Tuesday, 21 February 2023

একুশে ফেব্রুয়ারী


আগে যেমন মানুষ মানুষের উপকার করবে এটাই স্বাভাবিক ছিল, এখন সেটা ব্যতিক্রমী উদাহরণ ।ঠিক তেমনই মাতৃভাষা (সে শুধু বাংলা নয়) টার থেকে আমার সন্তান ইংরেজীতে অনেক বেশি দড়, এটাই আমরা বাবা মা হিসেবে সবজায়গায় প্রমাণ করতে চাই ৷ আর তা না হলে জাতীয় ভাষা ভেবে নিয়ে, হিন্দিতে ৷


*** (বলে রাখা ভাল যে ভারতে কোনো একটি বিশেষ ভাষাকে জাতীয় বা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চিহ্নিত করে নি ভারতের সংবিধান ৷ বরং উল্টে বলে দিয়েছে যে সারা ভারতে ব্যবহৃত মোট ২২টি প্রধান আঞ্চলিক ভাষার প্রতিটিই সমানভাবে রাষ্ট্রভাষা বা জাতীয় ভাষা৷)

বারে বারে বলেছি আগে, আবারও , সকলের অবগতির কারণে:
৩০০০ হাজার ভাষার মধ্যে ব্যবহারের দিক থেকে ইংরেজী তৃতীয় আর বাংলা ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে আছে সারা পৃথিবীতে ৷

আর শুধু ইংরেজি কেন, আরও দশটা ভাষা শিখুক আমাদের সন্তানেরা ৷ তবে মাতৃভাষা জানা বা শেখায় কি কোনো দোষ আছে? মাতৃভাষা বলতে পড়তে লিখতে শেখা অন্য কোনো ভাষা শেখার প্রতিবন্ধকতা তো নয়ই বরং পরিপূরক (not an impediment but a complement) | আমার নয়, এটা ভাষাবিজ্ঞানী ও বিদদের বক্তব্য |

পৃথিবীতে বহু দেশ ও মানুষ আছেন যাঁরা ইংরেজী জানেনই না ৷ তাঁরা তাঁদের মাতৃভাষা নিয়ে দিব্যি ফুর্তিতে আছেন।

আমি ইংরেজি বিরোধি তো নই-ই ৷ বরং সেই ভাষার প্রতি আমার বেশ বেশি রকমের দুর্বলতা আছে ৷ কিন্তু সেই দুর্বলতা আমার মাতৃভাষা বাংলার প্রতি ভালবাসার সঙ্গে কোনো তুলনাতেই আসে না।

আর যাঁরা নিজের মাতৃভাষাকে অশ্রদ্ধা করেন, আমি তাঁদের মনুষ্যপদবাচ্য বলে মনে করি না।

নীতিকথা: ইংরেজী ও বাংলা ভাষার বা অন্যান্য মাতৃভাষার মধ্যে কোনো বিবাদ বিসংবাদ বিরোধিতা কিছুই নেই ৷ এসব আমরাই লোকদেখানোর জন্য সৃষ্টি করেছি ৷ সবটাই যোগাযোগ আর জ্ঞান আহরণের মাধ্যম মাত্র ৷

*******************
নিচের নামগুলো একদিন বি-বা-দীর মত জনপ্রিয় হবে বলো আমার বিশ্বাস | তাই জন্য দিলাম:
রফিক, জব্বার, শফিউর, সালাম, বরকত
মনে রাখার সুবিধার জন্য : রজ-শসা-ব
তারিখঃ ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী

১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘ বা ইউনাইটেড নেশনস এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে ৷


'মৌচাক' এ ঢিল - killed that thrill


কাগজ পত্রে লেখালিখি করি কবে থেকে ঠিক মনে নেই ৷ খবরের কাগজে (ইংরেজি বাংলা দুটোতেই) লিখে লিখে হেজে গেছি ৷ কিন্তু সে সব অন্য লেখা ৷ চাকুম চুকুম আর কি ! কি পরবেন, কি পড়বেন, কি খাবেন, কোথায় পাবেন, মানুষের মানসিক সমস্যা ও সমাধান, ইত্যাদি প্রভৃতি৷ তবে ক্লাস এইটে বেলুড় পাবলিক লাইব্রেরীর ম্যাগাজিনের পর নিজের লেখা গল্প -কবিতা -ছড়া এসব কোথাও দেওয়ার দুঃসাহস কোনোদিন হয় নি৷

নানান ঘটনাচক্রে শমিত বাবুর সঙ্গে আলাপ হল ৷ মানে 'মৌচাক'-এর একসময়ের কর্ণধার শ্রী শমিত সরকার মহাশয়ের সঙ্গে ৷ আদ্যন্ত একজন বিনয়ী ও শৌখিন মানুষ - চোখে গোল্ডেন ফ্রেমের চশমা ও নিখুঁত ভাবে কামানো ফ্রেঞ্চকাট দাড়ি ছাড়াও একটা দারুন অভিজাত্য। ইস্কুলের দপ্তরী খাতাপত্র কেনার দোকানের ঠিক উল্টোদিকেই ওনাদের 'ঘর' (পাবলিশিং হাউস ও অফিস) | সাহস করে একদিন বলে বসলাম,
- আমার লেখা নেবেন?
- দিয়ে যান ... দেখব...
আর দাঁড়াই নাকি! যদি মত বদলে ফেলে ফস করে বলেন,
- কিছুদিন পরে
তখন আর কিছু করার থাকবে না ৷

আনন্দ আর ধরে না! এ হল সেই 'মৌচাক' যখন সন্দেশ-শুকতারা-চাঁদমামা রা ত্রিসীমানায় নেই ৷
এ হল সেই মৌচাক যেখানে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম বিখ্যাত উপন্যাস 'চাঁদের পাহাড়' প্রথম প্রকাশিত হয় ৷
এ হল সেই মৌচাক যেখানে রবীন্দ্রনাথ তাঁর ছড়া প্রকাশ করতেন
এ হল সেই মৌচাক যেখানে সরোজিনী নাইডুর ইংরেজি লেখার ভাষান্তর প্রকাশিত হত।

আমার লেখা সেখানে প্রকাশিত হতে শুরু করল।

শমিত বাবুকে বার বার বোঝানোর চেষ্টা করেছি, আট টাকার ম্যাগাজিনে ২০% ডিস্কাউন্ট দিয়ে ছ' টাকায় চলে না কি ! ২০১৭ সাল থেকে বলে বলে getup একটু পরিবর্তন করে উন্নতি হল ৷ কিন্তু কোনো প্রচার নেই ৷ ক'জন জানতাম যে 'মৌচাক' এখনও চলে !

মৌচাক শতবর্ষের আলোকে উদ্ভাসিত হওয়ার সন্ধিক্ষণে বইপাড়ার শমিত বাবু হঠাৎই ইহলোক ত্যাগ করলেন ৷

ওনার সুপুত্র সফটওয়্যার এঞ্জিনিয়র ৷ চাকরিবাকরি ছেড়ে পৈতৃক ব্যবসায় হাত দিয়ে দেখেন মৌচাক ধরে রাখতে গিয়ে শমিত বাবু প্রায় নিঃস্ব হতে বসেছিলেন ৷ কাউকে জানতে বা বুঝতে দেন নি কোনোদিন ৷

তাই সেই 'মৌচাক' আজ ইতিহাস... বন্ধ হয়ে গিয়েছে...

শেষের দিকের কিছু সংখ্যা আর সর্বশেষ শারদ সংখ্যা আমার কাছে আছে ৷

আমার শমিতবাবুকে দেওয়া শেষ লেখাটি আর ছাপা হয় নি ৷ কোনোদিন সে লেখা কোথাও পোস্ট ও করি নি....যদি কোনোদিন মৌচাক আবার চালু হয় ... সেই দুরাশায়...

মৌচাক আমাকে প্রথম সুযোগ দিয়ে ভরসা দিয়েছে আমাকে যে আমার লেখাও ছাপা যায় ... যেখানে বিভূতিভূষণ রবীন্দ্রনাথ শঙ্খ ঘোষ - এনাদের লেখা বের হয়।

শমিতবাবু আজ ইহজগতে নেই৷ ওনার আশীষধন্য আমি ওনার চরণে জানাই সশ্রদ্ধ প্রনাম ৷




    














Thursday, 16 February 2023

বেলোয়ারী ঝাড়

The problem with us now is that we all see, hear and even react to things without trying to understand them.

সবার আগে যেটা মাথায় রাখতে হবে যে, সারা ভারতে তথা যে কোনো রাজ্যে শিক্ষার স্থান কে যে সরকার-ই খোঁড়া করার চেষ্টা করবেন, তাঁদের জনমানসে ভাবমূর্তি ধরে রাখা অসম্ভব। সরকার, বিশেষত: প্রায় বিরোধী-বিহীন সরকার, যে যথেচ্ছাচার করবেন (ইতিহাস তা-ই বলে), এটাই স্বাভাবিক। কারণ, ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলের পক্ষে চিরকালই উচ্চশিক্ষিত মানুষদের অন্ধ আনুগত্য ও চাটুকারিতা তাঁদের এক অলিখিত সামাজিক শংসাপত্র দেয় যে, তাঁরা যা করছেন, ঠিক করছেন। মানুষ না হলে কি আর তাঁদের পাশে থাকত! রাজনীতির অলিন্দে 'বিবেকবোধ'-এর আশা না করাই যুক্তিযুক্ত। কিন্তু মানবিকতা ব্যতিরেকে রাজনীতি হল স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের সমান। সেখানে যখন আবার আত্মম্ভরীতা এসে বাসা বাঁধে, তখন সে রাজতন্ত্র একনায়কতন্ত্রে পরিণত হয়। এগুলো বোধহয় সবাই জানে

এ-ও সবাই জানে যে ডাক্তারের সন্তান ডাক্তার হবে, এঞ্জিনিয়রের সন্তান, এঞ্জিনিয়র, ব্যবসায়ীর সন্তান, ব্যবসায়ী এবং আরও কত কি। কিন্তু যাঁরা গুণ্ডা, ক্রিমিন্যাল, তাঁদের সন্তান? শিক্ষক হিসেবে আমার অভিজ্ঞতা বলে যে তাঁরা যত বড় ক্ষমতার অধিকারী-ই হোন না কেন, তাঁরাও কিন্তু চান যে তাঁদের পরের প্রজন্মের মানুষরা যেন তাঁদের মত না হয়...তারা যেন শিক্ষিত হয়, ভাল মানুষ হয়, স্বাভাবিক জীবন স্বচ্ছল ভাবে যাপন করে। ধরুন, ডাকসাইটে মফিয়ার মেয়ে সম্পূর্ণ নিজের যোগ্যতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হল, সেখানে কি সেই মাফিয়া গর্ব বোধ করবেন না!

কিন্তু সমস্যা হল, এগুলো যাতে না হয়, সেই ব্যবস্থায় নেমেছে আমাদের সরকার। কারণ তারা জানেন যে অশিক্ষাই আজ রাজনীতির একমাত্র ধারক ও বাহক। যত অশিক্ষা থাকবে, তত ক্যাডার পাওয়া যাবে। আর দেশের আইনের মত, শিক্ষাও শুধু বড়লোকের জন্য তোল থাকুক।

বুকে হাত দিয়ে কেউ বলুক, যা বললাম, ভুল। জানি প্রশ্নের বাণ ছুটে আসবে ৷ উদাহরন তুলে তুলে দেখানো হবে - কবে কবে, কোন কোন লোক কি কি খারাপ কাজ করেছিল। প্রমাণিত হবে আমি যা বললাম সব ভুল। সে ই ভুল প্রমাণ করে খুশি হবে কত লোক। কত লোক বলবে, 'এত বোঝেন্, আর এটুকু বোঝেন না!' কিন্তু মনে মনে জানেন শিক্ষার নামে যা চলছে, তা সত্যই গ্রহনযোগ্য নয়। আর সত্যিই খারাপটা কি কোনো উদাহরণ হতে পারে? একটা বাড়ি দেখাক কেউ, যেখানে সন্তান ভাল ফল না করার ফলে, তাকে বোঝানো হয়েছে যে, কে কে আরো খারাপ করেছে! অন্য কেউ যদি তা বোঝাতে চায় তাকে কি করা হবে?

কিন্তু রাজনীতি এমন বিষয়, যে সেখানে এ সব প্রশ্ন চলে না। কেউ প্রশ্ন করে না যে এত বছর তো নিজেদের প্রমাণ করার সুযোগ পেলে, তুমি কেন সর্বশ্রেষ্ঠ হয়ে উঠতে পারলে না? পাব্লিক তোমায় কি দেয় নি, ভোট ছাড়াও? অনেক আশা ছিল যে তার, তোমাকে নিয়ে....!!!

'শিক্ষা' এমন একটি ব্যবস্থা যার প্রতি সবার অন্ধ আস্থা ও বিশ্বাস। যুগে যুগে। রাষ্ট্রের উন্নয়ণের নামে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গ যদি তা নিয়ে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে কোনো ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন, তাহলে কেউ তাদের ক্ষমা করবে না। তাদের পোষা কুকুর-রাও নয়।

যা লিখলাম, একজন অতি সাধারণ মানুষ হিসেবে, একজন শিক্ষক হিসেবে। সমাজ আমাকে সে জন্য সম্মান করবে, না, করবে না, সেটা সমাজের বাকি সাধারণ মানুষদের চেতনা ও শুভ এবং সুবুদ্ধির ওপর নির্ভর করে।

-- আর্য


দারিদ্র, দুর্নীতি এবং সমাজ
অরবিন্দ ঘোষ

(Relevant extracts in relation to Education)

দেশের সুশৃঙ্খল সামজিক নিয়ম বা রীতি, যা হয়তো বা দেশের কড়া আইন ও তার যথোপযুক্ত প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, শাস্তি পাওয়ার ভয় না থাকলেও মানুষকে দুর্নীতিমূলক কাজ থেকে বিরত রাখে। কেউ নিজেকে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত করবে কি না, এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চার পাশে তাকিয়ে দেখে বোঝার চেষ্টা করে অন্যরা কী ভাবছে। এই প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসুর ‘টিচার ট্রুয়্যান্সি ইন ইন্ডিয়া— দ্য রোল অব কালচার, নর্মস অ্যান্ড ইকনমিক ইনসেনটিভস' গবেষণাপত্রটি বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

অধ্যাপক বসু ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শিক্ষকদের কর্তব্যচ্যুতি ও না বলেকয়ে কামাই করার ক্ষেত্রে সামাজিক নীতি ও রীতির প্রভাবের কথা আলোচনা করেছেন। ২০০৪ সালে ভারতে শিক্ষকদের অনুপস্থিতির হার সর্বোচ্চ ছিল ঝাড়খণ্ডে (৪১.৯%) আর সবচেয়ে কম মহারাষ্ট্রে (১৪.৬%)। দুই রাজ্যে এই সময়ে শিক্ষকদের বেতন ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধার হার, এবং কর্তব্যচ্যুতির শাস্তি ছিল সমতুল, ফলে সে যুক্তিতে শিক্ষকদের আচরণের পার্থক্য ব্যাখ্যা করা যাবে না। দুই রাজ্যে শিক্ষকদের কর্তব্যচ্যুতির হারে ফারাকের মূল কারণ হল, শিক্ষকদের কাজে ফাঁকি দেওয়ার ক্ষেত্রে দুই রাজ্যে দু'ধরনের সামাজিক মনোভাব। যে রাজ্যে এই দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় সামাজিক অনুমোদন যত কম, সেই রাজ্যে এমন ফাঁকিবাজি সামাজিক ভাবে ততই ‘ব্যয়সাপেক্ষ'। মহারাষ্ট্রে অনুমোদনের মাত্রা ঝাড়খণ্ডের তুলনায় কম, ফলে ফাঁকিও কম ছিল।

সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতির যে আভাস মিলেছে, সামাজিক স্তরে তাকে অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ বলে প্রতিষ্ঠা করা খুবই জরুরি। সাম্প্রতিক পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার পরিসংখ্যান বলছে, এ রাজ্যে বহুমাত্রিক দারিদ্রের হার ১৫.৩%, যা সর্বভারতীয় গড় ১৬.৪ শতাংশের চেয়ে সামান্যই কম। গ্রামীণ বাংলায় এই হার ২০%, পুরুলিয়া জেলার (৩৬.৯%) অবস্থা আরও খারাপ। দারিদ্র, দুর্নীতি ও সামাজিক রীতির দুষ্টচক্রের কথা মাথায় রেখে এখনই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা দরকার, না-হলে বড় দেরি হয়ে যাবে।


Friday, 10 February 2023

তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে

 মা সরস্বতীর যখন ভীষণ অস্তিত্ব সংকট, তখন অভ্যুত্থান ঘটে সেন্ট ভ্যালেনটাইনের ৷ বাসন্তী রঙের অপটু হাতে পরা শাড়ী আর সদ্যস্নাত চুল থেকে টপতে থাকা জলের প্রতিটি ফোঁটায় প্রেমিকের স্বপ্ন কোন এক অজানা টানে কবে ডার্ক চকোলেট গোলাপ - এই সব হয়ে দুর্গাপুজোর থেকেও লম্বা এক একসপ্তাহব্যাপি পালায় রূপান্তরিত হয়েছে ৷ অজান্তেই ৷ ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমীরা হয়ে গিয়েছে রোজ ডে কিস ডে প্রপোজ ডে৷ এবং শেষে সেন্ট ভ্যালেনটাইন নামক সেই সাধু যাঁর সম্পর্কে কেউ ই প্রায় কিছুই জানে না, তাঁর নামে দিবস যাপন - বিশ্ব প্রেম দিবস ৷


সবটা কেমন বদলে গিয়েছে ৷ সময় বদলে গিয়েছে ৷

নিঃশব্দে একান্তে বসে তারা খসতে দেখলেই মনে মনে বলার অবকাশ নেই
- ওকে ভাল রেখ... ওর সব দুঃখ কষ্ট সব আমার হোক!
সেই সময়ে চোখ থাকে মোবাইলের স্ক্রীণে ৷ তারারা খসতেই থাকে ৷ আমরা আর পাত্তা দিই না।
খসতে খসতে প্রশ্ন ওঠে না আর- ওরা খসে গিয়ে কোথায় পড়ে? চাঁদের বুকের মাঝের ক্ষতচিহ্নকে কত রকমের নামে ডাকতে ডাকতে ছেলেভুলোনো গল্পের ছলগুলোও প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে ৷ রূপকথা উপকথার সরল চিন্তন হারিয়ে যায় অযাচিত নিষ্প্রয়োজনীয় দেশোদ্ধারের রাজনৈতিক নামাবলির জটিল চোরা গলিতে ৷

কবিতারা নাকি গ্রামেই ঘোরাফেরা করে ৷ শহরের জঞ্জালে কোনো রোমান্স আছে নাকি - সেখানে শুধু পরকীয়া আর একাকীত্ব ৷ মজার ব্যাপার হল জঞ্জাল আর দারিদ্র্যকে মূলধন হিসেবে খাটিয়ে কত লোক বিত্তবান হয়ে গেল ৷

তবুও শহরে সেভাবে কবিতা নেই, নাকি! কারণ...

বইমেলায় প্রতিভাসের স্টলে দাড়িয়ে বই দেখছি ৷ একটি কিশোর তার বাবাকে বলছে -
এত বড় international book fair এ বেশিরভাগ বাংলা বই কেন? যেখানেই যাই বাংলা বাংলা বাংলা....



আর SBI auditorium এ তখন Barry O Brien বলে চলেছেন অকপটে -
"... Who is an Indian?
If I am not a Bengalee first, I am not an Indian.
If I am not a Gujrati first, I am not an Indian.
If I am not a Marathi first, I am not an Indian.
If I am not a Keralite first, I am not an Indian.
..And so forth because India is the treasureland of all the cultures embedded in it. We must not forget our less individual culture to satisfy the greater one because the lesser ones integrate to make the whole. 
In the same way Anglo Indians are Indians and they have their own independent culture as an integrated part of greater India...If India talks about the freedom of women today, it started with the Anglo Indian Women, first, in this country.

এরপরে চারিদিকে যখন তাকাই খুব insecure লাগে ৷ কিছুদিন আগেই 'umbrella' বানান নিয়ে শিক্ষিত মানুষরা সোশ্যাল মিডিয়াকে মাধ্যম করে যখন শিক্ষাব্যবস্থার তুলোধোনা করছেন, তখন কিন্তু মেয়েটির ব্যক্তিগত জীবন সেই ঘটনাকে ঘিরে কোন অবস্থায় পৌঁছালো কেউ সেখবর রাখেন নি। শিক্ষা ব্যবস্থার সেই যন্ত্রে প্রচুর উচ্চশিক্ষিত মানুষ বাজারে রীতিমতো করে খাচ্ছেন যাঁরা জানেন না যে
Congress কথার প্রকৃত অর্থ কি?
CPI (M) এর বাৎসরিক Congress তাঁদের কাছে তাই ভন্ডামী l কারণ oxymoron কথাটার মানে যে তাঁরা জানবেন সে আশা রাখি না ৷ তবে ভাবখানা কিন্তু তাইই ৷
ঠিক সেভাবে কোনো তৃনমূল - বিজেপি কর্মীকে তাঁর একজন সতীর্থ যদি ফস করে 'কমরেড' বলে বসে...
ঠিক সেভাবে যদি কেউ বলে যে ' হিন্দুত্ববাদ কোনো ধর্ম নয়, সমসাময়িক দর্শনের প্রতিফলন মাত্র... ফলে এই ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার কোনো রীতি নেই ৷ ওটা একটি দেড়েলের মস্তিষ্কপ্রসূত, যিনি পৃথিবীর তাবড় বিজ্ঞানীদের মন জয় করে নিয়েছিলেন এই বলে যে হাওয়া কলের ব্লেডগুলোকে এমন ধারালো বানানো যায় না কি, যাতে সেই ব্লেড আনায়াসে বাতাস থেকে অক্সিজেনকে আলাদা করে কেটে বের করে আনতে পারে '...
সব বিজ্ঞানীরা তখন মনে মনে বাল্লার রাজার বরফি আর মনে মনে বলছেন,
হাঁস ফাঁস ফুসফুস .... মুশ মুশ... দুরমুশ...!!!!

এরকম আরো কত আছে যাঁরা আকাট মূর্খের মত কথা বলে চলেন আর সবাই হাঁ করে শোনে--
কারণ বক্তার ক্ষমতা ও প্রতিপত্তি আছে ৷ তিনি আজকাল প্রকৃত শিক্ষিতদের আঙুলের ডগায় নাচান বলে দেখান ৷
আসলে নাচতে যাঁরা চান যাঁদের ঝুড়ি ঝুড়ি সার্টিফিকেট থাকলেও মনের মধ্যে শিক্ষার রশ্মি প্রবেশ করেনি, তাঁরা নাচতে চান। আর যাঁরা প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করেছেন তাঁরা এই বালখিল্যপনা থেকে অধরাই থেকেছেন ৷ ফলে ফাঁকা মাঠে খেলা হয় ৷

.
.
.

চারদিকটা এত ভারি বিষয়বস্তুতে ভরে গিয়েছে দেখে
আমি তিনদিন ধরে সারা বইমেলা ঘুরে অনেক ভেবে চিন্তে দুটো বই কিনেছি

১ রবীন্দনাতের... ও না...সরি... মানে বিদ্যাসাগরের 'বন্নপরিচয়'
২. আর মাওবাদীদের লেখা 'ম্যানিফেস্টো অব দা কমুনিসট পাটি'




অনেকগুলো মূল্যবান আলোচনা শুনেছি, ফ্রি তে....আর অনেক বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করেছি ৷

অনেক সেলিব্রিটি এখানে এসে তাঁদের 'সাঁঙসক্রিতিক' ভাবে উদ্বেল হৃদয়ের পরিচয় দিতে আসেন ইন্সট্যাগ্রামে হ্যাশট্যাগিয়ে ৷ নন-সেলেব সাধারন মানুষ 'আই লাভ কলকাতা বুক-ফেয়ার' লেখা সেলফি কর্নারে এক ঝলক সেলফি তোলার জন্য গুঁতোগুঁতি করে ৷ পুলিশ বেচারা তাদের সামাল দিতে যেই হুইসিল দেয়, তক্ষুনি পাশের মুক্তমঞ্চে পার্লার-থেকে-নিখুঁত-সেজে-আসা কণ্ঠশিল্পী বেসুরো গলায় গেয়ে ওঠেন -
- নাম নেব মহম্মদের কেটে যাবে ভয় বিপদের....

কোনো মতে পালিয়ে সোজ্জা SBI auditorium -এ

নীলাঞ্জনা ভৌমিক একজন অতি সাধারণ মধ্যবিও পরিবার থেকে উঠে এসে আজ বেশ নামকরা সাংবাদিক ও লেখিকা ৷ ওনার একটি বই সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে এবং অবশ্যই ইংরেজীতে ৷ উনি যখন SBI auditorium এ বক্তব্য রাখলেন তখন পুরোটাই ইংরেজিতে বললেন ৷ বাইরে ওনার সঙ্গে মিনিট পাঁচেকের কথোপকথন হল আমার ৷ আমি ভাল ইংরেজী জানি না, তাই পুরোটাই বাংলায় কথা হল ৷ উনি বাংলায় কথা বলার জন্য কোথাও আমাকে অসম্মানের চোখে দেখলেন না ৷ দিব্যি আড্ডা দিলেন ৷ তারপর ভাবলাম এরকম সুন্দর চিন্তাভাবনার মানুষের স্বাক্ষরটা নিয়েই রাখি ৷



আমার কাছে কাগজ নেই... এখন যে ফোনটি ব্যবহার করি সেটি সেকেন্ড হ্যান্ড (ইন্দ্রানী আর ব্যবহার করে না বলে নিয়ে নিয়েছি) হলেও বেশ স্মার্ট - একটি অমূল্য স্টাইলাস আছে ৷ তাই স্টাইলাস-টা স্যাট করে বের করে ফোনের নোটপ্যাডে স্বাক্ষর চাইতেই তিনি চকিত হয়ে বললেন,
- জীবনে এরকম সই প্রথম করব।
তারপর সই করতে করতে একটু ব্যাঙ্গের সুরেই বললেন,
- গোয়িং ডিজিটাল!
আমি স্বীকার করে নিয়েই বললাম,
- শেষ কবে হাতে লিখেছেন বলতে পারেন, কোনো ডক্যুমেন্টে সই করা ছাড়া?
উনিও স্বীকার করে নিয়ে অপ্রস্তুত হেসে বললেন
- মনে নেই জানেন !!!


লেখাটার ল্যাজা মুড়ো নেই - যেন সেই পিরানদেল্লোর সেই নাটকের মত "Six Characters in Search of an Author"
- নান্দীকার, মানে রুদ্রপ্রসাদ সেন সেটিকে বাংলায় রূপান্তরিত করেছেন ৷ নাম - কোথাকার চরিত্র কোথায় রেখেছ ।

মার্চের প্রথমেই মধুসূদন মঞ্চে শো আছে ৷