আমাদের স্কুলের স্বল্প ও সীমিত পরিসরে রবীন্দ্র-চর্চা করতে হবে দীর্ঘ্য এক সপ্তাহব্যাপী - নিদেন দিলেন রাজ্য সরকার। সারা বছরের মধ্যে যেন এই সপ্তাহে বিশেষ ভাবে রবীন্দ্রনাথ আমাদের জীবনে নিয়ে আসেন এক অপূর্ব চেতনা। না, এই নিয়ে কোনো রাজনৈতিক ব্যবচ্ছেদ এখানে উদ্দেশ্য নয়, উদ্দেশ্য এই যে এক অকারণ আড়ম্বড়ে হঠাৎ এক মহাজাগতিক কবিচেতনা কে এক তুচ্ছ জাগতিক মাত্রায় পর্যবসিত করা।
“ওঁর আমাদের উদ্দেশ্য করে আজকালকার লেখাগুলোর সুর শুনে মনে হয়, আমাদের অভিশপ্ত জীবনের দারিদ্র্য নিয়েও তিনি যেন বিদ্রূপ করতে শুরু করেছেন। আমাদের এই দুঃখ কে কৃত্রিম বলে সন্দেহ করার প্রচুর ঐশ্বর্য তাঁর আছে জানি। ...তাঁর কাছে নিবেদন তিনি যত ইচ্ছে বাণ নিক্ষেপ করুন তা হয়তো সইবে, কিন্তু আমাদের একান্ত আপনার এই দারিদ্র্য যন্ত্রনাকে উপহাস করে আর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে না দেন”। (নজরুল/ আত্মশক্তি)
চারিদিকে তাঁর সার্ধশতবৎসর উপলক্ষ্যে এত অর্থসমাগম, এত ছুটি, এ সব কেন? এই আশায় বুক বেঁধে যে লাস্ট বেঞ্চের ছেলেটা বা মেয়েটাও জানুক, যে ওই দাড়িওয়ালা বুড়ো লোকটা কোনো ঠাকুর নন, রক্ত-মাংসের এক ঐশ্বরিক প্রতিভূ।
“ধায় যেন মোর সকল ভালবাসা
প্রভু, তোমার পানে...”
বিশ্ব নারী দিবস সম্পর্কে শোভা দে এক মজার উক্তি করেছিলেনঃ "শুনে মনে হয় যে বছরের ৩৬৪ দিন হল ছেলেদের, আর কৃপা করে এক দিন মেয়েদের দেওয়া হয়েছে।" কবিগুরু-ও মনে হয় অনেকটা সেই স্রোতে ভাসবেন, এবার।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর রবীন্দ্রনাথ তাঁর লেখা ‘Tradition’ নামে এক প্রবন্ধে বলেছন যে, যদি কোনো tradition কে ভেঙ্গে কোনো নতুন tradition গড়তে হয়, তবে পুরোনো সেই tradition কে নতুন-এর থেকেও বেশি করে জানতে হবে, তবে না বিক্ষেপ লব্ধ হবে। তাই রবীন্দ্রনাথ-কে সমালোচনা করতে গেলে তাঁকে জানতে হবে চিনতেও হবে।
আমি যে রবীন্দ্রনাথ খুব পড়েছি, তাঁকে খুব জেনেছি, এমন কথা বলতে পারি না। তবে তাঁর লেখার যে পরিমাণ ও পরিসর, তা আমার কাছে এক জন ব্যাক্তির বলে অসম্ভব ঠেকে। স্কুলের স্টাফ-রুমে যখন আলোচনার ঝড় বইতে থাকে, আমি বরং একটু সিঁটিয়েই থাকি। তবে বহুচর্চিত এই ঈশ্বর-সম ব্যক্তি সম্পর্কে একটা কথা আমি নিজে নিজেই ভেবে নিয়েছি যে, তাঁর প্রতিভা স্ফুরিত হয়েছিল, একটা প্রাথমিক কারনে -- কোনোদিন কোনোভাবে অর্থচিন্তা তাঁকে করতে হয় নি।গতকাল পড়ে জানলাম, কবি নজরুলও তাই ভেবেছিলেন। নজরুল লিখছেনঃ
“ওঁর আমাদের উদ্দেশ্য করে আজকালকার লেখাগুলোর সুর শুনে মনে হয়, আমাদের অভিশপ্ত জীবনের দারিদ্র্য নিয়েও তিনি যেন বিদ্রূপ করতে শুরু করেছেন। আমাদের এই দুঃখ কে কৃত্রিম বলে সন্দেহ করার প্রচুর ঐশ্বর্য তাঁর আছে জানি। ...তাঁর কাছে নিবেদন তিনি যত ইচ্ছে বাণ নিক্ষেপ করুন তা হয়তো সইবে, কিন্তু আমাদের একান্ত আপনার এই দারিদ্র্য যন্ত্রনাকে উপহাস করে আর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে না দেন”। (নজরুল/ আত্মশক্তি)
চারিদিকে তাঁর সার্ধশতবৎসর উপলক্ষ্যে এত অর্থসমাগম, এত ছুটি, এ সব কেন? এই আশায় বুক বেঁধে যে লাস্ট বেঞ্চের ছেলেটা বা মেয়েটাও জানুক, যে ওই দাড়িওয়ালা বুড়ো লোকটা কোনো ঠাকুর নন, রক্ত-মাংসের এক ঐশ্বরিক প্রতিভূ।
“ধায় যেন মোর সকল ভালবাসা
প্রভু, তোমার পানে...”
No comments:
Post a Comment