Tuesday, 10 March 2020

সন্ধ্যা-২ঃ টুনিতে টুনটুনালো...


অনেকবছরের সুপ্ত ইচ্ছা ছিল যে, ফুড়ুৎ নাটকটি দেখব। উপেন্দ্রকিশোরের  টুনটুনির গল্প সর্বজনবিদিত। কিন্তু ওই প্রকারের গল্পকে দীর্ঘায়ীত করে কি করে নাট্যরূপ দেওয়া যায়, তা দেখার এবং শেখার। নাট্যকার ও পরিচালক রাজা ভট্টাচার্য কি ভাবে দেবশঙ্কর হালদারের মত তাবড় অভিনেতাকে দিয়ে এই সূক্ষ্ম কাজটি করিয়ে নিলেন, তা দেখার জন্য মন বেশ ব্যাকুল হয়ে থাকত। কাগজে এই নাটকের অভিনয়ের বিজ্ঞাপন দেখলেই মন আনচান করে উঠত, কিন্তু বাস্তবের জাঁতাকলে পড়ে এরকম রূপকথার নাট্যরূপ চাক্ষুষ করা স্বপ্নই থেকে গিয়েছিল।

সুযোগ হল। সেই সন্ধ্যায় আলাদা পাওনা হল, চন্দ্রিল ভট্টাচার্য-কে অপ্রত্যাশিত ভাবে পাওয়া। রাজা ভট্টাচার্যের ছোটদের নাটকের বই প্রকাশ উপলক্ষে। চন্দ্রিলের অসাধারণ বাচনভঙ্গী ও সাহিত্য-কে সমাজবদ্ধ করে যে ককটেল -পারঙ্গমতা নিবেদন করলেন, তা আবার প্রশংসিত হল।

নাটক শুরু হল। যে হাস্যরসের অভিঘাত নিয়ে তা শুরু হল, তা সরাসরি এক হবুচন্দ্র-গবুচন্দ্রের জগতে নিয়ে চলে গেল। হাস্যরস থেকে মাঝে মধ্যেই মন্থিত হতে লাগল, তীব্র শ্লেষের কশাঘাত। এই আঘাতে মূর্ছিত দর্শকবৃন্দও তালে তাল দিতে লাগলেন, বার বার করতালিতে।

আস্তে আস্তে খুব-চেনা ও জানা গল্প গিলতে লাগল আমাদের সব ইন্দ্রিয়-কে। দেবশঙ্কর হালদার দেখিয়ে দিলেন, তিনি কেন বাংলা থিয়েটারের দেবাদিদেব হয়ে বসে আছেন। অসাধারণ improvisation, স্টেজে। তা-ও অবর্ণনীয় ক্ষিপ্রতায়। তবে তাঁর সহঅভিনেতারাও সেখানে সমান তালে অভিনয় করে গেলেন।

একটা সময়ের পরে  নাটকের এক-ই রকমের চলনে আর টুনটুনির মাত্রাতিরিক্ত গানের প্রকোপে অনেকটা একঘেয়েমী ও শূন্যতা তৈরী হয়। ফলে নেশায় বুঁদ হয়ে থাকার একটা ছন্দপতন ঘটে। আমরা অপেক্ষা করতে থাকি, কখন রাজার নাক কাটা যাবে,  গল্পটা শেষ হবে।

চন্দ্রিল নাটক শুরু হওয়ার আগে, দুটি মূল্যবান কথা বলেছিলেন, নাটকটি সম্পর্কেঃ
১। সবাই অপেক্ষা করে থাকবেন, কখন দেবশঙ্কর হালদার অবতীর্ণ হবেন, অথচ ইনিই যে সেই তিনি বোঝা যাবে না।
২। আমরা নাটক দেখতে এলেই, যতই হাসির হোক না কেন, খুব ভারী করে দেখতে অভ্যস্ত। ফলে এই ধরণের নাটকের শুধুমাত্র বিনোদনমূলক হাস্যরস দর্শকদের কাছে অধরাই থেকে যায়।

তবে হ্যাঁ, সন্ধ্যেটা কেমন ফুড়ুৎ করেই উড়ে গেল

পুনশ্চঃ-

রাজা ভট্টাচার্য যে বই-টি এই নাটকের সুযোগে প্রকাশ করলেন, অব গোলি খা, তাতে যে নাটকগুলি আছে, সবই ছোটদের জন্য। কিন্তু সেখানে এত দিকের এত রকমের শিশুসাহিত্যের allusion যে আজকের শিশুরা এর হাস্যরস বুঝেই উঠতে পারবে না, যদি না শিশুসাহিত্য রীতিমত গুলে খাওয়া থাকে। অনেক বিক্ষিপ্ত বিষয়-কে একসুতোয় বাঁধার চেষ্টা নিয়মানুগ ভাবে সফল। কিন্তু শিশু-কিশোর পাঠকদের কাছে তা কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। চন্দ্রবিন্দু-র গান শুনে বুঝতে গেলে, তার রসাস্বাদন করতে হলে যেমন একটা সাংস্কৃতিক ভাবধারাসম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকতে হবে, তেমন রাজা ভট্টাচার্যের নাটকগুলিতে, চিন্তার স্বাধীনতা থাকলেও তাকে উড়তে হলে উপযুক্ত বিদ্যার হাওয়া ডানার নিচে থাকা আবশ্যিক।

No comments: