Friday, 15 January 2021

ফ্যাত ফ্যাত সাঁই সাঁই সাঁই সাঁই

 #natokreview2021

#fyataru

যখন মোটামুটি সবাই এই ছবি দেখে আবার ভুলে গিয়েছে, আমার তখন সময় হল ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’ ছবিটি দেখার। এতটাই ভাল লাগল, যে আবার একবার না দেখে পারলাম না। কোনো গল্পই নেই সেভাবে, কিন্তু ঘটনাপ্রবাহ এতটাই সাবলীল ও বলিষ্ঠ যে ছেড়ে ওঠা যায় না। সত্যজিত রায়ের ‘নায়ক’ এর ছাপ যেন মেখে গিয়েছে ছবিটা জুড়ে। গল্প বা সিনেমাটোগ্রাফি তে কোনো মিল নেই,কিন্তু কোথায় যেন একটা চোরা স্রোত। স্ক্রিন-প্লে, যাকে গোদা ভাষায় ডায়ালগ বলা হয়, দুর্দান্ত। অভিনেতা-অভিনেত্রী-রা যে মাপের অভিনয় করে গেলেন, আকাদেমী (অস্কার)পাওয়ার যোগ্য, সব্বাই। কাকে ছেড়ে কার নাম বলি। এমনই অদ্ভুত ভাবে সাজানো হয়েছে সব কিছু, যে তা নিয়ে গল্প লেখা কঠিন, কিন্তু সিনেমা তৈরী করা সম্ভব। যেন পুরো ব্যাপারটা সিনেমারই জন্য।

গতকাল ভর দুপুরে নবারুণ ভট্টাচার্যের ‘ফ্যাতাড়ু’ দেখতে গেলাম, চতুর্থবার। মনে পড়ছিল নাটকের নতুন অবস্থান নিয়ে ‘জ্যেষ্ঠপুত্র’-র শেষ দিকের ডায়ালগঃ কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে এক গাল দাড়ি রেখে নাট্য আন্দোলন, নাট্য বিপ্লবের যুগ ফুরিয়েছে। কিন্তু নাটক ফুরোয় নি –থেকেই গিয়েছে। এই সব জ্ঞানের কথা কেন বলছি। ‘ফ্যাতাড়ু’-র যন্ত্রসঙ্গীতে আছে আমার খুব কাছের একজন বন্ধু, দীপ (দীপ্তেশ মুখুজ্জে)। কিছুকাল আগেই পিতৃবিয়োগ ঘটেছে। ঘাট থেকে সোজা চলে গিয়েছিল শো-এ। শুনতে শুনতে উত্তমকুমার অভিনীত ‘অগ্নিশ্বর’-এর কথা মনে পড়ছিল। রিয়ালিটি, সিনেম্যাটিক-ই বটে।

সিনেমায় খারাপ শট দিলে, সবাই বলে ‘নাটকীয়’ হয়ে গেছে।আবার নাটকের কোনো দৃশ্য দারুন ভাল লাগলে বলা হয় ‘ওফ! হাউ সিনেম্যাটিক’। কবিতা বা গল্পের যেমন অনেক রকমের ভাগ হয়, নাটক, বা সিনেমা, ‘অভিনয়’—এর দুটি ভাগ। এই যে বর্তমান বাংলা নাটকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, দেবশঙ্কর হালদার, কি দুর্দান্ত অভিনয়টাই না করেছেন, ব্যোমকেশ ওয়েব সিরিজের ‘মগ্নমৈনাক’-এ। আসলে কোনো কনফ্লিক্ট নেই, নেই কোনো বিভাজন। আমরাই তৈরী করেছি, মনে মনে। আর বাঙ্গালীদের জিলিপির মত জটিল প্যাঁচালো মন-কে রসে সিক্ত করে তারপর গরম গরম অবস্থাতেই কামড় মারেন নবারুণ বাবু। প্রতি কামড়ে রস গড়িয়ে পড়ে বেয়ে বেয়ে। দর্শক চাটে। কবি পুরন্দর ভাট, অনবদ্য। বডি ল্যাঙ্গুয়েজ-ই আলাদা জাতের, সঙ্গে ল্যাঙ্গুয়েজ তো বটেই। আগেরই মত।


তবে এইবারে একটা সমস্যা বড় হচ্ছে মনে হল, ধীরে ধীরে। সবাই এতটাই ওভার কনফিডেন্ট, যে ডায়ালগ একটু বেশি-ই তড়বড়িয়ে বলে যাচ্ছেন, ফলে মিস হচ্ছে ক্যাচ-লাইন।দেবেশ-বাবু-কে বলে এলাম শো এর শেষে। কিন্তু খুব একটা গুরুত্ব দলেন বলে মনে হল না। শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়ের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটা সব থেকে বেশি। অডিয়েন্সের যেখানে লাফটার ওঠার দরকার ছিল, সেখানে সারা প্রেক্ষাগৃহ সাইলেন্ট। অথচ তার থেকে অনেক খেলো ও কম ভারিক্কী ডায়ালগে ফেটে পড়ছে হল। আর আরও ভাল হয় যদি পুরন্দর নিজের কবিতার সাসপেন্স-কে প্রথম লাইনের শায়রী স্টাইলে রিপিট করে বাড়িয়ে তোলেন। 

পরের বারে এই সব আট-ভাটের নাটক-ফাটক দেখতে-টেখতে গেলে জল-টল সঙ্গে-টঙ্গে রাকবেন-টাকবেন…

No comments: