তিনি বোমা বাঁধতেন, শেখাতেন ... সক্রিয় রাজনীতিতে যেভাবে তিনি ছাপ ফেলে গিয়েছেন, তাতে বৃটিশ হৃদয় এখনও কেঁপে ওঠে৷
কোচ্চেন উডবে, "মালটা
কে ছিল বে!"
চা-ওয়ালা, চানাচুরওয়ালা, চপশিল্পের
মাধ্যমে উন্নয়নে বিশ্বাসী ও মাছওয়ালাদের ভোট না দিয়ে সমাজে যাঁরা শিক্ষিত তাঁদের
নেতা করুন৷ গুণ্ডা আর সংগঠকদের পৃথকীকরণের খুব প্রয়োজন | নাহলে অদূর
ভবিষ্যতে পাড়ার মদের ঠেকের বাউন্সার আমার আপনার ছেলেমেয়েদের স্কুলের প্রেসিডেন্ট
হবেন ৷ কিছু অশিক্ষিত স্বার্থপর মানুষের হাতে থাকবে ক্ষমতার জাদুদণ্ড ৷
ছেলেমেয়েরা শিখবে যে পড়াশোনা না করে 'নেতা' হলেই কেল্লা ফতে -- কত শত শিক্ষিত মানুষকে আঙুলে নাচানো
যাবে ৷ এ এক অনাবিল আনন্দ! দেশের সম্পদ ও ক্ষমতা অযোগ্য হাতে পড়লে কি হতে পারে? শুধু রাজনৈতিক
কর্মী হওয়ার নামে একটি প্রজন্ম অপরাধ করাকেই মৌলিক অধিকার বলে সমাজে স্থাপিত করে
ফেলবে ৷ আমি - আপনি ফেসবুকিয় বাঘ হয়ে উঠব ৷ বড়জোর নামী দৈনিকে লেখা প্রকাশ পাবে
৷ আর এই সব নেতারা মনে মনে হাসবেন - শিক্ষিতরা লিখুক, আমরা যেমন
খলখলে করছি, করতে থাকি। এ সব কান্ডকারখানা দেখে হাসেন, নেতারা৷
কারণ তাতে তাঁদের কি যায় আসে!
মনে রাখবেন, দেশে সম্পদ
নেই, তা নয়। যথেষ্টই আছে ৷ সেই সম্পদ যোগ্য হাতে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা না করলে তা তো অযোগ্য
হাতে যাবেই৷তার থেকে বরং যোগ্য মানুষকে যোগ্য কাজের জন্য বেছে নিন ৷ আর বেছে
নেওয়ার প্রথম মাপকাঠি হোক তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা ৷
স্বাধীনতার ৭৫ বছরে দেশের রাজনৈতিক
নেতাদের এই হাল দেখলে হয়ত আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা তাঁদের সব ত্যাগ করে
প্রাণ উৎসর্গ করার কথা পুনর্বিবেচনা করে দেখতেন। এই স্বাধীনতা তো তাঁরা স্বপ্নেও
চাননি। তাঁরা স্বপ্নেও ভাবেন নি যে ভারতের জনগন একসময়ে তাঁদের মত যোগ্য মানুষদের
জননেতার স্বীকৃতি দিয়েছে, সেই জনগনই এসব কাদের নেতাদের পদে বসাচ্ছে!
আমার - আপনার শিরদাঁড়া গুলো
ভোটবাক্সে গচ্ছিত দেওয়ার আগে দু-বার ভাবুন,
কি করছেন!
ভারতের রাজনীতিবিদরা ঠিক কেমন ছিলেন
তার উদাহরণ স্বয়ং শ্রী অরবিন্দ ৷স্বাধীনতার ৭৫ বছরে এই মানুষটির সার্ধশতবর্ষ
পূর্ণ হল ৷
It may be obsrved that Sri Aurobindo's education in England
gave him a wide introduction to the culture of ancient , of mediaeval and of
modern Europe. He was a brilliant scholar in Greek and Latin. He had learnt
French from his childhood in Manchester and studied for himself German and
Italian sufficiently to read Goethe and Dante in the original tongues.
(He passed the Tripos in Cambridgein the first division and obtained record
marks in Greek and Latin in the examination for the Indian Civil Service.)
ইনিই তিনি যিনি বোমা বেঁধে,শিখিয়ে ও মেরে
বৃটিশ সাম্রাজ্যের ভিত নড়িয়ে দিয়েছিলেন ৷ মনে রাখতে হবে with
great power comes great responsibility. Proper execution of both power and
responsibility is the outcome of proper acquiring and assimilation of
knowledge.
এবার ভাবুন এখন কাদের নেতা করেছি আমরা? কাদের হাতে
দেশের দায়িত্বভার ?
---------------
এইবারে নিচের লেখাটি হল গিয়ে সায়ম বন্দ্যোপাধ্যায়ের
১৩ ই অগাষ্ট , ২০২২, শনিবারে আনন্দবাজার
পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে:
মূল ধারার রাজনীতিতেও এক অকৃত্রিম
আদিপুরুষ অরবিন্দ। ভারতীয় গণপরিসরে এমন এক ধারণার জন্ম তিনি দিয়েছিলেন যার
উত্তর-সাধনা ভারতকে পৌঁছে দিয়েছিল স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে, ‘প্যাসিভ
রেজ়িস্ট্যান্স’, নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ। মোহনদাস গান্ধীর মাধ্যমে এর
পূর্ণতর প্রয়োগ ঘটেছিল। কিন্তু গান্ধীর অহিংস-নীতি আর অরবিন্দর নিষ্ক্রিয় প্রতিরোধ
নীতিতে একটি সূক্ষ্ম পার্থক্য ছিল। অরবিন্দর উষ্মা প্রকাশ, “গান্ধী কি
করছেন? অহিংসা পরম ধর্ম্ম, jainism, হরতাল, passive resistance ইত্যাদির
খিচুড়ি করে সত্যাগ্রহ বলে একরকম Indianised
Tolstoyism দেশে
আনছেন।” গান্ধীর
অহিংসা কখনওই হিংসাত্মক হয় না, অরবিন্দ একটি জানলা খোলা রেখেছিলেন সহিংস প্রতিবাদের।
এখানেই তাঁর বিশেষত্ব, তাঁর স্বাতন্ত্র্য। তাঁর আন্তর্জাতিকতাও। সমগ্র বিংশ
শতক একাধিক নেতার সাক্ষী থেকেছে যাঁরা ‘কমিশন
অ্যান্ড অমিশন’ পন্থা বা গেরিলা-মিলিট্যান্ট যুদ্ধে আস্থা রেখেছেন
স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রামে। অরবিন্দ বহু আগেই তেমন সব ভাবনাচিন্তা ও কাজ করে
গিয়েছেন। রবীন্দ্রনাথের কাছে তাই তো তিনি একাধারে রুদ্রদূত, আবার ‘স্বদেশ-আত্মার বাণীমূর্তি’ও। ডোমিনিয়ন স্টেটাস, ব্রিটিশ অধীন স্বায়ত্তশাসন নয়, অরবিন্দ
সেই কবে ডাক দিয়েছিলেন পূর্ণ স্বাধীনতার। ধর্ম্ম পত্রিকায় (১৯০৯) লিখেছিলেন, “আমরা
সম্পূর্ণ স্বাধীনতা চাই, বিদেশীর আদেশ ও বন্ধন হইতে সম্পূর্ণ মুক্তি, স্বগৃহে
প্রজার সম্পূর্ণ আধিপত্য, ইহাই আমাদের রাজনীতিক লক্ষ্য।” কংগ্রেসের
আরও দু’দশক লেগেছিল সম্পূর্ণ স্বাধীনতার লক্ষ্য
সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করতে।
‘হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টুডে, ইন্ডিয়া
থিঙ্কস টুমরো’, গোপালকৃষ্ণ গোখলে বলেছিলেন। কত জন জানেন যে, অনুরূপ
একটি বাক্য উপস্থিত অরবিন্দর তার আগের একটি লেখায়? বঙ্কিমচন্দ্র (১৮৯৪) রচনায়
তিনি লিখেছিলেন, “হোয়াট বেঙ্গল থিঙ্কস টুমরো, ইন্ডিয়া
উইল বি থিঙ্কিং টুমরো উইক”; বাংলা আগামী কাল যা ভাববে, ভারত তা
ভাববে সে-আগামীর পরের দিন। তিনি বুঝেছিলেন,
“আমাদের সভ্যতা হয়ে গেছে অচলায়তন, ধর্ম্ম
বাহ্যের গোঁড়ামি, অধ্যাত্মভাব একটী ক্ষীণ আলোক বা ক্ষণিক উন্মাদনার
তরঙ্গ। এই অবস্থা যতদিন থাকিবে, ভারতের স্থায়ী পুনরুত্থান অসম্ভব।”
এই ১৫ অগস্ট তাঁর সার্ধশতবর্ষ পূর্তি।
আর স্বাধীন ভারতের পঁচাত্তর বছর পূর্তি। এই মুহূর্তে এর চেয়ে প্রাসঙ্গিক বাচন আর
কী হতে পারে।


No comments:
Post a Comment