Friday, 13 September 2024

বৃহত্তম গণতন্ত্র ও ক্ষুদ্রতম আমি


অনেক জায়গায় যাচ্ছি। অনেক কিছু অনেক দিন ধরেই দেখছি শুনছি। 

গত কুড়ি বার বিভিন্ন নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার হওয়ার সুবাদে গণতন্ত্র কি সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাই। 

এটা কোনো বিশেষ সরকারের দোষ নয়। দোষী আমরাই। জনগণ। 

নিজের বাড়ির সন্তানদের যেমন করে বড় করবেন, অভিভাবক হিসেবে, তারা কিন্তু সেরকমই বড় হবে। কতটা প্রশ্রয় দেবেন, তো তো অবিভাবকদের ওপরেই নির্ভর করবে। 

সন্তানকে ছোটবেলা থেকে পকেট মানি দিয়েছেন, যা যতটুকু পারেন। নিজে পাঁউরুটি খেয়ে থেকেছেন, সারাদিন, সে জন্য। 
কিন্তু এখন সেই পকেট মানি নিয়ে আপনার সন্তান আপনার বিরুদ্ধেই আপনার বাড়ির রান্না খেয়ে আপনার বিরুদ্ধে কেস লড়তে যায়। 
লোককে কাঁদুনি গেয়ে দেখায় যে এত কল্ল বাবা মায়ের জন্য কিন্তু বাবা-মা মোমবাতি নিয়ে আপনার পিছনেই .... 
এই কি বাবা মায়ের রূপ ? !!
ছিঃছিঃছিঃ

সারা ভারতে এখন একটা দারুন ব্যাপার :
অশিক্ষিতরা দেশ চালালে উদাহরণ হন। গর্ব হওয়া উচিত: 
উফঃ!! কি পোগগেস! 

কিন্তু আমি মেনে নিতে পারি না যে এত অশিক্ষিত লোকরা দেশ চালাবেন ! ভাল মন্দ পরের কথা। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র যাদের হাতে, তাদের মিনিমাম এডুকেশনাল কোয়ালিফিকেশন থাকা উচিত। 

দেখা যাবে যে সবথেকে অশিক্ষিত নেতারাও তাদের ছেলেমেয়েদের বেস্ট ইন্সটিটিউটে দেন কেন? কারণ, নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলেন না। তাদের গুলো থাকুক আব্বুলিশ আর দুধেভাতে | বাকিদেরগুলো গরু-ছগল তৈরী হলে মন্দ হয় না। পার্টির ক্যাডার বাড়বে।

সব পলিটিকাল পার্টি একটাই স্বপ্ন দেখায়, গরিবদের বড়লোক করে দেবে। এই মিথ্যেটা যারা যত গভীর ভাবে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পেরেছে, তারা তত জনমত নিয়ে সরকার গড়েছে। সেটা করতে করতে ক্রমশ: মন্ত্রী-সান্ত্রীরা প্যাথোলজিক্যাল লায়ার হয়ে উঠেছেন। পোরিস্থিতি এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছেছে যে মাননীয় প্রধান ও মূখ্য-রা কাকে/কাদের কোথায় কি মিথ্যে কবে বলেছেন তা নিজেরাই মনে রাখতে পারেন না। আর বেশিরভাগ মানুষ এনাদেরকে এন্টারটেনমেন্টের বস্তু বলে মনে করেন। আমি ক্ষুদ্র একজন নাগরিক হিসেবে লজ্জা পাই, যখন এনাদের বিশ্বাসযোগ্যতা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। আরো লজ্জা লাগে যে সময়ের চক্রে, আপেক্ষিক অবনমনের উদাহরণ দিতে দিতে যে 'তুমি আমাকে খারাপ বলছ্!!! এই দেখ আমার থেকেও আরো বেশি খারাপ আছে।"  কখন একসময়ে চা ও চপ বিক্রেতারা আই এ এস আই পি এস দের বাঁদর বানিয়ে রাখতে পেরেছে। 
গনতন্ত!!!! 


আচ্ছা কেন এমন হল?

আসলে ভারতের আম আদমি বোঝে ইক্যুয়ালিটি চায় ইক্যুয়ালিটি, মনে প্রাণে। 
সেই ইক্যুয়ালিটির মানে কি? 
মানে, মানুষ হিসেবে তার মেধা বা কায়িক যোগ্যতা হিসেবে আয় করা নয়। মানে, মানুষ হিসেবে অধিকারের সমতা পাওয়া নয়।  ইক্যুয়ালিটি মানে সবার আয় এক হয়ে যাবে, সবাই বড়্লোক হয়ে যাবে। আর সেক্যুলারিজম, ফ্রেটারনিটি, এ সব প্রশ্ন তো আই আই টি তে আসে, আই এ এস, আই পি এস হতে গেলে জানতে হয়্, শিখতে হয়। মন্ত্রী হতে গেলে ও সব লাগে না। পাড়ার নেতা হতে গেলে তো আরোই লাগে না। তাদের সে সব জানার প্রয়োজন নেই। শুধু গাড়ি ভরিয়ে পার্টির মিটিং মিছিল কে স্ব্ত:স্ফূর্ত  ভাবে সফল করে দাও। মেধারা শুধু পাশ দিক! তাদের আঙুলে নাচানোর জন্যই  জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন। সুতরাং সবাই রোজ দেখে অশিক্ষিত নেতারা তো বসেই আছেন। ওনাদের নাচাবেন।  ইস্কুলে তাই পাশ ফেল তুলে দাও। আর শুধু শ্রী বৃদ্ধি কর । পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্রের গর্বে ফেটে পড়ে, সেই নিয়মে এরকম বিদ্বান বিচক্ষণ মানুষরা চা-চপ ওয়ালাদের কমান্ডে ওঠাবসা করেন ৷ আর চা বা চপের সপক্ষে থাকেন এক শ্রেণির মানুষ যাঁরা কোনোদিন স্বপ্নেও নিজেদের যোগ্যতায় ভাবতে পারেন নি যে এরকম জায়গায় পৌঁছাবেন | বাংলা বা ইংরেজি কোনো বানানই লিখতে শেখেন নি। পারিশ্রমিক আর ভিক্ষার পার্থক্য জানেন না কারণ তাঁদের আঙুলে সরকারের আশীর্বাদে শুধু নানান অমূল্য আংটি আর পাথর, গলায় সোনার চেন, বাড়ি, মার্বেল প্যালেস | 

শুনেছি স্বাধীনতার জন্য লড়াকু ছোট বড় সব বিপ্লবীরা গীতা কন্ঠস্থ করে ফেলতেন | সবার আগে ছিল শিক্ষা ও সমাজ চেতনা | বোমা বাঁধা শেখানোর আগে তাঁদের শিক্ষা দীক্ষা ও সমাজ দর্শনের পরীক্ষা হত | কে বা কারা নিতেন, সে পরীক্ষা? রাসবিহারী বসুর মত মানুষরা। চেনার সুবিধার জন্য বলি, যে ওনার নামে রাস্তা আছে। তিনি কাকে কাকে দীক্ষা দিয়েছিলেন কালীঘাটের আশেপাশের মানুষজন  জানেন নিশ্চই। কারণ সেখান থেকেই তো অনুপ্পানিত! 

রামমোহন বিবেকানন্দ রবীন্দ্রনাথ কুস্তিতে দড় ছিলেন। রীতিমত ওস্তাদ রেখে চর্চা করতেন। উদ্দেশ্য শুধু ফিজিক্যালি ফিট থাকা ছিল না কিন্তু! উদ্দেশ্য ছিল এটা যেন লোকে জানে যে বিদ্বান বিচক্ষণ পণ্ডিত  মানে দুর্বল নই ... মেরে দেখ না! প্লাটা মার রাখতে পারলে হয়!  নিজেকে বাঁচাতে ও সমাজকে বদলাতে জরুরী ছিল।  তাই চোর ডাকাত গুন্ডারা লুটে পুটে আমি ব্যক্তি অব্দি পৌঁছালে নিজেকে বাঁচাতে এই সব মহান মানুষরা স্বাধীনতার আলোতে যা শিখিয়েছেন তাই-ই অনুসরণ ও অনুকরণ করে এসেছি, আর চিরকাল করবও | ঠিক সেই জন্যই তো এনাদের জীবনী সমস্ত স্তরে বার বার পড়ানো হয় -- আত্মশক্তির ও বিদ্যার যথোপযুক্ত ব্যবহার।
সেগুলো অনুধাবন করতে হলে ন্যূনতম বিদ্যা ও বুদ্ধির প্রয়োজন | সেগুলো যে বাঁদরদের থাকে না তারা 'সোজা শিরদাঁড়া'- র অর্থ বুঝতে অপরাগ। ওদের ওই সারাদিন পাঁচিলে বসে গার্লফ্রেন্ডদের উকুন বাছাটাই একমাত্র কাজ !

হিংসে তো হয় বটেই।  আমিও যদি অশিক্ষিত মূর্খ হয়ে ও রকম শুধু উকুন বেছে কয়েক কোটি টাকার মালিক হতে পারতাম ! আহা ! 

কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, যে হিংসে হওয়া তো দূর, এদের 'মানুষ' বললে মানব সভ্যতার অপমান হয়্। তারা  এতটাই অন্ধ ও উন্মাদ যে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় স্বজন, সন্তান, সবাইকে নিজের মত ভাবে। তাই, নিজেদের যোগ্যতার ঠিক নেই ডাক্তারদের গালাগাল দেয়। সঙ্গে অনেক  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্টের পদ আলো করে বসে আছে । আর ফিলিং লাইক ওদের বাবার ঘর থেকে সব ডাক্তার ও শিক্ষকরা বেতন  পান।  কিন্তু এদের বাবারা এরকম ছিলেন না। না ওনাদের এত কিছু ছিল, যে অন্যদের মাইনে দেবেন। তাঁরা ডাক্তার ও শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করতেন। নিজেরাও শ্রদ্ধেয় ভাল মানুষ ছিলেন। 

এই সব নেতাদের সন্তানরা নাকি প্রাইম ইন্স্টিটিউট থেকে স্নাতক হয়েছে| আশীর্বাদ করি তারা যেন নিজেদের শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে নিজেদের অশিক্ষিত বাবা মায়েদের ঠিক দিকে চালিত করার মত শক্তি পায় আর সময় হলে "সোজা শিরদাঁড়া" শব্দবন্ধের যথাযোগ্য অর্থ তাদের বুঝিয়ে দিতে পারে | 

L1 /L2/L3/Coccyx (popularly spelled as 'coxis')-এর  মানে জানে না...cord আর chord এর পার্থক্য জানে না কিন্তু শিরদাঁড়া-র ছবি দিয়ে জ্ঞান দেখাতে যায়। 
আর অদ্ভুত, কিছু বেহেড পাব্লিক সেই মিথ্যে গুলো রোজ খায়। আকুয়ারিয়েমের মাছের মত। 

সব শেষে বলি, 
Rape and murder এর মত জঘন্য অপরাধকে 'সাধারণ ঘটনা' বা 'অন্য কোথাও ঘটে না?' বা 'আগে যেন কোনোদিন ঘটে নি?'  বলে যারা party colour এর দোহাই দিয়ে socially standardise করতে চাইছ, তাদের open challenge জানালাম, 
রাতে দেখা হবে বন্ধু! 
তোমাকেও শান্তিতে ঘুমোতে দেব না।

সঙ্গে এও বলে রাখি, যদি আজ সরকার সরকার না হয়ে বিরোধী হতেন, তা হলে একই কথা বলতেন তো? একই ভাবে অপরাধীদের আশ্রয় দিতেন তো? নাকি তখন সেই 'মহাকরণ অভিযান' করতেন, ওই একই ইস্যুতে?