: হ্যালো ? হ্যালো!!!! শুনতে পাচ্ছ? ….
: হ্যালো ... হ্যাঁ পাচ্ছি, এবারে...কিন্তু কেটে কেটে যাচ্ছে কেমন...
: আমি জানি কোথাও কেটে কেটে যাচ্ছে না। সব তোমার শয়তানি... বন্ধুদের সঙ্গে বেরোলেই তোমার ল্যাজ গজায়, না!!!
: না মানে ওটা পরমের গাড়িতে রাখা-ই থাকে....সুযোগ বুঝে পরে নিই।
: তুমি ফাজ্লামি করছ আমার সঙ্গে!!!! এতো বড় সাহস তোমার ? একবার ফেরো তারপর দেখছি...পরমকে ফোনটা দাও তো একবার...
: আবার ওকে কেন!! ও যে ড্রাইভ করছে!!
: তুমি পরম আর টুয়ার সঙ্গেই ফিরছ তো? না কি অন্য কেউও আছে?...
: উফফ... না আর কেউ নেই..আচ্ছা বাবা নাও... ওর থেকেই জেনে নাও পরমকে দিচ্ছি... ওকে তো তুমি আমার থেকেও বেশি বিশ্বাস কর !!!
: হ্যাঁ ...তা বটে! ও তোমার মত অসভ্য আর পেঁচো মাতাল নয়..
: তাইই নাকি তা বিয়েটা তো...
: বাজে না বকে তুমি ফোনটা পরমকে দেবে?
: ... নাও
: কি রে পরম? কি খবর?
: এই চলছে... তারপর?
: তারপর আর কি! তুই চলে যাবি নিউ ইয়র্কে... আর আমাদের তো এই ট্রিপে নিলি না...
: হ্যাঁ ... অনলি চাইল্ডহুড ফ্রেন্ডস আর অ্যালাউড |
: তোরা কে কে আছিস গাড়িতে?
: আপতত : দুজন পুরুষ সিংহ এবং একটি ভেড়া |
: ওওওও বুঝেছি... তোরা দুজন হলি দুই পুরুষ সিংহ আর আমার বর হল ভেড়া...!!
: আমি তো সেটা বলি নি যে কে কি!! তুই নিজেই ডিফাইন করছিস।
: তোর শুধু বাজে কথা... যাক গিয়ে... আর কেউ জয়েন করেছিল মন্দারমণিতে, না শুধু তোরাই?
: না... শুধু আমরাই...
: কি করলি তিনজনে?
: আনলিমিটেড থ্রি সাম... ওরাল...
: যা: ! ছি: ! কি প্ল্যান এক্সিকিউট করলি তাই জানতে চেয়েছি..
: আরে তুই বিশ্বাস করছিস না; আমরা সত্যিই তাই-ই করেছি... তিনজনে মিলে চুটিয়ে শুধু কথা বলেছি..থ্রি সাম ওরাল-ই তো হল, বল্!!! আর আমরা যা যা প্ল্যান করেছিলাম সব ফুলফিল্ড...
: ওয়াও...গ্রেট! তা প্ল্যান কি ছিল শুনি!!!
: প্ল্যান প্ল্যান প্ল্যান...কি বলি..., প্ল্যান জাস্ট একটাই ছিল... অ্যাবসলিউটলি কিচ্ছু না করা |
: অ্যাঁ?
: হ্যাঁ...নট টু ডু এনিথিং...শুধু শুয়ে থাকব, খাব আর ঘুমোবো...
: এইটা জাস্ট বিশ্বাস করলাম না
:সেটা তোর প্রবলেম। এখানে আমি কি বলতে পারি! তুই জিজ্ঞাসা করলি, আমি উত্তর দিলাম।এবার বিশ্বাস করা, না করা, তোর ওপরে...
: তুই বলছিস শাওনও কিছু করেনি...কোনো সিন ক্রিয়েট করেনি ও...
: না কিচ্ছু করেনি...হঠাত সিন ক্রিয়েট-ই বা করবে কেন, আঊট অফ নাথিং?
: ওয়াও...তোরাই আসল বন্ধু...তোদের সাথে থাকল দু দুটো দিন আর কিচ্ছু করেনি... কিছু তো লুকোচ্ছিস্.... ঠিক হজম হচ্ছে না বস্...আমার সাথে এরকম হয় না কেন বলত?
: আসলে কি জানিস প্রবলেমটা হচ্ছে তোদের এত বছর বিয়ের পরেও তুই বিশ্বাস করে উঠতে পারলি না যে আমরা খুব সৎ ও ভালো মানুষ। সব সময় একটা সন্দেহ বাতিক, এটা কিন্তু ঠিক নয়।
: সিরিয়াসলি, শাওন কিচ্ছু করেনি?
: একটা কাজ করেছে যেটা তোকে বলা যাবে না।
: অ্যাই.... বাবা, লাইনে এসো!!! ও, আর কিছু করবে না, এটা তো হতেই পারেনা। কি করেছে রে?
: কিছু না...একটু বিয়ার খেয়ে ছিল তারপর....
: তারপর.... তারপর.... বল.... বল....
: তারপর একটু নেশা হয়ে গেল...
: তারপর....বমি করল তো? ইসসসসস!!!
: না না! ওসব কিছু করে নি রে!!!
: তাহলে?
:.... খুব সেন্টু খেয়ে বলল, ‘দেখ আমি আর পারছি না। আমাকে একটা অ্যাডভাইস দিবি ভাই, তোরা?’
: হুম্!!! বুঝলাম। নিশ্চয়ই আমাকে নিয়ে আর পারছে না বলল, তাই না?
: দেখেছিস তো? ওসব কিছু বলেই নি ও। আচ্ছা, সব সময় নিজেকে একটা কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে কি আনন্দ পাস বলতো, আমি ঠিক বুঝতে পারি না! ...না তোর ব্যাপারে কিছু বলেই নি।
: এও সম্ভব যে ও আমার সম্পর্কে কিছু না বলে তোদের কাছ থেকে একটা অন্য কোন বিষয় সম্পর্কে সমাধান চেয়েছে, যেটা নিয়ে ও আর পারছে না...
: হ্যাঁ ম্যাডাম, একদমই তাই... তবে শাওন তোকে যা ভালবাসে তাতে তোর কেন এরকম মনে হয় যে তুই-ই ওর লাইফে একমাত্র প্রবলেম?
: তাহলে ও আর কি নিয়ে পারছে না...
: আরে ও যে নতুন চাকরিটা জয়েন করেছে, ভেবেছিল আগের থেকে ভালো হবে, আরো একটু ভাল থাকবে, তোকে ভাল রাখবে...কিন্তু এই বয়সে এসে এত চাপ মোটেই ভালো লাগছে না শাওনের। আর সেটাই ও আর নিতে পারছে না। তাই আমাদের ছোটবেলার বন্ধু হিসেবে জিজ্ঞাসা করল যে এটা সম্পর্কে আমরা যদি ওকে একটা উপদেশ দিই...
: তা, কি উপদেশ দিলি?
: আমাকে আর মাথা খাটাতে হয়নি। টুয়ার মাথা আমার থেকে অনেক বেশি শার্প । তাই আমি ভাবার আগেই একদম ঠিক সাজেশনটা দিয়ে দিল...
: কি সাজেশন শুনি...
: সিম্পল...বলল, ‘চাকরিটা ছেড়ে দে! পোষাচ্ছে না যখন, অত কি রে! পর দিন যাবি, গিয়ে চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে আসবি...তুই হলি শালা বাঘের বাচ্চা!!!’
: তারপর....? বার খেয়ে না হয় চাকরিটা ছেড়ে দিল...তারপর কি হবে? বাঘের বাচ্চাকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাবে?
: এক্সজ্যাকট্লি...ঠিক এই প্রশ্নটা শাওনও টুয়াকে করেছিল , যে তারপর কি হবে....
: সত্যিই তো!! তারপর কি হবে, তা টুয়া কি বুদ্ধি দিল?
: বলল, দেখ ভাই, তুই কিন্তু একটাই সমাধান চেয়েছিলি আমরা একটাই দিয়ে দিয়েছি। আগে থেকে বলতে পারতিস যে পাঁচ-ছ’টা সমাধান লাগবে। তাহলে নিজেকে রেডি রাখতাম। কিন্তু এখন ইটস টু লেট। আর হবে না।
: তোদের মত শয়তান!!!!.... আচ্ছা তোরা সত্যিই আমাদের বন্ধু?
: এটা আমরা ঠিক বলতে পারবো না। আমাদের তিনজনের রিলেশান আনডিফাইণ্ড। যেটা যখন করার ইচ্ছে হয় আমরা করে আসছি, সেই যখন থেকে আমরা একে অপরের সবথেকে সুন্দর জায়্গাটা দেখতে পেতাম আর হিসু পেলে ভো-কাট্টা খেলতাম, তখন থেকে। সেই দাবীতে এক্ষেত্রেও যেটা হলে ওর সবথেকে ভালো হয় সেটাই আমরা ওকে বলেছি। আর আমারও একই মত, যে চাকরীটা ছেড়ে দিক। এবার তারপরে ও সেটা কিভাবে হ্যান্ডেল করবে ওর ব্যাপার।
: বেশ তোরা ফের, তারপরে এটা নিয়ে একদিন বসা যাবে। টুয়া আর কি কি করলো, সেটা বল?
: টূয়া সেই আশা থেকে একটা দারুন জিনিস করে চলেছে। যখনই তিন বন্ধুর মধ্যে প্রচন্ড নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে তখনই মাঝেমধ্যেই গেয়ে উঠছে, গোবিন্দা স্টাইলে
“ইতনি ই ই ই খুশি...” বলে আবার চুপ...
এই দাঁড়া একটা ফোন আসছে..... পরে কথা বলছি
: ওকে, তোরা সাবধানে ফের....
দ্বিতীয় পর্ব
(পরম ফোনে কথা বলে)
: হ্যালো....
: হ্যাঁ হ্যালো...মি: রায় বলছেন্? আমরা ব্রডব্যাক রিসর্ট থেকে বলছি স্যার...
: হ্যাঁ বলছি, বলুন?
: স্যার আপনাদের রুম থেকে একটা হেডফোন পাওয়া গেছে। আমরা ওটা কি রেখে দেবো? না কি ক্যুরিয়রে আপনাদের কাছে পাঠিয়ে দেবো, ঠিক বুঝতে পারছি না। একটু যদি হেল্প করেন এই ব্যাপারে তো ভালো হয়।
: হেডফোন ফেলে এসেছি? আমরা?
: হ্যাঁ স্যার্...
: আপনি শিওর আমাদেরই?
: হ্যাঁ স্যার...
: আচ্ছা আপনাকে একটু পরে জানাচ্ছি, বাকিদের সঙ্গে কথা বলে...
: ওকে স্যার
(ফোন কেটে দিয়ে)
পরম : আমাদের হোটেল থেকে ফোন করেছিল তোরা কেউ হেডফোন ফেলে এসেছিস?
শাওন: হেডফোন!!! (শাওন প্রায় আঁতকে ওঠে)
পরম: শাওন, আমি তোকে কতবার বলেছি বেরোনোর সময় সব চেক করে বেরোবি। বিছানার উপর একটা হেডফোন পড়েও ছিল। আমি তোকে বলেছিলাম যে এটা কার হেডফোন, বিছানায় এভাবে পড়ে ??? তুলতে ভুলিস না কিন্তু। তুই তুলিস নি???
শাওন: বাজে কথা বলিস না... তুই কখন বললি আমাকে, এসব?
পরম: আরে আমার স্পষ্ট মনে আছে আমি তোকে বলেছি। আর তারপর আমি নিজের এয়ার পড চেক করলাম... তুই যদি এখন এভাবে বলিস, যে আমি তোকে বলি –ই নি, আমি কি বলি বলতো?
শাওন: (মাথার চুল টানতে টানতে) আরে ভাই ওটা আমার বউয়ের হেডফোন... আসার সময় আমাকে দিয়েছিল.... আর বারবার বলে দিয়েছিল আমি যেন ভুলে না যাই, হারিয়ে না ফেলি। এবার কি হবে...!!!
টুয়া: ইতনিই ই ই ই খুশি...
শাওন: (টুয়াকে) চুপ! চুপ! একদম চুপ তুই। কোন কথা বলবি না.... সব সময় শুধু ফাজলামি। দেখছিস একটা সিরিয়াস ব্যাপার, কোথায় একটু হেল্প করবি...তা নয়….
টুয়া: ইতনি ই ই ই ই খুশি...আমি নিজের জন্য গাইছি...ভাগ্যিস আমি আমার বৌ-এর ডেড ফোন্, মানে হেডফোন ধার করে আনি নি!!!
পরম: শাওন, আমাদের ফেরার পথে আর্যদার বাড়ী পড়বে... আর্যদা ফোন করেছিল, বলেছে, বিকেলে আমরা যেন ওখানে চা খেয়ে যাই। আমি বাইরে চলে গেলে তিনজনে একসাথে তো আর আর্যদার বাড়ি যাওয়া হবে না, তাই একবার ঢুঁ মেরে যাই। আর ওখানে যখন যাচ্ছি, ওখানে বসে একটা কিছু সমাধান বের করা যাবে!!! এত চাপ নিস না!!
শাওন: ও গড!!! আমি এখন কি করি!!!
টুয়া: ইতনি ই ই ই ই ই খুশি....হুঁ হুঁ
শাওন: (টুয়াকে) তোর হাতটা দেখি?
টুয়া: কেন?
শাওন: দে না...
টুয়া: (ডান হাত বাড়িয়ে) ... তুই হাত দেখতে পারিস? তাহলে আর চাকরী নিয়ে চিন্তা করিস না! ওই ব্যবসাটাই খোল...তোকে দেখতেও বেশ একটা ইয়ের মত...
শাওন: কিসের মত…?
টুয়া: মহাপুরুষের মত...মাইরি? সত্যি-ই তুই হাত দেখতে পারিস?
শাওন: (টুয়ার হাত দেখতে দেখতে) ... হ্যাঁ তা একটু আধ্টু পারি বটে, আর আমার কথা মেলেনি, এরকম কোনোদিন হয় নি....
টূয়া: তা আমার হাতে কি দেখলি? ক’টা বিয়ে?
শাওন: বিয়ের কথা পরে হবে... আগে নিজেকে বাঁচা!
টুয়া: মানে?
শাওন: মানে, দেখলাম যে আজ তোর কপালে ফাঁড়া আছে। আর কাটানোর একটাই উপায়..
টুয়া: কি উপায়?
শাওন: এক্ষুনি গাড়ি থেকে নেমে আমার থেকে দূরে চলে যাওয়া....
টুয়া: তা না করলে?
শাওন: না করলে, তোর আয়ুরেখা খুবই অল্প...মৃত্যু হবে তোর...
টুয়া: কিভাবে? গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে? সে হলে তো তিনজনেই মরব, একসঙ্গে...আমারটা আলাদা করে বলছিস কেন?
শাওন: না... গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে নয়...
টুয়া: তবে কি ভাবে?
শাওন: খুন হবি !!!
টুয়া: খুন...??? হা: হা: হা: (অট্টহাসি) কে করবে আমাকে খুন??!!!
শাওন: মিলিয়ে নিস...তুই আমার হাতে আজই খুন হবি...হবি-ই হবি...এখনও টাইম আছে... পরমকে বল কোথাও একটা দাঁড়াতে...ভালয় ভালয় নেমে যা....
টুয়া: পরম গাড়িটা দাঁড় করাস ভাই, কাছাকাছি কোথাও!
পরম: সত্যি-ই তুই নেমে যাবি নাকি?
টুয়া: হ্যাঁ...জোরসে হিসি পেয়েছে...নামতে তো হবেই...
শাওন: নামলে আর তুলবি না এটাকে...
টুয়া: তাহলে এখানেই করে দিই?
পরম: কেন খেপাচ্ছিস টুয়া-কে? সত্যি সত্যি গাড়িতে করে দিলে কিন্তু....
টুয়া: ....হে হে...জল শুকিয়ে যাবে, কিন্তু গন্ধ …??? সে তো গাড়ির কার্পেটের পরতে পরতে থাকবে... তাকে মারবি কি করে!!!
পরম: প্লিজ তোরা থামবি....!!!
অন্তিম পর্ব
(আমাদের বাড়িতে: তিনমূর্তির প্রবেশ)
আমি: আরে, আয় আয়!!! বোস। চা করি আগে?
সবাই: হ্যাঁ...
আমি (চা বসিয়ে এসে): কেমন ঘুরলি বল...
পরম: আর ঘুরলি! শাওনের অবস্থা দেখো...
আমি: কেন রে, শাওন তোর কি হয়েছে?
(পিছন থেকে)
টুয়া: ইতনি ই ই ই ই খুশি....
শাওন: টুয়া.. একদম চুপ কর তুই কিন্তু.... মেরেই ফেলবো... আর্য-দা তুমি হাতের কাছে যা যা ভারী জিনিস আছে সরিয়ে ফেল। না হলে....
আমি: কেন রে, কি হয়েছে?
শাওন: আর বোলো না আর্য-দা, আমাকে আমার বউ একটা হেডফোন দিয়েছিল, বেরোনোর সময়ে। বলেছিল, যে আসার সময় যেন আমি অবশ্যই মনে করে ফেরত আনি। পরমের দাবি যে ও নাকি হোটেল ছাড়ার সময়ে রিমাইন্ডার দিয়ে বলেছিল যে বিছানার উপর একটা হেডফোন পড়ে আছে। কিন্তু ও আমায় বলেনি, বিশ্বাস করো। না হলে কি আমি কখনো ওটা ব্যাগে ঢুকাতে ভুলে যাই। ইচ্ছে করে দেখেও আমাকে ফাঁসাবে বলে বলে নি। আর মজা নিতেই পারিস তোরা, কিন্তু দেখলি যখন পড়ে আছে নিজেদের ব্যাগে ঢুকিয়ে নিয়ে মজা করতে পারতিস। তা বলে ফেলে চলে আসবি?
পরম: দেখ শাওন, আমি কিন্তু তোকে বলেছিলাম। আর আমি যে প্র্যাক্টিক্যাল জোক পছন্দ করি না তা তুই খুব ভাল করে জানিস। এখন তুই অস্বীকার করছিস। কারণ তুই বিপদে পড়েছিস। সত্যি বলছি শাওন, যদি আমি বুঝতাম যে তুই আমার কথা শুনিস নি, বা শুনতে পাস নি, আমি নিজেই তুলে নিয়ে ব্যাগে ভরে নিতাম।
শাওন: আচ্ছা আর্যদা কাছাকাছি কোন ইলেকট্রনিক্সের দোকান আছে?
আমি: সে না হয় খুঁজে বের করা যাবে... কিন্তু তুমি জানো, এই হেডফোনটা কোন ব্র্যান্ডের ছিল?
শাওন: সে তো জানিনা...
আমি: জিনিস-টা ব্যবহার করলে, কিন্তু চোখ পড়্ল না..যে ওটার গায়ে কিসের লোগো ছিল!
শাওন: এ রকম হবে জানলে আগে দেখে রাখতাম। কিন্তু আমার কিছু মনে পড়ছে না।
আমি: তাহলে ভায়া দোকান খুঁজে কি লাভ...হ্যাঁ এখন দোষ স্বীকার করে যদি নতুন কিনে দিতে চাও, তাহলে আলাদা কথা...
শাওন: স্পেসিফিক্যালি ওটা ওর খুব প্রিয়...ওটা ছাড়া চলবে না...
আমি: তবে একটা আইডিয়া তোমাকে দিতে পারি...
শাওন: কি কি বলো বলো...
আমি: তুমি যে আমাদের বাড়িতে এসেছিলে, সেটা তো ওর অজানা নয়।
শাওন: না ও জানে তোমার এখানে আসব...
আমি: তাহলে বলবে যে এখানে ফেলে চলে গেছ। দু তিন দিন বাদে আমি যখন যাব, তখন পরমকে দিয়ে দেব। আর হোটেলে বলে দাও যেন হেডফোনটা আমার ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়... ব্যাস হয়ে গেল।
টুয়া: এটা কিন্তু একটা দারুন আইডিয়া...
শাওন: কিন্তু যেখানেই হোক, হোটেল বা তোমার বাড়ি, জিনিসটা যে ফেলে এসেছি ভুল করে, তাই-ই থেকে যাচ্ছে।
আমি: ট্রু...একদম...কিন্তু ভাই ডিস্টেন্স ম্যাটার্স্....আর আমার বাড়ি আর হোটেল...সাইকোলজিক্যাল এফেক্টটা ভেবে দেখ...আর সত্যি কথা বলতে, ডু ই উ হ্যাভ এনি বেটার চয়েস, উইথ দ্য গিভেন কন্ডিশনস্?
শাওন: তা ও ঠিক!!! আচ্ছা বেশ যা ভাল বোঝ তোমরা...
আমি: তাহলে ঐ ব্যাপরটা কিন্তু এখানেই চুকে গেল!
টূয়া: ইতনি ই ই ই ই খুশী...
শাওন: (পিন কুশন তুলে নিয়ে টুয়ার দিকে ছুঁড়ে মারার ভঙ্গীতে) ওকে চুপ করতে বল আর্য-দা...আমি ওকে জাস্ট নিতে পারছি না।
আমি: টুয়া, কেন এভাবে ওকে বিরক্ত করছ? ছাড় না...
টূয়া: ঔ ক্কে বস্...
আমি: হ্যাঁ রে পরম কেমন ঘুরলি সেটা বল... সেই তোদের সঙ্গে লাস্ট গিয়ে বাপি-দার হোটেলে ছিলাম, সি-স্টার স্পা রিসর্ট...
পরম: হ্যাঁ ওটাও বেশ খাসা জায়গা ছিল... তবে টুয়া একটা ভালো প্ল্যান করেছে বুঝেছ? যে পরেরবার থেকে আমরা যখন তিনজনে যাব, তখন আমার যেন যতটুকুও এবারে নড়াচড়া করেছি, ততটুকুও যেন আর নড়াচড়া না করতে হয়। মানে জাস্ট যাব, বডি ফেলবো, আর আনন্দ করবো।
আমি: না নড়াচড়া করে আনন্দ !!!!....মানে সেটা কি করে সম্ভব?
টূয়া: কেন? সম্ভব নয় কেন? আমরা একটা রুম নেব যেখান থেকে সমুদ্রটা পুরো দেখা যায়। বিছানা থেকে উঠবো না। বাকি যা যা লাগবে শুধু রুম সার্ভিস্... আর সঙ্গে পরেরবার থেকে ঠিক করেছি যে একটা ক্যাথেটার লাগিয়ে নেবো আর পাশে একটা বেডপ্যান্...পটি-হিসু/নো ইস্যু...এর সাথে যেটা করতে হবে সেটা হল হাতে একটা চ্যানেল।
আমি: হাতে চ্যানেল? কেন ওষুধের জন্য?
টুয়া: হ্যাঁ, যাতে উঠতে না হয়।
আমি: হাতে চ্যানেল...আর যাতে উঠতে না হয়...সে আবার কি অলক্ষণে কথা রে ভাই!
টূয়া: আরে না না তুমি যা ভাবছ তা মোটেই নয়। এটা কামপ্লিট রিলাক্সেশনের পার্ট... আর এ ওষুধ সে ওষুধ নয়...এ হোমিওপ্যাথির জাতভাই।
আমি: সেটা কি রকম?
টুয়া: এই ধর পরম বলল, " আর এক পেগ বানা ভাই" | স্যাট করে একটা হাণ্ড্রেড এম এল সিরিঞ্জএ মাল ভরে ড্রিপ-এ ঠুসে দিলাম। চোঁ করে এক চুমুকে মেরে দেবে সে সুযোগ নেই। ড্রিপ এর কন্ট্রোলও তোমার হাতে | বরফ, ঠান্ডা জল, কোল্ড ড্রিন্ক, চাট… কিস্যু লাগবে না। খরচও বাঁচল! জাস্ট শুয়ে থাক.... নেশা এমনিতেই হয়ে যাবে। ভাব একবার!!!! কি পোয়েটিকালি ওয়াইল্ড এ্যান্ড ট্রু ট্যু _ তোমার রক্তে নেশা... তোমার শিরায় নেশা... তোমার ধমনীতে নেশা...তোমার মস্তিষ্কে নেশা...অথচ তোমার মাসল মুভ্মেন্ট, জিরো, চোখের পাতা ফেলা তোলা ছাড়া...
শাওন: তুই চুপ কর | যত্ত গাঁজাখুরী কথা...
টুয়া: ....ইতনি ই ই ই ই খুশি |
আমি: (কথা ঘোরানোর জন্য) তোমরা সবাই কিন্তু ডিনার করে যাবে | নো এক্সকিউজ |
পরম: আর্যদা যখন থেকে আমরা রোমিং ছেড়ে লোকাল সার্কেলে ঢুকেছি তখন থেকে আমি ভেড়া আর ওরা দুজন সিংহ ….
টুয়া: তোরা পুরুষ? ছিঃ ...
পরম: টুয়া আমাদের ‘পুরুষ পুরুষ’ খেলাটা কিন্তু অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে |
আমি: সে আবার কি খেলা? ....’পুরুষ পুরুষ’ খেলাটা কি?
পরম: ওই ‘দিল চাহতা হ্যায়’ এর মত—“তেরে মরদাঙ্গী কো লালকারা ইয়ার | কাম অন মর্দ বন! বি আ ম্যান্!!”
টুয়া: হ্যাঁ... আর এটা আমাদের বৌ-এরা ফোন করলেই আমরা ওই ‘পুরুষ পুরুষ’ খেলাটা খেলি | আর এটার তিনটে রুলস আছে |
আমি: কি কি….???
টুয়া: বৌ-এর ফোন এলে...
এক, ফোন নিয়ে অন্য কোথাও উঠে চলে যাওয়া যাবে না।
দুই, স্পিকার ফোনে রাখতে হবে।
তিন, নেটওয়ার্ক জনিত কারণে ফোন কেটে গেলে কল ব্যাক করে কথা কমপ্লিট করতে হবে।
আমি: সর্বনাশের মাথায় বাড়ি | এতো ব্রীচ অফ প্রিভেসি |
শাওন: ওদের বোঝাও আর্যদা এটা একটা র্যাগিং | খেলা তো নয়ই।
টুয়া: ও তো বলবেই....
আমি: কেন?
টুয়া: এই খেলায় ও আজও একদিনও জিততে পারে নি।
শাওন: আমি তোদের মত দু-মুখো নয়।
টুয়া: (হঠাত উঠে গিয়ে ঝুঁকে শাওনের পশ্চাদদেশ ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে বলল) হ্যাঁ ওটা যে তোর মুখ নয়, আগেও জানতাম | একবার ক্রসচেক করে নিলাম।
শাওন: ইয়ার্কি না মেরে একটা ঠিকঠাক সমাধান দে না ভাই |
আমি: আবার ঘুরে ফিরে সেখানে? ব্যাপারটা তো মিটে গেল...
শাওন: আরে সে তো হল...কিন্তু আজ তো গিয়ে ব্যাপারটা কন্ভিন্সিং ওয়ে তে বোঝাতে হবে, বল!!
টুয়া: ভাল কথা বলব?
শাওন: কি?
টুয়া: তুই একটা ভোভেরান এস আর মেরে দে, এখনই।
শাওন: কেন? পেইনকিলার কেন খাবো খামোখা?
টুয়া: খামোখাই বললাম বল? ভেবে দেখ কেন বললাম্...
শাওন: হ্যাঁ তাইই তো... হঠাৎ পেইনকিলার খাব কেন, সেটাই বুঝতে পারছি না!
টুয়া: তোর দূরদর্শিতার অভাব থাকলে কি বলি বল?
শাওন: এর মধ্যে তোর দূরদৃষ্টি দিয়ে কি দেখলি?
টুয়া: দেখলাম যে তুই তোর বউএর প্রিয় হেডফোনটা জাস্ট হোটেলে ফেলে এলি | তারপর তুই বাড়ি ঢুকবি | বৌ-কে বোঝাবি ... তারপর যা হবে তাতে গায়ে হাতে পায়ে ব্যথা তো হবেই | ওষুধটা আগে থেকে খেয়ে রাখলে সেটা খুব একটা মালুম পাবি না | সাসটেইন রিলিফ সিরিজের তো, তাই |
আমি: সে কি! এরকম মারধর করার পর্যায়ে যেতে পারে নাকি ব্যাপারটা!!
শাওন: না গো আর্যদা... তুমি ওর কথায় বিশ্বাস করছ?
টুয়া: আচ্ছা আর্যদা, তুমি বল, এখানে যা নিয়ে কথা হচ্ছে তাতে বৌ-টা কার?
আমি: শাওনের
টুয়া: শেষ কথা কথা কার?
আমি: শাওনের
টুয়া: তারপরেও যদি ওর বৌ আমাকে ওর থেকে বেশি বিশ্বাস করে আমি কি করতে পারি? একটু তো অ্যাডভানটেজ নেবই।
আমি: অ্যাডভানটেজ !!!! ছি ছি...
টুয়া: আরে না না, ও সব দুষ্টু অ্যাডভান্টেজে আমি নেই। আমার বউও আমাকে সব থেকে বেশি বিশ্বাস করে | আমি সেটাকে রেসপেক্ট করি। আবার শাওনের বৌ-ও আমাকে বিশ্বাস করে, সেটাকেও রেসপেক্ট করি। মাঝে মাঝে শাওন যখন আমাকে সেই ‘রেসপেক্ট’-এ আঘাত করে, আমার ঈগোয় লাগে...তখন আমি শুধু একটু শেক্সপীয়ারের ঈয়াগো হয়ে যাই।
আমি: মানে?
শাওন: মানে আবার কি...নাটক কাকে বলে...!!! চালিয়ে যা...
টুয়া: মানে... ধর এই হেডফোন এপিসোড, সিজন থ্রি.... ইয়াগোর ছিল রুমাল আমার হবে জাঙ্গিয়া....
আমি: সে আবার কি?
টুয়া: কি আর!!!! .... আমি শুধু বলব ' কতবার করে পরম বলল, শাওন হেডফোনটা ব্যাকপ্যাকে তোল... না হলে বালিশের তলায় চলে গেলে ভুলে যাবি।' সেই মুহূর্তে শাওন শুধু নিজের নতুন জাঙ্গিয়াটা বার বার ভাঁজ করছে, খুলছে, আবার তুলছে | আবার বের করছে, কি একটা দেখছে, ভাঁজ করছে, আবার ব্যাগে তুলছে | কি এমন আছে ঐ জাঙ্গিয়া তে?কোনো গোপন দাগ??? যা ও মুছতে চাইছে, নতুন জাঙ্গিয়া থেকে? .... যে ও পরমের কথা শুনতে পেল না...? না হলে, একটা সিমপল জাঙ্গিয়া নিজের বৌ এর প্রিয় দামী একটা হেডফোনের থেকেও বেশী ইম্পর্টান্ট হল? কেন হল?
-- জাস্ট এটা ওর বৌ এর সামনে আমি বলে চলে যাব...ব্যাস আমার কাজ শেষ। আমাকে আর কিছু করতে হবে না। বাকিটা শাওন মালুম পাবে।
শাওন: কেন করিস বল তো এসব...
টুয়া: তোর ভাল চেয়ে রে...
আমি: সেটা কেমন?
টুয়া: এর পরে ওর বৌ ওর সাথে কথা বন্ধ করে দেবে....তারপর হয় আমাকে না হলে পরম কে জ্বালাবে… কিন্তু শাওন তো কিছুদিন শান্তি পাবে, বল?
আমি হতভম্ব হয়ে বললাম:
এরকম বন্ধুত্ব কিন্তু বিরল....ফিস ফিঙ্গারগুলো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে... খেয়ে নাও...
টুয়া একটা তুলে নিয়ে একটা কামড় বসিয়ে শাওনকে বলল:
সুযোগ পাচ্ছিস খেয়ে নে...এর পরে কতদিন ভুখা পেটে থাকতে হবে, কেউ জানে না...
পরম: না রে...শাওন...ভয় দেখাচ্ছে...শুধু শুধু...সেরকম হলে আমাদের বাড়িতে চলে আসবি... আমার বৌ বিরিয়ানী-টা আজকাল ভালই নামাচ্ছে....
বুঝলাম আমি যত চেষ্টাই করি না কেন, এদের আমি থামাতে পারব না...একদম ছোট্টবেলার বন্ধুরা এরকমই হয়। আসলে ছোটবেলার বন্ধু আমরা কেউ ‘তৈরী’ করি না...জাস্ট হয়ে যায়। থেকেও যায়, আজীবণ, কোনো ঈক্যুয়েশন ছাড়াই।
