Saturday, 25 October 2025

মাস্টারদা সূর্য সেন: The Exdetenue: Show Review

 


প্রথমেই বলে রাখি যে নাটক আমি নিয়মিত দেখি বটে কিন্তু এই নাটকটা শুধুমাত্র দেখে দেখতে গিয়েছিলাম একটাই কারণে যে সেটা কল্লোলের লেখা। কল্লোল আমার বাল্যবন্ধু কাম স্কুলফ্রেন্ড। 

 কল্লোল লাহিড়ী একটি অতি পরিচিত নাম, মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে। হেন দিক নেই যে ও বিচরণ করে নি। ডকুমেন্টারি, ফিচার ফিল্ম, ওয়েব সিরিজ, কোনোটাই বাকি নেই। সাথে আছে নিরন্তর লেখা। অনবদ্য গল্প লেখক ও ঔপন্যাসিক। একাই একটা ব্র্যান্ড নেম, আর কি! 

সেই কল্লোল লিখেছে নাটক। ভাল তো হবেই জানতাম। কারণ যে ছেলে অনবদ্য স্ক্রীপ্ট লেখে, তার হাত দিয়ে কি ধরণের নাটক বেরোতে পারে তা সহজেই অনুমেয়।

কিন্তু শুধু লিখলেই নাটক, নাটক হয় না। লেখাটা একটা স্ক্রীপ্ট মাত্র। আর সেটা নাটক তখন ই হয়ে ওঠে যখন সেটা মঞ্চস্থ হ‍য়। আর কালোল্লের লেখা এই কঠিন নাটককে বাস্তবে মঞ্চস্থ করেছেন যিনি, তাঁর নাম, অনমিত্র খাঁ। আমার থেকে বয়েসে অনেক জুনিয়র। নাটকের বিশ্লেষণে যাওয়ার আগে বলে রাখি যে নাটক শেষে মনে হল, এক ঝাঁক উড়্ন্ত বাজপাখি অনায়াস উল্লাসে বাংলা থিয়েটারের ব্লু-ব্লাডের মানচিত্র-টা বদলে দিতে চাইছে। 

স্যালুট!!! কমরেড!!!

এবারে সবথেকে কঠিন প্রশ্ন, ভালটা আগে বলব না খারাপটা।  তবে মোটামুটি সব মিলিয়ে যেটা বলা উচিত যে নাটকটা অবশ্যই ভাল। ১০শে ৮ দেওয়াই যায়। কিন্তু তার সঙ্গে যেটা মনে হয়েছে, বার বার, সেটা হচ্ছে দু'ঘণ্টা পঞ্চান্ন মিনিটের  নাটকটিকে দু'ঘণ্টা বা দু'ঘণ্টা পনেরো মিনিটে নামিয়ে আনাই যেত। উচ্চতার দিক থেকে সেকেন্ড হাফটা  ফার্স্ট হাফের সাথে একেবারেই এক্কেবারেই মেলে না।  অকারণে স্ট্রেচড বলে মনে হয়েছে অনেক জায়গাতেই। 

উচ্চতার কথা যখন এলো তখন এই কথা বলে রাখি যে নাটকটা শুরুর প্রথম ১৫-২০ মিনিট ছড়ানো ছেটানো। কেমন যেন চেষ্টা করছে গল্পটা নিজেকে গুছিয়ে তুলতে, কিন্তু কিছুতেই সেই tight knit ব্যাপারটা আসছে না। প্রায় ৪০ মিনিটের মাথায় এসে নাটকটা একটা definite shape and direction পেল। তবে যা দর্শককে একদম শুরু থেকেই সিটের সঙ্গে বেঁধে রাখে তা হল অসাধারণ আলো এবং stage management and presentationএই ক্ষেত্রগুলো এত neat and clean যে জাস্ট  চোখ ফেরানো যায় না। গল্পটা আস্তে আস্তে একটা বাঁধুনি পায়। সেই বাঁধণ এমন যে দর্শক সম্পূর্ণরূপে ভুলে যায় যে তারা স্টেজে নাটক দেখছে। 

নাটকের শুরুতেই বলা হয়েছিল যে নাটকের শেষে কলাকুশলীদের নাম বলা হবে না। কোন কার্টেন কল নেই। তাই কাদের অভিনয় মন কাড়ল সেটা আলাদা করে বলা কঠিন বৈ কি! মাস্টারদা তো অবশ্যই কেন্দ্রীয় চরিত্র এবং উনি ভালই করেছেন।  কিন্তু তার বাইরে যাঁদের চরিত্রাভিনয় সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে, মানে হল গে, outstanding, তাঁরা হচ্ছেন মাস্টারদার বিরুদ্ধে মোটা পেটুক সাহেবে  চরিত্রে অভিজিৎ সরকার আর নির্মলের চরিত্রে ভাস্কর বণিক। আর খুব স্বল্প হলেও মায়ের চরিত্র ও পিসির চরিত্রও বেশ বলিষ্ঠ। ওইটুকু সুযোগে ওই দুই মহিলা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের অভিনয়ের ক্লাসটা। কল্পনা-র চরিত্রে প্রীতিকাও কিছু কম নন। ঠিক তেমনি প্রীতিলতার চরিত্রে অদৃজা বসাক।

কিন্তু সেকেন্ড হাফে নাটককার কেন হঠাৎ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের পিছনে পড়ে গেলেন এবং মাস্টারদার মূল গল্পটা গুরুত্ব হারাতে আরম্ভ করল তা ঠিক মাথায় ঢুকলো না। 

এটা বলা ভারী বিপজ্জনক যে "এটা আমার মাথায় ঢুকল না"। অকপটে এই স্বীকারোক্তির বিনিময়ে ভায়োলেন্ট ট্রিটমেন্ট পেয়ে এসেছি। ইস্কুলে স্যারেরা রেগে যেতেন, মারধর করতেন। কলেজ ইউনিভার্সিটিতে স্যারেরা উচ্চ মানের টিটকিরি করতেন। এখন যাঁরা ছবি, নাটক তৈরী করছেন, কবিতা লিখছেন, ছবি আঁকছেন বা অন্য কোনো শিল্পকর্ম করছেন, তাঁদের অনেকের কাজ 'ঠিক বুঝলাম না' বললে ট্রোল্ড হব। বুঝি, অনেক খেটে করেন, তারপর 'ভাল্লাগছেনা' বললে রাগ হয়। ফলে, ক্রিটিসিজম নিতে পারেন না।

আমি এরকম অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি যখন বলছি যে "মাথায় ঢুকলো না" তখন উল্টে আমাকেই চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে, ট্রোলড হচ্ছি, যে এই এত সহজ জিনিসটা মাথায় ঢুকলো না কেন? আমার বোধহয় থিয়েটার সিনেমা বা অন্য আর্ট ফর্ম নিয়ে কিছু বলা বা লেখাই উচিত নয়। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে দেখা যায় যে বেশিরভাগ দর্শকই আমার সাথে সহমত পোষণ করেন। শুধু বলতে পারেন না। আমি বিশ্বাস করি যখন কোন নাটকের কোন অংশ আমার মত একজন সাধারন মানুষের বোধগম্য হয় না, তখন ধরে নিতে হবে যে সাধারণ মানুষের কাছে তা বোধগম্য ছিল না। আমি হঠাৎ করে নিজের গাঁটের কড়ি খরচা করে ভাল কিছু দেখতে এসে তাদের নামে অকারণ কুৎসা রটাতে যাব কেন! 

 কিছুদিন আগে ঘটল, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় হেব্বি স্টারকাস্ট করে আধুনিক জুলীয়াস সীজার বানালেন স্টেজে। সবই ক্লাসিক্যাল রাখলেন। আড়াই ঘন্টার ওপর ধরে পুরো জিনিসটাকে গড়ে তুললেন। তারপর সীজারের অকস্মাৎ মার্ডারেই নাটকটি শেষ হয়ে গেল।  সীজারে অ্যান্টনির স্পীচ-ই যদি  না থাকে সে নাটককে সীজার বলে মানবেন ক' জন আমার সন্দেহ আছে। জুলীয়াস সীজার নাটকের প্রাণভোমরা সীজারের মার্ডারের পর, অ্যান্টনির স্পিচে। আমার নাটকটি নিয়ে বক্তব্যে এই সারকথাটা লেখার জন্য কমলেশ্বর বাবুর এক চাটুকার আমাকেই বিদ্যেবুদ্ধিহীন বাবুমশায় বলে দেগে দিলেন। খুব হাসলাম মনে মনে। ভাবলাম এতে আমার, শেক্সপীয়রের, সীজারের বা অ্যান্টনির কিছু যায় আসে না। মূর্খ, পাগল আর মাতালদের সাথে কোনোদিন কথা বাড়াতে নেই! ফলে ওই নাটকটির কথা আর বিশেষ শোনা যায় না। 

 আশাকরি সেই পরিস্থিতি এখানে হবে না কারণ এই নাটকটি নিয়ে কুৎসার কোন প্রশ্ন নেই। যা বলছি, একজন সাধারণ দর্শকের চোখ দিয়ে দেখা অভিজ্ঞতার কথা মাত্র। কে কিভাবে নেবেন, তা অবশ্যই ব্যক্তিগত, আমার মতামতের মতই। 

নাটকটি ফার্স্ট হাফে যে উচ্চতায় গিয়ে পৌঁছালো তারপরে কিন্তু সেই ব্যাপারটাই ধরে রাখতে পারল না। ভেঙে পড়তে লাগল ভিতটা। দর্শকদের একটা চরম প্রত্যাশার জায়গায় পৌঁছে দিল প্রথমার্ধে ওই কালীপুজোর সিন। কিন্তু সারা নাটক জুড়ে আর সেরকম হল না। যুদ্ধের দৃশ্য, তেরঙ্গা তোলার দৃশ্য, শেষে সবাই যখন মঞ্চ জুড়ে দাঁড়ালেন, সে সব বড় নিখুঁত, এবং রক্তে স্রোত তোলে। কিন্তু কালীপুজোর মত আর হয় না। অনেকদিন চোখে লেগে থাকবে ওই দৃশ্যটি।

তবে এটা অনস্বীকার্য যে throughout অপূর্ব আলো, অপূর্ব মঞ্চ সজ্জা, অপূর্ব করিওগ্রাফি!!  

শুভঙ্কর দে-র কাছ থেকে পুরো নাটক ধরে আলোর যে ব্যাপ্তি শিখলাম তা বহুদিন ধরে মনে রাখব। আমাদের স্টেজে এই ধরনের আলোর কাজ কিন্তু বেশ rare  

নাম করতেই হয় দীপাঞ্জন দে আর সৌভিক চক্রবর্তীর অসাধারণ মঞ্চ সজ্জার জন্য। প্রপসের ব্যবহার নাটকের একটি দৃশ্য চলাকালীন দৃশ্যান্তরে যাওয়ার অনবদ্য প্রস্তুতি দৃষ্টান্তস্বরূপ। 

 যদিও গল্পটা মাস্টারদার ও চট্টগ্রাম উত্থান এবং জালালাবাদের মর্মন্তুদ কাহিনী নিয়েপ্রীতিলতা ওয়াদ্দেদারের প্রসঙ্গে ওভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে যাওয়ায় নাটকটি মধ্য গগনে খানিকটা দিশাহীন হয়ে পড়ে। আবার ছন্দে ফেরে । কিন্তু ততক্ষনে দর্শকের ঘোর কেটে গেছে। যাই হোক না একেবারেই বলছি না ব্যাপারটা অপ্রাসঙ্গিক বা একদম হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে।  শুধু বার বার মনে হয়েছে প্রসঙ্গটি আরো মেদহীন এবং টান টান করা যেত। মূল ধারা থেকে এতটা detour, if not diversion, - এ চলে যাওয়া কিন্তু নাটকটার প্রতি ঠিক জাস্টিস হল না। 

 মাস্টারদার গল্প বলতে গেলে কমপ্লিট গল্প।  নাটক বলতে গেলে কিছু খামতি থেকেই গেল, কয়েকটি দিক থেকে। 

রাখলাম সম্পূর্ণ কাস্টলিস্ট আর ব্যাকস্টেজে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের নাম:

MASTERDA: THE EXDETENUES


CAST


Pritilata Waddedar : Adrija Basak

Surya Sen : Tathagata Chaudhuri

J. R. Johnson : Avijit Sarkar

Trevor Morsehead : Swapnadip Adhikary

Ananta Lal Singh : Sanny Barik

Ganesh Ghosh : Spandan Saha

Ambika Chakraborty : Jahar Das

Nirmal Sen : Bhaskar Banik

Ananda Prasad Gupta : Samriddha Srimani

Lokenath Bal : Adhiraj Ghosh Dastidar

Tegra Bal         : Spandan Muhuri

Kalpana Dutta : Pritika Das

Subodh Roy : Debrup Dutta Bhowmick

Himangshu Sen : Rudrajyoti Ghosh

Swadesh Roy : Soumyadip Daw

Balaram         : Soujatya Dutta

Monorama Devi : Indrani Ghosh Nath

Tukun : Shinjini Debnath

Alexander Barnett : Satrajit Sarkar 

Benjamin Ferrera : Souradeep Banerjee

Katherine Ferrera : Dishari Mukherjee

Pulin Ghosh/Simmons : Abinash Roy

Ardhendu Dastidar : Richik Nath

Motilal Kanungo : Aditya Banerjee

Sukhendu Das/Wasim : Samriddha Ganguly

Naresh Rai/Guide : Sounav Dutta

Wilkinson/Old Ganesh Ghosh : Prabir Das

Melissa Wilkinson : Swaragiti Modak

Evelyn Wilkinson : Gitasree Chakraborty

Old Subodh Roy : Asish Kumar Khan

Santi Ghosh : Gitanjali Mondal

Prabhash Bal/Officer with Barnett : Deep Kundu

Tripura Sen/Trilochon : Sayantan Ghosh

Madhusudan Dutta : Riddhiman Biswas

Jatindranath Das : Bishnu Bose

Aagami         : Arnab Saha

Sentry : Jeet Mondal, Subhadeep Mazumder

Others : Trisha Chowdhury, Ishita Debnath, Sampa Muhuri

Boy who bears the Union Jack : Ankan Saha




CREDITS


Direction         : Anamitra Khan

Dramaturge : Kallol Lahiri 

Light Design : Subhankar Dey

Music : Amit Chatterjee

Background Score : Srijeet Raha

Lyrics : Rabindranath Tagore, Kazi Nazrul Islam, Debaloy Bhattacharya & Arnab Choudhury

Costume Design : Anjali Rajbanshi

Make-up         : Sheikh Israfil

Stagecraft : Dipanjan Dey & Saumik Chakraborty

Props & Requisition : Pradip Patra & Moni Bhadra Sahu

Choreography : Jahar Das & Anasua Goswami

Music Operator : Bandan Mishra

 

 

No comments: