নাও এবং খাবারের অবশিষ্ট অংশ, যেমন মাংসের হাড়, ছিবড়ে, খোসা, মাছের কাঁটা ইত্যাদি যা কিছু ফেলার জিনিস, সেগুলো তার মধ্যে ওর মধ্যেই একটি নির্দিষ্ট স্থানে সবাই ফেলতে থাকে ৷  খাওয়ার শেষে ওই শিটেই সব একসাথে মুড়ে ফেলে দেওয়া হয়। এই শিটকে বলে "সুপ্রা" ৷ সুপ্রা পাতা মানেই খানাপিনার আয়োজন। তবে আমাদের ক্ষেত্রে টেবিলে সুপ্রা পাতার উদ্দেশ্য, সহজে পরিচ্ছন্নতা রক্ষা, টেবিল পোঁছার ঝামেলা এড়ানো, থালা-বাটি-গেলাস বিহীনতা নয়৷ 

এই সূত্রে একটা মজার গল্প মনে পড়ে গেল ৷ আমাদের ঝাঊতলার লোকাল ঘোঁটবাজিতে প্রকাশ যে আমরা যেখানে থাকি সেখানে একটি বিশেষ বাড়িতে কাজের লোককে  দিয়ে  কাজ করানো উসুলের উদ্যোগের পদ্ধতি রীতিমত বিস্মিয়কর৷ সে একদিন কাজ করতে গিয়ে অবাক, কারণ বাড়ির মালকিন তাকে দিয়ে বাসন মাজানো যাতে মিস না হয় তাই খেতে খেতেই প্লেট থেকে ডালভাত তরকারী সব ফাঁকা টেবিলের ওপর ঢেলে নিয়ে সেখান থেকেই খেতে শুরু করেন ও এতক্ষণ যে প্লেট ও বোল থেকে খাচ্ছিলেন সে সব টেবিলের ওপরে খালি করে মাজার জন্য নামিয়ে দেন।  বাসন-পত্তর ধুয়ে -মেজে  না গেলে মাইনে করে কাজের লোক রেখে কি লাভ! তবে শেষে সেই টেবিল কে পরিস্কার করেছিল তা অজ্ঞাত ৷ যেহেতু এই ঘটনার কোনো স্পেসিফিক অথেন্টিক সোর্স নেই, তাই এটাকে একটা রটনা বলে ধরে নেওয়া যায়।

Burj Khalifa

সুপ্রা ও তার ব্যবহার দেখে মনে হল, আসলে সুপ্রার প্রাথমিক আইডিয়াটা আমাদেরই ছিল।  ও দেশে এর আবিষ্কার সেই  জুতা আবিষ্কারের গল্পের মত, "কেমনে ব্যাটা পেরেছে সেটা জানতে !"  

যাই হোক, এলাহী লাঞ্চ করে তারপর খানিকটা জেট ল্যাগ কাটিয়ে ওঠার পর চৈতালি আমাদেরকে বলল যে বসে বসে সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না! ঈদের ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই অরিন্দমকে আমরা যারপরনাই ব্যবহার করে নেব ৷ ওখানে আমি ড্রাইভ করতে পারব না। শুনলাম ওখানকার ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া বেশ কঠিন ব্যাপার ৷ অরিন্দম গত কুড়ি বছরের বেশি গাড়ি চালায়৷ তারপরেও ওখানে লাইসেন্সের পরীক্ষায় দু'বার অকৃতকার্য হয়ে তৃতীয়বারে অবশেষে ওখানকার ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়েছে ৷ সুতরাং ওখানে আমার ড্রাইভ করার কোন প্রশ্নই উঠে না ৷  ট্রাফিক রুলস যথেষ্ট কড়া ৷ মানে গাড়ি যদি ফুটপাতের পাশে এমনি দাঁড়িয়ে থাকে তাহলেও পুলিশের নজরে থাকে ৷ কাউকে দেখতে পাওয়া যায় না। কিন্তু নজরদারী থাকে ৷ ওখানে খুব ছোট রুল ব্রেকিং বা বড়, কোনোটাতেই "সোর্স" চলে না।  

তা যা বলছিলাম,  আমরা বেরোলাম ঘুরতে কারণ অরিন্দমকে ম্যাক্সিমাম ব্যবহার করে নিতে হবে ৷ আমাদের গন্তব্য হলো প্রথমেই পৃথিবীর সব থেকে বড় শপিং মল, দুবাই মল ৷ সর্ববৃহৎ মলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে দুবাই ফাউন্টেনের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম আমরা মানুষের তৈরী পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থাপত্যকর্ম বুর্জ খলিফার একদম পাদদেশে গিয়ে পৌঁছেছি ৷  সেখানে কিছুক্ষণ বাদে ফাউন্টেন শো হবে সেই অপেক্ষায় প্রচুর লোক সেখানে জড়ো হয়েছে ৷ বুর্জ খলিফার গায়ে মোলায়েম রঙীন আলো খেলা করছে নানান বাহার ও বিজ্ঞাপনরূপে । Emaar হচ্ছে ওখানকার সব থেকে বড় সংস্থা৷ এই বুর্জ খলিফার কন্সট্রাকশনও তাদের  তৈরি করা ৷ Emaar এর বিজ্ঞাপন বুর্জ খলিফার গা দিয়ে ওঠা নামা করছে। পয়সা দিয়ে যে কেউ তার প্রিয়জনের জন্মদিন বা অ্যানিভার্সারি উইশ করতে পারেন বুর্জ খলিফার গায়ে লিখে ৷ শাহরুখ খানের জন্মদিনের দিন "হ্যাপি বার্থডে টু শাহরুখ" এই কথাটা বুর্জ খালিফার গায়ে লেখা হয় বলে আমরা শুনলাম ৷

Burj Khalifa &....

সব মিলিয়ে যে বিশালত্ব ও অপূর্ব দৃশ্যের সম্মুখীন হলাম তা ভাষায় অবর্ণনীয় ও ক্যামেরায় অধরা ৷ বুর্জ খলিফার পাদদেশে - দুবাই ফাউন্টেনে লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো শুরু হলে মুগ্ধতার চরম সীমায় পৌঁছালাম আমরা ৷ শুধু দুজন নিরুত্তাপ -- ছোটু ও বুম্।  সবার চোখ ও ক্যামেরা যখন বুর্জ খলিফার বিস্ময়কে ধরে রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত তখন দেখা গেল ছোটু আর বুম এই পুরো শো-টা থেকে খুব নির্লিপ্ত, কারণ তারা দুই বন্ধুতে মিলে ইনস্টাগ্রামে যে ধরনের ছবি পোস্ট করা হয়, নিজেদের সেই ধরনের ছবি তুলতে ব্যস্ত ৷ ইতিমধ্যে আমি যে ছবিগুলো তুলেছি বা অরিন্দম যে  ছবিগুলো তুলেছে, ওরা দু'জনে দেখে বলেছে, সেগুলো কোনো ছবির পর্যায়ে পড়ে না।  আমাদেরকে বলা হয়েছে যে আমরা নাকি ছবি তুলতেই জানি না ও আমাদের শেখা উচিত কিভাবে ছবি তুলতে হয়। ওদের তোলা ছবিতে এক অদ্ভুত প্রপোরেশনের ব্যাপার আছে ৷ সাথে আবার কেউ কারো মুখ সহজে দেখায় না - পিঠ ঘুরিয়ে থাকে, মুখ নিচু করে থাকে, উল্টো হয়ে থাকে, আরও বেশ অদ্ভুত সব কান্ডকারখানা যা আমাদের সঙ্গে মেলে না। এটাই নাকি এখন চলতি ফটোগ্রাফি ৷ আমরা ভীষণ বিরক্ত হয়ে তাই জন্য ব্যাপারটা ওদের ওপরেই ছেড়ে দিয়েছিলাম ৷ ওরা যা পারে করুক ৷ 

মুগ্ধ হয়ে বুর্জ খলিফার সেই দৃশ্য দেখার  সম্মোহন কাটতে না কাটতেই এসে দাঁড়ালাম দুবাই মলের ভিতর অবস্থিত পৃথিবীর সবথেকে বড় অ্যাকোয়ারিয়াম এর এর পাশে ৷ অবিশ্বাস্য ! সেখানে রীতিমতো হেলেদুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে নানা ধরনের হাঙর, শংকর মাছ , সেই সাংঘাতিক স্টিং রে, আরো কত রকমের সামুদ্রিক প্রাণী যেসবের নাম আমার জানা নেই ৷ 

Dubai Aquarium

দুবাই মল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ মল ৷ আমরা মজা করে বলতে শুরু করলাম যে এটা একটা পুরো জেলা কারণ এই দুবাই মল একদিনে পুরোটা ঘোরা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না ৷ এটার একটা ক্ষুদ্র অংশটুকু ঘুরে দেখে সম্পূর্ণ করতেই আমাদের প্রায় কয়েক ঘন্টা কেটে গেল ৷ যে যে অংশে গেলাম সেখানে আমরা দেখতে পেলাম একটা বিশাল ডাইনোসরের কঙ্কাল, বস্তা বস্তা কফি রাখা একটি কফিশপ এবং আরো অনেক ইন্টারন্যাশনাল ব্র্যান্ডের শো রুমস যেগুলো কলকাতায়  নেই ৷ 

Coffee Shop 

অদ্ভূত ব্যাপার হল, মলটি শুধু সাজানো নয়, অত্যন্ত প্ল্যান করে এমন করে তৈরি করা হয়েছে যাতে লোকে সেখানে ইউনিকনেসের আকর্ষণে আসতে বাধ্য হয় ৷ ফলতঃ মলটির বিভিন্ন জায়গা বিভিন্ন ধরনের - তার ডিজাইন, তার আর্কিটেকচার, তার অ্যামবিয়েন্স - সবকিছুই এক একদিকে এক এক রকম ৷ 

ও হ্যাঁ!  বলতে ভুলে গেলাম যে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দেখি ভার্জিন রেকর্ডস-এর স্টোর৷ গ্লোবাল ডিমান্ডে তা এখন ভার্জিন মেগা স্টোরে পরিণত হয়েছে ৷  এই সেই ভার্জিন রেকর্ডস ৷ ছোটবেলা থেকে ভার্জিন  বলতে জানি মাইকেল জ্যাকসন, জর্জ মাইকেল, ম্যাডোনা, এল্ভিস, বিটলস, ফ্রাঙ্ক সিনেন্ট্রা, জানি আরো অনেক আন্তর্জাতিক তারকাদের নাম যাঁরা আমাদের মনে সংগীতের স্বপ্ন বুনে সম্মোহন সৃষ্টি করতেন।


পুরো স্টোরে নজর কাড়ল Vinyl LPর Collection, গিটারের সম্ভার আর যে জায়গাটায় চোখ  আটকে গেল সেটা হচ্ছে Metallicaর থিমে একটা এলপি রেকর্ড প্লেয়ার। যা দাম, তাতে শুধু ছুঁয়েই পূন্য লাভ হল । বুম ভার্জিন-এ প্রবেশের এই সুখস্মৃতিকে ভবিষ্যতে উসকে দেওযার জন্য এক সেট করে গিটার স্ট্রিংস আর পিকস কিনল ৷আর মেসি-রোনাল্দিন্হো দের নিজেদের হাতে লেখা জার্সি সেখানে রয়েছে। সব মিলিয়ে adrenaline flow কে কন্ট্রোলে রাখাই মুশকিল হচ্ছিল। 

আমরা পৃথিবীর সবথেকে বড় মলের একটি ভগ্নাংশ ঘোরার পরে মনের ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও রীতিমতো টায়ার্ড হয়ে গিয়ে সেদিনের মতো ওখানেই ইতি টানলাম৷

বাড়ি ফিরে ডিনার্। সেদিন ডিনারে ছিল হাওড়া শানপুর থেকে আনা  পাঁঠার মাংস ও রুটি ৷

(চলবে....)



Friday, 14 July 2023

দুদ্ধর্ষ দুবাই: প্রথম পর্ব

অরিন্দম এক দশকের ওপর হল দেশ ছেড়েছে। প্রথম গন্তব্য ছিল সৌদি আরবের জেদ্দা ৷ তারপর গত দেড় বছর হল সেখান থেকে দুবাই - এ ৷ জেদ্দাতে থাকাকলীন আমরা যেতে পারিনি ৷ ওখানে প্রবেশ নিষেধ ছিল। তারপর দুবাইতে আসার পর থেকেই আমাদের যাওয়ার জন্য বলেই চলেছে। নানান প্রতিবন্ধকতা কাটানোর পর ঠিক হয়েছিল এবার পুজোর ছুটিতে ঘুরে আসব ৷

এদিকে বাবার বয়সজনিত সমস্যা বাড়ছে। কিছুদিন আগেই নার্সিংহোম থেকে ফিরেছেন ৷ সকালে একরকম থাকেন তো বিকেলে আর একরকম৷ সে সমস্যা পুজোর আগে বাড়বে বই কমবে না। পুজোর সময়ে বুমের কলেজেও ছুটি নেই সেভাবে ৷ ফিফথ সেমিস্টার শুরু হওয়ার আগে এখন মাস খানেক ব্রেক পাবে৷ অরিন্দমদের এর কাছে গেলে মিনিমাম দশদিনতো লাগবে। পুজোতে ও-ও খুব লম্বা টানা ছুটি পায় না। কিন্তু ঈদ উপলক্ষ্যে ওর হাতে দিন আষ্টেকের ছুটি। সব ভেবে চিন্তে দেখা গেল বুমের ফোর্থ সেমের ফাইনাল শেষ হওয়ার পরদিনই বেরিয়ে গেলে সব দিক রক্ষা হয়। সে ক্ষেত্রে যা রক্ষা হবে না তা হল বহুকষ্টে জমানো টাকা ৷ আমাদের যে অনেক আছে তা নয়। তার ওপর নেহাতই খরচার হাত। তবু কুড়িয়ে বাড়িয়ে যতটুকু আছে তার ওপরেই যা যতটুকু মায়া। ছোটবেলায় একজন হাত দেখে বলেছিলেন, "অর্থ-সম্পদ অনেক থাকবে তা নয়, তবে অভাব কোনোদিন হবে না।" তাই-ই একমাত্র বল ও ভরসা।

তারপর আবার গত ছয় মাসের একটি মাসে চারজনের মৃত্যু আমাকে সবদিক থেকে বেশ নাড়িয়ে দিয়েছে। আরও দু'জনের মৃত্যুসংবাদ আরো ক'মাসে ৷ অর্থ থেকেও অনর্থ যখন হচ্ছে, তখন জমিয়ে লাভ কি! কাল কি হবে কে জানে! তাই অর্থের দিকে না তাকিয়েই আমরা ঠিক করলাম যে ঘুরেই আসি ৷ তারপর যা হবে দেখা যাবে।
চৈতালী -অরিন্দমকে সে খবর জানাতেই ওরা তো সাজ সাজ রবে আমাদের পৌঁছানোর জন্য যাবতীয় রিসার্চ ও সাহায্য করতে থাকল ৷ শুরু হল খোঁজ খবর |
দেশের বাইরে যেতে গেলে সবচেয়ে শুরুত্বপূর্ণ হল সঠিক ফ্লাইট পছন্দ ও স্থির করা। দেখা গেল, মুম্বাই থেকে দুবাই এর ফ্লাইট সবচেয়ে সস্তা। কিন্তু মুম্বাই পর্যন্ত ট্রেনে করে যেতে হবে। ট্রেন-এ টিকিটএবং ধকল সব যোগ করে দেখা গেল কলকাতা থেকে নো-ট্রানসিট ফ্লাইটে করে গেলে সেই হরে দরে হাঁটুজল। আর এক উপায় যে, ট্রানসিটে গেলে দিল্লী হয়েও যাওয়া যেতে পারে ৷ কিন্তু সেই মুম্বাই হোক বা দিল্লী, অনেক ঘন্টা ওয়েটিং। এর পর আছে ভিসার ঝামেলা। বেশ কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স স্টাডি করে দেখা গেল এমিরেটস এয়ারলাইন্স-ই সব দিক থেকে ভাল ৷ ভিসার অ্যাপ্লিকেশন ওদের পোর্টাল থেকেই অনায়াসে করা যায়। শুধুমাত্র ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডে টাকা দিতে হবে এবং সেটা ইন্টারন্যাশনাল কার্ড হওয়া বাধ্যতামূলক ৷
আর তা না হলে কলকাতার রেনে টাওয়ারস -এ সব জরুরী ডকুমেন্টস (পোসপোর্ট , আধার, ফ্লাইট টিকিট উইথ রিটার্ন, প্যান ও পাসপোর্ট ফটো) অরিজিন্যাল নিয়ে গিয়ে সকাল সকাল লাইন দিতে হবে ৷ ওখান থেকে দুবাই এর ট্যুওরিস্ট ভিসা করাতে হলে মাথাপিছু আলাদা করে টাকা লাগে ভিসা চার্জেস ছাড়াও।
আমাদের সে সব করতে হয়নি। এমিরেটস এয়ারলাইন্স-এই খুঁজে-পেতে যাওয়া-আসার টিকিট একসঙ্গে বুক করলাম। টিকিট ফাইনাল হল । দিন তিনেক পরে সব ডকুমেন্ট স্ক্যান করে ভিসার জন্য অ্যাপ্লাই করা হল অনলাইনে, ওই এমিরেটস এয়ারলাইন্স এর পোর্টাল থেকেই ৷ মিনিমাম এক মাসের জন্য (৩০ দিন) ট্যুওরিস্ট ভিসা হয়, সংযুক্ত আমীর শাহিতে (UAE)৷
তিনদিনের মধ্যে ভিসার কপি অ্যাপ্রুভড হয়ে ই-মেইলে চলে আসে, কোনো ডিসপিউট না থাকলে।
তার পরের ধাপ কারেন্সি একচেঞ্জ৷ যে কোনো এয়ারপোর্ট এ অনেক কারেন্সি এক্সচেঞ্জ আছে ৷ অথেনটিকও৷ কিন্তু সেলিং রেট অনেক বেশি। তাই যতটা দরকার সেইমত একটা হিসেব রাফলি করে নিয়ে সেটা এখান থেকে একচেঞ্জ করে নিয়ে যাওয়াই ভাল ৷
বাড়িতে বসে একচেঞ্জ পেতে হলে সরাসরি যে ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে তাদের সাহায্য নিতেই পারেন ৷ আর না হলে কলকাতার আমেরিকান লাইব্রেরীর (USIS) পাশের রাস্তায় একটি এক্সচেঞ্জ কাউন্টার আছে, যাঁরা ভাল রেট দেন।

HUBERT MONEY CHANGER PVT LTD
Contact No: +9198306 56748

এক্সচেঞ্জের জন্য যা যা hard copies লাগবে:
Passport, PAN, Aadhar, Visa, Ticket

এখানে বলে রাখা ভাল money exchanger রা whatsapp বা ই-মেইলে উপরের নথি ও তথ্যগুলি চাইলেও না দেওয়াই ভাল ৷ টাকা এক্সচেঞ্জের সময়ে হার্ড কপি দিয়ে দেবেন বলে জানিয়ে দেবেন।
এক একটি পাসপোর্ট আর ভিসা প্রতি এক্সচেঞ্জ লিমিট হল টাকা ৫০,০০০/- | অর্থাৎ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে দ্যিহ্রাম পেতে গেলে তিন জনের পাসপোর্ট ও ভিসা লাগবে। আইনতঃ এটাই এখান থেকে ম্যাক্সিমাম নিয়ে যাওয়া যায় ৷ তার বেশি প্রয়োজন হলে ওখানে গিয়ে সেদেশে বেশি রেটেই ভাঙ্গাতে হবে ৷
আস্তে আস্তে আমাদের যাওয়ার দিন চলে এল। দুবাইতে ভাল রেওয়াজী মাটনের ভারি আকাল ৷ তাই কয়েক কেজি মাটন এখান থেকে রেঁধে ফ্রোজেন অবস্থায় কেবিন লাগেজে নেওয়া হল। এমিরেটস এয়ারলাইন্স জন প্রতি ২৫ কেজি চেকড ইন আর আরও ৭ কেজি কেবিন লাগেজ হিসেবে অনুমোদন করে। অন্যান্য এয়ারলাইন্স অনেকেই টিকিট সস্তা দেখালেও লাগেজের জন্য আলাদা করে চার্জ করে এবং সেটা বেশ অনেকটাই ৷ সঙ্গে হঠাৎ করে নিয়ম বের করে কনফিউশন ও হ্যারাসমেন্টের শিকার হতে হয। আবার ওজনের আপার লিমিট পয়সা দিয়েও জন প্রতি অনেক কম। এমিরেটস এয়ারলাইনস বেছে নেওয়ার এটা একটা অন্যতম কারণ ছিল যে, এদের এত হিডেন কস্ট নেই।
কলকাতা ইমিগ্রেশনএ রান্না করা মাটনকে কোনো পাত্তাই দিল না। কিছু না জিজ্ঞেস করেই ছেড়ে দিল। বুমকে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন অবশ্য, অন্য প্রসঙ্গে - কেন যাচ্ছ ? আগে বিদেশে গেছ কি না ইত্যাদি ৷

বোয়িং বিমানে এই প্রথম উঠলাম ৷ বিশাল বড় ৷ অনেক সীট ফাঁকা পড়ে রইল। আমরা পছন্দের সীট পাওয়ার জন্য আলাদা করে গাঁটের কড়ি খরচ না করলেও সীট আমাদের এরা দিতই ৷ দিতে ওরা বাধ্য ৷ হয়ত পছন্দের হত না। কিন্তু দিত তো ! প্রতি সারিতে দশটি করে সীট৷ ভরপুর ইনফোটেইনমেন্টের আয়োজন। প্রত্যেকের সামনে ১০ ইঞ্চির টিভি স্ক্রিন ৷ সাথে হেডফোন ৷ গান -সিনেমা -খবর -খেলা- পডকাস্ট , সব আছে। আছে পোর্টেবেল গেমিং কনসোলও৷ তার সাথে লাইভ ফ্লাইট ডিটেইলস উইথ ক্যামেরা ৷এমিরেটস এর টিকিট বুক করার সময়ে এমিরেটস এর ফ্রি মেম্বারশিপে সাবস্ক্রাইব করলে ফ্লাইটে থাকাকালীন on air wifi ও পাওয়া যায়।
দিনের ফ্লাইটে অনেক কিছু জানলা দিয়ে দেখা যায়। ফলে মন স্ক্রিন থেকে বারবার জানলায় চলে যাচ্ছিল। চল্লিশ হাজার ফুট ওপরে মাইনাস 39 ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে দিয়ে ওড়ার অভিজ্ঞতার থ্রিলই আলাদা ৷সেই নেশা কে আরও গভীর করার জন্য এল লাঞ্চ উইথ আনলিমিটেড ড্রিঙ্ক চয়েজেস। লাঞ্চে ছিল:
Sweet Corn Potato Chaat, Prawn Roast, Vegetable Kofta Curry, Gulab Jamun (3 pcs each), Chocolate,
With a choice of wines (Red and white, beers, spirits, fruit juices, soft drinks, followed by tea and coffee)
সোয়া চারঘন্টার উড়ানে একজন মানুষ আর কি পেতে পারত, আমার জানা নেই ৷
দুবাই এয়ারপোর্টে নামার মিনিট পনেরো আগে থেকেই সমুদ্র আর স্থলভাগের মেশার লাইন থেকেই দৃশ্যত: বিস্ময়ের শুরু৷ বার্ডস আই ভিউ ফ্লাইট থেকে - যেখানে আইল্যান্ড কেটে কেটে কোলাজ করে একটা ওয়ার্ল্ড ম্যাপ তৈরী করা হয়েছে, সেখান থেকে ৷ নাম Dubai World Map | যা দেখেছি তা ভাষায় বর্ণনা করা সম্ভব নয়। তাই ছবি দিলাম।

দুবাই এয়ারপোর্টে নামার পর অতি সহজ ইমিগ্রেশন | ইমিগ্রেশন শেষ হলে ইমিগ্রেশন কাউন্টার থেকেই du নামক মোবাইল কোম্পানি ফ্রিতে একটি সিমকার্ড দেয়, এক ১০ মিনিট কল আর এক জিবি ডেটা সমেত ৷ এর ভ্যালিডিটি ২৪ ঘন্টা ৷ তারপর প্রয়োজনে কেউ রিচার্জ করতে পারেন ৷ ওখানে সব শপিং মলেই du এর কাউন্টার আছে। তবে ঐ প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল যে, আমি শুধুমাত্র আমার ফোনটা আমাদের এখান থেকে ইন্টারন্যাশনাল প্রিপেড রোমিং রিচার্জ করে নিয়ে গিয়েছিলাম ৷ এয়ারটেল ১০ দিনের জন্য ১০০ মিনিট ভয়েস কল (incoming+outgoing মিলিয়ে) আর ১.৫ জিবি ডেটার জন্য আলাদা করে ৮৯৯ টাকা নেয়। এই প্যাক বিদেশের মাটিতে পা রাখলে সেই দিন ও সময় থেকে অ্যাকটিভেটেড হয়। সুতরাং দু'তিন দিন আগে রিচার্জ করে রাখাই যায়। ভয়েস কল ও ডেটা সার্ভিস খুবই ভাল ৷ আর ওখানে যেহেতু সর্বত্র ওয়াই ফাই এর ছড়াছড়ি, তাতে এই মিনিমাম রোমিং প্যাক যথেষ্ট ৷ তবে ওখানে হোটেল বাদ দিয়ে সব জায়গায় ওয়াই ফাই কিন্তু কিছুক্ষণের জন্য ফ্রি হলেও, সবসময়ের জন্য ফ্রি নয়।
দুবাইতে হোয়াটস অ্যাপ কলস (ভয়েস ও ভিডিও) ব্যবহার বে-আইনি ৷ ভয়েস নোটস ও টেক্সট পাঠানো যায় ৷ ভয়েস ও ভিডিও কলের জন্য ওখানকার মোস্ট ইউজড লিগ্যাল প্ল্যাটফর্ম হল BotIM (বট আই এম , চলতি ভাষায় 'বটিম') | যিনি যোগাযোগ করবেন ও যাঁকে যোগাযোগ করবেন, দুপক্ষকেই এই অ্যাপ ইন্সটল করে রেজিস্টার করতে হবে। দেশ ছাড়ার আগে এটা করতে ভুলবেন না। কখন কোথায় দরকার হয় কে বলতে পারে!
সিঙ্গাপোরের চাঙ্গি এয়ারপোর্ট পৃথিবীর সর্বশ্রষ্ঠ এয়ারপোর্টগুলোর মধ্যে একটি। সেখানেও গিয়েছি ৷ চাঙ্গি সর্বশ্রেষ্ঠগুলোর অন্যতম হলেও দুবাই-এর মত এমন চোখধাঁধানো নয় ৷ আর সবথেকে বড় কথা, গত ন'বছর ধরে World's busiest airport তকমা ধরে রাখা সত্ত্বেও এখানে কাউকে সেভাবে কোনো লাইনে দাঁড়াতে হয় না। মিনিট পাঁচেক যা লাগে শুধু ইমিগ্রেশনে।


লালমোহন বাবুর মত অবাক হয়ে হাঁ করা অবস্থাতেই লাগেজ নিয়ে চললাম অপেক্ষারত চৈতালী - অরিন্দমের সঙ্গে ওদের গাড়ির দিকে ৷
বাইরে তেতাল্লিশ ডিগ্রী তাপমাত্রার মধ্যে দিয়ে ছুটছে গাড়ি, ওদের বাড়ির দিকে৷ গাড়ির গতিবেগ ১১০ কিমি/ঘন্টা ৷ দুপাশে মরুভূমি ৷ তাতে ছোট ছোট ঝোপ ৷ মনে একটা কথাই ভেসে উঠল...
"ওরা কি কাঁটা বেছে খায়?"
(চলবে)....