Sunday, 11 May 2025

রোববারের প্রেম

ধরুন আজকে রোববার 
ধরুন আপনার নাম বিরূপাক্ষ সমাজদার 
ধরুন আপনার বয়স বাহান্ন 
ধরুন আপনার বউয়ের নাম মালিনী 
ধরুন আপনার গার্লফ্রেন্ডের বয়স পঁয়ত্রিশ
ধরুন তার নাম দামিনী 

ধরুন আপনি সকাল এগারোটার সময় সব কাজ সেরে সবে খবরের কাগজের দিস্তে হাতে বসেছেন, কারণ এর ভিত্তিতেই বিভিন্ন লোকের সাথে তর্ক করে রোজ সামাজিক পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন ৷ আপনি অনেস্ট। উৎকোচতত্ত্বে বিশ্বাস করেন না। তাই গভীর লেখাপড়ার প্রয়োজন |

ঠিক তখন
দামিনীর ফোন এলো ।
আপনি সোজা বারান্দায় |
- কিগো.... আজ না রোববার! তো তুমি সকাল থেকে বাড়িতে বসে বসে কি করছো? চলো আজকে দুজনে কোথাও একটা হারিয়ে যাই ....! 
- না কিছু করছি না, তবে আজ হবে না, আজ ঠিক ইচ্ছে নেই।
- ইচ্ছা নেই মানে? সবকিছু তোমার ইচ্ছা মত চলবে নাকি? ও বুঝেছি আজ রোববার শুধু বউয়ের সাথে বসে বসে প্রেম করবে....
 আর আমি কেউ না, ......না!!!!
- না ঠিক তা নয়, তুমিই তো সব। আজ আসলে শরীরটা ঠিক জুত নেই!
- 'জুত' হোয়া দা ফা** ইজ দ্যাট! যও বাজে অজুহাত! 
- মা কালীর দিব্যি বলছি আজ না একদম বিছানা থেকে উঠতেই পারছি না। 
কেন কি হয়েছে ? রাতে বৌ এর সাথে বেশি ধস্তাধস্তি... না কি জ্বর !!
- ও সব কিছু না! কি যে বল ধস্তাধস্তি করার ক্ষমতা থাকলে তো! 
- হ্যাঁ সে বিলক্ষণ জানি ... দোদমা এখন লঙ্কাপটকা!
- নাগো বুকটা কেমন ধড়ফড় করছে আর মাঝেমধ্যেই যখন হঠাৎ করে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছি তখন কেমন চারিদিক ব্ল্যাকআউট হয়ে যাচ্ছে |  
- ওষুধ খেয়েছো ?
- না আরেকটু দেখে নি, তারপর ওষুধ খাব । 
- ব্ল্যাকআউট যখন হয়ে যাচ্ছে তখন একটু প্রেসার প্রেসার চেক করাও 
- হ্যাঁ ঠিকই ...
- ঠিকই মানে? এদিকে মাল খেতে গেলে তো তখন পয়সাকড়ির কোনো হুঁশ থাকে না। একটা প্রেসারের মেশিন কিনে বাড়িতে রাখতে গেলেই তখন তোমার সব টাকা চলে যায় । সমস্যাটা যে কি, বুঝতে পারি না। অনেক দিন ধরে তো বলছি। আমি একটা কিনে দিই। তাতেও রাজি হচ্ছ না। একটা মেশিন রাখতে কি হয় বাড়ির মধ্যে? 
- কিছুই হয় না! রাখলে রাখাই যায়। কিন্তু থাকলেই আবার সব সময় মাপতে ইচ্ছে হবে। আবার মাপলে তখন কোত্থেকে কি বেরোবে! তখন যতটুকুও বা বেরোচ্ছি তাও বন্ধ হয়ে যাবে। 
- আমাদের মধ্যে এমনিতেই তো সব বন্ধ হয়ে গেছে ,আর পড়েটা আছে কি...
- এরকম করে বলো না একটা অসুস্থ মানুষ ...!
- অসুস্থ মানুষকে কি রকম করে বললে কাজ হয় তা আমার জানা নেই। যখন অসুস্থই তখন আর সম্পর্কটাই রেখ না। 
- না আমি ঠিক তা বলতে চাইনি... বলছিলাম একটা অসুস্থ মানুষকে এরকম করে বলা কি ঠিক?  
- অতো ঠিক ভুল জানিনা। আমি রাখছি। কারণ এত দূর থেকে তো কিছু করতে পারবো না, ফালতু বকে লাভ নেই। 
- তাহলে এরকম করে বোলো না !!!
- আমি আদৌ সেরকম কিছু বলেছি কি? শুধু বলার মধ্যে বলেছি বাড়িতে একটা প্রেসার মাপার মেশিন রাখতে। তাতেই আমার খুব বড় দোষ হয়ে গেছে। 
- না মানে...
- দুপুরে কি খাবে? 
- একটু ভাত আর ঝিঙে সেদ্ধ...
- হোয়াট? হোয়াট দা ফা** ইজ ঝিং সেদ্ধ! 
- ঝিং নয়, ঝিঙে...
- হোয়াটএভার ... তুমি বরং এক কাজ কর, আজ রোববার বাড়িতে বউ আছে, তার কাছ থেকে যতরকম সেবা সুশ্রূষা হয় আদায় করে নাও। আর আমাকে ভুলে যাও। 
- না মানে...
- রাখছি। সুস্থ হয়ে ফোন করো । 
ঠকাস। 

মালিনী চা দিতে এসে
- কে গো রোববার দিন সকালবেলায় তোমাকে ফোন করে বিরক্ত করছে?  
- না মালিনী, কেউ না ওই যে আমাদের কল সারাবার লোকটা...প্লাম্বার... তোমার কিচেনের কলটা দিয়ে ভালো করে জল পড়ছে না, না! অনেকদিন ধরে তুমি বারবার বলছো, আমিও কাজের চাপে ভুলে যাই।
- অ্যাঁ বল কি! আমার কষ্টের কথা তুমি মনে রেখেছ?
- এরকম করে বোলো না...
- তুমি যে আমার সেই কথাটা কানে তুলেছ, এ আমার চোদ্দ পুরুষের ভাগ্য ভালো! একটা কথা জেনে রেখ, কল থেকে জল পড়ুক বা না পড়ুক, এই সংসারে প্রত্যেক বেলায় কিন্তু ওই রান্নাঘরটা থেকেই সবার জন্য চব্য-চোষ্য- লেহ্য- পেয় জুগিয়ে যাচ্ছি, বছরের পর বছর ধরে। ওই করে করে হাড় মাস কালি হয়ে গেল !
- আরে আমি তো বলেছি ওকে, যে আজকে পারলে চলে এসো। আজই কলটা ঠিক করে দিয়ে যাও। কিন্তু ওর নাকি আজ হবে না। 
- আরে হবে না মানে? কল দিয়ে সুতোর মত জল পড়ছে। একটা বাসন পর্যন্ত ঠিক করে মাজা যায় না। তুমি এই আজ-কাল-পরশু করে খালি টালবাহানা করছ। কলের মিস্তিরি কি প্রাইমিনিস্টার নাকি, এত ব্যস্ত যে এটুকু সময় হচ্ছে না! 
- এরকম বোলো না, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিন্তু এককালে চা বিক্রি করতেন। 
- অত বুঝি না বাপু.... কাজ তো আর মাগনায় হচ্ছে না! রীতিমতো পয়সা দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। কি এমন দেশের প্রধানমন্ত্রী হে, যে এইটুকু কাজ একটু পাঁচ মিনিটের জন্য করে দিয়ে যেতে পারছে না? 
- ও বলছে যে খুব আয়রন জমেছে পাঁচ মিনিটের কাজ নয় সারাদিন লেগে যাবে ।
- আর তুমিও সেই বুঝে বসে আছো, আসলে সোজা কথা হল ওইটুকু কাজ ও করতে আসবে না। সারাদিনের কাজ দেখিয়ে একগাদা পয়সা হাতানোর তালে আছে। আর তুমিও সেটা বিশ্বাস করে বসে আছ।
- না তা কেন? 
- তা নয়ই বা কেন...ওই কলের মতই তোমারও নলে আয়রন জমে গেছে |
- যেটা বোঝো না সেটা নিয়ে কেন কথা বলছো ?
- হ্যাঁ আর তুমি তো সব বোঝো! তাই দান-খয়রাত খুলে রেখেছো, যে যা ইচ্ছা একটা করে দিয়ে তোমার মাথা মুড়িয়ে টাকা নিয়ে চলে যাবে। তা তুমি দাতা কর্ণ .... আমি আর কে? কোনোদিন কিছু চেয়েছি! পুজোর সময়ে মুখ ফুটে একটা বালা জোড়া চেয়েছিলাম, তাতে কত টালবাহানা করলে !!! এই নেই ওই নেই সেই নেই! আর এদের বেলায় তোমার কিছু যায় আসে না। যখন যা চাই, তাই-ই ওরা পাবে। 
- আহা কার সাথে কার তুলনা করছো !!! 
- তাইতো!!! তুলনা তো আসবেই! ওরা তো অনেক বেশি ইম্পর্টেন্ট!!! যা চাইবে বিচার বিবেচনা না করেও ওদেরকে দিয়ে দিতে হবে !!! আর আমি একটু একটু কিছু চাইলেই দোষ। 
- একটু !!! সোনার বালা জোড়া - এটা একটু? আরে, সোনার দাম জানো? 
- হ্যাঁ হ্যাঁ জানি। আর এ-ও জানি ওই সময়ে 'সোনা' বলে ডাকার সময় বুঝতে পারো না, না যে কার কত দাম? তখন কোন সোনা কোন সোনার সাথে গুলিয়ে ফেলো তা আর সকাল হলে মনে থাকে না! 
- ধ্যাততেরি! একটা রোববার যে শান্তিতে বাড়িতে থাকব তার যো নেই। 
- হ্যাঁ, আমি তো তোমার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছি।
- এই শোনো না, এই ঝগড়া করলে তো ঝগড়া বাড়তেই থাকবে, এসবের কোন মানে হয়!!! 
- মানে তো কিছুই হয় না। সে তো আমিও বুঝি। আমিও চাই রোববার একটু শান্তি স্বস্তিতে থাকতে। কিন্তু তুমি তার সুযোগ দাও কি? তোমার পঞ্চাশের উপর বয়স হয়ে গেছে, প্রত্যেক রোববার সকালবেলায় লাইন দিয়ে আধখানা পাঁঠা না কিনে আনলে এমনিতেই হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাবে যেন।
- হে হে হে হে হে!!! এইতো আসল কথাটা বুঝেছো! আমি হলাম গিয়ে খাঁটি বাঙালি! রোববার একটু পাঁঠার ঝোল সাদা বাসমতি চালের ধোঁয়া ওঠা ভাতের ওপর পাতিনেবু চটকে না মেখে খেলে আমার জাত যাবে গো। আমার আত্মা মরেও শান্তি পাবে না গো!
- আ মরণ!!! মুখে কোনো ভাল কথা নেই! রবিবার ভরদুক্কুর বেলায়!!! তাই তো বলি....
- কি বলো...
- ন্যাকা!!!

বিরূপাক্ষ মনে প্রাণে স্বপ্ন দেখতে দেখতে চান করতে উঠে গেল | মন প্রেমে বিভোল। বিহ্বল। উদ্বেগ ধরে রাখতে পারছে না।

এক থালা সাদা ভাতের উপর পাতি লেবু সমেত কাঁচা লঙ্কা সমেত, এক চিমটে নুন সমেত, স্যালাড সমেত, নলি যুক্ত পাঁঠার তিন চার পিস কষা মাংস! তার ওপর হালকা হলুদ রঙের চর্বির পাতলা একটা প্রলেপ আর টানটান খানিকটা ঝোল। 

গানের কলি ভাঁজতে ভাঁজতে এক মগ জল মাথায় ঢালল :

প্রেম বড় প্রপঞ্চময়!!!