কিন্তু যে স্থির বিশ্বাসে আওরঙজ়েব এত বছর ধরে দাক্ষিণাত্যের মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন, যে একদিন না একদিন কোনো একটা ভুল তো ঠিক করবেনই শম্ভাজী, তা সত্যি-ই একদিন সঠিক প্রমাণিত হল। শম্ভাজী ও তাঁর সেনাপতিরা যখন আওরঙজ়েবকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ছেন, ঠিক তখন শম্ভাজী নিজেই একেবারে ধরা পড়লেন মোগল বাদশার।
কাল হল শম্ভাজীর অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। তিনি তাঁর প্রিয়তম বন্ধুবর ও সভাকবি কবি কলস-কে নিয়ে যখন চুপি চুপি সঙ্গমেশ্বরে আনন্দ উল্লাস করতে গেলেন তখন একেবারে অরক্ষিত ও সেনাবাহিনী বর্জিত অবস্থায়। পুরো মহারাষ্ট্র তখন মোগলরা ঘিরে রেখেছে। চারিদিকে মোগলদের গুপ্তচর। শম্ভাজীকে ধরার জন্য চিরুনি তল্লাসী চলছে। স্বাভাবিক ভাবেই, এই পরিস্থিতিতে শম্ভাজীকে ওভাবে অরক্ষিত অবস্থায় কেউই সঙ্গমেশ্বরে যেতে দিতে চাইলেন না। কিন্তু কে কার কথা শোনে! একে উদ্ধত, তার ওপরে আবার খামখেয়ালি ও বদমেজাজী। ওনার সঙ্গমেশ্বরে যাওয়া কেউ আটকাতে পারল না।
আওরঙজ়েব শম্ভাজীকে ধরার দায়িত্ব দিলেন শেখ নিজ়ামকে। শেখ নিজ়াম তখন সদ্য গোলকোন্ডা থেকে মোগল পক্ষে যোগদান করেছেন। আওরঙজ়েবের স্থির বিশ্বাস ছিল যে শম্ভাজী এবার ধরা পড়বেনই। যেভাবে মহারাষ্ট্রকে চরিদিক থেকে অবরূদ্ধ করেছেন, যে ভাবে সারা মহারাষ্ট্রে কয়েক লক্ষ সেনা ছড়িয়ে দিয়েছেন, যত সংখ্যায় গুপ্তচরেরা প্রতিনিয়ত শম্ভাজীর ওপরে নজর রাখছে, তাতে নিশ্চিতভাবে শম্ভাজী অচিরেই ধরা পড়বেন। আর হলও তাই। শেখ নিজ়াম অতর্কিতে সঙ্গমেশ্বরে আক্রমণ হানলেন। আগেই বলা হয়েছে যে খুব ঘনিষ্ঠ কিছু পারিষদ ছাড়া শম্ভাজীর সঙ্গে আর কেউ ছিল না। মোগল গুপ্তচরেদের মাধ্যমে নিশ্চিত খবর পেলেন আওরঙজ়েব। শম্ভাজীর অনেক গৃহশত্রুও ছিল। তাঁদের মারফ়ৎ নিয়মিত খবর আদান-প্রদান হত মোগলদের সঙ্গে। খবর গেল সঙ্গমেশ্বরে প্রায় একলা রয়েছেন শম্ভাজী। এই সুবর্ণ সুযোগ কেউ ছাড়ে! আলমগীর আর কালবিলম্ব করলেন না। আদেশ দিলেন মুকারব খাঁ-কে। মুকারব খাঁ আর কেউ নন, শেখ নিজ়ামের মোগল দলে যোগদানের পরে নতুন নাম। মুকারব খাঁ নিজের ঘনিষ্ঠ সেনা ও গুপ্তচরদের নিয়ে রওয়ানা হলেন সঙ্গমেশ্বরের উদ্দেশ্যে। শম্ভাজীর অনেক রাজনৈতিক শত্রু ছিল। তারা মুকারব খাঁ ও তাঁর দলকে এক দুর্গম পাহাড়ি জঙ্গলের পথ ধরে সঙ্গমেশ্বরে নিয়ে গেল। সঙ্গমেশ্বরে শম্ভাজী ও কবি কলস মোগল সেনাদের অতর্কিত আক্রমণে নিজেদের রক্ষা করতে পারলেন না। বলাই বাহুল্য যে শম্ভাজী তাঁর দলবল সমেত খুব অসহায়ের মত মুকারব খাঁর হাতে ধরা পড়লেন। সঙ্গমেশ্বর থেকে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হল সোজা আলমগীরের কাছে।
ওনারা বন্দী হওয়ার পরে প্রথমেই ওনাদের অসম্মানের প্রথম ধাপ পেরোতে হল আওরঙজ়েবের হাতে। জোকারের পোশাক পরিয়ে মাদী ঘোড়ার পিঠে প্রকাশ্য লোকালয়ের মধ্য দিয়ে ওনাদের প্যারেড করানো হল। দ্বিতীয় ধাপ ছিল আওরঙজ়েবের কিছু শর্ত। সেগুলিতে রাজি হলে, পরম শত্রু হলেও, আওরঙজ়েব শম্ভাজীকে মুক্তি দিয়ে দেবেন বলে জানালেন।
শর্ত গুলি হল:
১) এতদিন ধরে মোগলদের থেকে লুঠ করা ও পৈতৃক ধনরত্ন কোথায় আছে তার হদিশ দিতে হবে।
২) মোগলদের পক্ষের কোন কোন ব্যক্তি শম্ভাজীর বেতনভুক, ও মোগলদের বিশ্বাসঘাতক, তাঁদের নাম বলতে হবে।
আর
৩) হিন্দু থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে হবে।
সব-ই ঠিক ছিল, কিন্তু শম্ভাজী ছিলেন একাধারে উগ্র, ক্রোধী, উদ্ধত এবং মাত্রাজ্ঞানহীন। ফলে এই সমস্ত শর্তের এমন উত্তর দিলেন, যে আওরঙজ়েব আর সেটা সহ্য করতে পারলেন না।
আওরঙজ়েবকে শম্ভাজী বলেছিলেন,
- আপনার কনিষ্ঠ কন্যার সাথে যদি আমার বিবাহ-ও দেন, তাহলেও আমি আপনার কোনো শর্তেই রাজী নই।
আওরঙজ়েব এত অপমানিত জীবনে কোনোদিন হন নি! একটা পার্বত্য মুষিকের ছেলের এত স্পর্ধা যে সে সম্রাটের মেয়েকে বিবাহ করার প্রস্তাব দেওয়ার মত দুঃসাহস দেখায় !
শম্ভাজীর ওপরে শুরু হল অকথ্য অত্যাচার। চলল টানা চল্লিশ দিন ধরে। নখ উপড়ে নেওয়া হল, চামড়া টেনে তুলে নেওয় হল। আগুণের ছ্যাঁকা দেওয়া হল সারা শরীরে। চোখ খুবলে নেওয়া হল। জিভ কেটে দেওয়া হল। কিন্তু অদ্ভুত এক্গুঁয়েমি আর অসামান্য শারীরিক ক্ষমতার বলে এসব অত্যাচারকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে চললেন শম্ভাজী শিকলবন্দী অবস্থায়।
শেষে মানসিক ভাবে আওরঙজ়েব শম্ভাজীর কাছে হেরে ক্রোধে অন্ধ হলেন।
শম্ভাজীকে হত্যা করার নির্দেশ দিলেন।
শম্ভাজীকে হত্যা করা হল ১১ই মার্চ, ১৬৮৯ তারিখে।
শম্ভাজীর দেহ-কে টুকরো টুকরো করে পুরো তুলাপুরের বিভিন্ন স্থানে ফেলে আসা হল। (তুলাপুরে রয়েছে শম্ভাজীর সমাধি)। আর বুরহানপুরে টাঙিয়ে রাখা হল শম্ভাজীর ছেদিত বিকৃত মুণ্ড। মোগলদের সাথে টক্কর নেওয়া সামান্য মারাঠা রাজার কি হাল হতে পারে, সারা দেশ-কে দেখাতে চাইলেন মোগল বাদশা আওরঙজ়েব। সত্যি-ই সবার বুক কেঁপে উঠল আওরঙজ়েবের এই হৃদয়হীন নৃশংসতা দেখে।
এরপরে আওরঙজ়েব ভাবলেন, শম্ভাজীর মৃত্যুর পরে দাক্ষিণাত্য নিষ্কন্টক হল, কারণ মারাঠাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আর কেউ রইল না। মারাঠারাও বুঝি তাঁর পদানত হল। কিন্তু আওরঙজ়েবের আবার অঙ্কে ভুল হল। শম্ভাজীর বৈমাত্রেয় ভাই রাজারাম পরবর্তী ছত্রপতি হলেন ও মোগলদের বিরূদ্ধে সেই লড়াই পুরোদমে জারি রাখলেন।
কিন্তু রাজারাম শম্ভাজীর মত পরাক্রমী ছিলেন না। তিনি একটু নরম প্রকৃতির মানুষ। সে উনি নিজে ওর্কম হলে কি হবে! মারাঠা রাজত্বে শিবাজীর আমল থেকে মারাঠা রাজসিংহাসনের অনুগত সেনাপতিদের অভাব ছিল না। আর শুধু মারাঠা সম্রাটরা নন, সে সব মারাঠা সেনাপতিদের নামে মোগল সেনাদের রাতের ঘুম উড়ে যেত, এমন ভীত ছিলেন তারা। কিন্তু লড়াই জারি রাখলে কি হবে, নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে ভয়ে দুর্বলচিত্ত রাজারাম জিঞ্জি দুর্গে আশ্রয় নিলেন। ।
এদিকে শম্ভাজীর মৃত্যুর পর আওরঙজ়েব শম্ভাজীর স্ত্রী ও পুত্র-কে সোজা পাঠিয়ে দিলেন দিল্লী-তে। সেখানে তাঁরা গৃহবন্দী হলেও নির্দেশ রইল বাদশার যে শম্ভাজীর স্ত্রী যেশুবাঈ ও পুত্র শাহুজীর লালন-পালন-দিনযাপনে যেন কোনো সমস্যা না হয়। আর অন্যদিকে রাজারাম নিজেই জিঞ্জি-তে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাতে আওরঙজ়েবের সুবিধাই হল।
রাজারামকে দমন করতে আওরঙজ়েব নিয়োগ করলেন তাঁর আর এক বিশ্বস্ত সেনাপতি জ়ুলফ়িকর খাঁ-কে। জ়ুলফ়িকর খাঁ জিঞ্জি অবরোধ করে রাখলেন। রাজারাম জিঞ্জিতে অবরুদ্ধ হলেও তাঁর সেনাপতিরা কিন্তু সারা মহারাষ্ট্র জুড়ে মোগলদের নাস্তানাবুদ করে ছাড়তে লাগলেন। এই মহাপরক্রমী ও বীর মারাঠা সেনাপতিদের কথা না বললে মারাঠাদের ইতিহাসের কথা অসম্পূর্ণ থেকে যায়।
মোগলরা সে সব সেনাপতিদের ভয়ে এমন কাঁটা হয়ে থাকত যে শুধু রাতে নয়, এমনকি দিনের বেলাতেও ঘুমোতে পারত না। একটা মিথ তৈরী হয়ে গিয়েছিল যে মারাঠা সেনারা যে কোনো সময়ে যে কোনো আকারে আক্রমণ করতে পারে। প্রায় পাঁচ লক্ষের মোগল বাহিনী তিরিশ চল্লিশ হাজার মারাঠা সেনার ভয়ে জুজু হয়ে যায় । ভাবা যায়! কি সাংঘাতিক বুদ্ধি, কি প্রচণ্ড সাহস!
এই সময়ে মারাঠাদের প্রথম সারির কয়েকজন সেনানায়েকের নাম বলছি:
ধনাজি যাদব
শান্তাজী ঘোরপাড়ে
রামচন্দ্র অমাত্য
আর প্রধান সেনাপতি হাম্বিররাও মোহিতে।
হাম্বিররাও ছিলেন শিবাজীর বেয়াই মশাই, কারণ ছোটছেলে রাজারামের স্ত্রী তারাবাই ছিলেন হাম্বিররাও-এর কন্যা | এই তারাবাই মারাঠা ইতিহাসে যে আঁচড় কেটে গেছেন তা কম নয়। টাইমলাইনে উনি এলে সে কথা বলা যাবে |
যাই হোক পারিবারিক এই সম্পর্কের বাইরে শিবাজীর সময় থেকে শম্ভাজী পর্যন্ত হাম্বিররাও ছিলেন 'সরসেনানায়ক' বা প্রধান সেনাপতি।
শান্তাজী ঘোরপাড়ে ছিলেন এমন এক সেনানায়ক যাঁকে আধুনিক ইতিহাসবিদরা ভারতের সে সময়কার ʼভারতীয় নেপোলিয়ানʼ বলে আখ্যা দিয়েছেন। কারণ শান্তাজি কোনো যুদ্ধই হারতেন না। সে সময়কার হেন কোনো বিখ্যাত মোগল সেনাপতি নেই যিনি তাঁর কাছে পরাজিত হন নি। মোগলরা তাঁর ভয়ে তটস্থ হয়ে থাকত |
শম্ভাজীর মৃত্যুর পরে শান্তাজী আওরঙজেবের ছাউনি সরাসরি আক্রমণ করে একদম ধ্বংস করে দেন। আওরঙজেবের কপাল ভাল যে সেদিন উনি সেখানে ছিলেন না। তাঁকে না পেয়ে শান্তাজী ওই ছাউনি থেকে মোগল বাদশার রাজচিহ্ন সমেত দুটো সোনার স্তম্ভ উপড়ে নিয়ে চলে আসেন |
রাজারামকে জুলফিকর খাঁ জিঞ্জী দুর্গে অবরুদ্ধ করে রাখলেও সার্বিকভাবে কোনো ফল হল না। আওরঙজ়েব মজ্জায় মজ্জায় টের পেলেন কেন পঁচিশবছর ধরে দাক্ষিণাত্যে থেকেও মারাঠাদের কিছুই বিগড়োতে পারেন নি। এখানে নায়ক একা সিংহাসনে যিনি বসে আছেন তিনি নন। সিংহাসনকে সর্বোতভাবে সম্মান দিয়ে কিভাবে একজোট থেকে লড়াই চালানো যায় তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এই মারাঠা সেনাপতিরা |
সেনাপতি জুলফিকার খান কিন্তু অন্য তালে আছেন। কথিত আছে তাঁর সাথে তলে তলে রাজারামের কিন্তু একটা নিঃশব্দ বোঝাপড়া চলছিল - কেউই কাউকে আক্রমন করবে না, ক্ষতিও করবে না।
আসলে জুলফিকার খান আওরঙজ়েবের মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ভেবেছিলেন আওরঙজ়েবের মৃত্যুর পর তিনি পরবর্তী মোগল বাদশা নির্বাচনে আক্ষরিকভাবে একটি বিশেষ ভূমিকা নেবেন এবং মোগল সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণের সিংহভাগ তাঁর দখলে থাকবে। তিনিই হবেন নির্ণায়ক শক্তি। জুলফিকার খাঁর বাবা তখন ছিলেন আওরঙজ়েবের প্রধানমন্ত্রী বা ‘ওয়জির’। সুতরাং সম্রাটের মৃত্যুর পর একটা বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে যে পরবর্তী মোগল সম্রাটের ক্ষেত্রে জুলফিকার খাঁই হবেন প্রধানমন্ত্রী। সোজা কথা জুলফিকার খান ভবিষ্যতে মোগল বাদশার প্রধানমন্ত্রী হয়ে সমগ্র ভারত চালাবেন এবং যে মারাঠাদের সাথে এত বিরোধ, যে মারাঠাদের পঁচিশ বছর ধরে আওরঙ্গজেব কিছুই করতে পারেননি, তারাই হবে তাঁর প্রধান শক্তি।
জুলফিকার খাঁর দ্বারা জিঞ্জী দুর্গ এতদিনেও জয় হচ্ছে না দেখে আওরংজেবের মনে অন্য সন্দেহের উদয় হল। তিনি ভাবতে শুরু করলেন যে জুলফিকার খাঁ রাজরামের সাথে একজোট হয়েছেন। তিনি এবার জুলফিকারকে কঠোর ভাবে নির্দেশ পাঠালেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জুলফিকার খাঁ যেন জিঞ্জি অধিকার করেন ৷ এই সময়ে ঘটে গেল আরেকটি অঘটন ৷
দীর্ঘ রোগভোগের পরে রাজারাম দেহ রাখলেন।
সময় ঠিক ১৭০০ খ্রীষ্টাব্দ।
অর্থাৎ শিবাজীর উত্তর-পুরুষ আওরংজেবের জীবদ্দশাতেই শেষ হয়ে গেল |
ইতিহাস বলে তখনও আওরঙজ়েবের মৃত্যুর আরও সাত বছর বাকি। বৃদ্ধ সম্রাট আওরঙজ়েব ভাবলেন দাক্ষিণাত্যের সব সমস্যার নিরসন হল।
কিন্তু না। মারাঠাদের ভাগ্যাকাশে উদিত হলেন আর এক ধূমকেতু।
কে তিনি?
(ক্রমশঃ)
*************
Sambhaji: Part 3
Whatever was the character of Sambhaji, one thing is loud and clear that Shambhaji's bravery is unquestionable. The Mughal emperor Aurangzeb knew that very well. Sambhaji was no less arrogant and fearless than Aurangzeb. Sambhaji never had any specific plan. That was the most dangerous part in him. No one could fathom what he would do, and how and when. Instead he repeatedly thwarted all the plans of his arch rival- the Mughals- and a brilliant and cruel-minded emperor like Aurangzeb, and he even won, every time. Aurangzeb, who came to conquer the Deccan with almost the entire Mughal army, could not bring these Marathas to their knees, just because Sambhaji stood tall, unexpectedly. Those days, unfortunately, Shivaji could not witness.
But the firm belief with which Aurangzeb had been sticking to the Deccan land for so many years, that one day or another, Shambhaji would make some mistake, proved to be correct. When Sambhaji and his generals were constantly winning against Aurangzeb, everywhere in Maharashtra, Shambhaji himself was captured by the Mughal emperor.
It was Shambhaji's blant overconfidence. When he went to Sangameshwar with his beloved friend and poet Kabi Kalas, he did not take anyone else with him. He went there to celebrate in a completely unprotected and unarmed state. He knew well that the entire Maharashtra was surrounded by the Mughals. Everywhere there were Mughal spies frantically working to entrap and capture Sambhaji. Naturally, in this situation, no one of the Maratha legion wanted to let Shambhaji go to Sangameshwar in such an unprotected state. But Sambhaji would not listen to anyone. He is arrogant, and on top of that, he is capricious and bad-tempered. Consequently, no one could stop him from going to Sangameshwar.
Aurangzeb bestowed the task of capturing Shambhaji to Sheikh Nizam. Sheikh Nizam had just joined the Mughal legion from Golconda. This time Aurangzeb was sure that Shambhaji would be captured. The way he had blockaded Maharashtra from all sides, the way he had spread several lakhs of troops all over Maharashtra, the number of spies constantly keeping an eye on Shambhaji’s every movement, it was certain that Shambhaji would be captured soon. And it happened. Sheikh Nizam suddenly attacked Sangameshwar. It has been said earlier that except for a few very close friends and counsels, no one was with Shambhaji at Sangameshwar. Aurangzeb got that information through very reliable sources from within the side of Sambhaji working as the Mughal spies. Undoubtedly, Shambhaji had many domestic enemies. Regular information was exchanged through them. The news came that Shambhaji was almost alone in Sangameshwar. It was an opportunity not be missed at any cost. Alamgir did not delay any longer. He gave the order to Mukarab Khan. Mukarab Khan was none other than Sheikh Nizam's new name after joining the Mughal army. Mukarab Khan set off for Sangameshwar with his best chosen army and spies. Shambhaji had many political enemies. They showed Mukarab Khan and his party the shorset way through a remote and dangerous mountain forest path on how to reach Sangameshwar. At Sangameshwar, Shambhaji and Kabi Kalas could not save themselves from the surprise attack of the Mughal army. Needless to say, Shambhaji and his party were caught by Mokarab Khan without any formidable resistance. From Sangameshwar, they were taken straight to Alamgir.
The first stage of humiliation started with their parade through the public place on a mare's horse dressed as a clown. The second stage was a proposal to agree with some of Aurangzeb's conditions. If Sambhaji agreed to them, Aurangzeb said that he would release Shambhaji, even though he was his arch enemy.
The conditions were:
1) He must disclose the location of the ancestral treasures and looted lot from the Mughals for so long.
2) He must name and identify those people on the Mughal side who were in the pay-roll of Shambhaji acting as spies and traitors to the Mughals.
And
3) Sambhaji must convert from Hinduism to Islam.
History would have been different had Shambhaji was not that fierce, angry, arrogant and immoderate in his manners of rejecting the proposal of the Emperor of almost the entire India, but the Deccans. Sambhaji’s rejoinder to all these conditions were so very outrageous that Aurangzeb could not tolerate him anymore.
Shambhaji told Aurangzeb,
- Even if you give me your youngest daughter in marriage, I will not agree to any of your conditions.
Aurangzeb had never been so humiliated in his life! Anyone could reject the proposal. But that is not the way of doing it. a small infidel Maratha king like Sambhaji dare tell him such a thing! Such audacity!
Unspeakable torture befell on Shambhaji. It continued for forty days. His nails were pulled out, his skin was peeled off. His whole body was made full of hot-iron bruises. His eyes were gouged out. His tongue was cut out. But due to his strange stubbornness and extraordinary physical strength, Shambhaji continued to ignore all these tortures even in chains.
Finally, Aurangzeb, succumbing to Shambhaji’s enormous physical and psychological strength, was blinded by anger. He ordered Shambhaji to be killed.
Shambhaji was killed on March 11, 1689.
Shambhaji's body was chopped into pieces and thrown in different places all over Tulapur. (Shambhaji's tomb is in Tulapur). And Shambhaji's severed and deformed head was left stuffed and mounted in Burhanpur. Mughal Emperor Aurangzeb wanted to show the whole country what could happen to any king who dare rise against the Mughals. Everyone was truly shocked to see this heartless atrocity of Aurangzeb.
Then Aurangzeb thought that after the death of Shambhaji, the Deccan was free for him to rule, because there was no one left to lead the Marathas forward against the Mughals. Shambhaji's half-brother Rajaram sat on the throne and became the Chhatrapati and continued the fight against the Mughals with equal strength and honour.
However, Rajaram was not as powerful as Shambhaji. He was a soft-hearted man. That mattered little. Not only the Maratha rulers, but the Maratha generals were so brave-hearted that they would suffice to turn every Mughal soldier insomniac. In the meantime, weak-minded Rajaram, with the excuse of self-protection , took shelter in Jinji fort.
This made the task of taming the Marathas easier for Auranzeb. He already had sent Sambhaji's wife and son straight to Delhi, after his death. Although they were under house arrest there, the emperor had instructed everyone at Delhi that there must not be any shortfall in taking the best care of of Shambhaji's wife Jeshubai and son Shahuji.
Aurangzeb appointed another of his trusted generals, Zulfiqar Khan, to suppress Rajaram. Zulfiqar Khan immediately blocked Jinji Fort from all sides.
But Rajaram’s state in a stalemate never could dilute the strength of the Maratha upheavals against the Mughals a bit. Credits go the invincible and brave Maratha generals. The history of the Marathas would remain incomplete without talking about the great and brave Maratha generals.
The Mughals were so terrified of those Maratha generals that they could not sleep not only at night but even during the day. There was a myth that the Maratha army could attack at any time in any form. The Mughal army was of five lakhs. And the Maratha army was of thirty to forty thousand. Still, their strategies and fierceness would deprive the Mughal army running out of sleep day and night with chill down their spine. It is unthinkable, beyond anyone’s imagination! What show of intelligence of the most superior quality yoked together with indomitable courage and fearless spirit!
It is my obligation to find a befitting opportunity to mention the names of some of the best Maratha commanders during this time:
Dhanaji Yadav
Shantaji Ghorpade
Ramchandra Amatya
And the chief commander Hambirrao Mohite
Hambirao was Shivaji's son-in-law because Tarabai, the wife of the younger son Rajaram, was Hambirrao's daughter. The marks that Tarabai has left in Maratha history are also without any match in Indian History. It will be retold here when the timeline reaches there.
However, apart from this family relationship, from the time of Shivaji to Shambhaji, Hambirrao was also a 'Sharsenanayak' or ‘chief commander’.
Shantaji Ghorpare was a general who has been called the ‘Napoleon of India’ of the contemporary time by modern historians. It is a wonder also that Shantaji never lost a battle.
After Shambhaji's death, Shantaji directly attacked Aurangzeb's camp and completely destroyed it. Aurangzeb was lucky that he was not there that day. Else it could have been the last day of Aurangzeb. Not finding him, Shantaji uprooted two golden pillars with the royal emblem of the Mughal emperor from that camp and left. There was not a single one of Aurangzeb's generals who was not defeated by Shantaji.
Even though Rajaram was imprisoned in the Jinji fort by Zulfiqar Khan, it did not have any effect at all on the enormous upheaval of the Marathas against the Moughals. These Maratha generals countinued their onslaught on the Mughals throughout Maharashtra. Aurangzeb realized in his heart why he could not harm the Marathas a bit even, after being in the Deccan for twenty-five years.
General Zulfiqar Khan had another ploy. It is believed that Rajaram had a silent understanding with him - no one will attack or harm anyone. In fact, Zulfiqar Khan was waiting for Aurangzeb's death. He thought that after his death, he would literally play a special role in the election of the next Mughal emperor and that he would have the majority of the control of the Mughal empire. He would be the major driving decisive force. Zulfiqar Khan's father was the Prime Minister or Wazir of the great Mughal empire at that time. So after the death of the emperor, there is a great possibility that Zulfiqar will be the Prime Minister of the next Mughal emperor. Zulfiqar Khan realized that the Maratha ruler Rajaram on his side will play a pivotal role in that way. Simply put, after passing away of Aurangzeb, Zulfiqar Khan will run the whole of India as the Prime Minister of the Mughal emperor in the future. The Marathas, with whom there is so much conflict and about whom Aurangzeb could not do anything for twenty-five years, cannot be conquered, anymore. Keeping Rajaram in his confidence would be a better and peaceful solution in keeping the Deccan under his sleeve with the best of the strength of the Maratha force.
After Zulfiqar taking too much time to capture Jinji fort, Aurangzeb could smell something being cooked without his knowledge. His intuitions were right that there might be a tie-up between Zulfiqar and Rajaram. Immediately Aurangzeb sent straight and firm instructions to Zulfiqar to finish off Rajaram without making things anymore winding.
History is even better than the fiction.
Before being conquered or killed after much of suffering Rajaram passed away in Jinji Fort.
The time is exactly 1700 AD.
All the post-generations were eliminated as Aurangzeb lived.
According to historical timeline Aurangzeb has seven more years to live.
He breathed a sigh of relief that finally the
No comments:
Post a Comment