‘মঙ্গলকাব্য’ নিয়ে আলাদা করে বলতে গেলে তা নেহাতই ছেলেমানুষী
মনে হবে। তাই সে সব প্রশ্নে না গিয়ে সোজা কথায় আসি।
দেবশঙ্কর হালদার দেবশঙ্কর হালদার দেবশঙ্কর হালদার!
একটা প্রতিধ্বনী!নাটকের রেশ তো থেকে যায়, ভাল হলে। কিন্তু যাঁদের হাত ধরে তা থেকে যায়,
তাঁরা বড় পরিচিত হতে হতে থাকেন যাঁরা নিয়মিত নাটক দেখেন বা চর্চা করেন, তাঁদের হাত
ধরে। ‘নাচনী’ দেখে এককালে মুগ্ধ হয়েছিলাম। আজ আবার।
এই সেদিন ‘ফুড়ুৎ’ দেখে এলাম! তারপরেই ‘বিল্বমঙ্গল কাব্য’। আকাদেমী-তে আমার প্রিয় আসন হল ‘এম ২৮’। পুরো স্টেজ-টা একটা চৌকো ফ্রেমের মত লাগে। ঘাড়
ঘোরাতে হয় না। শুধু চোখের মণি ঘোরে। সেখান থেকে দেখলাম একটা মানুষ কি অনায়াসে সবটুকু,
নিজের শরীর মন এমনকি নিজের নিঃশ্বাস-ও ঊজাড় করে নিখুঁত ভাবে অভিনয় করে যেতে পারেন।
অভিনয়ের অভিব্যক্তি এতটাই গভীর যে দর্শক খুব ক্লান্ত
হয়ে ঘরে ফেরার আগে যদি entertainment চেয়ে কিচ্ছু না জেনেই নেহাত ‘নাটক’ দেখতে ঢুকেছেন, তিনি-ও ‘বিল্বমঙ্গল’-এর সঙ্গে empathetic বা সমানুভূতির মোহে নিজেকে জড়িয়ে ফেলতে বাধ্য।
মঙ্গলকাব্যের মধ্যে ঠিক যা যা যে ভাবে থাকা উচিত
ছিল, সব সমেত, অনবদ্য।
সব দেখে মনে হল,সাধারণ মানুষ জানে যে প্রেমের শেষ কথা শরৎচন্দ্রের ‘দেবদাস’। তবে আমরা কতটুকুই বা জানি, বুঝি, প্রেম ও তার পীড়া
সম্পর্কে, যেখানে প্রকাশ্যে দেখানো হচ্ছে, তাঁর প্রেয়সী ভিন্ন অন্য নারীর প্রতি দেহজ
সম্পর্কে যেখানে আসক্ত, এবং সেই কারণে তিনি
নিজের প্রেমের প্রতি একনিষ্ঠ থাকতে নিজের চোখ অন্য নারী, যাঁর প্রতি তিনি আসক্ত হয়ে
পড়ছেন, তাঁর মাথার চুলের কাঁটা দিয়ে নিজের চোখ দু’টি ফুঁড়ে
নিজেকে অন্ধ করে দিচ্ছেন, যাতে তাঁর মনের মানুষ ভিন্ন অন্য কারো প্রতি তিনি জৈবীক-রূপে
আসক্ত হন? এ কি গ্রীক ট্র্যাজেডী! কি classical!
কোন পুরুষের এই চিরন্তন আভ্যন্তরীন টানাপোড়েন ও বহুগামীতাকে
তিনি যে ভাবে আয়ত্ত্বে এনে নিশ্চল থাকছেন, তাঁর প্রেয়সীর প্রতি, বিগত যৌবন হয়েও, তা
বড়ই হৃদয়বিদারক।
আর আরও কঠিন, এই অনুভূতিকে প্রকৃত আকৃতি-প্রকৃতি
দিয়ে রক্ত-মাংসে একটা নিছক স্টেজ শো-এ অন্য দিকে বসা সকল দর্শক-কে অনুধাবন করিয়ে কাঁদানো।
আমার এই নাটক-টি নিয়ে এর বিশেষ কিছু বলার নেই। মঙ্গল
হোক সবার, প্রকৃত প্রেমের হাত ধরে সবাী মোক্ষ লাভ করুন! সকলে আশীর্বাদধন্য হোন, সনাতন প্রেমের। তবেই না আত্মা আপনার ঋদ্ধ হবে...কামনায় বাসনায়, নিজের সংক্ষিপ্ত জীবনের সার্থকতায়..
ঊজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়-কে ধন্যবাদ না জানালেই নয়,
এই বিশাল জাগতিক ও মহাজাগতিক ভাবনাকে, মানুষের বিশ্বাস-কে একটা কয়েক ফুট বাই কয়েক ফুট
মঞ্চে, দুই-ঘন্টা দশ মিনিটের সীমায় সমাহিত করার মত এক অসম্ভব কাজ কে নিখুঁতভাবে সম্পন্ন
করার জন্য।
No comments:
Post a Comment