ইদানিং যে চা-টা সকাল বেলা ওনাকে দেওয়া হচ্ছে, তার চেয়ে খানিকটা কালমেঘ খাওয়াও ভালো। স্ৱাদে তিতকুটে। কোন ফ্লেভার তো নেই-ই। যেন খানিকটা কাঠের গুঁড়ো গরম জলে চুবিয়ে কেউ ওনাকে খেতে দিয়েছে।
চারদিক থেকে নানা রকম স্ট্রেস। তার মধ্যে যেটা খেলে মাইন্ড-টা ফ্রি হয়ে যায়, সেটাও যদি স্ট্রেসফুল হয়ে যায় তাহলে মুশকিলের কথা! তাই সকালে সবার আগে যেটার অবশ্যই দরকার সেটা হচ্ছে এক কাপ ভালো চা।
বাড়িতে যখন এ ব্যাপারে ওনাকে সাহায্য করার কেউ নেই, তখন ওনাকে নিজেকেই একটা ব্যবস্থা করতে হবে। মুদিখানার দোকানে ফ়োন করে জাস্ট বলে দিলে হবে না। তাতে উল্টে যে চা-টা দিয়ে যাবে সেটা এমন একটা জঘন্য কোয়ালিটির হবে যে তার থেকে নিজে দেখে শুনে বেছে নিয়ে আসাটাই হচ্ছে সব থেকে বুদ্ধিমানের কাজ। আর সে কাজের জন্য মুদির দোকানে গেলে হবে না। মাধবের দোকানে যেতে হবে।
যেমন ভাবা তেমনি কাজ। সকাল হতেই, রমেন বাবু চললেন মাধবের দোকানে।
গিন্নি শুধোলেন,
- কি গো সকাল সকাল বাজার না গিয়ে খালি হাত দুলিয়ে চল্লে কোতায়?
- মর্নিং ওয়াকে___
- মরণ, ঢং দেখে আর বাঁচি না। বাজার ছেড়ে মর্নিং ওয়াক! বাড়িতে কিছু নেই সেরকম।
- আজ চলে যাবে তো?
- হ্যাঁ।
- বেশ। আমি সন্ধেবেলায় ফ়েরার পথে যতটা পারি নিয়ে আসব।
- তা এখন চা-টা খেয়ে গেলে আমার চোদ্দপুরুষ উদ্ধার হত।
- সে আমি বাইরে খেয়ে নেব, আজ। ভাবতে হবে না, তোমায়।
- সে না হয় তোমায় নিয়ে না ভেবে ওই পাশের বাড়ির মিনসে কে নিয়ে ভাবব! খুশি? তা মুখে কিছু না দিয়ে বেরুলে যে গেরস্তের অকল্যান হবে। কিছু একটু মুখে দিয়ে যাও, দয়া করে।
- রোজ-ই তো মুখে দি, সকালে, কিছু না কিছু, তা গেরস্তের আজ অব্দি কি এমন কল্যানটা হয়েছে অ্যাদ্দিনে?
- তোমার বাপু মুখে কিছু আটকায় না।
- হ্যাঁ, আজ মুখে কিছু দিই নি তো সকাল থেকে, তাই মুখ খোলা আছে। চলি এখন।
- তা কত্তার কখুন ফেরা হবে?
- অফ়িস টাইমে।
রমেন বাবু চ্ললেন মাধবের দোকানে।
মাধব বড় ভাল ছেলে। অনেক গুণ। কোনোদিন কারো কাছে শেখেনি, অথচ দারুন আঁকার হাত। তার ওপরে একদম ডেকে বসিয়ে বিভিন্ন রকমের চা খাইয়ে তবে তার মধ্যে থেকে যেটা পছন্দ হয় সেটা দেয়। ওজনেও কোন কারচুপি নেই। আর সবথেকে বড় কথা মাধব-ই প্রথম রমেন বাবুকে শিখিয়েছিল যে দামি চা হলেই যে সেটা খুব সুস্বাদু হবে, তা কিন্তু নয়। যারা চা-এর ব্যাপারে কিছু বোঝে তারা কিন্তু একটু কম দামে চায়ের সব থেকে ভালো কোয়ালিটিটা ঠিক খুঁজে বের করে আনে। তবে দোকানদারেরাও যাঁরা আসল চা-এর সমঝদার তাঁদের ঠিক বুঝতে পারেন। সকলের কাছে খাপ খোলে না। জহুরীর জহর চেনার মত ওরা ঠিক লোককে ঠিক জিনিসটা ঠিক দেখাবেই।
এই সব সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে রমেন বাবু পৌঁছালেন মাধবের দোকানে।
দেখা গেল রমেন বাবুর আগে তাঁরই মত এক ভদ্রলোক মাধবের কাছ থেকে চা কিনতে এসেছেন। মাধব তাকে বলছে
- দাদা, এই চা-টা নিয়ে যান,দারুণ ফ্লেভার।
- না না ওই চা-টা আগের বারে নিয়ে গিয়েছিলাম। তোমার বৌদি আমাকে এই মারে তো সেই মারে। আবার ওই চা আমাকে দিও না মাধব!
- কেন দাদা? এই চা-য়ে কি সমস্যা?
- আরে আর বলো না এর লিকারের রং খুব পাতলা। তাতে দিয়েছে ঘন দুধ। এই পাতায় কি আর সেই গুঁড়ো চায়ের রং আসে! সে কেমন যেন একটা হরলিক্স-এর রঙ হয়ে বসে রইল। যত চা-পাতাই দেয় না কেন, রং সেই এক। মুখে দিয়েই থ্যা করে ফেলে দিল। ওই চায়ের মতন অখাদ্য চা আর পৃথিবীতে নাকি হয় না! সেই যে সেদিন মুড বিগড়ে গেল, এখনো তার জের চলছে রে ভাই।
- না… আসলে যারা দুধ চা খান তাদের জন্য এরকম ভাল পাতা একরকম খুব ভাল চা শুধু শুধু নষ্ট করা। সবথেকে ভালো কথা বলি কি দাদা, দুধ চা-এর পাবলিকের জন্য ওই আসামটাই ভালো। লিকার যেন রক্ত, এমন লাল। আর তাতে যদি ঘন দুধ দেন ব্যাস, পুরো এক ঘর! চা এর রং দেকেই মনে হবে চোঁ করে খে নি।
- না ভাই, অনেক হয়েছে। ওসব এক্সপেরিমেন্ট আর করতে বলো না। আমি আমার মত আমার বৌ তার মত। এসব ফ়াইন টেস্টের জায়গায় মিল দেখাতে গিয়ে অশান্তির এক্শেষ!
- তা আপনি এক কাজ করুন না দাদা। একবার বৌদিকে ফোন করে জেনে নিন যে কি ধরনের চা উনি চাইছেন। আমার কাছে তো সব রকমই আছে। সেই মতো করে দিয়ে দেব।
- মাধব তোমার আর বুদ্ধি হলো না গো। কোনদিন শুনেছো যে অফিসের অধ:স্তন সামান্য কর্মচারী তার ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে ফ়োন করে জানতে চাইছে যে, কি করলে ভাল হয় সেই পরামর্শ দিন? তুমি আর মানুষ হলে না হে!
- দাদা আপনি যে কি বলেন! সংসার চালান আপনি। সেখানে আপনার কোন বক্তব্য থাকবে না? বরং আপনার কথাই তো শেষ কথা হওয়া উচিত!
- মাধব, এ জগৎ বড় কঠিন, তার মায়া আরো প্রপঞ্চময়। তাই সব ঠিক হলে তো আর বাঁধনের প্রয়োজন হয় না। সেখানে কোন কথা দিয়ে শুরু আর কোন কথায় শেষ, তা আর কে জানে!
- এ্যাঁ!!!! কি সব বলছেন!!!
- হ্যাঁ এ সব তোমার বুঝে কাজ নেই। বরং তবে তোমাদের একটা গপ্প বলি মাধব, মন দিয়ে শোনো। তবে তার আগে আমাকে আর এই দাদাকে এক-দু কাপ চা খাওয়াও দেখি!
- শুধু চা কেন দাদা! মুচমুচে প্যাটিসও আজকে খাওয়াবো চা-এর সাথে। সবে এসছে বেকারি থেকে। একদম টাটকা।
- তোমার ওসব বেকারি টেকারি রাখো। ও সব খেলেই চোঁয়া ঢেঁকুর ওঠে। তুমি বরং আমাদের দুটো করে সিঙাড়া খাওয়াও।
মাধবের দোকানের উল্টোদিকেই আছে বিনোদের সিঙাড়া-কচুরির জম্পেশ দোকান। সবে গরম গরম ভাজা হয়েছে। ভদ্রলোক সেদিকে চেয়ে চেঁচিয়ে বললেন,
-বিনোদ, ছʼটা সিঙাড়া দিয়ে যা তো! তিন জায়গায় দুʼটো করে। আর ভালো করে চাটনি দিবি, যেন কম না পড়ে।
- জি স্যার! অভি দে রাহা হুঁ!
সিঙাড়ার দোকান থেকে তক্ষুনি একদম গরম সিঙাড়া চাটনি সমেত শালপাতার বাটিতে তিনজনের জন্য চলে এলো। রমেন বাবু একটা সিঙাড়ার গায়ে চাটনি লাগিয়ে খেতে যাবেন, এমন সময় ধমকের সুরে ভদ্রলোক বললেন,
- দাঁড়ান দাঁড়ান! না না! এ আপনি কেমন করে সিঙাড়া খাচ্চেন? এই চাটনি-দেওয়া সিঙাড়া কেমন করে খেতে হয় জানেন না?
রমেন বাবু আমতা আমতা করে মুখের সামনে থেকে লোভনীয় সিঙাড়ার গ্রাস নামিয়ে বললেন,
- না মানে সিঙাড়া আবার কেমন করে খাব, কামড়ে খাব।
- আরে কামড়াবেন তো বটে, কিন্তু তার আগে সেটাকে টেস্টি করে তুলতে হবে তো, নাকি!
- সে কিরকম?
- এই দেখুন, এটা সিঙাড়া খাওয়ার দেহাতি স্টাইল। আগে সিঙাড়া-টা কে ভাঙুন। তার পরে চাটনিটা দিয়ে মাখুন, ভাল করে। তবে না পাবেন সিঙাড়ার টেস্ট!
- ও আচ্ছা!
- মনে রাখবেন, এটা কিন্তু সস দিয়ে ফ়িশ-ফ়িঙ্গার খাওয়ার মত না।
এই বলে ভদ্রলোক প্রথম কামড়-টা দিয়ে বললেন
- উম মমম – অমৃত!!! আহা আহা!!
ততক্ষণে লিকার চা চলে এসেছে, বড় কাচের কাপে। সকালের রোদের উজ্জ্বল সোনালী আভা চা এর ভেতর দিয়ে ঠিকরে পড়ছে।
এবার আর আলাপ না করে থাকা যায় না। রমেন বাবু নিজের পরিচয় দিয়ে ভদ্র্লোকের নাম জিজ্ঞাসা করতে বললেন
- আমার নাম ফকির। ওই গর্ভমেন্ট কোয়াটারে থাকি। রিটায়ার্ড লোক। সংসার বলতে বউ-ছেলে-বৌমা-নাতি।
বলেই হঠাৎ বললেন:
- এই সব আজে-বাজে কথায় কিন্তু আমার গপ্পোটা হারিয়ে যাচ্ছে।
রমেন বাবু বললেন,
- না না, ঠিকই তো! ওই গপ্পের জন্য-ই তো চা-সিঙাড়া। বলুন বলুন, প্লিজ!
চা-সিঙাড়া সহযোগে শুরু হল ফকির বাবুর গল্প।
একদিন ট্রেনে করে অফিস যাচ্ছি, বুঝলে। রোজ-ই যাই। আমাদের ডেইলি প্যাসেঞ্জারদের ট্রেনে যে কত রকমের কথা হয় সে যদি লিখে ফেলা যেত, তাহলে এদ্দিনে এত লেখা হতো যে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অত লেখা কেউ কোনদিন বাপের জম্মে দেখেনি। তা যাগ গে! সেদিন কথা হচ্ছিল আমাদের বাড়িতে নারী স্বাধীনতা নিয়ে, বুঝলে। মানে আমরা বাড়ির মেয়েদের কতটা লাই দিয়ে মাথায় তুলিচি, সেটা। তাতে সবাই একটা বিষয়ে একমত, যে লাই দিতে দিতে এমন মাথায় উটেচে, যে এখন সামলানো দায়। উল্টে একজন পুরুষ নিজের বাড়িতেই পরাধীনতার ছেকলে বাঁধা। তা একে একে বাড়িতে কে কেমন ভাবে অত্যাচারিত হয় স্ত্রী-লোকের দ্ৱারা, তার ফ়িরিস্তি শুনছিলাম। কামরার এক কোণে এক ব্যক্তি একটা ইংরেজি খবরের কাগজ নিয়ে পড়তে পড়তে এক এক জনের দু:খের বর্ণনা শুনে কাগজ নামিয়ে হালকা বিজ্ঞের হাসি হেসে আবার কাগজে মুখ ঢেকে দেয়। নতুন করে তো আর কিছু বলার নেই। সত্যিটা সবার বাড়িতেই এক। আর তিষ্টোনো যাচ্চে না। উঠতে বসতে অপমান, খোঁটা, অকর্মণ্য আর যা-ই করা হয়, সব ভুল। শুধু পার্থক্য দুটি জায়গায়:
এক, সবার বউ আলাদা মানুষ।
দুই, সমস্যা কমন হলেও অ্যাপ্রোচ আলাদা আলাদা, যাকে বলে গিয়ে ইউনিক, কারোর সঙ্গে কারোরটা মেলে না।
যেমন লটু-র বউ অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। একদিন সাহসে ভর করে লটু থানায় অভিযোগ করতে গিয়ে উল্টে পুলিশের কাছে অপমানিত হয়ে চলে এসেছে। পুলিশ লটুকে বলেছে
- এত বড় গতর নিয়ে নিজের বউ-কে কন্ট্রোলে রাখতে পারিস না, তার পুলিশ কি করবে? তুই একটা পুরুষ মানুষ? লজ্জা করে না, এভাবে বাড়ির কেচ্ছা নিয়ে পুলিশের কাছে আসতে?
এই শুনে কামরার কোণের সেই ভদ্রলোকের কি হাসি! যেন দম ফেটে মরে যাবে।
লটু বলল,
- ওরকম হাসচেন যে বড়! বে থা করেন নি, নাকি!
- আলবাৎ করিচি, কেন করব না। তবে বাড়ির স্ত্রী-কে কণ্ট্রোলে রাখা কিন্তু একটা আর্ট। সবাই ঠিক পারে না।
প্রমথ ফুট কেটে বলল,
- তা মনে হচ্চে নতুন বিয়ে–শাদি করেছেন, নাকি। এরকম সময়ে সবাই ওরকম ভাবে।
- না ভাই, আট বছর হয়ে গেল।
- প্রমথ আবার বললে,
- অ। বুইচি, ছেলে-মেয়ে হয় নি, তাই এখনো এত ঢলাঢলি।
- না না আমার এক ছেলে, এক মেয়ে। ছেলে সাড়ে সাত। মেয়ে চার।
কিছুতেই হিসেব মিলছে না। প্রমথ বলল,
-তা দাদা, আপনার কথা বৌদি সব শোনে?
- তা শোনে বৈ কি! না শুনে যাবে কোথায়! আর শুধু শোনে না, আমি যা বলি সেটা-ই ফ়াইনাল।
সবাই অবাক। এ-রকম আবার হয় না কি।
- তা দাদা, যেমন, মানে, কি কি শোনে, যদি একটু বলতেন, তাহলে আমরাও বাড়িতে ট্রাই করতাম!
- কি আর, সে রকম কিছু না। এই ধরুন বললাম প্যলেস্টাঈনের কথা, শোনে। ধরুন বললাম, ইজ়রায়েলের কথা, শোনে। ধরুন বললাম, নেক্সট ঈলন মাস্ক মঙ্গল গ্রহে কিভাবে বসতি স্থাপণ করতে চাইছেন, শোনে। ধরুন ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেক্সট পলিসি কি, শোনে! ধরুন বললাম, চাইনিজ় ইনফ্লেশনের ব্যাপারে, শোনে। ধরুন বললাম বাংলাদেশ আর পাকিস্তান ভবিষ্যতে ভারতের সাথে কি ধরণের কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখবে, সে সম্বন্ধে, তা ও শোনে। ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মার জল কোনদিকে কতটা গড়াবে, তা যখন বলি, তখন গঙ্গাজল ছিটিয়ে সন্ধে দেয়! মানে, যা যা বলি, সব শোনে।
- উরেব্বাস! আপনার কি কপাল মশাই! বউদির তো হেব্বি ধৈর্য! নিশ্চয়ই খুব শিক্ষিতা। তাই আপনার মূল্য বোঝেন।
- না না, তেমন কিছু না। দু বারে মাধ্যমিক পাশ। তবে কি জানেন, আমি উদার মানুষ! তাই কিছু সামান্য অধিকার ওনার হাতে ছেড়ে দিয়েছি। না হলে একটা অসম ব্যাপার হয়। আফ়টার অল নারীদের কিছু বেসিক অধিকার তো আছে, বলুন! পড়াশুনো-টা সবসময়ে তার মাপকাঠি হতে পারে না।
- তাই তো তাই তো। তা ওনাকে কি অধিকার দিয়েছেন, এই ʼনারী-পুরুষ সমান সমানʼ ব্যাপারটা ধরে রাখার জন্য?
- উনি তো ঘরের লক্ষ্মী। তাই মাস গেলে মাইনের সবটাই ওনার অধিকারে উনি আমার কাছ থেকে নিয়ে নেন। আর আমার দৈনিক টিফ়িন আর যাতায়াত বাবদ ভাড়া-টা উনি রোজ গুণে আমার হাতে দেন।
এর পরে শোনার মত শব্দ বলতে শুধু ট্রেনের চাকার ঘট-ঘটাং-ঘট। পুরো কামরা চুপ।
মাধব চা মাপতে মাপতে বলে উঠল রতন বাবুকে
- দেগলেন তো, যতখুন না আপ্নাকে কেউ বোঝাচ্চে যে আপনার থেকে অনেক খারাপ অবস্থায় মানুস আচে, ততখুন কেউ বোজে না, যে সে অনেকের থেকে ভাল আচে। এই নিন, দাদা, ধরুন আপনার চা। আর এটা বৌদির। আলাদা করে দিলুম। যাতে গুলিয়ে না যায়। আর খেয়ে কেমন লাগল, বলবেন।
রমেন বাবু ফকির বাবু-কে বললেন,
- সিঙাড়ার পয়্সাটা আমি দিই?
ফকির বাবু ফ়িচেলের মত এক্গাল হেসে বললেন,
- যাক আপনার হাতখরচ তাহলে আপনার হাতেই। ছাড়ুন তবে। আজ আর দিতে হবে না। গপ্পের সাথে চা-সিঙাড়া ফ্রি ছিল। পরে একদিন ঠিক তাল বুঝে বড় দাঁও মারব, আপনার কাছ থেকে।
রমেন বাবু জিজ্ঞেস করলেন,
- কʼটা বাজে?
- সাড়ে আটʼটা
- ওরে বাবা! সাড়ে আট-টা বেজে গেছে। দেখুন দেখি, দেড় ঘন্টা কোথা দিয়ে কেটে গেল, ঠিক বোঝা গেল না। হাওড়া ময়দানে একটা মেট্রো মিস করলে পাক্কা পনেরো মিনিট লেট। অফ়িসে দেরি হলে নতুন সাহেব আজ্কাল বড্ড খারাপ কথা বলছেন।
- মনে হচ্ছে চাপে আছেন।
- কে?
- আপনার নতুন সায়েব –
- তা বলতে পারব না। তবে বড্ড বাজে কথা বলেন।
- ওনাকেও একদিন একটা গপ্প শুনিয়ে আসতে হবে, মনে হচ্ছে।
- সে আপনি যেতেই পারেন, আমাদের অফ়িসে।
- বলছেন? যাব?
- বলছি তো, আসুন না একদিন।
- দেখি তবে, কবে সময় হয়!
- আচ্ছা, আজ তবে আসি। না হলে বড্ড দেরি হয়ে যাবে।
- আসুন।
রমেন বাবু বাড়ির দিকে হাঁটা দিলেন। অনেকদিন পরে নিজেকে বেশ ফুরফুরে মনে হচ্ছে।
______________________________________________________
বিশেষ কৃতজ্ঞতা: অনিন্দ্য রায়

No comments:
Post a Comment