Wednesday, 26 May 2021

ম্যাস্টরমশাই : পর্ব ৬


ফেসবুকে হঠাৎ কবি শ্রীজাত-র একটি স্মৃতিচারণে আমার মনে ভেসে উঠল নিজের স্কুলের কথা, সেখানকার শিক্ষকদের কথা। তাঁদের দেওয়া শাস্তির কথা। লেখাটি পড়ে সবারই এরকম কিছু স্মৃতি মাথায় ভেসে ওঠে, নিজের স্কুলের  ছাত্রজীবন নিয়ে। আমারও উঠল, সেরকম। কিন্তু সে নিয়ে না হয় পরে অনেক ছোট-গল্পের সমাহারে একটি সমাসবদ্ধ পদ বানিয়ে পাতে দেওয়া যাবে। এখন আমার বক্তব্য। কয়েনের ও-পিঠ নিয়ে।

১৯৯৭ সাল, আমার বয়েস তখন তেইশ বছর।  সেই থেকে শিক্ষকতা করছি, হাওড়া ময়দানের বুকে ‘মধ্য হাওড়া শিক্ষালয়’ নামক সরকারী অনুদানপ্রাপ্ত একটি অত্যন্ত তথাকথিত ‘বাজে’ স্কুলে। ফলে সরকারী ভাবে কিছু নিয়ম নির্ধারিত গ্রান্ট ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না। সব জায়গাতেই অকারণ অবহেলা ও অসম্মান প্রাপ্য।  সরকারী আয়োজনে ছাত্র কম অজুহাতে স্কুলের মধ্যে ঢুকেছে দুটি শিক্ষাদপ্তর। কোনো পক্ষের কোনো গা-নেই যে স্কুলটিকে কিভাবে বাঁচানো যায়। ফলে আর কেউ আসে না স্কুলে।  ছাত্র-ও না। শহরের বুকে এরকম বাংলা মাধ্যমের স্কুলের কেন এমন দৈন্যদশা সে নিয়েও আলোচনা, বিতর্কের অবকাশ রেখেই, ভবিষ্যতে করা হবে। কারণ আমরা একা নই, হাওড়া জেলার বুকে এরকম মোট ৩২টি স্কুল আছে। আর এই সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে, শহরাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলোর পাশে এসে সরকারপক্ষ এগুলিকে বাঁচানোর সদিচ্ছা নিয়ে না দাঁড়ালে। 

যে কথায় ছিলাম। আমি যে স্কুলে চাকরি করি সেই 'বাজে' স্কুলের ছাত্ররা লেখাপড়ায় বাজে, কথা বলে বাজে, আসে বাজে জায়গা থেকে, খাওয়া থাকা-ও বাজে। ফলে সমাজের যা কিছু ‘ভালো’, সে সব থেকে তারা ব্রাত্য ও বঞ্চিত। তাই এই ‘বাজে’ দের-ই বছরের পর বছর ধরে লালন-পালন করে মাধ্যমিকের চৌকাঠ উতরে দেয় আমাদের বাজে বিদ্যালয়। আশেপাশের অন্যান্য ‘ভাল’ বিদ্যালয়ে যাদের ঠাঁই হয় না, তাঁরা যে সমস্ত ছেলেদের ‘বাজে’ বলে দাগিয়ে দিয়ে তাড়িয়ে দেন, আমরা তাদের স্থান দিয়ে আসি, বছরের পর বছর। তাদের মধ্যে তাই অনেক বদগুণ-ও আছে। কিছুক্ষেত্রে পিটিয়ে ঢিট করতে হত বই-কি। কিন্তু আইনের পথে সে সব ভালবাসার শাসন-ও বন্ধ হয়ে গেল, কিছু বিকৃত-মনস্ক শিক্ষকদের দয়ায়, যাঁরা শাস্তি-স্বরূপ ক্লাস থ্রি-এর ছাত্রীকে অবলীলায় স্টিলের ট্রাঙ্কে বন্ধ করে রেখে ভুলে গিয়ে বাড়ি চলে যেতে পারেন, বা নামতা মুখস্থ না বলতে পারায় ছাত্রের পাতা-হাতে তুলে দিতে পারেন আগুনের কাগজ-গোলা। আমরা  তাই ক্লাসরুমে শুধু বোর্ডের দিকে তাকিয়ে পড়াতে আরম্ভ করলাম। কারণ ক্লাসের দিকে তাকিয়ে কোনো লাভ নেই। আমাদের, শিক্ষকদের, প্রমোশন হয়েছে যে! আমাদের role গিয়েছে বদলে। শিক্ষক থেকে উন্নীত হয়েছি, guide, instructor ও facilitator-এ। কবে ভালবেসে কাউকে শাসন করতে গিয়ে ‘তোর মাথায় কি গোবর পোরা আছে?’ বললে সে যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বা আত্মহত্যা করে ফেলে, তাহলে আই-পি-সি আমাদের ছেড়ে কথা বলবে না। তাই আমরা আর ঠিক সামাজিক-ভাবে শিক্ষক রইলাম না। রাস্তায় কোনো ছাত্রকে লুকিয়ে বিড়ি ফুঁকতে দেখলেই তাকে ধরে সেখানেই দু-ঘা দিলে উলটে পুলিশ-ই আমাকে ধরে নিয়ে কয়েদ করে ফেলবে। 

এইরকমের পরিস্থিতিতে একদিন এক নতুন ভর্তি হওয়ার সপ্তম শ্রেনি-র ছাত্রের ব্যাগ থেকে উদ্ধার হল এক প্যাকেট সিগারেট। 

কিভাবে?--

তখনও বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা ধূমপান করতে পারতেন। আমিও ব্যতিক্রমী ছিলাম না। ফাঁসিতলার মোড়ের সিগারেটের দোকান আমাদের-ই পুরোনো এক ছাত্রের। টিফিনের সময়ে আমি গিয়েছি এক প্যাকেট সিগারেট কিনতে, টিফিনের শেষে আমার মাননীয় প্রিয় সহকর্মীদের সঙ্গে ভাগ করে খাব বলে। পয়সা দিতে গিয়ে শুনি আমার নাম করে স্কুল বসার আগে কোনো এক ছাত্র এক প্যাকেট সিগারেট নিয়ে গিয়েছে, ধারে। ফলতঃ সেই পয়সাও বাকি। আমি স্তম্ভিত।

- তুই দিলি কেন ওকে? যে-ই আমার নাম করে আসবে তাকেই তুই সিগারেট দিয়ে দিবি?

- স্যার ও স্কুল-ড্রেস পরে ছিল।

- আরে গাধা, আমি কোনোদিন আজ পর্যন্ত অন্য কাউকে দিয়ে তোর দোকান থেকে সিগারেট আনতে পাঠিয়েছি? তা-ও স্কুলের ছাত্র-কে.... তাও আবার  ধারে? 

- না স্যর। 

- কোনো ছাত্র-কে দিয়ে সিগারেট আনাব, এ কি করে ভাবলি তুই? 

- একবার মনে হয়েছিল, তারপর ভাবলাম, আপনি যদি বকেন! তাই দিয়ে দিলাম। 

- যে নিয়েছিল, তাকে চিনতে পারবি?

- হ্যাঁ স্যার।

- হাত খালি হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুলে আয়। কোন ব্যাটা করেছে দেখি।

- আচ্ছা স্যার।

মিনিট পনেরো পরেই সে এল। আমি তাকে নিয়ে ক্লাসে ক্লাসে ঘুরতে লাগলাম। অবশেষে ক্লাস সেভেনের নতুন ভর্তি হওয়া একটি ছেলেকে সে সনাক্ত করল। মার-ধর করা যাবে না। হাত নিশপিশ করছে, যে কানে দুই-পাক দিয়ে তারপর অন্য কথা। অনেক কষ্টে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করলাম। যথাসম্ভব শান্ত গলায়  বললাম,

- বের কর। সিগারেটের প্যাকেট কই।

ছেলে বেশ স্মার্ট। কথা না বাড়িয়ে ব্যাগ থেকে বের করে দিল। খুলে দেখলাম। দশটার মধ্যে চারটে পড়ে। 

- ছ’ ছ’-টা সিগারেট তিনঘন্টার মধ্যে সাবড়ে দিয়েছিস?

সপাটে স্পষ্ট উত্তর পেলাম।

- না স্যার, চারটে আমি খেয়েছি, আর নাইন আর টেন এর দু’টো দাদা আমাকে বাথরুমে দু-বার দেখে ফেলেছিল, তাই ওদের দু’টো দিতে হয়েছে। 

- তোর ভয় করছে না!!!

- নাহ! এখন তো শুনেছি মারধর করতে পারবেন না। এই তো সেদিন হেডস্যার এসে কেলাসে বলে গেল, কেউ যদি তোমাদের মারধর করেন, বা আজেবাজে কথা বলেন, তক্ষুনি জানাবে আমাদের। আর চিঠি লিখে অভিযোগ করলে তো পুলিশ আপনাদের-ই উলটে ধরে নিয়ে যাবে।

ইচ্ছে হচ্ছিল গালে এক থাপ্পড় লাগিয়ে দিতে। কিন্তু সম্ভব নয়। এই সমস্ত বদ-বুদ্ধি যদি একটু পড়াশোনাতে কাজে লাগাত, তাহলে ভালই হত।

-তোর বাবা  কি করেন?

- বাবা তো মিস্তিরি।

- কিসের?

- বাড়ি-ঘর-দোর সারানোর।

- ও রাজমিস্ত্রী। তা এক কাজ কর। বাবা-কে ডেকে আনবি। কাল-ই। না হলে এই ইস্কুল থেকে তাড়িয়ে দেব। 

- বাবা-কে বলব। কিন্তু কবে আসতে পারবে জানি না।

যখনকার ঘটনা, তখন মোবাইল ফোন একটা স্বপ্ন। তাই তার স্কুল-ডায়েরী-তে লিখে দিলাম।

- লিখে দিলেন, কিন্তু বাবা পড়তে লিখতে পারে না। 

- সই করতে পারেন?

- না তা-ও পারে না। টিপছাপ দেয়।

- তুই পড়ে দিবি তারপর  বাবা-কে দিয়ে টিপছাপ দিয়ে নিয়ে আসবি।

- আচ্ছা স্যার।

পুরো বিষয়টি হেডমাস্টারমশাই-কে জানালাম, ছেলেটিকে সঙ্গে নিয়ে, তার সামনেই। উনিও একই নিরাপদ পথে হাঁটলেন। শুধু একটু সুর চড়িয়ে, কড়া সুরে বললেন,

- আর করবে এরকম? বাবা-কে কাল-ই নিয়ে এস। না হলে যতদিন না বাবা আসবেন, তোমাকে স্কুলে আসতে হবে না।

নিশ্চয়ই এরকম একটা অবাঞ্ছিত শাস্তিতে ভয় পেয়ে যাবে ছেলেটি, ও তার বাবা-কে কালই এনে হাজির করবে – এই আশা নিয়ে উনি কথাটা বলেছেন। কিন্তু এতে ছেলেটি ভয় পাওয়া তো দূর, যারপরনাই আহ্লাদিত হয়ে বলে উঠল, 

- …ও স্যার, তদ্দিন ইসকুলে আসতে হবে না!!!! (‘কি মজা!’- অংশ টুকু না বললেও, সেটার প্রকাশে কোথাও খামতি ছিল না।)

- খুব আনন্দ হচ্ছে, না? আচ্ছা, যতদিন তোর বাবা না আসবেন, স্কুল শেষ হওয়ার পরে তুই আমার কাছে বসে একটা একটা করে কবিতা মুখস্থ করে লিখবি, আর কুড়িটা করে অঙ্ক করে, তারপর রোজ বাড়ি যাবি। স্কুল কামাই করলে আমি বা এই স্যার গিয়ে বাড়ি থেকে তোকে ধরে নিয়ে আসবেন। সেটা ভাল হবে?

জোঁকের মুখে নুন পড়ল। মত ছেলেটি কেমন গুটিয়ে গেল।

পরপর পাঁচদিন আমাদের পরীক্ষা দিতে হল। তিনদিন ছুটির পরের ব্যাপারটা যে শুধু ভয় দেখানোর জন্য নয়, তা দেখিয়ে ছাড়লেন হেডমাস্টারমশাই। আর যে দু-দিন আবার আমাদের পরখ করার জন্য ও স্কু্লে এল না,একদিন আমি আর একদিন হেডমাস্টারমশাই নিজে গিয়ে ধরে আনলাম বাছাধন-কে স্কুলে। কিন্তু আমরা যখন ওকে ধরতে ওর বাড়িতে গেলাম, ওর বাবা ততক্ষণে কাজে বেরিয়ে গিয়েছেন। আমি শেষে একজন পড়শি-কে বলে এলাম, ওর বাবা-কে যেন জানানো হয় যে স্কুল থেকে জরুরী তলব আছে। না গেলে, স্কুল থেকে এই ছেলেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।

পরের সপ্তাহে সোমবার ছেলেটির বাবা এলেন আমাদের সঙ্গে দেখা করতে। পায়ে প্লাস্টিকের চটি, পরনে ফুটো হওয়া স্যান্ডো  গেঞ্জি আর ফ্যাকাশে একটা লুঙ্গি। ঠোঁটের কোনায় একটা আধ-খাওয়া বিড়ি।

-আমাকে ডেকিচেন সার?

- হ্যাঁ।

-আপনার ছেলে অত্যন্ত বাজে একটা কাজ করেছে।

- কি করিচে সার? হেই কাচে আয় তুই…

ছেলেটি কাছে আসতেই চুলের মুঠি ধরে বেদম মার দিতে লাগলেন উনি নিজের ছেলেকে।

- শুয়ারের বাচ্চা। কি করিচিস তুই বল শালা আগে। নইলে ইকানেই গোর দি দেব। জিকানে যাবে, জ্বালিয়ে হাড়মাস কালি কদ্দিল আমার। মরণ হই না কেন তোর?

আমি ছাড়ালাম কোনো রকমে। 

- আপনি উত্তেজিত হবেন না, শান্ত হোন।

- আবার কি নিজের কেলাসের চিলেকে পিটাইছে? না কি অন্য কুনো সারের পোঁদে লেগিচে? 

- না না ও সব কিছু না। একেবারেই অন্য রকম ব্যাপার। একটু শুনুন, আগে!

- আবনারা আর লাই দিবেন না। মাতায় উটিচে। ঘরের কুনো কাম বললেই, এককান বই বের করে বলে ‘পড়চি’। আরে মরণ, পড়ার সাথে কামের কি! পড়া, পড়া, কাম, কাম। পাশের ঘরের সাদিক তো ইসকুলেও যায়। কাম ও করে। দু-পয়সা রোজগার হয়। আমি তো সে কথা উকে বলি নি, যে কাম করে রুজগার করে লি আয়,ইস্কুল যাতি হবিনি কো। বলসি তকে? কুনোদিন?

ছেলেটি মাথা নাড়িয়ে জানায়, যে তার বাবা এরকম কোনো কথা তাকে বলেন নি। আমি বলতে গেলাম,

- সে তো খুব ভাল কথা। আমাদের দেশে শিশুশ্রম বে-আইনি।

- আরে দুস! রাকেন দিকি, আবনার আইন!। আইন ধুয়ে এক গিলাস ঠাণ্ডা জল-ও এই গরমে আমাকে কেউ দিবে না। কাম কল্লে পইসা আসে। আইন কি আমাকে আর উকে দু-বেলা খাওয়ায় না পরায়!

হতভম্বের মত দাঁড়িয়ে রইলাম। 

- যাক গিয়া, এহন কন দিকি, আমার পোলাটা কি করসে?

সবটা ওনাকে বলা হল। ওনার গুণধরের কীর্তি-কলাপ। উনি-ও মন দিয়ে শুনলেন। তারপর আমি প্রস্তুত হলাম ওনার আবার মার থেকে আমার প্রিয় ছাত্রকে বাঁচাতে। কিন্তু উনি কোমোরের গাঁট থেকে একটা বিড়ি ধরিয়ে বেশ বিরক্ত হয়ে বললেন,

- আবনারা এই জন্যি আমাকে ডেকে পাটিয়েচেন!

- হ্যাঁ,আপনি বুঝতে পারছেন, কি বড় অপরাধ ও করেছে!

- লা সার, পারচি না। আমি যখন সাত বচ্ছরের চিলাম, তহুন পেরথম বিড়ি খাই। অতু ধল্লে চলে!

তারপর হঠাৎ-ই মেজাজ হারিয়ে ছাত্রের বাবা বললেন,

- এই সব কারনে আমাকে আর ডাকবেন না। আসতে পারবুনি। ইস্কুল চাইরে দিলে দিবেন। আবনারা আমাদের মুতো গরীব মানষের রুজগার পাতি নিয়ে এমন ছিনিমিনি খেলবেন না। 

- রোজগারের সঙ্গে কি সম্পর্ক? আপনার ছেলের যাতে ভাল হয়, তাই তো ডাকা হয়েছে। বাড়িতে একটু দেখাশোনা করে শাসন করুন! 

- রুজগারের সাথে যোগ লাই! এই যে এই একটা বাজে কারণ দেখিয়ে আমার সারাদিনের রোজ লষ্ট হল, তা কি আবনার ইসকুল দেবে? চেলেকে দেকাশুণো-নেকাপড়া-শাশুন সব তো আবনাদের হাতে। পাল্লেন না কেন, চামড়া কুলে ডুগডুগি বাজিয়ে দিতে! হাড় ভেঙে দিলেও কিস্যু কইব না। জানব কারণ আসে। শিক্কা শুধু নেকাপড়া করেই হই লা। শাসন লাগে। আবনাদের হাতে ছেইড়ে দিসি, উই শয়তান-ডারে মানুষ কইর‍্যা দেন। আমারে ডাকবেন না। 

একটি অশিক্ষিত বাবা-ও জানেন আমাদের দেওয়া শাস্তির সবটাই সন্তানস্নেহে। নিজের ছেলে-মেয়ে হলেও অন্যায় করলে ওভাবেই শাস্তি দিতাম। কিন্তু আইনের চোখ যে অন্ধ। তাই আমার স্কুলের ছেলেরা উল্টোদিকের স্কুলের মেয়েদের ছুটির সময়ে ইভ-টিজিং করলে, কিংবা রাস্তায় অন্য কোনো মানসিক ভাবে দুর্বল স্যারের দিকে সিগারেটে টান দিতে দিতে চোখ মারলে, আমাকে আজকাল মাথা নিচু করে চলে যেতে হয়। আমি যে এখন ফেসিলিটেটর মাত্র। আর আইনের মত আমাকেও সামাজিক ভাবে অন্ধ হতে হবে। মানুষ গড়ার কারিগরী বিদ্যায়, নরম মাটিকে কিভাবে পিটিয়ে টেনে খিমচে খোঁচা মেরে আকার দিতে হয় সেখান থেকে আমি অনেক আগেই অবসরপ্রাপ্ত। এখন মানে মানে আইনি অবসর পর্যন্ত সম্মানটুকু যেন ধরে রাখতে পারি – ‘অন্ধাকানুন’-এর কাছে এইটুকু আশা। 

ভেবে দেখতে হবে, তথাকথিত সভ্য ও অগ্রগন্য দেশ আমেরিকায় বাবা-মা তাঁদের সন্তানদের মার-ধর-শাসন করলে তাদের ফাণ্ডামেন্টাল রাইটস অনুসারে ১০০ ডায়াল করলেই পুলিশ এসে বাবা মা কে আটক করে নিয়ে চলে যায়। আমাদের দেশে আই-পি-সি তে চাইল্ড আক্ট অনুসারে সে আইন এমনই কড়া যে দু-সপ্তাহ জামিন-যোগ্য নয়। কিন্তু ৯৯ শতাংশ বাবা-মা কেন তাঁদের সন্তানদের মার-ধর করেন, তা সকলেরই জানা। তা নিয়ে আমাদের দেশে কতজন সন্তান তাদের বাবা-মা এর বিরূদ্ধে কেস করে? তাঁদের মধ্যেও বিকৃত-মনস্ক বাবা-মা কি নেই যেখানে বাবা তাঁর চার বছরের কন্যাশিশুকে ধর্ষণ করতে ছাড়েন না? কিন্তু বাস্তবে ৯৯ শতাংশ শিক্ষকরাও ওই ৯৯ শতাংশ বাবা-মা-র মত নন কি? আমি না হয় একটি ‘বাজে’ স্কুলের ‘বাজে’ শিক্ষক!

মনে পড়ে যায়, শশাঙ্ক বাবুর পিঠে কিল, তারাশঙ্কর বাবুর লাঠির গুঁতো, শ্রীকান্ত বাবুর ঝুলপির টান, সুখেন বাবুর পেটে চিমটি, বনিক বাবুর থাপ্পড়, অঘোর বাবুর শ্লেষ…আরো কত শাস্তি। রোজ পেতাম। বাবা-মা কোনোদিন জানতেও পারেন নি। না আমার শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধার কোনোদিন কোনো ঘাটতি ঘটেছিল ঠিক ‘মানুষ’ হয়েছি কি না জানি না, কিন্তু এই বাজারেও কিছু অন্ততঃ করে তো খাচ্ছি, বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে। 

আমি বেলুড় উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। (১৯৮৫-১৯৯৩) আমার গুরুপ্রতীম সকল শিক্ষকদের জানাই শতকোটি প্রণাম। 


Monday, 10 May 2021

রবীন্দ্রনাথ, বর্তমান প্রজন্ম ও বাংলা ভাষা -- ২৫শে বৈশাখ, ১৪২৮

 e-publication link:

https://www.darpanpatrika.com/2021/05/blog-post_10.html

শুরুতেই বলে রাখি, সময়ের সংগে (এই বানান সত্যজিত রায় প্রবর্তিত, সহজ রেফারেন্স 'সোনার কেল্লা' চলচ্চিত্রের মন্তাজ) আমি আমার সন্তান, আমার পরিবারের পরবর্তী প্রজন্ম, ও আমার সন্তানসম সমগ্র ছাত্রকুল সবাই একসাথে ভুক্তভোগী। তাই উপপাদ্য বিষয়ে আলোচনা একটি সমসাময়িক পরিস্থিতির অবতারণা মাত্র এবং কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা সমাজ ব্যবস্থার বিরূদ্ধে অভিযোগ বা আঘাতের উদ্দেশ্যে নিক্ষিপ্ত নয়। কেউ যদি এটিকে উন্নততর ভবিষ্যতের জন্য উপযুক্ত সমালোচনা বলে মনে করে কিঞ্চিৎ সেই উন্নতির দিকে উদ্যোগ নেন, তাহলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মা আরো খানিকটা শান্তি পাবে, তাঁর মৃত্যুর আশি বছর, ও জন্মের একশো-ষাট বছর পরেও।


বাঙালীর সুখে-অসুখে, আনন্দে-শোকে নোবেল জয়ী কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলতে গেলে ঠাকুরের স্থান-ই নিয়ে ফেলেছেন। টেগোর বললে ওনার নামের সংগে যে দেবত্ব জড়িয়ে আছে তা ঠিক প্রতিভাত হয় না। সমস্যা হল গিয়ে যে বাংলা ভাষাই রীতিমত অবলুপ্তির পথে। ওনার এই বিশাল কর্মকাণ্ড বোঝার মত, সেই নিয়ে মাতামাতি করার মত, মানুষের অভাবের হার ক্রমবর্দ্ধমান। দেশে সীমানায় থেকে এই ভাষার গুরুত্ব ঠিক উপলব্ধ হচ্ছে না। বিদেশের মাটিতে গিয়ে বাঙালীরা বুঝতে পারছেন হাড়ে হাড়ে যে বাংলা ভাষার মহিমা কি। অনেকেই জানেন, তবু মনে করিয়ে দিই যে, পৃথিবীতে বাংলা ভাষা তার ব্যবহারের নিরিখে, তিন হাজার ব্যবহৃত ভাষার মধ্যে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করে আছে। সেখানে যে ভাষার মোহে আমরা অন্ধ, সেই ইংরেজী আছে তৃতীয় স্থানে। এর পরেও, বাংলা ভাষার মানুষরা ডুবে আছি এক আশ্চর্য ইংরেজী মোহে। কোনো ভাষাকে ছোট করছি না, বা এটা অন্ধের মত বলার চেষ্টা করছি না যে বাংলা ভাষা থাকুক আর ইংরেজী বিদেয় হোক। ইংরেজী থাকুক, কিন্তু বাংলা-কে বাদ দিয়ে নয়। মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে কোনো শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না জানবেন। যদি জোর করে তা চাপিয়ে দেওয়া হয়, যেমন হচ্ছে, তাহলে তা অবৈজ্ঞানিক ও অবাস্তব কল্পনা। এর ফলে কোনো শিশু কোনো ভাষাই ঠিক করে শিখে উঠতে পারে না। বাংলা ভাষার সংগে ইংরেজির কোনো বিবাদ নেই। বাংলা শিখলে ইংরেজি কম শেখা হবে, এ ধারণা ভুল ও ভ্রান্ত।  আমরা যে ধ্বংস-কে প্রশ্রয় দিচ্ছি, তাকে আটকাতেই, ‘সহজপাঠ’ রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তিনি বুঝেছিলেন, এই ভাষাকে সময়ের সংগে আধুনিক না করে তুললে, ঘোর বিপদ আসন্ন। চলিত ভাষা, বাংলা বানান, এমনকি ছেদ-যতি চিহ্নের ব্যবহার-কে তিনি এতটাই সরল করে তোলার চেষ্টা করলেন এবং তা এমন সাদরে গৃহীত হল যে বিগত শতকের নব্বই এর দশক পর্যন্ত বাঙালী সেই ভাষাকে আঁকড়ে পার করল তার শৈশব, কৈশোর, যৌবন...আমরণ চলবে তা, এমনই বাঁধলেন তিনি। বাড়িতে যাঁদের রবীন্দ্র রচনা সমগ্র আছে, তাঁরা সেই বিশাল কীর্তির দিকে তাকিয়ে একবার ভাববেন, ঠাণ্ডা মাথায়, যে কোন স্তরে একজন মানুষের মস্তিষ্ক আশি বছর বয়স অব্দি কাজ করে গেলে এ হেন সৃষ্টি করা যায়! বা ভাববেন, পৃথিবীতে একজন দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম, যিনি নিজের মাতৃভাষায় সাহিত্যক্ষেত্রের সমস্ত রূপে, এমনকি সঙ্গীত ও চিত্রকলায় সমান অবলীলায় বিচরণ করেছেন, তাও এই বিপুল পরিমানে। সাহিত্যক্ষেত্রে চিরকালীন গুরুদেবদের কথা উঠলেই চলে আসে, উইলিয়াম শেক্সপীয়রের নাম। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের সংগে তুলনা করলে দেখা যাবে দুটি সহজ ফারাক। শেখ্যপীর বাবাজি কয়েকশতক আগের মানুষ। আর ওনার সৃষ্টি সীমাবদ্ধ ছিল নাটক ও সনেটে। উপন্যাস বা ছোটগল্প তিনি লেখেন নি, চল ছিল না বলে। গান-ও বাঁধেন নি। আসলে উনি গ্রাসাচ্ছাদনের জন্য চেয়েছিলেন শো-বিZ- এ মন দিতে -- কিভাবে নাটক-কে রাজদরবারের বাইরে টেনে এনে হাটে-বাজারে কমার্শিয়ালাইজ করা যায়, তার প্রথম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। রচনাও যে সব মৌলিক, তা নয়। প্রচলিত গাথা-কে রূপ দিলেন নাটকে। আর বাকি যে কবি সত্ত্বার তাড়না ছিল, তা ঢেলে দিলেন সনেট রচনায়। রবীন্দ্রনাথের সবটাই কবিসত্ত্বার মৌলিক তাড়না কারণ অর্থ উপার্জনের পথ তাঁকে খুঁজতে হয় নি।তিনি সৃষ্টিসুখের উল্লাসে নিমজ্জিত। তাতে রয়েছে গভীর সমাজ ও শিক্ষা দর্শন। শেক্সপীয়রের ভাবনা চিন্তার মধ্যে সে সব আসে না। ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্র হয়ে আমাকে কোনো দিন এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় নি, যে শেক্সপীয়রের দর্শন নিয়ে আলোচনা কর। রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে যে প্রশ্ন ঘুরে ফিরে বারে বারে আসে। এমনকি, বি-এড, এম-এড এও তা অবশ্য-পাঠ্য বিষয় -- শিক্ষাক্ষেত্রে তাঁর দর্শণ। শুধু আমাদের দেশে নয়, বিদেশেও, holistic education তিনি যেভাবে থীয়োরি থেকে বেরিয়ে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করেছেন তা অভূতপূর্ব। সে চর্চা আজও পৃথিবীজুড়ে চলছে। সেই ভিত্তির ওপর গড়ে উঠছে প্রাসাদ।


সেখানে পশ্চিমবংগের মানুষ রবীন্দ্রনাথ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন গত তিন দশক ধরে প্রায়। ছেলে-মেয়ে রা জন্মানোর পর নার্সারী রাইম পড়ে, সহজপাঠ (প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ)-এর মত বই তারা পায় না। পড়েও না। ‘হাট’-এর বদলে শেখে ‘হাম্পটি-ডাম্পটি’। সরকারী প্রাথমিক শ্রেনি-গুলিতে বহু বছর পড়ানো বন্ধ ছিল সহজপাঠ কারণ পাঠ্যপুস্তক হিসেবে তা রাখা হয় নি। সম্প্রতি কোনো উদ্যোগে আবার তা ফিরৎ এসেছে । যাঁরা এনেছেন তাঁদের অসংখ্য ধন্যবাদ। সংগে আবার গোদের ওপর বিষফোঁড়া, আমরা বাবা-মা-এরা গর্ব বোধ করি বলতে যে তাঁদের সন্তান বাংলা টা ঠিক পড়তে বা লিখতে পারে না ( যদিও সারাদিন বলতে পারে)। আর ইংরেজিটা খুব সহজ আর বাংলাটা খুব শক্ত। কিন্তু মজার বিষয় হল, সন্তানরা যেদিন মাতৃভাষা সরিয়ে রেখে সারাদিন ইংরেজি-তে কথা বলবে, তখন বাবা-মা এর সংগে সফল হবে তো আসল নাড়ির টান? যে কোনো ভাষার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল কমিউনিকেশন বা যোগাযোগ। ইংরেজিতে
Functional Communicative English শেখানোর নাম করে কত নামী দামী সংস্থা বাজারে করে খাচ্ছে। কিন্তু হায় বাঙালী, বাংলায় চিঠি লেখাই শেখে নি কোনোদিন।  বেশির ভাগ বাবা-মা কে দেখি নিজের সন্তানদের ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চতুর্থ শ্রেনি থেকেই ভাল ইংরেজি টিউটর খোঁজেন। কারণ, এর পর লেখাপড়া বিষয়টি মাতৃভাষায় থাকে না বলে তাঁদের আয়ত্বের বাইরে চলে যায়। কেউ বুঝে উঠছে না, এর সাথে আয়ত্বের বাইরে চলে যাচ্ছে সম্পর্ক-ও। সহজপাঠ-না-পড়া এই প্রজন্ম ফেসবুক, ইন্সটা, ট্যুইটারে দড় নেটিজেন হয়ে কোভিড পরিস্থিতিতে প্রাণ বাঁচাচ্ছে বটে, অপ্রত্যাশিত ভাবে স্বার্থপরতার ঊর্ধ্বে উঠে, কিন্তু মাতৃভাষার প্রতি এই অবহেলা একটি সম্পূর্ণ সংস্কৃতিকে গ্রাস করতে চলেছে, এ সম্পর্কে কোনো সন্দেহ নেই।


সবথেকে বড় কথা হল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে দারুন ইংরেজি জানতেন বলে সাহিত্যক্ষেত্রে নোবেল পেয়েছিলেন তা আদপেই নয়। ইংরেজী গীতাঞ্জলি-তে তাঁর অনুদিত কবিতার সংকলনের অনুবাদ অত্যন্ত দুর্বল, কারণ যতই সেন্স ট্রান্সলেশনের চেষ্টা উনি করে থাকুন না কেন, ভাবের ঘরে চুরি হয়ে গিয়েছে, অনেক বড়। সে ভাব একমাত্র, বাঙালী তাঁর বাংলা লেখা পড়ে ধরতে পারবে। ইংরেজরা কোনোদিন ইংরেজি গীতাঞ্জলী পড়ে সে ভাব ধরতে পারবে না। শুনলে অবাক হবেন, রবীন্দ্রনাথের মত মানুষের সৃষ্টির শুধু ভাব ধরতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ বংগদেশে ভিড় জমাচ্ছেন, বাংলা শিখবেন বলে। আর আমরাই আমাদের পরের প্রজন্মকে সেই মাতৃভাষা শিক্ষা থেকে ভীষনভাবে বঞ্চিত করছি।  প্রশ্ন করে অনেকেই -- তবে কেন নোবেল দেওয়া হল তাঁকে ইংরেজি ‘গীতাঞ্জলি’-র জন্য? উত্তরে ভাবা দরকার, শুধুমাত্র ওইটুকু বই-এর ওই ক'টা কবিতার অনুবাদে সারা বিশ্ব কাঁপিয়ে দিলেন তিনি তাঁর বৃহত্তর ও চিরকালীন দর্শনের কথা সেখানে ধরে, যা অদৃষ্টপূর্ব। এভাবে কেউ কোনোদিন ভাবে নি। তাহলে যদি রবীন্দ্রনাথ তখন পুরোটা ইংরেজি-তে করতেন, তাহলে কি ঘটতে পারত। তাও আবার গীতাঞ্জলি-র অনুবাদে সব ভাব ধরা পড়ে নি। ভাষা ও সংস্কৃতি বড্ড ওতোপ্রতো ভাবে জড়িত। ইলিশ মাছ আর ভাত যে বাঙালীর কাছে কি জিনিষ সে ভাব কি ‘slices of hilsa and fine rice’- এই ট্রান্সলেশনে ধরা পড়বে? গীতাঞ্জলির ইংরেজি ওই একই ব্যাপার। ওনাকে নোবেল দেওয়ার আগে সংগে আরো জানা গেল যে, একটি বিশেষ ভাষা 'বাংলা'-য় তাঁর সাহিত্যকীর্তির যা ব্যাপ্তি, তা পৃথিবীর আর কোনো ভাষায় কেউ কোনোদিন করে যেতে পারেন নি। কষ্ট হয় সেই প্রজন্মকে সামনে দেখতে, যারা রবীন্দ্রনাথের 'সহজ-পাঠ' টুকু ছেলেবেলায় না পড়ার জন্য জীবনে কোনোদিন রবীন্দ্রনাথ-কে পড়তে পারবে না। পারলেও পড়তে হবে পেঙ্গুইন ক্লাসিকস-এর ইংরেজী ট্রান্সলেশনে, যেমন করে ফেলুদা পড়ে বেশিরভাগ কিশোর-কিশোরী।ইলিশমাছ-ভাতের বদলে সার্ডিন স্যান্ডঊইচ। এর থেকে বড় 'আয়রণী অফ ফেট' আর কি হতে পারে একটি জাতির পক্ষে। বলতে দ্বিধা নেই, বাংলা ভাষা-কে, সংস্কৃতিকে আর তার চর্চা-কে আজও একা হাতে রক্ষা করে চলেছেন ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ, না থেকেও।


২৫ শে বৈশাখে বাঙালীর এই পরম ব্রহ্ম ঠাকুরের ফটোয় গলায় মালা আর ফুলের নৈবেদ্য ও চন্দনের ফোঁটা দিয়ে ধূপ ও প্রদীপ জ্বালিয়ে ওনার শ্রাদ্ধ না করে, টেগোর-কে একটু বাস্তবে নামিয়ে এনে ভাইরাল করা যায় না কি? তবে ঠিক করে ডাউনলোড না করে সোজাসুজি শেয়ার করা যাবে না ওনাকে। সব ডেটা এনক্রিপটেড। বুঝতে জানতে গেলে সেই চোখ লাগে যা দিয়ে ডিসাইফার করে সবটা ডিকোড করা যাবে। সেখানে আবার একটা রিস্ক থেকে যায়, যা আপলোড করে গিয়েছেন বিগ-ডেটা হিসেবে, তাতে সেগুলো ডাউনলোড করতে গিয়ে আবার পুরো সিস্টেম না ক্র্যাশ করে!

e-publication link:

https://www.darpanpatrika.com/2021/05/blog-post_10.html