১৮৫৩ সাল। একদিকে গিরীশ চন্দ্র ঘোষ, আর একদিকে, অমৃত লাল বসু। অমৃত লাল বসু ছিলেন 'রসরাজ' | তাঁর স্যাটায়ারের জন্য এই উপাধি ওনার নামের সাথে জুড়ে গিয়েছিল। সঙ্গে ছিলেন দুর্দান্ত অভিনেতা | গিরীশ ঘোষ আর রসরাজ একজায়গায় হলেন। গঠন করলেন গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার। মালিক হলেন অমৃত লাল বসু স্ৱয়ং।
শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব নিয়মিত সেখানে আসছেন গিরীশের "থ্যাটার" দেখতে | ওই স্টেজেই নামল , "নীল দর্পণ"। শুধু অভিনয় দিয়ে ব্রিটিশ সরকারকে আঘাত করলেন। অর্ধেন্দু শেখর মুস্তাফি হলেন Mr. Rogue, the villain, আর অমৃত লাল বসু সাজলেন 'সৈরিন্ধ্রী', নারী চরিত্রে | নাটক সুপার ডুপার হিট! কিন্তু এই ত্রহ্যস্পর্শের ভার ইতিহাসের সইল না। বৃটিশ সরকারের ঘুম উড়ে গেল। গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটারের মালিক হিসেবে বৃটিশ সরকার অমৃত লাল বসু-কে বন্দী করলেন।
১৮৮৮ সালে যখন গ্রেট ন্যাশনাল থিয়েটার ভেঙে যায়, তখন অমৃত লাল স্টার থিয়েটারে যোগদান করেন। তার পরের পঁচিশ বছর, তাঁর কাজ স্টার থিয়েটারের ইতিহাসে চিরকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অভিনয় ও পরিচালনা হিসেবে অমর হয়ে থাকবে। তখন যখন "নীল দর্পণ" অভিনীত হত, তিনি আর 'সৈরিন্ধ্রী' চরিত্রে নয়, 'Mr. Wood'-এর চরিত্রে অভিনয় করতেন।
উল্লেখ্য যে, উনি বন্দী হওয়ার পর গিরীশ ঘোষের সাথে ঘটনাচক্রে আর এক থাকা যায় নি। গিরীশ ঘোষ তাঁর মত কাজ করে চললেন। অমৃত লালও তাই। নাট্য সমালোচক হিসেবে গিরীশ ঘোষের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে চললেন অমৃত লাল।
নাটক, গান, অভিনয় ও সমালোচনার কাজ করার জন্য আসলে উনি অনেক কিছু ছেড়ে এসেছেন, অবলীলায়। নিজের ভাললাগাকে ধরে রাখার জন্য নিশ্চিত আরামের জীবন ছেড়ে যে ঝুঁকি উনি নিয়ে ছিলেন তার সাথে মিল পাওয়া যায় ফরাসী চিত্রকর পল গগ্যান (Paul Gauguin) এর সাথে। পল শুধু ছবি আঁকবেন বলে সব ত্যাগ করে অজানা তাহিতি দ্ৱীপে পাড়ি দিয়েছিলেন।
যোগাযোগ শুনলে অবাক হতে হয়,
অমৃতলাল ছিলেন ওরিয়েন্টাল সেমিনারী স্কুলের ছাত্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও ওই একই স্কুলে কিছুদিনের জন্য গিয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, বলে রাখা ভাল, রবীন্দ্রনাথ যে এক্কেবারে কোনোদিনই স্কুলে যান নি, তা সত্যি কথা নয়। গিয়েছিলেন। কিন্তু ভাল লাগে নি বলে কিছুদিন পরেই ছেড়ে দেন। 
(ওরিয়েন্টাল সেমিনারী এখনও আছে | ভগ্নদশা | ছাত্র সংখ্যার অভাবে প্রায় ভেন্টিলেশনে)।
হ্যাঁ, তা যা বলছিলাম। ওই অভিনয়ের নেশায় অমৃত লাল বসু ডাক্তারী পড়া সম্পূর্ণ না করে দু' বছর পরেই ছেড়ে দেন। তারপর বেশ কিছুদিন হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করেন, সাফল্যের সঙ্গে।
কিন্তু মন মানে না। স্টেজের নেশা অন্য জিনিস ! উনি তাই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসাও ছাড়লেন, স্টেজকে আরও বেশি সময় দেবেন বলে।
নাটক লেখার বাইরে গিয়ে উনি বেশ কিছু স্যাটায়ারধর্মী গান লিখে গিয়েছেন, যা অবশ্যই সমসাময়িক সময়ের দর্পণ। "কলকেতার বাবুগিরি"-কে এত কাছ থেকে দেখেছেন যে তা নিয়ে তিনি বেশ কিছু গান না লিখে থাকতে পারেন নি। সে সব মণি-মুক্তো-রা আজ বড় অবহেলিত। কেউ খুব এ সব নিয়ে কথা বলেন না।
"আমি বেল ফুল ফিরি করি পাড়ায় পাড়ায়", ওনার লেখা গান। এখানে স্যাটায়ার খুব সিম্বলিক। ফলে আপাত ভাবে একটু ভোঁতা বা স্ৱাদ-হীন লাগলেও, সুর ও তাল, দারুণ মনোগ্রাহী।
গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে, বেলফুলের গন্ধ কিন্তু the sweetest perfumes of Arabia- কেও হার মানায়।
-- তথ্য সংকলন ও অনুলিখন
আর্য চট্টোপাধ্যায়
Amrita Lal Bose. Amrita Lal Bose was polpularly known as 'Rasaraj'. This title was attached to his name for his infamous edge of satire. He was a great actor, too. Girish Ghosh and Rasaraj came together. They formed the Great National Theatre. Amrita Lal Bose himself became the owner. They dared stage the play “Neel Darpan” there only.
Sri Ramakrishna Paramhansadeva regularly came there to see Girish's "theater". "Neel Darpan" did hit the British government on its knees with just Amrita Lal’s acting skill. Ardhendu Shekhar Mustafi played the role of Mr. Rogue, the villain, and Amrit Lal Bose dressed up as 'Sairindhri', the female character. The play was a super duper hit! But history did not bear the burden of this triad. The British government turned insomniac. The British Government imprisoned Amrita Lal Bose as legally he was the owner of the “Great National Theatre”.
When the Great National Theatre was dissolved in 1888, Amrita Lal joined the Star Theatre. His works there for the next twenty-five years, will forever be immortalized in the history of the Star Theatre as the greatest acting and directions on stage. Then, when "Neel Darpan" used to be performed, he no longer played the roleof 'Sairindhri', but of 'Mr. Wood'.
It is worth mentioning here that after his imprisonment, he could not remain with Girish Ghosh the same way. Girish Ghosh continued to work in his own way. So did Amrita Lal. As a theatre critic, Amrita Lal continued to highly praise Girish Ghosh's works.
In fact, he left a lot to pursue his dreams with drama, songs, acting and criticism. The risk he took in leaving a life of assured comfort to pursue his love is similar to that of the French painter Paul Gauguin. Paul left everything and sailed to theunknown island of Tahiti just to paint.
It is surprising to hear the connection,
Amrita Lal was a student of the Oriental Seminary School. Rabindranath Tagore also went to the same school for a few days. Incidentally, it is worth mentioning that it is not true that Rabindranath never went to school. He went there. But he did not like it and left it after a few days.
(The Oriental Seminary still exists in a dilapidated state, almost on ventilation, due to lack of students).
Yes, what I was saying. Amrita Lal Basu, addicted to acting, left his medical studies after two years without completing them. Then he practiced homeopathy for sometime, with success.
But his mind would not listen. The addiction to the stage is something irresitable! That's why he gave up practising homeopathy also, saying that he would give more time to the stage.
Apart from writing plays, he has written several satirical songs, which are certainly a mirror of the contemporary age and culture. He has seen "Kolkata's Babugiri" from such close perspectives that he could not help but write several songs about it. All those gems are very neglected today. No one talks about them much.
"Ami Bel Phool Phiri Kari Paday Paday", is a song written by him. The satire here is very subtly symbolic. As a result, although it may seem a little dull or tasteless, onnthe surface, the melody and rhythm are very attractive.
In the intense heat of summer, the smell of 'bel phool' is even better than the 'sweetest perfumes of Arabia'.
-- Compilation and transcription of information
Arya Chatterjee
No comments:
Post a Comment