Friday, 4 November 2011

স্বাধীনতার গল্প

পূজো এসে গেল, মানে পূজোর ছুটি-ও এসে গেল। নতুন জামা-কাপড় পরে বড়দের সঙ্গে ঠাকুর দেখা, কত্তো রকমের খাবার খাওয়া, বন্দুক নিয়ে টিভি-র সুপার হিরো হয়ে যাওয়া – এত কাজের মধ্যে কি আর আমার গল্প শুনতে ভাল লাগবে? তোমরা পড়াশোনা কর নম্বর পাওয়ার জন্য। আমি কিন্তু লিখি তোমাদের মন ভাল থাকবে বলে। এর সঙ্গে ভাল-খারাপ, পাশ-ফেল এসবের কোন সম্পর্ক নেই।এই সংখ্যা থেকে আমি তোমাদের একটা বিরাট বড় গল্প বলতে শুরু করলাম। এই গল্প আমাদের দেশের সুপার-হিরোদের নিয়ে,যাঁরা আমাদের এনে দিয়েছেন স্বাধীনতা, উতসর্গ করেছেন নিজেদের প্রাণ। এখন আমরা তো স্বাধীন হয়ে গিয়েছি, তাই ঠিক বুঝব না কাজটা কত কঠিন ছিল। তোমাদের ঐ গল্পের সুপার-হিরোরাও হার মেনে যাবে, এঁদের সত্যিকারের গল্পের কাছে।




তোমরা তো সবাই জান যে, ইংরেজরা আমাদের দেশকে প্রায় দু’শো বছরের ও একটু বেশিদিন শাসন করেছেন বটে, কিন্তু, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শান্তিতে রাজত্ব তাঁরা করতে পারেন নি।



তখন ১৬০০ সাল। ইংল্যান্ডের রানী তখন এলিজ়াবেথ। পৃথিবীর খুব পরাক্রমী, শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে একটা ছিল ইংল্যান্ড। ব্যবসায়ীক পরিধি বাড়ানোর জন্য রাণী নিজে এক বাণিজ্যিক সংস্থাকে প্রাচ্যে ব্যবসা করার অনুমতি দেন। সেই সুবাদে ‘ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি’ নাম হয় তার। ইউরোপে বিরাট তার ব্যবসা, বিশাল তার প্রতিপত্তি।



ভারতে দিল্লির সিংহাসনে তখন আউরঙ্গজ়েবের দাদু জাহাঙ্গীর। সাল ১৬০৮। ততদিনে ইংল্যান্ডের মসনদে রাজা প্রথম জেমস। ব্রিটিশ ঈস্ট ইন্ডিয়া কোঃ তাঁর কাছ থেকে সুপারিশপত্র নিয়ে সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছে আসেন।তাতে খুব একটা কাজ হয় না।কিন্তু কোম্পানি হাল ছাড়ে নি। আবার ১৬১৫ সালে স্যর টমাস রো –কে আবার সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছে পাঠায় কোম্পানি।এবার কোম্পানির ভারতে আসার বানিজ্যিক উদ্দেশ্য সফল হয়।



তোমরা শুনলে অবাক হবে যে তখন বঙ্গদেশ বিদেশী দের প্রধান প্রবেশদ্বার ছিল। কোলকাতার খুব কাছ দিয়ে একটা নদী বয়ে গেছে। সরস্বতী তার নাম। তবে এখন যে কোনো সাধারণ সরু খাল-ও তার থেকে চওড়া। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে কোম্পানির বিরাট বিরাট জাহাজ ঐ নদীপথেই যাতায়াত করত।



যাক গে, যে কথায় ছিলাম তাতে ফিরে আসি। সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর কোম্পানি তাদের ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেয় বাংলার হুগলী ও ওড়িশার বালেশ্বরকে। এছাড়া ইংরেজরা আগ্রা, আমেদাবাদ, সুরাট, বোম্বাই ও মাদ্রাজে বানিজ্য-কুঠি স্থাপনের অধিকার পায়।



ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি যাঁরা চালাতেন, মানে তার যে বোর্ড অফ ডিরেক্টরস, ভারতে ব্যবসা করতে আসা্র আগে তাঁরা তাঁদের মিটিং-এ সিদ্ধান্ত নেন যে কোম্পানি ভারতে শুধুমাত্র ব্যবসা করতেই যাবে; সেখানকার রাজনীতি বা সমাজতন্ত্রে কোনও ভাবেই নাক গলাবে না। ব্যবসা করতে ঠিক যততুকু প্রয়োজন সেইটুকু কূটনীতির ব্যবহার করা যাবে।



কোম্পানি ব্যবসা করতে এল ভারতে সেই নীতি নিয়ে। ব্যবসাও বেশ ফুলে ফেঁপে উঠল। কিন্তু কোম্পানিতে কর্মরত বিভিন্ন সাহেব আধিকারিক ও কর্মচারী-দের লোভ বাড়তে থাকে। তখন তারা ঐ অনুমোদিত কূটনীতি-কে অস্ত্র করে নিজেদের অত্যধিক লাভের জন্য ব্যবহার করতে শুরু করেন।



১৬১৫ সালে যখন স্যার টমাস রো সম্রাট জাহাঙ্গীরের কাছ থেকে ভারতে ব্যবসা করার অনুমতি নিচ্ছেন, তখন কিন্তু পর্তুগীজ-রা ভারতে জাঁকিয়ে ব্যবসা করছে। পশ্চিম ভারতে ইংরেজরা সুরাটে তাদের প্রধান বানিজ্যকেন্দ্র গড়ে তোলে। পর্তুগীজদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল না রাখলে সেখানে ব্যবসা করাই দায়। তাই ১৬৬১ সালে কোম্পানির ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা করার জন্য স্বয়ং ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লস পর্তুগীজ রাজকন্যা ক্যাথরিন ব্রাগানজ়া কে বিয়ে করেন। আর বিয়ের যৌতুক হিসেবে পান গোটা বোম্বাই শহর।রাজা দ্বিতীয় চার্লস আর ইংল্যান্ড-এ বসে বোম্বাই নিয়ে কি করবেন! প্রত্যেক বছর ১০ পাউন্ড কর পাওয়ার বিনিময়ে রাজা এই বোম্বাই শহর কোম্পানিকে দিয়ে দেন।



অনুমোদন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানি কোন সুযোগ ছাড়েনি। তারা মাদ্রাজে তৈরী করে এক সুরক্ষিত কুঠি। আউরঙ্গজ়েবের রাজত্বকালের শেষ দিকে শুল্ক দেওয়া নিয়ে ইংরেজ আর মোগলদের যুদ্ধ শুরু হয়। বাংলার শক্ত ঘাঁটি হুগলী ছেড়ে ইংরেজরা চলে যায়। আবার পরে দুই পক্ষের সন্ধি হলে জোব চার্ণক নামে কোম্পানির এক ইংরেজ কর্মচারী হুগলী নদীর তীরে সুতানূটি গ্রামে এক কুঠি তৈরী করেন। ধীরে ধীরে সুতানূটি, গোবিন্দপুর ও কোলকাতা গ্রাম নিয়ে পত্তন হয় কোলকাতা শহরের। এর ও কিছুদিন পরে ১৭০০ শালে তৈরী হয় ফোর্ট উইলিয়ম দুর্গ। পরে যে কোলকাতা শহর ইংরেজদের ভারত শাসনের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠে, সে তো তোমাদের সকলের জানা।



মোগল সম্রাট অ্নুমতি দিলে কি হবে, এই বিদেশী ব্যবসায়ীদের অনেক ভারতীয় রাজাই কিন্তু পছন্দ করতেন না। বলতে গেলে এঁদের সঙ্গে ইংরেজদের আদায়-কাঁচকলায় ছিল। এঁদের মধ্যে বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ, সুজাউদ্দিন খাঁ, আলিবর্দী খাঁ, হায়দরাবাদের শাসক চিন কিলিজ খাঁ, মহীশুরের রাজা দেবরাজ ও নজ্ঞরাজ, অযোধ্যার শাসক সাদ্দাত খাঁ, আবুল মনসুর খাঁ, মারাঠার শাসক শাহু, বালাজি বিশ্বনাথ, বালাজি বাজিরাও, কর্ণাটকের নবাব দোস্ত আলি ও আরও অনেকের সঙ্গে ইংরেজদের সম্পর্ক খুব খারাপ হয়।



দিল্লীর মসনদে তখন ঢাল-তরোয়াল-বিহীন সম্রাট ফারুকশিয়র। তাঁকে ব্যবহার করে বাংলায় হঠাত্ জারী হয় ‘ফারুকশিয়রের ফরমান’। ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরাট কূটনৈ্তিক জয় হয় বটে, কিন্তু সারা বাংলায় আগুণ জ্বলে ওঠে।

প্রায় ১০০ বছরের কিছু বেশি দিনের গল্প তোমরা শুনে ফেললে তোমরা। বলতে পারো আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুপার হিরোদের যুগ শুরু হল এখান থেকেই।

বিভিন্ন পর্বে আমি পর পর সেই সব বীরগাথা তোমাদের বলব। তোমাদের কেমন লাগছে জানিও কিন্তু।





 
কি কেমন আছ তুমি? পূজো কেমন কাটল, ক’টা ঠাকুর দেখলে, কি কি খেলে, কোথায় কোথায় বেড়াতে গেলে এসব আমাদের লিখে জানাও কিন্তু!!!


তবে আমি কিন্তু একটা কথা জানি – এতো সব কিছুর মধ্যেও কিন্তু তোমার মনে সেই প্রশ্নটা লুকিয়ে আছে – ‘ফারুকশিয়রের ফরমান’-এ কি এমন ছিল যে সারা বাংলায় আগুন জ্বলে উঠল?

আসলে কি জান, মোগল সম্রাট ঔরংজেবের পর কোনো মোগল সম্রাট-ই আর সেই বিশাল সাম্রাজ্যকে সেভাবে বেঁধে রাখতে পারেননি। নামেই তাঁরা সম্রাট ছিলেন।ফারুকশিয়র-ও তাই।তখন বাংলার নবাব ছিলেন মুর্শিদকুলি খাঁ। তিনি বাংলার বুকে দাপটের সাথে স্বসাশন চালাতেন। মোগল সম্রাটের অধীনতা শুধু একটা তকমা ছিল।মোগল সম্রাটের নীতির বিরোধিতা করলেও তিনি কখনই তার অবমাননা করেন নি।

‘ফারুকশিয়রের ফরমান’-বেশ জটিল ব্যাপার। তবে তোমাকে তো ব্যাপারটা জানতে হবে!তোমায় বরং চুম্বকে বলিঃ

ফারুকশিয়রের ফরমান অনুসারে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি

১) মাত্র তিন হাজার টাকার বিনিময়ে বিনাশুল্কে বাংলায় বানিজ্য করার অধিকার পায়;

২)কলকাতা, সুতানুটি ও গোবিন্দপুরের পাশাপাশি আরও ৩৮-টি গ্রাম কেনার অনুমতি পায়।

৩)প্রয়োজনে মুর্শিদাবাদের অর্থাৎ বাংলার নবাবের ট্যাঁকশাল ব্যবহার করার অনুমতি পর্যন্ত লাভ করে।

১৭১৭ সালের এই ফর্মান কে ঘিরে বাংলার তখনকার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ এর সংগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরোধ চরমে ওঠে, কারণ, মুর্শিদের মত প্রতাপশালী নবাবের পক্ষে এই ফর্মান নীরবে মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। এর জন্যে বিরাট বানিজ্য শুল্ক ক্ষতির সম্ভাবনা ছিল। কোম্পানির নিঃশুল্ক বাণিজ্যের ফলে দেশীয় বণিকদের বিরাট ব্যবসা কমে যাবার সম্ভাবনা ছিল। তবে নবাবের পক্ষে এই সনদকে অস্বীকার করা অসম্ভব ছিল, কারন নবাবের যতই ক্ষমতা থাক না কেন, আসলে তিনি ছিলেন দিল্লী-র সম্রাটের অধীনস্থ কর্মচারী। আইনতঃ সম্রাটের আদেশ মানতে তিনি বাধ্য। মুর্শিদ ছিলেন বিচক্ষণ নবাব। তাই তিনি সরাসরি এই সনদের বিরোধীতা না করলেও, পরোক্ষভাবে কোম্পানি যাতে এর সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে না পারে, সে চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখেন নি।

 
 
 
 

কি বন্ধু কেমন আছ? খুব রঙ খেলেছ তো দোলে? ১৪১৮ সনের নববর্ষ কেমন কাটালে বলো? এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখি তোমায় – নববর্ষ কিন্তু ইংরেজী New Year এর মতই গুরুত্বপূর্ণ, হয়তো খানিকটা বেশিই, কারণ আমরা আসলে বাঙ্গালী তো! যতই ইংরেজী মিডিয়াম স্কুলে পড় না কেন, নিজের ভাষা, মাতৃভাষা কে কোনদিন অবজ্ঞা কোরো না কিন্তু। তুমি কি জান, UNESCO নামে একটা বিশ্বসংস্থা বাংলা ভাষা কে ‘the sweetest language of all the languages in the world’ (বিশ্বের সমস্ত ভাষার মধ্যে সবথেকে মিষ্টি ভাষা) বলে গত বছর ঘোষণা করেছে! যে কোনো ভাষা বেঁচে থাকে তার ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে। শুনলে অবাক হবে যে সারা পৃথিবী তে প্রায় হাজার পাঁচেক ভাষা আছে। আগামী দশ বছরের মধ্যে প্রায় দু’হাজারের বেশি ভাষা শুধু ব্যবহারের অভাবে অবলুপ্ত হয়ে যাবে। মনে রেখো যে আমাদের দেশের মণীষী রা ইংরেজী তে দড় ছিলেন বটে, কিন্তু কোন অবস্থাতেই, বাংলা ভাষা, মাতৃভাষা কে অবজ্ঞা করে নয়। মাইকেল মধুসূদন দত্ত-র কথা তো তুমি জানই। ঈংরেজি ভাষার মোহে অন্ধ হয়ে খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করলেন। চৌকস ছিলেন ইংরেজীতে। বহু ইংরেজ লেখকও তাঁর কাছে ম্লান। কিন্তু মাতৃভাষা নয় বলে কলকে পেলেন না। নিজের ভুল বুঝতে পেরে লেখা শুরু করলেন মাতৃভাষা বাংলায়।তারপর তাঁকে আর আটকানো যায় নি।

যাই হোক, তুমি কিন্তু কখনই নিজের মাতৃভাষাকে অবজ্ঞা কোরো না। কেউ হাসাহাসি করলে তাদেরকে বোঝাবে তুমি যে সারা পৃথিবীতে পাঁচ হাজার ভাষার মধ্যে বাংলা কিন্তু মাত্র ছ’ নম্বরে, আর ইংরেজি কিন্তু তিন এ, প্রথমে নয়।ইংরেজি কিন্তু একটা বিশ্বব্যাপি ব্যবহৃত ভাষা বা Global Language হয়েও তিন নম্বরে আর বাংলা সেখানে একটা স্থাণীয় ভাষা বা Local Language হওয়া সত্বেও মাত্র ছয় নম্বরে রয়েছে। বাঙ্গালী হিসেবে গর্ব হচ্ছে না তোমার? আমার ত’ হচ্ছে!

ঠিক এই রকম গর্ব আমার হয় বাংলার নবাব সিরাজদ্দৌলার কথা ভাবলে। আওরঙ্গজেব ত ১৭০৭ সালে দেহ রাখলেন। মুঘাল সাম্রাজ্যের বাঁধন ভেঙ্গে পড়ল। ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানি অন্যান্য ইউরোপীয় বণিকদের সাথে হাত মিলিয়ে ভারতের নান প্রান্তে চুটিয়ে ব্যবসা করছে আর বাধা এলেই নানান ষড়যন্ত্র করে দখল নিচ্ছে সামন্ত রাজাদের। সৈন্য-সামন্ত, অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ছোটখাটো যুদ্ধও চালিয়েই যাচ্ছে।

তোমাদের ত আগেই বলেছি যে ইংরেজদের ঘাঁটি ছিল কলকাতায়। বাংলার নবাব তখন সিরাজদ্দৌলা। তিনি আবার ইংরেজ বণিকদের ঔদ্ধত্য আর স্বেচ্ছাচারিতা একদম পছন্দ করতেন না। ১৭৫৬ সালে ইংরেজদের শায়েস্তা করার জন্য সিরাজ বিশাল বাহিনী নিয়ে কলকাতা আক্রমণ করেন আর নিমেষে তার দখল নেন।ইংরেজ বণিকদের সে দিন ই শেষ দিন ছিল যদি না মীরজাফর থাকতেন।সিরাজের প্রধান সেনাপতি মিরজাফর ই সেদিন ইংরেজ প্রধাণ সেনাপতি লর্ড ক্লাইভ ও তাঁর অনুচরদের নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দেন।শুরু হয় এক নতুন ষড়যন্ত্রের ইতিহাস। লর্ড ক্লাইভ বোধ হয় নিজেও জানতেন না যে আগামী এক বছরের ষড়যন্ত্র সারা ভারতের ইতিহাস কে দু’শ বছরের জন্য বদলে দিতে চলেছে।

১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ – ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয় আমার। একটা আম বাগানে সামান্য একটা যুদ্ধ, যার নিয়তি নিয়ে কোনো প্রশ্নই ওঠে না। ইংরেজ সেনাপতি লর্ড ক্লাইভ-এর অধীনে মাত্র হাজার তিনেক সৈন্য, যাদের মধ্যে আবার মাত্র আটশ’ জন হল ইউরোপীয়। আর লর্ড ক্লাইভ-এর সহযোগী এডমির্যায়ল ওয়াটসন। সিরাজের সৈন্য সে তুলনায় বিশালঃ শুধ্য ঘোড়সওয়ারই ছিল আঠারো হাজার, ছিল পঞ্চাশ হাজার পদাতিক। নবাব সিরাজের হারের কোন কারণ ই নেই; তিনি অতি বড় দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেন নি যে এই যুদ্ধ তিনি হারতে পারেন।

কি হল তার পর?

পরের সংখ্যায় বলব।তোমরা সবাই ভাল থেকো কিন্তু।

Thursday, 3 November 2011

The Making of a Man

Lies are the best truths.
My innocence turned crispy mature through it.
I followed only truth, once;
Poignance followed me.
Now I know how to tell lies.
And am a 'good man'.

Ugliness is a beauty--
It made me a man complete.
I sought only beauty once;
Received gruesome ugliness.
Now I know how to handle beauty with ugliness.
Am a 'better man' than others around.

A mind must speak its heart.
I used to do it instinctively.
Fool I had been
'Til I turned a man.
Now I know how to wind my mind to break hearts.
Am the best, you can think of.

তোমাকে না পাওয়া

তোমার চিবুকের দাগের থেকেও নিবিড়
তোমাকে না পাওয়া।
ঘড়ির কাঁটার ভুলের শাস্তি
তোমাকে না পাওয়া।
সূর্য ঝলসে পুড়িয়ে সন্ধ্যেতে নেমে যায়
তোমাকে না পাওয়া।
বিস্রস্ত চুলের ফাঁকে গভীর  চোখে
তোমাকে না পাওয়া।

আমার হাতের রেখাতে ভাগ্য
তোমাকে না পাওয়া।
আমার বুকের ছোট্ট কোনেতে জেগে থাকা রাত
তোমাকে না পাওয়া।
আমার প্রিয় গানের প্রাণেতে
তোমাকে না পাওয়া।
আমার অযথা কবিতার ক্রমে
তোমাকে না পাওয়া।

বিধাতা প্রেমের মন্ত্র লিখেছে
তোমাকে না পাওয়া।

আমি আর সে

নিঃশব্দতা স্মৃতি বয়ে আনে,
মুখোমুখি আমি আর সে, কত কথা খুঁজে ফিরি,
গালে হাত দিয়ে খুঁজি কত মানে,
সকাল, বিকেল, সন্ধ্যে -- জীবনানন্দ কোজাগরী।

নৈঃশব্দ কত স্মৃতি গড়ে চলে,
হাতে হাত রেখে আমি আর সে,  কত পট আঁকি বসে,
আঙ্গুলের ফাঁকে সৃজন কথা বলে,
আমার বিশ্বাসে আকাশের তারা পড়ে খসে।

শব্দহীনতা কত স্মৃতি মুছে ফেলে,
আগুন মাটির নিচে কত বীজে নিশ্চিত আগামী;
মৃত্যুর মূর্ছণা ইতিহাস গড়ে চলে,
কত শব্দের ভিড়ে লীন নৈঃশব্দ আর আমি।

প্রজাপতি

একদিন সকালে হঠাৎ সে আমায় বললে
শুঁয়োপোকাটাকে প্রজাপতি করে দিতে পার?
আমি দিশেহারা--
লতায় পাতায় ফুলে জড়িয়ে নিতেই বললে, ছাড়ো।

ধরলাম রঙ মাখানো তুলি,
কাচ ধোয়া অবন ঠাকুর, বেজ, আইচ,
ডানা ভরছে স্বপ্ন ফ্রেস্কো,
সারাদিন, সারারাত ইজ়েল ছেড়ে, ফ্রিজের স্যান্ডউইচ।

প্রজাপতি প্রজাপতি, লালচে সিঁদুর চুলে,
শুঁয়োপোকা ছিলে তুমি কবেই গেছ ভুলে।
ভুলের আমি ভুলের তুমি, ভুলই যেন ঠিক,
গেলাস জুড়ে ভুল জমেছে, জ্বলছে কাবাব শিক।